আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
34 views
in পবিত্রতা (Purity) by (49 points)
edited by

আসসালামু আলাইকুম 

 

১) অনেকে মাযহাব বা ফাতওয়া না মানতে চাইলে এবং আমি মানলে সেক্ষেত্রে একই ঘরে থাকলে অনেক সময় দেখা যায় একটা সমস্যার সৃষ্টি হয় এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি? বিশেষ করে পবিত্রতা জনিত ব্যাপারে। নিচে বিস্তারিত ধারণা পাওয়ার জন্য কিছু প্রশ্ন আকারে লেখা হলো। 


 

২) আমার ঘরে কাপড় পাক হোক বা নাপাক হোক সকল কাপড় একসাথে বুয়াকে দিয়েই ধোয়ানো হয়। ঘরে কোন নাবালেগ নাই। আমি আমার নিজের কাপড় আলাদা করে একদিন বুয়া দিয়ে ধোয়াই৷ কিন্তুু বাকি সবার কাপড় একসাথে যার যেদিন কাপড় জমে সেভাবে দেওয়া হয়। এখন বিছানা চাদর ও এভাবে ধোয়ানো হয়। বিছানায় আমি আর আমার ছোটভাই দুজনে থাকি৷ কারো কাপড় নাপাক হলেও তা তো আমি আর জানবো না আর সবাইকে তো বারবার জিজ্ঞেস  করতে পারবো না। এখন বুয়া হয়তো তিনবার করে সব কাপড় ধোয় না। তবে ভালো করে সাবান পানি দিয়ে ধোয়। যদিও আমি নিজে দেখিনি বুয়া কিভাবে ধোচ্ছে। এতে আদৌও কাপড় পাক হয়? বিশেষ করে বিছানার চাদর। 

 

বিঃদ্রঃ আমি চাইলেই আমার ঘরের নিয়ম আমার মত পরিবর্তন হবে না। তারা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চালাবে। এখন তারা তো মাযহাব-ফতোয়াকে  এত গুরুত্ব দেয় না এখন আমার কি করনীয় আমি পরিবারের সাথেই থাকি এবং আমার আর অন্য কোন উপায় নাই। 



 

৩) আমার পরিবার ডিমে লেগে থাকা বিষ্ঠা নিয়ে তেমন গুরুত্ব দেয় না। আমার মা বর্তমানে অনেক সময় পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে এমনভাবে যে ডিম ধোয়ার সময় আশেপাশে পানি ছিটা লাগতে পারে বা সিন্কের কলের হাতলেও লাগায়৷ আমরা ঘরে নিজেদের ডিম নিজেরাই অনেক সময় রান্না করি। একেকজন হয়তো একেকভাবে করবে। কেউ হয়তো ডিম ধোবে না। আবার কেউ ধোলেও আশেপাশে যাওয়া ছিটা নিয়ে ভাববে না। আবার ডিম করার আগে ভেজা সিংকে রাখবে।  এক্ষেত্রে আমার কি করণীয়? 


 

৪) দুই ও তিন নং অনুযায়ী বিষয়গুলো কি নাপাক হয়?  যদি বিষয়গুলো নাপাক হয়ে যায় এবং আমি সেগুলোকে সেভাবে থাকতে দিয়ে এবং পরোয়া না করি তাহলে কি নাপাকি ছড়াবে? আমার তো আসলে কোন উপায় নাই। 


 

৫) অন্যদের পক্ষ থেকে ছড়ানো নাপাকি নিয়ে আমি যদি আমার মাথা না ঘামাই বা  বিষয়গুলোকে আর পাক না করতে চাই তাহলে আমার গুনাহ হবে বা উক্ত বিষয়গুলো কি নাপাক রয়ে যাবে? বিঃদ্রঃ আমার জন্য বিষয়গুলো পুনরায় পাক করা তীব্র মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে৷ সেইসাথে অনেক কষ্ট হবে৷ 



 

জাযাকাল্লাহু খাইরান

1 Answer

+1 vote
by (564,060 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


শরীয়তে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে কোনো পাক জিনিসকে নাপাক বলার সুযোগ নেই।
যাহা নিম্নোক্ত হাদীস থেকে প্রমানিত হয়।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي خَلَفٍ، قَالَا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، وَعَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ: شُكِيَ إِلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم الرَّجُلُ يَجِدُ الشَّىْءَ فِي الصَّلَاةِ حَتَّى يُخَيَّلَ إِلَيْهِ فَقَالَ " لَا يَنْفَتِلُ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا " . - صحيح : 

‘আব্বাদ ইবনু তামীম হতে তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করল যে, কখনো সলাতের মধ্যে কিছু একটা সন্দেহ হয় যে, তার অযু হয়ত নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বললেন, (বায়ু নির্গত হওয়ার) শব্দ না শুনা কিংবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সলাত ছাড়বে না।

বুখারী (অধ্যায়ঃ উযু, অনুঃ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহ বশতঃ উযু করতে হবে না, হাঃ ১৩৭), মুসলিম ৩৬২ (অধ্যায়ঃ হায়িয, অনুঃ পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর উযু নষ্ট হওয়ার সন্দেহ হলেও ঐ অবস্থায় সালাত আদায় করা জায়িয,মিশকাতুল মাসাবিহ ৩০৬)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিনে কেরামগন বলেছেনঃ

ব্যাখ্যা: قَوْلُهٗ (حَتّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَو يَجِدَ رِيْحًا) (যতক্ষণ না সে বায়ু বের হওয়ার শব্দ বা নির্গত বায়ুর গন্ধ পাবে ততক্ষণ নামাজ ছেড়ে আসবে না)। এর অর্থ হলো যতক্ষণ না সে শব্দ শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়া বা অন্য যে কোন পন্থায় তার বায়ু নির্গত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয় ততক্ষণ নামাজ পরিত্যাগ করবে না বা ছেড়ে আসবে না। তবে এতে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য শুধুমাত্র শব্দ শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়াটিই শর্ত নয়।

এ হাদীস আরও প্রমাণ করে যে, শারী‘আতের কোন বিষয়ে সন্দেহের মাধ্যমে সুনিশ্চিত বিষয় বাতিল হয়ে যাবে না। অতএব যার সন্দেহ হবে বায়ু নির্গত হয়েছে কিনা তবে সে তার অজু ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত থাকবে। নিশ্চিত না হাওয়া পর্যন্ত এ সন্দেহ তার কোন ক্ষতি করবে না। আর এটি অন্যান্য বিষয়েও সমভাবে প্রযোজ্য।

আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ,লিখেন,

اﻟْﻘَﺎﻋِﺪَﺓُ اﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔُ: اﻟْﻴَﻘِﻴﻦُ ﻻَ ﻳَﺰُﻭﻝُ ﺑِﺎﻟﺸَّﻚِّ
ﻭَﺩَﻟِﻴﻠُﻬَﺎ ﻣَﺎ ﺭَﻭَاﻩُ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻣَﺮْﻓُﻮﻋًﺎ {ﺇﺫَا ﻭَﺟَﺪَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻓِﻲ ﺑَﻄْﻨِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻓَﺄَﺷْﻜَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻨْﻪُ ﺷَﻲْءٌ ﺃَﻡْ ﻻَ ﻓَﻼَ ﻳَﺨْﺮُﺟَﻦَّ ﻣِﻦْ اﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺣَﺘَّﻰ
ﻳَﺴْﻤَﻊَ ﺻَﻮْﺗًﺎ، ﺃَﻭْ ﻳَﺠِﺪَ ﺭِﻳﺤًﺎ} 

ভাবার্থঃতৃতীয় উসূল,ঈয়াক্বিন(দৃঢ় বিশ্বাস)সন্দের দ্বারা খতম হয় না।[তথা কারো কোনো বিষয় সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে, সে বিষয় সম্পর্কে বিপরিত কোনো সন্দেহের উদ্রেক হলে পূর্ব বিশ্বাসের কোনো ক্ষতি হবে না।অর্থাৎ নতুন করে জন্ম নেয়া সন্দেহ অগ্রহণযোগ্য ]
মুসলিম শরীফের সনদে বর্ণিত হযরত আবু-হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত হাদীস তার  উজ্জল দৃষ্টান্ত।
হাদীসটি এই, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যদি কারো তার পায়ুপথে কিছু বের হওয়ার সন্দেহ হয়।এবং উক্ত বের হওয়া না হওয়া নিয়ে সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়।তাহলে সে যেন মসজিদ থেকে (অজু করার নিমিত্তে) বের না হয়,যতক্ষণ না সে বায়ুর আওয়াজ শুনছে বা এর দুর্গন্ধ তার নাকে আসছে।(আল-আশবাহ ওয়ান-নাযাইর;১/৪৭)............ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/293

শরীয়তের বিধান হলো কাপড়ে/ চাদরে নাপাকি লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রত্যেকবার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধোয়ার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাকে তাতে কোনো দোষ নেই। এতেই চাদর কিংবা কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে।  (হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃষ্ঠা নং ১৬১, বেহেশতি জিওর ২/৭৭ )

কাপড়ে অদৃশ্যমান নাজাসত লাগলে, কাপড়কে তিনবার ধৌত করে তিনবারই নিংড়াতে হতে।এবং শেষ বার একটু শক্তভাবে নিংড়ানো হবে যাতে করে পরবর্তীতে আর কোনো পানি বাহির না হয়।(ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া;২/৫৭৪,জা'মেউল ফাতাওয়া;৫/১৬৭) 

আরো জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/118

وغير المرئية بغسلهاثلاثا والعصر كل مرة
অদৃশ্যমান নাপাক বস্তু তিন বার ধৌত করতে হবে।এবং প্রত্যেকবার নিংড়াতে হবে।
(নুরুল ইযাহ ৫৬)

উল্লেখ্য, তিনবারের কথা বলা হয়, যাতে সন্দেহ না থাকে। অন্যথায় যদি প্রবাহমান পানি যেমন, নদী, পুকুরে বা টেপের পানিতে এত বেশি করে ধোয়া হয়, যাতে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয়ে যায় তাহলে তা পাক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তিনবার নিংড়িয়ে ধোয়া জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৩ আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৭ শরহুল মুনইয়া ১৮৩) 
,
আরো জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,

(০১)
আপনি নিজ হতে সতর্ক ভাবে চলবেন।

(০২)
আপনি বুয়াকে জোড় দিয়ে বলবেন, যাতে করে সে আপনাদের বিছানার চাদর তিন বার করে ধৌত করে।

আপনার ব্যবহৃত যাবতীয় নাপাক বস্তু বুয়াকে দিয়ে ৩ বার করে ধোয়ার বিষয় নিশ্চিত করলেই আর উক্ত সমস্যা থাকবেনা।

বুয়া কথা না শুনলে আপনি নিজে ধৌত করবেন অথবা বুয়া পরিবর্তন করবেন।

(০৩)
এক্ষেত্রে আপনার শরীরে বা কাপড়ে ডিমের খোসায় লেগে থাকা বিষ্ঠা লাগলে সেই স্থান ধুয়ে নিবেন।

আপনার শরীরে বা কাপড়ে ডিমের খোসায় লেগে থাকা বিষ্ঠা না লাগলে সেক্ষেত্রে আপনার কোনো টেনশন নেই।

(০৪)
উপরে দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন।
ইনশাআল্লাহ কোনো সমস্যা হবেনা।

(০৫)
আপনি নাপাকির ব্যাপারে নিশ্চিত হলে সেক্ষেত্রে তাহা হতে বেঁচে থাকবেন।

নাপাকি না দেখে,নাপাকির কোনো প্রমান না পেয়ে এমনিতেই কোনো কিছুকে নাপাক মনে করবেননা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...