আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
19 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
(০১)

* চট্টগ্রামের রীতি অনুযায়ী এইখানে মানুষ মারা গেলে ৪দিনা ৪০ দিনা বছরি ফাতিহা মেজবান কিসব কিসব জানি করা হয় এইসব করা তো জায়েজ নাই তাই না? আর যদি এইসব না করে ঐসব দিনে গরিব মিছকিনকে খাওয়ানো হয় বা এতিম খানায় টাকা দেওয়া হয় তাহলে কি জায়েজ হবে? মানুষের মৃত্যুদিনের বছরি কি আসলে মনে রাখার বা মানুষ খাওয়ানোর দরকার আছে?

(০২) * কুরবানির ঈদে আমাদের এইখানে দেখলাম গোশত রান্নার সময় গ্রামের কোনো হুজুর থেকে পানি পড়া এনে সেই পানি দিয়ে রান্না করা হয় এইসব কি আসলে কোনো অবস্থায় জায়েজ?

(০৩) * দ্বীনে ফিরার আগের অনেক বেপর্দা ছবি বাসার কিছু মানুষের ফেইসবুকে রয়ে আছে সেগুলো প্রায় ৭/৮ বছর আগের এর পরের যেগুলো সেগুলো আমি ডিলিট করেছি লুকিয়ে। আর কিছু জনের কাছে মানে আমার কাজিনদের কাছে রিসেন্টের কিছু ছবি এখনো আছে তাদের প্রোফাইলে।সেগুলো কিভাবে ডিলিট করবো এর জন্য আমি গুনাহগার হচ্ছি তাই না?

(০৪) * দ্বীনে ফিরার আগে অনেক বেগানা পুরুষের সাথে আমার কথা হতো আমার অনেক ছবিও তাদের কাছে আছে আমি এর জন্য এখন পুরাপুরিভাবে লজ্জিত। এখন তাদের সাথে পুনরায় কথা বলা আমার পক্ষে কোনোভাবে সম্ভব না এমতাবস্থায় কি ঐসব ছবি তাদের কাছে থাকার কারণে আমি গুনাহগার হচ্ছি?

(০৫)* তাড়াতাড়ি বিয়ের জন্য অনেক জায়গায় দেখলাম 'ইয়া ফাত্তাহু' নির্দিষ্ট (৪০/৪১) বার পড়তে বলেছে। এইভাবে কোনো আমল করা কি জায়েজ?

1 Answer

0 votes
ago by (566,940 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
মৃত ব্যাক্তির জন্য তিনদিনা,সাতদিনা,চল্লিশদিনা পালন করা জায়েজ নেই।
এটি হিন্দুয়ানী পদ্ধতি। হিন্দুরা ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর তিনদিন পর্যন্ত আগুনে জ্বলতে দেয়। তারপর ৪র্থ দিন মৃতের বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার অনুষ্ঠান করে, আবার ৪০দিনের দিনের দিন উক্ত মৃতের হাড্ডিগুলো নিয়ে নদীতে ফেলে দিয়ে আরেকটি খাওয়া দাওয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, আর বৎসরে উক্ত মৃত্যু দিবসে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।

খলীফায়ে রাশেদীনসহ কোন সাহাবী নবীজী সাঃ এর জন্য উপরোক্ত রুসুমগুলো পালন করেননি। কোন মুহাদ্দিস, কোন মুফাসসির, কোন তাবেয়ী, কোন তাবে তাবেয়ী, কোন মুজতাহিদ ইমামগণ উক্ত রুসুম পালন করেননি।
কুরআন ও হাদীস বা ফিক্বহের কিতাবে এরকম রুসুমের কথা উল্লেখ নেই। তাই এসব পালন করা বিদআত। 

কেউ মারা গেলে ইসলামে তিন দিনের বেশি শোক পালনের অনুমতি নেই। শুধু কোনো মেয়ের স্বামী মারা গেলে তার স্ত্রীর জন্য চার মাস দশ দিন পর্যন্ত শোক পালন করার অনুমতি রয়েছে।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন

لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ تُحِدُّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلَاثٍ إِلَّا عَلَى زَوْجٍ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا

আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে এমন কোনো মহিলার জন্য বৈধ নয় কারও মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা। তবে শুধু স্বামী ব্যতিক্রম। স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী চার মাস দশ দিন শোক পালন করতে পারবে। [সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৮১]

তিন দিনা, চার দিনা, ত্রিশা ও চল্লিশার মতো তারিখ নির্ধারণ না করে মৃত ব্যক্তির ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে গরিব-মিসকিনদেরকে খানা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যায়।
ফাতহুল কাদীর  ২/১০২; ইমদাদুল আহকাম ১/২০৬

মৃত ব্যক্তির জন্য দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করে দাওয়াতের আয়োজন করা ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা বিদআত। রাসূল (সা.) এর জামানায় কিংবা সাহাবা-তাবেয়ীনদের জামানায় এর কোনো নজীর পাওয়া যায় না। আর হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ

‘যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে তার কর্ম প্রত্যাখ্যাত হবে।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস:  ২৬৯৭]

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى قَالَ حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ ح و حَدَّثَنَا شُجَاعُ بْنُ مَخْلَدٍ أَبُو الْفَضْلِ قَالَ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ عَنْ إِسْمَعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ قَالَ كُنَّا نَرَى الِاجْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنْعَةَ الطَّعَامِ مِنْ النِّيَاحَةِ.

জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ আল-বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃতের বাড়িতে ভীড় জমানো ও খাদ্য প্রস্তুত করা বিলাপের অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম।
(ইবনে মাজাহ ১৬১২)

وفيه ايضا- ومنها التزام الكيفيات والهيئات المعينة كالذكر بهيئة الإجتماع  على صوت واحد واتخاذ يوم ولادة النبى صلى الله عليه وسلم عيدا، وما اشبه ذلك.. الخ (الإعتصام-1/29)

যার সারমর্ম হলো নির্দিষ্ট ছুরত এবং নির্দিষ্ট এমন কাজ করা,যা শরীয়ত করেনি,এটা বাতিল হবে। 

আরো জানুনঃ 

শরীয়তে প্রচলিত মিলাদ,দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে 
কুলখানি, চল্লিশার অনুষ্টানের বৈধতা শরীয়তে নাই।

শরীয়তের বিধান হলো যে পদ্ধতিতে কোন ইবাদত খাইরুল কুরুনে আদায় করা হতো না, সেটিকে জরুরী মনে করে বা একমাত্র পদ্ধতি মনে করে, বা আবশ্যকীয় পদ্ধতি বানিয়ে উক্ত ইবাদত করাও বিদআতের শামিল।

রাসুল সাঃ বলেন-

وَإِيّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنّ كُلّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.

আর সকল নব উদ্ভাবিত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কারণ, সকল নব উদ্ভাবিত বিষয় বিদআত। আর সকল বিদআত গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা।’ (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭১৪২, ১৭১৪৫)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ

‘(দ্বীনের নামে) নবউদ্ভাবিত সকল বিষয় থেকে দূরে থাক।’

আরো জানুনঃ- 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত কাজ গুলি জায়েজ নয়।
এক্ষেত্রে সেই নির্দিষ্ট দিন গুলি বাদ দিয়ে তার আগে বা পরে কোনো দিন মাইয়্যিতের ঈসালে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে খানা খাওয়াতে পারবেন।

মানুষের মৃত্যুদিনের বছরি আসলে মনে রাখার বা মানুষ খাওয়ানোর দরকার কোনো আবশ্যকীয়তা নেই।
এগুলো নিয়ম মানুষের বানানো।
যাহা পরিত্যাজ্য। 

(০২)
কুরআন ও হাদীস বা ফিক্বহের কিতাবে এরকম রুসুমের কথা উল্লেখ নেই। তাই এমনটি করা বিদআত। 

(০৩)
আপনি তাদেরকে ভালোভাবে বুঝিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে প্রয়োজনে পারিবারিক মুরব্বিদের সহায়তা নিয়ে ডিলিট করানোর চেষ্টা করবেন।
পাশাপাশি তওবা করবেন।

শত চেষ্টার পরেও তারা ডিলিট না করলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এর শাসি দিবেননা,ইনশাআল্লাহ। 
বরং যারা ডিলিট করবেনা,তাদেরকেই শাস্তি দিবেন।

(০৪)
হ্যাঁ, আপনি গুনাহগার হচ্ছেন।
এখন আপনি নিজের মাহরাম কাহারো মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ করে আপ্রাণ চেষ্টা করে ছবি গুলি ডিলিট করানোর চেষ্টা করবেন।
পাশাপাশি তওবা করবেন।

(০৫)
উক্ত আ'মল কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত কোনো আ'মল নয়।তবে অন্তর বিশুদ্ধ রেখে সবকিছুর খালিক ও মালিক আল্লাহকে রেখে আপনি উক্ত আমল করতে পারবেন।বিদ'আত হবে না।তবে সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত, এটা মনে করা যাবে না।

বিস্তারিত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...