ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব:-
যিকির করার ক্ষেত্রে তাসবিহ,দানা ব্যবহার নাজায়েজ
বা বিদ'আত নয়। সাধারণ তাসবিহ বা দানার মত
ডিজিটাল তাসবিহ এরও একই বিধান।
হাদীস শরীফে এসেছে যে,
উম্মুল মুমিনীন সাফিয়্যা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ وَبَيْنَ
يَدَيَّ أَرْبَعَةُ آلَافِ نَوَاةٍ أُسَبِّحُ بِهَا ، فَقَالَ : لَقَدْ سَبَّحْتِ
بِهَذِهِ ، أَلَا أُعَلِّمُكِ بِأَكْثَرَ مِمَّا سَبَّحْتِ بِهِ ، فَقُلْتُ :
بَلَى عَلِّمْنِي . فَقَالَ : قُولِي : سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ
একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে
এলেন। আমার কাছে তখন চার হাজার খেজুর-বীচি ছিল। এগুলো দ্বারা আমি তাসবিহ পাঠ
করছিলাম। তিনি বললেন,
তুমি
তো এগুলোর মাধ্যমে তাসবিহ পাঠ করছ। যে পরিমাণ তাসবিহ তুমি পাঠ করেছ, তদপেক্ষা বেশী
পরিমাণের উপায় কি আমি তোমাকে শিখিয়ে দিব? আমি বললাম, অবশ্যই আমাকে শিখিয়ে
দিন। তিনি বললেন,
তুমি
বলবে, (سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ) – সৃষ্টির পরিমাণ
সংখ্যকবার সুবহানাল্লাহ। (তিরমিযি ৩৫৫৪)
সা’দ ইবন আবূ ওয়ক্কাস রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর সঙ্গে এক মহিলার কাছে গেলেন। উক্ত মহিলার সামনে তখন কিছু
খেজুর-বীচি ছিল। এগুলো দিয়ে তিনি তাসবিহ পাঠ করছিলেন। নবীজী ﷺ তাকে বললেন, এর চেয়ে সহজ ও উত্তম উপায় সম্পর্কে কি তোমাকে অবহিত করব? তা হল,
سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي
السَّمَاءِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الأَرْضِ وَسُبْحَانَ
اللَّهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذَلِكَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ
وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِثْلَ ذَلِكَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَلاَ حَوْلَ
وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ
অর্থাৎ, আল্লাহ মহাপবিত্র আকাশে তার
সৃষ্টি জীবের সমসংখ্যক,
আল্লাহ
মহাপবিত্র দুনিয়াতে তার সৃষ্ট জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র
এতদুভয়ের মধ্যকার সৃষ্টির সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র তিনি যে
সকল প্রাণী সৃষ্টি করবেন তার সমসংখ্যক, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ তা’আলা মহান, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ
তা’আলার প্রশংসা,
অনুরূপ
সংখ্যকবার আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কল্যাণ করার বা ক্ষতিসাধনের আর কোন শক্তি নেই। (আবু
দাউদ ১৩১৭)
ইবন নুজাইম আলহানাফি রহ. বলেন,
فلم ينهها عن ذلك وإنما أرشدها إلى هو أيسر
وأفضل ولو كان مكروها لبين لها ذلك ، ثم هذا الحديث ونحوه مما يشهد بأنه لا بأس
باتخاذ السبحة المعروفة لإحصاء عدد الأذكار
রাসূলুল্লাহ ﷺ উক্ত মহিলাকে
নিষেধ করেন নি। তিনি কেবল এর চেয়ে উত্তম ও সহজটা বলে দিয়েছেন। যদি এটি নিষিদ্ধ হত
তাহলে তিনি বলে দিতেন। অতপর এই হাদিস ও অনুরূপ আরো হাদিস একথার দলিল যে, জিকিরের গণনার জন্য
প্রচলিত তাসবিহ-দানা ব্যবহারে কোনো অসুবিধা নেই। (আল বাহরুর রায়িক ২/৩১)
ইসলামী স্কলারগন বলেছেন,
তাসবিহ-দানা ব্যবহারকে নাজায়েয বা বেদআত বলা
যাবে না। কেননা এটি কেবল জিকিরের উসিলা বা মুযাক্কির; যা আমাদেরকে জিকিরের
কথা মনে করিয়ে দেয়। আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা (১১/২৮৩)-তে এসেছে,
أجاز الفقهاء
التسبيح باليد والحصى، والمسابح خارج الصلاة
ফকিহগণ
নামাজের বাইরে হাত,
কংকর
ও তাসবিহ-মালা দ্বারা তাসবিহ পাঠের অনুমতি দিয়েছেন।
এমনকি
আল্লামা মানাবি রহ. বলেন,
لم ينقل عن
أحد من السلف ولا الخلف كراهتها
পূর্ববর্তী এবং
পরবর্তী কোনো ফকিহ একে মাকরূহ বলেন নি। (ফয়যুল কাদির ৪/৩৫৫)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনী ভাই/বোন!
সাধারণ তাসবিহ বা দানার মত
ডিজিটাল তাসবিহ এরও একই বিধান। জিকির গণনায় তাসবিহ-দানা ব্যবহার করার চাইতে উত্তম
হল, হাতে গণনা করা । কারণ, হাতের আঙ্গুল বা
আঙ্গুলের কর ব্যবহার করা সুন্নাত। প্রশ্নে উল্লেখিত যিকির করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল তাসবিহ, দানা ব্যবহার নাজায়েজ
বা বিদ'আত নয়। আকীদা বিশুদ্ধ রেখে
পড়া যাবে।