ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব:-
ব্যবসা হালাল
উপার্জনের একটি উত্তম উপায়। সাহাবীগণ ব্যবসা করেছেন। কেউ যদি ব্যবসা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেয়া বিধি-বিধান
পালন করে,
সততা ও আমানতদারি রক্ষা করে, এর মাধ্যমে দুনিয়াতেও যেমন তার জন্য রয়েছে শান্তি ও সমৃদ্ধি, পরকালেও রয়েছে অনেক মর্যাদা ও পুরস্কার।
হাদীস শরীফে
এসেছে
التَّاجِرُ
الصَّدُوقُ الأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ، وَالصِّدِّيقِينَ، وَالشّهَدَاءِ.
সত্যবাদী ও
আমানতদার ব্যবসায়ী (আখেরাতে) নবী-রাসূল, সিদ্দীক ও শহীদদের সাথে থাকবে। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২১৪৩
ব্যবসা করার
ক্ষেত্রে অনেকসময় খুব সাধারণভাবেই মুখে মিথ্যা চলে আসে। মিথ্যার ধরনটা হল ‘ভাই! মাত্র পাঁচ টাকা লাভ করছি! বরং ‘আপনাকে কেনা দামেই ছেড়ে
দিচ্ছি! ‘এটাই সবচেয়ে ভালো কোম্পানির; এর চেয়ে ভালো আপনি আর কোথাও পাবেন না!’ ইত্যাদি বাক্য মুখে মুখে থাকে! অথচ এখানে
কেবল কি মিথ্যা? ধোঁকা, প্রতারণা ও খেয়ানতের মতো বড় বড় অনেকগুলো গোনাহের সমাবেশ ঘটে!
বিশেষত ধোঁকা ও প্রতারণার বিষয়টি তো একেবারে স্পষ্ট। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন,
‘যে আমাদের (মুসলমানদেরকে)
ধোঁকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত (মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত) নয়।’
এই হুমকি-বাণীর
প্রেক্ষাপটটিও কিন্তু ব্যবসা কেন্দ্রিক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার
একজন শস্যব্যবসায়ীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তার শস্যের স্তুপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে
ভেতরের শস্যগুলোতে কিছুটা আর্দ্রতা অনুভব করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? ব্যবসায়ী উত্তর দিল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। নবীজী বললেন, ভেজা অংশটা উপরে রাখলে না কেন? এরপর নবীজী বললেন
مَنْ غَشَّ
فَلَيْسَ مِنِّي.
যে ধোঁকা দেয়
সে আমাদের দলভুক্ত (মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত) নয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৪৮৯)
মিথ্যা বলে
গ্রাহককে ত্রুটিযুক্ত পণ্য ধরিয়ে দেয়া
মিথ্যা বলে
গ্রাহককে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ত্রুটিযুক্ত পণ্যটি ধরিয়ে দেয়ার মধ্যে বড় ধরনের খেয়ানত
বিদ্যমান। হাদীসে এসেছে
كَبُرَتْ
خِيَانَةً تُحَدِّثُ أَخَاكَ حَدِيثًا هُوَ لَكَ مُصَدِّقٌ، وَأَنْتَ بِهِ كَاذِبٌ.
এটা অনেক বড়
খেয়ানত যে, তুমি তোমার ভাইকে কোনো কথা বলছ, সে এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে নিচ্ছে, অথচ তুমি এতে মিথ্যাবাদী। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৬৩৫; আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদীস ৩৯৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৭১
আরেক হাদীসে
বলা হয়েছে, তিন ধরনের ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন
আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দয়া-দৃষ্টিতে
তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
এদের অন্যতম হল,
وَالْمُنَفِّقُ
سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.
যে মিথ্যা কসম
খেয়ে নিজের পণ্য চালিয়ে দেয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৬)
ব্যক্তিগতভাবে
একে অপরকে, অনেকসময় রাজনৈতিকভাবেও জনগণকে মিথ্যা
প্রতিশ্রম্নতি দেয়া হয়। যাকে কেবল কবীরা গোনাহই নয়, হাদীসে মুনাফিকের স্বভাব বলা হয়েছে। হাদীসে মুনাফিকের একটি
নিদর্শন বলা হয়েছে
وَإِذَا
وَعَدَ أَخْلَفَ.
মুনাফেকের একটি
নিদর্শন হল, ওয়াদা করে ভঙ্গ করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭)
অন্য হাদীসে
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
آيَةُ
الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا
اؤْتُمِنَ خَانَ.
মুনাফিকের নিদর্শন
তিনটি;
কথা বললে মিথ্যা বলে। ওয়াদা করে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে
খেয়ানত করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৯)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১-২. ক্রয়-বিক্রয়ে
মিথ্যা কসম অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। মিথ্যা বলে কেনাবেচা করা হারাম। ইসলামী অর্থনীতির বিধান
অনুযায়ী,
বিক্রীত দ্রব্যের সব অবস্থা (দোষ-ত্রুটি থাকলে তাসহ) ক্রেতাকে
খুলে বলতে হবে, অন্যথায় বিক্রি শুদ্ধ হবে না এবং ক্রেতার
তা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে। দ্রব্যের দোষ না বলে ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করা হারাম।
বিক্রেতা দ্রব্যের
যে গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছিল পরে তার বিপরীত প্রমাণিত হলে, যেমন—বলেছিল রং পাকা বা অমুক কম্পানির, অথচ তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, এ ক্ষেত্রে ক্রেতা সেটা ফেরত দেওয়ার অধিকার রাখে।
বিক্রেতা যদি
কোনো দ্রব্যের সে পরিমাণ দাম নিয়ে থাকে, যা কোনো স্বচ্ছ-নির্দোষ দ্রব্যের বিনিময়ে নেওয়া হয়ে থাকে, আর পরে তাতে কোনো দোষ প্রকাশ পায় তাহলে ক্রেতার তা ফেরত দেওয়ার
অধিকার থাকবে। যদি বিক্রেতার কাছে দোষ প্রকাশ পায় তাহলে ক্রেতার তা ফেরত দেওয়ার অধিকার
থাকবে। যদি ক্রেতা দোষ-ত্রুটি বলা সত্ত্বেও কেউ সে দ্রব্য ক্রয় করে ওই দোষ-ত্রুটির
কারণে তার ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে না।
৩. প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার বাবার ইনকামকে
হারাম বলা যাবেনা যতক্ষন না আপনি সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ না পাচ্ছেন। কোন প্রমাণ
ছাড়া অহেতুক সন্দেহ করা যাবে না। তবে হ্যাঁ আপনার পিতাকে একজন সৎ ব্যবসায়িক বানানোর ক্ষেত্রে
হালাল হারাম সম্পর্কে জানানোর জন্য চেষ্টা করুন। তাকে আলেমদের সোহবতে যাওয়ার
জন্য ফিকির করুন। আল্লাহ তায়ালা আপনার বাবাকে একজন সৎ ব্যবসায়ি হিসেবে কবুল করুন।