বিবাহ ও দেনমোহর

Question

আসসালামু আলাইকুম হযরত। আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধ রইলো।

প্রশ্ন ১: অনেক বছর আগে WhatsApp এ একজন মেয়ের সাথে মেসেজিং করার সময় আমি তাকে বলি, আমাকে বিয়ে করতে রাজি থাকলে কবুল বলো? মেয়ে মেসেজের উওরে বলেছে কবুল। পরে আমি মেয়েকে বলেছিলাম এখন কি সত্যি আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পরে মেয়ে বলেছে আরে না, এভাবে কি বিয়ে হয় নাকি। এতে কি সত্যি বিয়ে হয়ে যাবে?

প্রশ্ন ২: আমার বন্ধুর বিয়ের দেনমোহর ৫ লক্ষ টাকা ছিল। বউয়ের সাথে তালাক হয়ে গিয়েছে। আমার বন্ধু তার বউকে দেনমোহর এর ৩ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি দেনমোহরের টাকা মাফ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে তার সাবেক বউকে। বন্ধুর অনুরোধে তার সাবেক বউ ডায়েরীর পাতায় লিখিত দিয়েছে সে স্বেচ্ছায় দেনমোহরের বাকি ২ লক্ষ টাকা মাফ করে দিয়েছে। তার সাবেক স্বামীর কাছে তার আর কোনো দাবি নেই। ভবিষ্যতে আমার বন্ধুর বউ পুনরায় বাকি দেনমোহর এর টাকা দাবি করলে সেটি কি ইসলামি শরীয়তে বৈধ হবে?

Answer 1

ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু।

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।

জবাবঃ

বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল  আযাদ প্রাপ্ত বয়স্ক বিবেকবান দু’জন মুসলিম পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা স্বাক্ষীর সামনে পাত্র/পাত্রি প্রস্তাব দিবে আর অপরপক্ষ পাত্র/পাত্রি তা কবুল করবে। আর সাক্ষিগণ উভয়ের কথা সুষ্পষ্টভাবে শুনবে। সুতরাং বিয়ের মজলিসে সাক্ষীর উপস্থিত ছাড়া বিয়ে সহীহ হবে না।

 

হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ لا نِكَاحَ إِلا بِوَلِيٍّ وَشَاهِدَيْ عَدْلٍ ، وَمَا كَانَ مِنْ نِكَاحٍ عَلَى غَيْرِ ذَلِكَ ، فَهُوَ بَاطِلٌ

আয়শা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্  ﷺ বলেছেন, অভিবাক ও দু’জন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষীর উপস্থিতি ব্যতিত বিয়ে শুদ্ধ হয় না। যে বিবাহ অভিবাক ও সাক্ষীর উপস্থিতি ব্যতিত হবে তা বাতিল। (সহিহ ইবন হিব্বান ৪০৭৫)

 

ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-

فى الدر المختار- ( و ) شرط ( حضور ) شاهدين ( حرين ) أو حر وحرتين ( مكلفين سامعين قولهما معا ) (الدر المختار ، كتاب النكاح،-3/9)

অনুবাদ-বিবাহ সহীহ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ [যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়] এমন দুইজন আযাদ পুরুষ সাক্ষি বা একজন আযাদ পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষি হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল  বলার উভয় বক্তব্য স্বকর্ণে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। {আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮}

 

বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হল মৌলিকভাবে দু’টি। যথা-

১-ইজাব কবুল হওয়া।

২-দুইজন মুসলিম প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ বা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা উক্ত ইজাব কবুল স্বকর্ণে শুনা।

 

ব্যস উক্ত দু’টি শর্ত পাওয়া গেলেই বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়।

যার পুরোপুরি ব্যাখ্যা হলোঃ-

স্বামী স্ত্রীকে ইজাব তথা প্রস্তাব দিবে বা কোন ব্যক্তিকে উকিল বানিয়ে স্বামীর পরিচয় ও দেনমোহর উল্লেখ করে প্রস্তাব দিবে, আর স্ত্রী সেই প্রস্তাবকে কবুল করবে। কিংবা স্ত্রী নিজে স্বামীকে প্রস্তাব দিবে আর স্বামী তা কবুল করবে, কিংবা স্ত্রীর অনুমতিক্রমে তার উকীল গিয়ে স্বামীকে প্রস্তাব দিবে আর স্বামী তা কবুল করবে। আর উক্ত প্রস্তাব এবং কবুল বলার বিষয়টি উপস্থিত থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক দুইজন মুসলিম পুরুষ বা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও দুইজন মহিলা স্বকর্ণে শুনবে। তাহলেই শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে।

 

★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. না, এর দ্বারা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিয়ে হয়নি। কারণ, বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো আযাদ প্রাপ্ত বয়স্ক বিবেকবান দু’জন মুসলিম পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা স্বাক্ষীর সামনে পাত্র/পাত্রি প্রস্তাব দিবে আর অপরপক্ষ পাত্র/পাত্রি তা কবুল করবে। আর সাক্ষিগণ উভয়ের কথা সুষ্পষ্টভাবে শুনবে। সুতরাং বিয়ের মজলিসে সাক্ষীর উপস্থিত ছাড়া বিয়ে সহীহ হবে না।

 

২. মহরের টাকা যেহেতু একমাত্র স্ত্রীর অধিকার। সুতরাং এটি স্পষ্ট যে মহিলা যদি সন্তুষ্টি চিত্তে মাফ করে দেয়, বা কমিয়ে দেয়, তবেই সেটা জায়েয হবে এবং পরবর্তীতে এটা স্ত্রী দাবি করতে পারবে না। 

,

অন্যায় ভাবে অন্যের সম্পদ যেমন গ্রাস করা হালাল নয়, জোড় কাহারো থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া যেমন হালাল নয়, ইহার দ্বারা যেমন ছিনতাইকারী/জালেম যেমন উক্ত টাকার উপর যেমন মালিক হয়না, তেমনই জোড় করে স্ত্রীর কাছ থেকে মোহরানা মাফ করে নিলে বা কমিয়ে নিলে সেটাও হালাল নয়। হারাম।

এর দ্বারা মোহরানা মাফ বা কমানো হবেনা, মহান আল্লাহর কাছে এর জবাবদিহি করতে হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

وَعَنْ أَبِىْ حُرَّةَ الرَّقَّاشِىِّ عَنْ عَمِّه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «أَلَا لَا تَظْلِمُوا أَلَا لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ وَالدَّارَقُطْنِىِّ فِى الْمُجْتَبٰى

আবূ হুররাহ্ আর্ রক্কাশী (রহঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! কারো ওপর জুলুম করবে না। সাবধান! কারো মাল তার মনোতুষ্টি ছাড়া কারো জন্য হালাল নয়। (আহমাদ ২০৬৯৫, শু‘আবুল ঈমান ৫১০৫, ইরওয়া ১৪৫৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৬২। মিশকাত শরীফ ২৯৪৬)

আরো বিস্তারিত জানুন- https://www.ifatwa.info/6833/