আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
2,374 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (51 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত একটি  হাদিস রয়েছে যে  কোন এক শিশুকে মিষ্টি খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করতে তিনি নিজে প্রথমে তিনদিন সময় মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে ছিলেন। হাদীসটি কি সনদ গতভাবে সহিহ?

কাউকে কোন কাজে নিষেধ করার আগে সে কাজটি নিজেকেই ছাড়তে হবে ? নাকি অন্যকে উপদেশ দেওয়ার সাথে সাথে সে কাজটা যদি নিজেও করে থাকি তবে নিজেও ছাড়া র চেষ্টা করলেও হবে?

(প্রশ্নের মূলভিত্তি মাসিক আল কাউসার 2018 সাল আগস্ট মাস)

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


প্রচলিত ঘটনাটি হলোঃ
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের কাছে মদিনার এক ইহুদী আসে। সে ছিল গরিব, রুটি বানানোর কাজ করতো। তার ছেলে অধিক পরিমাণে মিষ্টি খেত। সে সময় আরবে মিষ্টি ছিল দামী খাবার। 
,
তাই ওই ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যেন তার পুত্রকে কম মিষ্টি খাওয়ার নির্দেশ দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ওই ব্যক্তিকে বললেন তিনদিন পড়ে দেখা করতে।

তিনদিন পর আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তার ছেলেকে মিষ্টি কম খাওয়ার নির্দেশ দেন। তখন ওই ব্যক্তি এবং উপস্থিত সাহাবীগণ বিস্মিত হয়ে রাসূলকে জিজ্ঞেস করলেন যে, রাসূল (সা.) কেন তিনদিন আগে তার ছেলেকে মিষ্টি খেতে নিষেধ করলেন না। 
,
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন যে, তিনি নিজেই মিষ্টি খাওয়া অত্যধিক পছন্দ করেন। তাই এই তিনদিন মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিয়ে ওই ব্যক্তির ছেলেকে মিষ্টি খাওয়া কমাতে বলেন। 

কোনো কাজের কথা অন্যকে বলতে হলে আগে নিজে আমল করা উচিত- এ বিষয়টিকে সামনে আনার জন্য এ কিসসাটির অবতারণা করা হয়। অথচ এটি একটি বানোয়াট কিসসা; এর কোনোই ভিত্তি নেই। এর কোনো সনদ ও হাদীসের কিতাব থেকে সুত্রও পাওয়া যায় না। 
۔
কোনো বিষয়ে অন্যকে উপদেশ দেয়া বা নিষেধ করা আর নিজে সে অনুযায়ী আমল না করা বা বিরত না থাকা নিন্দনীয়। 
,
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لاَ تَفْعَلُوْنَ، كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُوْلُوْا مَا لاَ تَفْعَلُوْنَ ‘
হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা তোমরা কর না? আল্লাহর নিকট বড় ক্রোধের বিষয় এই যে, তোমরা বল এমন কথা, যা তোমরা কর না (ছফ ২-৩)।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِىَ بِى رِجَالاً تُقْرَضُ شِفَاهُهُمْ بِمَقَارِيضَ مِنْ نَارٍ فَقُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَنْ هَؤُلاَءِ قَالَ خُطَبَاءُ مِنْ أُمَّتِكَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَيَنْسَوْنَ أَنْفُسَهُمْ وَهُمْ يَتْلُوْنَ الْكِتَابَ أَفَلاَ يَعْقِلُوْنَ.

আনাস ইবনু মালিক বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে রাতে আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে রাতে কতগুলি লোককে দেখলাম, যাদের ঠোট আগুনের কাঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হচ্ছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের বক্তা, যারা মানুষকে ভাল কাজের আদেশ করত, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। তারা কুরআন তেলাওয়াত করত, তারা কুরআন চর্চা করত না’ (ইবনু হিববান, তারগীব, হা/৩৩২৮)।

عَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَزْدِي صَاحِبُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم رضي الله عنه عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَثَلُ الَّذِي يُعَلِّمُ النَّاسَ الْخَيْرَ وَيَنْسَى نَفْسَهُ كَمَثَلِ السِّرَاجِ يُضِيءُ لِلنَّاسِ وَيُحْرِقُ نَفْسَهُ.

জুনদুব ইবনু আব্দুল্লাহ আযদী বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সে ব্যক্তি উদাহরণ যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণের দাওয়াত দেয়, নিজে আমল করে না। সে সেই মোমবাতির মত, যে মোমবাতির মত। যে মোমবাতি মানুষকে আলো দেয় এবং নিজেকে জ্বালিয়ে দেয়’ (তাবারানী, তারগীব, হা/৩৩৩১)।
    
 وَعَنْ أَبِي زَيدٍ أُسَامَةَ بنِ حَارِثَةَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يَقُولُ: «يُؤْتَى بالرَّجُلِ يَوْمَ القيَامَةِ فَيُلْقَى في النَّارِ، فَتَنْدَلِقُ أقْتَابُ بَطْنِهِ فَيدُورُ بِهَا كَمَا يَدُورُ الحِمَارُ في الرَّحَى، فَيَجْتَمِعُ إِلَيْه أهْلُ النَّارِ، فَيَقُولُونَ : يَا فُلانُ، مَا لَكَ ؟ أَلَمْ تَكُ تَأمُرُ بالمعْرُوفِ وَتنهَى عَنِ المُنْكَرِ ؟ فَيقُولُ : بَلَى، كُنْتُ آمُرُ بِالمَعْرُوفِ وَلا آتِيهِ، وأنْهَى عَنِ المُنْكَرِ وَآتِيهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

  আবু যায়দ উসামাহ ইবনে যায়দ ইবনে হারেসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’’ [বুখারি৩২৬৭, ৭০৯৮, মুসলিম ২৯৮৯, আহমদ ২১২৭৭, ২১২৮৭, ২১২৯৩, ২১৩১২]
,
অন্যকে উপদেশ দেয়া বা নিষেধ করা আর নিজে সে অনুযায়ী আমল না করা বা বিরত না থাকা নিন্দনীয় হলেও এর অর্থ এটা নয় যে, কোনো বিষয় নিজের মাঝে আমল না থাকলে অন্যকে বলাই যাবে না।
,
এমনটি ধারণা করা ঠিক নয়। অন্যকে আমলের বা বিরত থাকার উপদেশ দিবে, সাথে সাথে নিজেও আমলের চেষ্টা করবে। 

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত তথা কাউকে কোন কাজে নিষেধ করার আগে সে কাজটি নিজেকে ছাড়তেই হবে, বিষয়টি এমন নয়।   

বরং অন্যকে উপদেশ দেওয়ার সাথে সাথে সে কাজটা যদি কেহ নিজেও করে থাকে, তবে নিজেকেও ছাড়ার আপ্রাম চেষ্টা করতে হবে।
তাহলেই ইনশাআল্লাহ উপরে উল্লেখিত হাদীসের উপর আমল হবে।
ইনশাআল্লাহ।      


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
হাদিসটার রেফারেন্স পেতে পারি??
by
হাদীসটির রেফারেন্স দিলে ভালো হতো।
by (565,890 points)
এটি একটি বানোয়াট কিসসা; এর কোনোই ভিত্তি নেই। এর কোনো সনদ ও হাদীসের কিতাব থেকে সুত্রও পাওয়া যায় না। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...