দ্বীনের জরুরী ইলম শিক্ষা করা নারীদের উপরও ফরয। তবে এর শরীআতসম্মত পদ্ধতি হলো ঘরের পুরুষরা দ্বীন শিখে তাদের নারীদেরকে শেখাবে।
নারীরা শিখে ঘরের মেয়েদেরকে অনুরূপভাবে আশপাশের মেয়েদেরকে সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন মাজীদ শেখাবে, প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শেখাবে, হক্কানী উলামায়ে কেরামের রচিত কিতাব থেকে ওয়ায-নসীহত শুনাবে।
প্রয়োজনে মাঝে মাঝে মাহরাম পুরুষের তত্ত্বাবধানে হক্কানী আলেম ও বুযুর্গদের ঘরোয়া পরিবেশে এনে পর্দা-পুশিদার সাথে ওয়ায -নসীহত শুনবে।
সহীহ বুখারী ও সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিত হয়েছে, একবার কিছু সংখ্যক নারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনার মজলিসে পুরুষদের সাথে বসতে পারি না। আমাদের জন্য একটি দিন ধার্য করুন, যাতে সেদিনটিতে আমরা আপনার থেকে নসীহত শুনতে পারি। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন موعدكن بيت فلانة অর্থাৎ নির্ধারিত দিন অমুক মহিলার ঘরে জমায়েত হও। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে তাদেরকে ওয়ায-নসীহত করলেন। -(সহীহ বুখারী, হাদীস ১০১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৯৪১)
ইসলামের প্রাথমিক যুগে যদিও নারীরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত
ইমামের পেছনে নামায পড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে মসজিদে নববীর জামাতে অংশগ্রহণ করত। তথাপি তার জন্য বেশ কিছু শর্ত ছিল।
যেমন, ১. পূর্ণ পর্দার সাথে আসতে হবে। ২. সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে না। ৩. সাজসজ্জা পরিত্যাগ করতে হবে। ৪. রাতে আসবে, দিনে আসবে না। ৫. মহিলারা সবার পরে আসবে এবং নামায শেষে পুরুষদের আগে বের হয়ে যাবে। ৬. কোনো অবস্থাতেই পুরুষদের সাথে মেলা-মেশার আশঙ্কা না থাকতে হবে। উপরন্তু, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হায়াতেই মহিলাদের মসজিদে নববীতে না এসে নিজের ঘরের অন্দরমহলে নামায পড়ার জন্য তাকীদ করতেন।
একদা হযরত উম্মে হুমাইদ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন, আমি আপনার সঙ্গে নামায নামায পড়তে ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি জানি তুমি আমার সঙ্গে নামায পড়তে ভালবাস। কিন্তু তোমার ঘরে নামায তোমার বাইরের হুজরায় নামায অপেক্ষা উত্তম। আর তোমার হুজরায় নামায তোমার বাড়ীতে নামায অপেক্ষা উত্তম। আর তোমার বাড়ীতে নামায তোমার মহল্লার মসজিদে নামায অপেক্ষ উত্তম। আর তোমার মহল্লার মসজিদে নামায আমার মসজিদে নামায অপেক্ষা উত্তাম। অত:পর উক্ত মহিলা নিজ ঘরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নামাযের স্থান নির্ধারণ করে নিল এবং আমরণ তাতেই নামায আদায় করল। (মুসনাদে আহমাদ (হাদিস নং ১৭০৯০), সহীহ ইবনে খুযাইমা (হাদিস নং ১৬৮৯) ও সহীহ ইবনে হিব্বান (হাদিস নং ২২১৭)
অতঃপর নবীজীর ইন্তিকালের পর সামাজিক পরিবেশের সামান্য পরিবর্তনের কারণে সাহাবায়ে কেরাম মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দেন এবং মহিলারাও মসজিদে আসা বন্ধ করে দেয়। উম্মাহাতুল মুমিনীন এবং অন্যান্য মহিলা সাহাবীদের তাকওয়া- তহারাত, খোদাভীতি যা প্রবাদতুল্য, এবং পরবর্তীযুগের নারীদের জন্য যারা হলেন আদর্শ তাঁদের ব্যাপারে যদি এমন নিষেধাজ্ঞা হয়, তাহলে এমন ফেতনা-ফাসাদের ব্যাপকতার যুগে প্রকাশ্যে দিবালোকে বেপর্দার সাথে দুর-দুরান্ত থেকে মহিলাদের উক্ত সম্মেলনে যাতায়াত কীভাবে অনুমোদিত হতে পারে?
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
মহিলাদেরকে মাঠে-ময়দানে ডেকে এনে ওয়ায শোনানোর আয়োজনটা পরিপূর্ণ ভাবে শরীয়তসম্মত পন্থা নয়। কেননা মহিলাদের ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা হল, ইবাদত-বন্দেগী থেকে শুরু করে তাদের সকল কাজ পুরুষদের থেকে আলাদা হবে। তাদের অবয়ব ও চলাফেরা পুরুষদের দৃষ্টির আড়ালে থাকবে।
অতএব মাহফিল কমিটির কর্তব্য হবে, মহিলাদের জন্য মাহফিলে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা থেকেই বিরত থাকা। কেননা এর দ্বারা মহিলাদের ব্যাপারে শরীয়তের অনেকগুলো বিধান ও নির্দেশনার লঙ্ঘণ হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা পুরেপুরি নাজায়েযের আওতায় চলে যেতে পারে। তাই নিজেদের আবেগ ও চাহিদা অনুযায়ী আমল না করে শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় এবং শরীয়তের চাহিদা অনুযায়ী আমল করাই মুসলমানদের করণীয়।
দ্বীনের জরুরি ইলম শিক্ষা করা নারীদের উপরও ফরয। তাদেরকে সঠিক ঈমান-আকীদা শিক্ষা দেওয়া, তালীম-তরবিয়ত করা খুবই দরকার। তবে এর পদ্ধতি হতে হবে অবশ্যই শরীয়তসম্মত। আর তা হল ঘরের পুরুষরা দ্বীন শিখে তাদের নারীদেরকে শেখাবে। এমনিভাবে বাড়িতে বাড়িতে ঘরোয়া দ্বীনী মাহফিল এবং ঘরোয়া দ্বীনী তালীমের আয়োজন করা। আর ঘর/বাসার কাছে অনাবাসিক তালীমুল বানাতের ব্যবস্থা থাকলে সেখানে গিয়ে দ্বীন শিখে আসতে পারে। এতে প্রত্যেক ঘরেই দ্বীনী তালীমের চর্চা হবে এবং ঘরে ঘরে দ্বীনী পরিবেশ কায়েম হবে- ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا
‘নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)
নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ ‘তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম।’ (আবু দাউদ ৫৬৭)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِاِمْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ. فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ اكْتُتِبْتُ فِىْ غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتِ امْرَأَتِىْ حَاجَّةً قَالَ: اِذْهَبْ فَاحْجُجْ مَعَ اِمْرَأَتِكَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন পুরুষ যেন কক্ষনো কোন স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় নির্জনে একত্র না হয়, আর কোন স্ত্রীলোক যেন কক্ষনো আপন কোন মাহরাম ব্যতীত একাকিনী সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখানো হয়েছে। আর আমার স্ত্রী একাকিনী হজের উদ্দেশে বের হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ/হজ করো।
সহীহ : বুখারী ৩০০৬, মুসলিম ১৩৪১, আহমাদ ১৯৩৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০১৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৭৫৭।
হাদীস শরীফে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে।সুতরাং মহিলার জন্য এমন কোনো স্থান যেখানে নারী-পুরুষের অবাধ মিলামিশা নেই, এবং যেখানে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে শরয়ী পর্দার যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে,সেখানে যেতে পারবে।
তবে সফরের দুরত্বে হলে (৭৮ কিলোমিটার হলে) অবশ্যই সাথে মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে।
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
এক্ষেত্রে যদি আলাদা রুমে পর্দা ঘেরা পরিবেশে নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা না হয়,অথবা ফিতনার আশংকা যদি থাকে,সেক্ষেত্রে তাদের আপত্তি করা ঠিক আছে।
(০২)
এক্ষেত্রে নারীদের জন্য যদি আলাদা রুমে পর্দা ঘেরা পরিবেশে ব্যবস্থা করা হয়,সেক্ষেত্রে সমস্যা নেই।
কিন্তু পুরুষদের সাথে একই রুমে/স্থানে এ ধরনের ব্যবস্থা করলে সেক্ষেত্রে মূলত সমস্যা।
সেক্ষেত্রে এধরণের সেমিনার গুলোকে ইলম অর্জনের সেমিনার হিসেবে ধরা গেলেও শরয়ী নীতিমালা পূর্ণ অনুসরণ হয়নি বলা যায়।
এই আয়োজনে অংশগ্রহণ না করলে বোনেরা ইলম থেকে বঞ্চিত হবে এই ভাবনা লালন করা যায়না।
(০৩)
নারীদের জন্য মূলত বাড়িতে বাড়িতে ঘরোয়া দ্বীনী মাহফিল এবং ঘরোয়া দ্বীনী তালীমের আয়োজন করাই উত্তম, আর ঘর/বাসার কাছে তালীমুল বানাতের ব্যবস্থা থাকলে সেখানে গিয়ে দ্বীন শিখে আসাই উত্তম।
তদুপরি প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে নারীদের জন্য যদি আলাদা রুমে পর্দা ঘেরা পরিবেশে ব্যবস্থা করা হয়,ফিতনার আশংকা না থাকে,সেক্ষেত্রে পূর্ণ পর্দা করে এসব আয়োজনে যাওয়া যাবে।
সফরের দূরত্বে হলে বা কাছে হলেও প্রোগ্রামটি রাতে হলে সেক্ষেত্রে মাহরাম পুরুষ সাথে থাকা আবশ্যক।
(০৪)
এক্ষেত্রে নারীদের জন্য যদি আলাদা রুমে পর্দা ঘেরা পরিবেশে ব্যবস্থা করা হয়,ফিতনার আশংকা না থাকে,প্রোগ্রামটি দিনের বেলা হয়,সেক্ষেত্রে পূর্ণ পর্দা করে মহিলার সাথে এসব আয়োজনে যাওয়া যাবে।