আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
47 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (24 points)
اَلسَّلاَمْ عَلَيْـــــــــــكُمْ وَ رَحْمَةُ اللہِ وَبَرَكَاتُهُ


ছেলেদের কি নার্সিং এ পড়া জায়েজ আছে?  এটা সহশিক্ষা তো বটেই + এখানে ফিমেল বডি নিয়েও পড়াশোনা করতে হবে (রিয়েল বডি)।  তাছাড়া ক্যানোলা বা অনান্য সেবা দানের ক্ষেত্রেও তো মেয়ে পেশেন্ট থাকলে তাদের স্পর্শ করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে এটি পেশা হিসেবে বেছে নিলে তার বিধান কি হবে?
নিয়ত কেমন রাখলে তা উত্তম হবে?

1 Answer

0 votes
by (59,040 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব:-

https://ifatwa.info/53259/   নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

পর্দা রক্ষা করা ফরজ। এসম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলাইহি ওয়াসাললাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

আর অসুস্থ্য মানুষদের সেবা করাও সওয়াবের কাজ। যেহেতু মহিলাদের  জন্য মহিলা ডাক্তারের প্রয়োজন।  তাই মহিলাদের জন্য পর্দার বিধান পুরোপুরি ভাবে পালনের শর্তে ডাক্তারী শিক্ষা অর্জন করা জায়েজ আছে। (কিতাবুন নাওয়াজেল ১৪/২৫৬)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা (আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটি)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে,

قد تجد الطبيبة حرجا وصعوبات في تغطية وجهها عن غير المحارم أثناء عملها، فهل هذا يعتبر من الضرورة لكشفه؟

মহিলা ডাক্তার তার কর্মস্থলে ডিউটি করার সময় পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখতে সমস্যা ও কষ্ট হয়। সুতরাং চেহারা খোলা রাখার জন্য এটাকে জরুরত হিসেবে গণ্য করা যাবে কিনা?

তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,

يحرم على المرأة كشف وجهها لغير محارمها، وليس هناك ضرورة لكشف الوجه في العمل

নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা হারাম। আর ডিউটি করার সময় প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চেহারা খুলে রাখার জরুরত বিদ্যমান নেই। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১৭/২৭৭)

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত  ""মহিলা ডাক্তারি পড়তে গেলে তাকে অনেক কিছু ফেইস করতে হয়। যেমন পুরুষ রোগীর রিভিলিং বডি পার্ট দেখা, বা কোনো পুরুষ পেশেন্ট কে বিনা অনুমতিতে বিবস্ত্র দেখা, মর্গে পোস্ট মর্টাম এর সময় ছেলে মেয়ে উভয় কে দেখা ও প্রত্যেকটা বডি পার্ট চেক করা, কখনো বা পুরুষ স্যার বা ক্লাসমেট দের সো কোল্ড কুল ( অশ্লীল, হারাম জোকস সহ্য করা), কখনো আবার শিখার জন্যে নন মাহরাম এর সামনে হাল্কা হলেও চেহারা দেখানো! এগুলো সবই হারাম। এসব করলে মেয়েটির অবশ্যই  গুনাহ হবে। এসব ক্ষেত্রে করণীয় হলো ইহা থেকে বাঁচতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া,আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত ইস্তেগফার করা।  তওবা চালিয়ে যাওয়া।

মহিলা ডাক্তার এবং মহিলা নার্স এর মাধ্যমেই মহিলাদের সিজার বা সন্তান ডেলিভারি করা প্রয়োজন। এটি তাদের ইজ্জত-আব্রুর হেফজত এবং পর্দা রক্ষার জন্য সবচেয়ে উপযোগী একথায় কোনো সন্দেহ নাই।

তবে যদি এ বিষয়ে অভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তার ও নার্স না পাওয়া যায় তাহলে অনন্যোপায় হয়ে পুরুষ ডাক্তার বা নার্সের সাহায্য নেয়া জায়েয রয়েছে। এতে গুনাহ হবে না। কারণ এ ছাড়া আর বিকল্প নাই।

আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যই কিছু ইসলামি স্কলারগন  মুসলিম মহিলাদের মেডিকেল পড়াকে ফরযে কিফায়া বলেছেন। অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যে অবশ্যই কিছু মহিলার এ পেশায় আসা আবশ্যক যেন মহিলা সংক্রান্ত অসুখ-বিসুখ, সিজার, সন্তান ডেলিভারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদেরকে পর পুরুষ বা অমুসলিমদের শরণাপন্ন না হতে হয়।

সুতরাং সমাজের অর্থশালী ও উদ্যোগী ব্যক্তিদের জন্য মহিলাদের জন্য স্বতন্ত্র মেডিকেল কলেজ/ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা ফরজ- যেন আমাদের দ্বীনদার বোনেরা পর পুরুষ থেকে আলাদা থেকে নির্বিঘ্নে এ বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে পারে।

তবে স্বতন্ত্র ব্যবস্থা না থাকলেও দীনী কিছু বোনেরা পূর্ণ পর্দা ও শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে প্রচলিত সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেল বা নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করবেন এবং ভবিষ্যতে মহিলাদের জন্য আলাদা মেডিক্যাল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন।

وفي الأشباہ: الخلوۃ بالأجنبیۃ حرام۔ (الدر المختار، کتاب الحظر والإباحۃ / باب الاستبراء ۹؍۵۲۹ زکریا، ۶؍۳۶۸ کراچی)

গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে মহিলাদের সাথে একান্ত নির্জনে বসা/থাকা,অবস্থান করা হারাম।

وقال اللّٰہ تعالیٰ: {وَاِذَا سَاَلْتُمُوْہُنَّ مَتَاعًا فَاسْاَلُوْہُنَّ مِنْ وَرَآئِ حِجَابٍ ذٰلِکُمْ اَطْہَرُ لِقُلُوْبِکُمْ وَقُلُوْبِہِنَّ} [الأحزاب، جزء آیت: ۵۳]

قال القرطبي: ویدخل في ذٰلک جمیع النساء بالمعنی، وبما تضمنتہ أصول الشریعۃ من أن المرأۃ کلہا عورۃٌ بدنہا وصوتہا، کما تقدم فلا یجوز کشف ذٰلک إلا لحاجۃٍ کالشہادۃ علیہا۔ (تفسیر القرطبي ۱۴؍۲۲۷ دار إحیاء التراث العربي)

উক্ত আয়াতের ব্যখ্যায় ইমাম কুরতুবি রহঃ বলেছেন যে মহিলাদের পুরো শরীররই সতর,তাই চেহারা, খোলা জায়েজ নেই।

সহ শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ https://www.ifatwa.info/434

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে বিশেষ প্রয়োজন বশত এলাকায় মহিলা ডাক্তার না থাকার কারনে স্বামীর অনুমতি নিয়ে/ বিবাহিতা না হলে  অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে ফরজে কিফায়াহ (কিছু ইসলামী স্কলারদের মতানুসারে) এর দায়ীত্ব পালনার্থে যদি কোনো মহিলা পূর্ণ পর্দা পালন করে ডাক্তার হয় এবং পূর্ণ শরীয়ত মেনে মুসলিম নারীদের চিকিৎসা করে, তাহলে এই শিক্ষা অর্জন করা উচিত। এটাতেই সে ছওয়াব বেশি পাবে।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

নার্সিং একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। এর মাধ্যমে মানব সেবা করার উত্তম সুযোগ পাওয়া যায়। তবে অবশ্যেই পর্দার বিধান রক্ষা করা ফরজ। সাধারণত পুরুষ নার্স পুরুষ পেশেন্টের সেবা করবে এবং নারী নার্স মহিলা পেশেন্টের সেবা করবে। তবে বাধ্যগত অবস্থাতে রোগীর জীবন বাঁচানোর তাগীদে বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে পুরুষ নারীকে বা নারী পুরুষকে শরঈ বিধান মেনে সেবা দিতে পারে। সুতরাং মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে শরিয়তের বিধান মেনে নার্সিং পেশায় পড়াশুনা করা জায়েয আছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...