আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
718 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (8 points)
নাস্তিকরা বলে থাকেন মহানবী সাঃ নিষ্পাপ ছিলেন না (নাউজুবিল্লাহ)
তারা দলিল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদিস টি দেখায় এবং বলে একজন মানুষ নিষ্পাপ হওয়ার পরেও  কেন ইস্তেগফার করতেন
‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি।

’বুখারি, হাদিস : ৬৩০৭)

তাদের এই প্রশ্নের জবাব কি?

1 Answer

+1 vote
by (574,260 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


সমস্ত নবী রাসুল নিষ্পাপ। এটি কোরআন, হাদিস, উম্মতের ঐকমত্য সিদ্ধান্ত ও অকাট্য যুক্তির আলোকে প্রমাণিত। তবে কিছু আয়াতে যে  নবীদের তাওবা, ইস্তেগফার কবুল করা সংক্রান্ত এসেছে,তার মানে হলো বৈধতার সীমায় অবস্থান করে নবীরা যদি নিজস্ব ইজতিহাদ বা চিন্তার ভিত্তিতে কোনো অনুত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, আল্লাহ তাআলা সেটিও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন। 

যুগে যুগে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। সব নবী ও রাসুল নিষ্পাপ ছিলেন। কোনো নবীকে গুনাহগার বা কোনো কাজে আল্লাহর অবাধ্য মনে করলে ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। 

কাজি আয়াজ (রহ.) লিখেছেন : নবীগণ মাসুম তথা নিষ্পাপ হওয়ার বিষয়ে গোটা মুসলিম উম্মাহ ঐকমত্য রয়েছে।
,

নবি রাসুল দের নিষ্পাপ হওয়া সংক্রান্ত জানুনঃ 
,

সুরা ফাতহ এর ০২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

لِّیَغۡفِرَ لَکَ اللّٰهُ مَا تَقَدَّمَ مِنۡ ذَنۡۢبِکَ وَ مَا تَاَخَّرَ وَ یُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡکَ وَ یَهۡدِیَکَ صِرَاطًا مُّسۡتَقِیۡمًا ۙ﴿۲﴾

যেন আল্লাহ তোমার পূর্বের ও পরের পাপ ক্ষমা করেন, তোমার উপর তাঁর নিআমত পূর্ণ করেন আর তোমাকে সরল পথের হিদায়াত দেন। 
,
★★প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটির পূর্ণরুপঃ
  
বুখারী শরীফের ৬৩০৭ নং হাদীসে এসেছেঃ

أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ قَالَ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ وَاللهِ إِنِّي لأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫৪)
,
অন্য হাদীসে এসেছে 

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ أَبِي، بُرْدَةَ قَالَ سَمِعْتُ الأَغَرَّ، وَكَانَ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يُحَدِّثُ ابْنَ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ " .

আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ..... আবূ বুরদাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহাবা আগার (রাযিঃ) হতে শুনেছি, তিনি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা্ করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন একশ’ বার তওবা করে থাকি। (মুসলিম শরীফ,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৭)
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,    
উল্লেখিত হাদীসের অনেক রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
*রাসুলুল্লাহ সাঃ উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করতেন।
যাতে উম্মতও এমন করে।
,
*রাসুল সাঃ উম্মতের জন্য ইস্তেগফার পাঠ করতেন।
,
*নিজের মর্যাদা মহান আল্লাহর কাছে আরো বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করতেন।     

*মানুষ হিসাবে কখনও সখনও একজন নবীর অন্তরেও শয়তানী ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি হতে পারে। একজন মানুষ যত বড় মুত্তাকী আর আল্লাহ ওয়ালাই হোক না কেন, তার অন্তরেও গুনাহের তাড়না হিসহিস করে উঠতে পারে। যত ওলী, বুযুর্গ, সুফী-সাধক এ পৃথিবীর বুকে ছিলেন, তাঁরা সবাই পাপের এ উত্তপ্ত ছোঁয়া উপলব্ধি করেছেন। পাপের আকাঙ্খা প্রত্যেকের হৃদয় জগতে জেগেছে। সে হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনেও এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তাঁরা ছিলেন আলোকিত হৃদয়ের মানুষ। তাঁদের উপর ছিল আল্লাহর বিশেষ রহম ও করম। যার ফলে তাঁরা সর্ব প্রকার গুনাহ থেকে নিজেদেরকে সযত্নে দূরে রাখতে পেরেছিলেন। 
,
শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও নফসের আকুলি বিকুলি সর্ম্পকে তাঁরা ছিলেন পূর্ণ সতর্ক ও সচেতন। তাই পাপের বিষাক্ত ছোবল তাঁদের কে আক্রমণ করতে পারে নি। বুঝাগেল গুনাহের বাসনা যে কারো মনেই জাগতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। [ইসলাহী খুতুবাত:৬/৪৫৯-৪৬১]

,
এই ব্যাখ্যার সমর্থনে হাদীস পাওয়া যায়ঃ

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَأَبُو الرَّبِيعِ الْعَتَكِيُّ، جَمِيعًا عَنْ حَمَّادٍ، قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنِ الأَغَرِّ الْمُزَنِيِّ، - وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّهُ لَيُغَانُ عَلَى قَلْبِي وَإِنِّي لأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ فِي الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ "

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও আবু রাবী আল আতাকী (রহঃ) ...... রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহাবা আগার আল মুযানী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার অন্তরে কখনো কখনো অলসতা দেখা দেয়, তাই আমি দৈনিক একশ’ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি। (মুসলিম শরীফ,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১২, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৬)
,


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...