এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে।(সূরা নাহল-৪৩)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। (সূরা নিসা-৫৯)
উক্ত আয়াতে اولي الامرউলূল আমর এর ব্যখ্যায় হযরত জাবের রাযি, হযরত ইবনে আব্বাস রাযি,আ'তা রাহ,মুজাহিদ রাহ,যাহহাক,আবুল আলিয়া রাহ,হাসান বসরি রাহ সহ অসংখ্য সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈন উল্লেখ করেন যে,এখানে উলূল আমর দ্বারা খুলাফা,উলামা,ফুকাহা উদ্দেশ্য।স্বয়ং আহলে হাদীসদের ইমাম নাওয়াব সিদ্দিক হাসান খান রাহও এ ব্যখ্যাকে নিজ তাফসীরের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
তাছাড়া হাদীসে এসেছে,
انما شفاء العي السوال
বক্রতা বা অজ্ঞদের শে'ফা হল,তারা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে।
এখন প্রশ্ন হল জ্ঞানী কারা?সমাজে যাদেরকে আলেম বলা হয়,তারাই কি জ্ঞানী?না এর জন্য বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যর প্রয়োজন রয়েছে?
যার তাকলীদ করা হবে, তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম একটা পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েঝেন।
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ, উনার অমর গ্রন্থ আকিদাতুল-জায়্যিদ এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন।মোটকথাঃ এ সমস্ত শর্তসমূহ আজকাল প্রায় বিরল।
তাকলীদের দু'টি শাখা রয়েছে যথাঃ-
(১)তাকলীদে শাখসী বা ব্যক্তি তাকলীদ।অর্থাৎ শরীয়তের প্রত্যেকটি মাস'আলায় নির্দিষ্ট কোনো একজনকে তাকলীদ করা।
(২)তাকলীদে গায়রে শাখসী বা স্বাধীন তাকলীদ, অর্থাৎ যেকোনো মাস'আলায় যেকোনো একজনকে তাকলীদ করা।সহজ কথা নিজের ইচ্ছানুযায়ী একেক মাস'আলায় একেকজনের তাকলীদ করা।
মুতাওয়াতির পর্যায়ের বর্ণনার মাধ্যমে প্রমাণিত রয়েছে যে, কারো কোনো মাস'আলা জানা না থাকলে না,তিনি বিজ্ঞজনের তাকলীদ করবেন।তাকলীদ করা ফরয।এটা হলো মতলকে তাকলীদ তথা সাধারণ তাকলীদের বিধান।সমস্ত উলামায়ে কেরাম এমনকি আহলে হাদীসের মুহাক্বিক ইমামগনও মতলকে তাকলীদ তথা সাধারণ তাকলীদকে স্বীকার করে থাকেন।অধিকাংশ আহলে হাদীস সাধারণ তাকলীদের ফরযিয়্যাতেরও প্রবক্তা।
সুতরাং অজ্ঞদের জন্য বিজ্ঞজনের তাকলীদ করা যে ফরয,এতে কারো দ্বিমত নেই,মতবিরোধ নেই।
তাকলীদের পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
তাকলীদে শাখসী করা হবে না গায়রে শাখসী করা হকে।
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত তাকলীদে শাখসী গ্রহণযোগ্য মনে করেন।এবং এ ব্যাপারে তারা ওয়াজিবের বিধান প্রয়োগ করেন।ফরযের বিধান এজন্য আরোপ করেন না।
,
কেননা সাধারণ তাকলীদের দু'টি শাখা রয়েছে।(ক)তাকলীদে শাখসী(খ)তাকলীদে গায়রে শাখসী।যেহেতু সর্বসম্মতভাবে মতলকে তাকলীদ ফরয।এবং তার দু'টি শাখা রয়েছে।তাই কোনো একটাকে মেনে নিলেই ফরয বিধান যে তাকলীদ রয়েছে,সেটা পালন হয়ে যাবে। চায় শাখসীকে পালন করা হোক বা গায়রে শাখসীকে পালন করা হোক।সুতরাং তাকলীদে গায়রে শাখসী করা দ্বারা ঠিক সেভাবেই ফরয দায়িত্ব আদায় হবে,যেভাবে তাকলীদে শাখসী দ্বারা ফরয দায়িত্ব আদায় হয়।
মুজতাহিদ ফিল মাযহাব তথা যিনি নিজে নিজে সরাসরি কুরআন-হাদীস থেকে শরীয়ত বুঝার ক্ষমতা রাখেন।
অর্থাৎ যিনি নিম্নোক্ত পাঁচটি বিষয়ে যথেষ্ট পারদর্শী থাকবেন।(১) তাফসীর(২)হাদীস ও হাদীসের রাবী(৩)আরবী ভাষা(৪)সালাফে সালেহীনদের বর্ণনাকৃত মাসাঈল ও তাদের মন্তব্য সমূহ।(৫)এবং কুরআন-হাদীস থেকে কিয়াস করে হুকুম বের করা যোগ্যতা।
উপরোক্ত বিষয়ে পারদর্শী কোনো ব্যক্তির জন্য তাকলীদে শাখসীর কোনো প্রয়োজন নেই।উনার কাছে নিজ ইমামের বিপরিত কোনো একটি দিক কুরআন-সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী প্রমাণিত হলে, উনি সেটার উপরই আ'মল করবেন। এমনকি তখন উনার জন্য নিজ ইমামের অনুসরণ বৈধ হবে না।(মাযহাব কি ও কেন দ্রষ্টব্য)