আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
26 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (16 points)
আসসালামু আলাইকুম
প্রশ্ন ১: ব্যবসা করার সময় যদি কিছু মিথ্যা কথা বলে তাহলে কি পুরো ব্যবসাই হারাম হয়ে যায়?
প্রশ্ন ২:  আমার আব্বু  ফ্রিজ, কাঠের ফার্নিচার, রড, সিমেন্টের ব্যবসা করে। উনি যদি ব্যবসা করার সময় বলে, বেশি লাভ করছি না, এই মাল আর পাবে না, এটা অনেক ভালো,কেনা দামেই  বিক্রি করতেছি (কিন্তু কেনা দাম থেকে কিছু বেশি টাকায় বিক্রি করে) ।
মাল বিক্রি করার জন্য এই টাইপ যে কথা গুলো আছে এগুলো বললে কি আমার বাবার পুরো ব্যবসাই হারাম হয়ে যাবে?
প্রশ্ন ৩:আমি জানি না আব্বু ব্যবসা করার সময় মিথ্যা বলে কিনা।কিন্তু যখন থেকে শুনেছি ব্যবসায় মিথ্যা বললে তা হারাম তখন থেকে অনেক সন্দেহ হচ্ছে।কোথাও শান্তি পাচ্ছি না।
আমি কি সন্দেহ করা বাদ দিয়ে সুধারণা করবো?

আমার কি করা উচিত এখন?

আমি জানি না বুঝাতে পেরেছি কিনা, কিন্তু আমি অনেক পেরেশানি তে আছি। ছোট করে উত্তর না দিয়ে একটু বুঝিয়ে ৩ টা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অনুরোধ করছি।

1 Answer

0 votes
ago by (59,190 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব:-

ব্যবসা হালাল উপার্জনের একটি উত্তম উপায়। সাহাবীগণ ব্যবসা করেছেন। কেউ যদি ব্যবসা  করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেয়া বিধি-বিধান পালন করে, সততা ও আমানতদারি রক্ষা করে, এর মাধ্যমে দুনিয়াতেও যেমন তার জন্য রয়েছে শান্তি ও সমৃদ্ধি, পরকালেও রয়েছে অনেক মর্যাদা ও পুরস্কার।

হাদীস শরীফে এসেছে

التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ، وَالصِّدِّيقِينَ، وَالشّهَدَاءِ.

সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী (আখেরাতে) নবী-রাসূল, সিদ্দীক ও শহীদদের সাথে থাকবে। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২১৪৩

ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অনেকসময় খুব সাধারণভাবেই মুখে মিথ্যা চলে আসে। মিথ্যার ধরনটা হলভাই! মাত্র পাঁচ টাকা লাভ করছি! বরং ‘আপনাকে কেনা দামেই ছেড়ে দিচ্ছি! ‘এটাই সবচেয়ে ভালো কোম্পানির; এর চেয়ে ভালো আপনি আর কোথাও পাবেন না!’ ইত্যাদি বাক্য মুখে মুখে থাকে! অথচ এখানে কেবল কি মিথ্যা? ধোঁকা, প্রতারণা ও খেয়ানতের মতো বড় বড় অনেকগুলো গোনাহের সমাবেশ ঘটে! বিশেষত ধোঁকা ও প্রতারণার বিষয়টি তো একেবারে স্পষ্ট। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

যে আমাদের (মুসলমানদেরকে) ধোঁকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত (মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত) নয়।’

এই হুমকি-বাণীর প্রেক্ষাপটটিও কিন্তু ব্যবসা কেন্দ্রিক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একজন শস্যব্যবসায়ীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তার শস্যের স্তুপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে ভেতরের শস্যগুলোতে কিছুটা আর্দ্রতা অনুভব করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? ব্যবসায়ী উত্তর দিল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। নবীজী বললেন, ভেজা অংশটা উপরে রাখলে না কেন? এরপর নবীজী বললেন

مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي.

যে ধোঁকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত (মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত) নয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৪৮৯)

মিথ্যা বলে গ্রাহককে ত্রুটিযুক্ত পণ্য ধরিয়ে দেয়া

মিথ্যা বলে গ্রাহককে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ত্রুটিযুক্ত পণ্যটি ধরিয়ে দেয়ার মধ্যে বড় ধরনের খেয়ানত বিদ্যমান। হাদীসে এসেছে

كَبُرَتْ خِيَانَةً تُحَدِّثُ أَخَاكَ حَدِيثًا هُوَ لَكَ مُصَدِّقٌ، وَأَنْتَ بِهِ كَاذِبٌ.

এটা অনেক বড় খেয়ানত যে, তুমি তোমার ভাইকে কোনো কথা বলছ, সে এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে নিচ্ছে, অথচ তুমি এতে মিথ্যাবাদী। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৬৩৫; আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদীস ৩৯৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৭১

আরেক হাদীসে বলা হয়েছে, তিন ধরনের ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দয়া-দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। এদের অন্যতম হল,

وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.

যে মিথ্যা কসম খেয়ে নিজের পণ্য চালিয়ে দেয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৬)

ব্যক্তিগতভাবে একে অপরকে, অনেকসময় রাজনৈতিকভাবেও জনগণকে মিথ্যা প্রতিশ্রম্নতি দেয়া হয়। যাকে কেবল কবীরা গোনাহই নয়, হাদীসে মুনাফিকের স্বভাব বলা হয়েছে। হাদীসে মুনাফিকের একটি নিদর্শন বলা হয়েছে

وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ.

মুনাফেকের একটি নিদর্শন হল, ওয়াদা করে ভঙ্গ করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭)

অন্য হাদীসে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ.

মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি; কথা বললে মিথ্যা বলে। ওয়াদা করে ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৯)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১-২. ক্রয়-বিক্রয়ে মিথ্যা কসম অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। মিথ্যা বলে কেনাবেচা করা হারাম। ইসলামী অর্থনীতির বিধান অনুযায়ী, বিক্রীত দ্রব্যের সব অবস্থা (দোষ-ত্রুটি থাকলে তাসহ) ক্রেতাকে খুলে বলতে হবে, অন্যথায় বিক্রি শুদ্ধ হবে না এবং ক্রেতার তা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে। দ্রব্যের দোষ না বলে ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করা হারাম।

বিক্রেতা দ্রব্যের যে গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছিল পরে তার বিপরীত প্রমাণিত হলে, যেমনবলেছিল রং পাকা বা অমুক কম্পানির, অথচ তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, এ ক্ষেত্রে ক্রেতা সেটা ফেরত দেওয়ার অধিকার রাখে।

বিক্রেতা যদি কোনো দ্রব্যের সে পরিমাণ দাম নিয়ে থাকে, যা কোনো স্বচ্ছ-নির্দোষ দ্রব্যের বিনিময়ে নেওয়া হয়ে থাকে, আর পরে তাতে কোনো দোষ প্রকাশ পায় তাহলে ক্রেতার তা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে। যদি বিক্রেতার কাছে দোষ প্রকাশ পায় তাহলে ক্রেতার তা ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে। যদি ক্রেতা দোষ-ত্রুটি বলা সত্ত্বেও কেউ সে দ্রব্য ক্রয় করে ওই দোষ-ত্রুটির কারণে তার ফেরত দেওয়ার অধিকার থাকবে না।

৩. প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার বাবার ইনকামকে হারাম বলা যাবেনা যতক্ষন না আপনি সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ না পাচ্ছেন। কোন প্রমাণ ছাড়া অহেতুক সন্দেহ করা যাবে না। তবে হ্যাঁ আপনার পিতাকে একজন সৎ ব্যবসায়িক বানানোর ক্ষেত্রে হালাল হারাম সম্পর্কে জানানোর জন্য চেষ্টা করুন। তাকে আলেমদের সোহবতে যাওয়ার জন্য ফিকির করুন। আল্লাহ তায়ালা আপনার বাবাকে একজন সৎ ব্যবসায়ি হিসেবে কবুল করুন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...