আল্লাহ বলেন,
হে মানুষ, যমীনে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট (প্রকাশ্য) শত্রু। (সূরা বাকারাহ:১৬৮)
প্রশ্ন: তিমি, কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি সামুদ্রিক প্রাণী কি খাওয়ার বিধান কি?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত এবং হারাম ঘোষিত প্রাণী ব্যতীত সমস্ত সকল প্রকার সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া হালাল। সুতরাং এ দৃষ্টিতে তিমি মাছ, কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি সবই হালাল প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত।
ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত এবং হারাম ঘোষিত প্রাণী ব্যতীত সর্বপ্রকার সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া হালাল হওয়ার ব্যাপারে কুরআন-হাদিসের বক্তব্য:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তা খাওয়া হালাল করা হয়েছে, তোমাদের ও পর্যটকদের ভোগের জন্য। ” (সূরা মায়িদাহ: ৯৬)
আল্লাহ তা'য়ালা আরও বলেন:
“বলুন, ‘আমার প্রতি যে ওহী হয়েছে তাতে, লোকে যা খায় তার মধ্যে আমি কিছুই হারাম পাই না, মৃত, বহমান রক্ত ও শুকরের মাংস ছাড়া । কেননা এগুলো অবশ্যই অপবিত্র অথবা যা অবৈধ, আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য উৎসর্গের কারণে।” (সূরা আন'আম: ১৪৫)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহিলী যুগের লোকেরা কিছু জিনিস খেতো এবং ঘৃণাবশত কিছু জিনিস পরিহার করতো। এ অবস্থায় আল্লাহ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রেরণ করলেন এবং তাঁর কিতাব অবতীর্ণ করলেন এবং তাতে কিছু জিনিস হালাল করলেন ও কিছু জিনিস হারাম করলেন। তিনি যা হালাল করেছেন তা হালাল এবং যা হারাম করেছেন তা হারাম, আর যেগুলো সম্পর্কে নীরব থেকেছেন তাতে ছাড় দেয়া হয়েছে। অতঃপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিলাওয়াত করেনঃ ‘‘আপনি বলুন, আমার নিকট যে ওয়াহী এসেছে তাতে এমন কোনো জিনিস পাইনি যা আহার করা কারো জন্য হারাম।’’ আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (সুনান আবু দাউদ:৩৮০০)
সালমন আল-ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত।..।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:আল্লাহ তাঁর কিতাবে যেসব জিনিস হালাল করেছেন তা হালাল এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে যেসব জিনিস হারাম করেছেন তা হারাম। আর যেসব জিনিস সম্পর্কে তিনি নীরব থেকেছেন তা তিনি ক্ষমা করেছেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৩৬৭,তিরমিযি ১৭২৬,মিশকাত ৪২২৮ ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:‘আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে যা হালাল করেছেন তা হালাল, যা হারাম করেছেন তা হারাম, আর যে বিষয়ে তিনি নীরব থেকেছেন তা ক্ষমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমাকে গ্রহণ কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বিস্মৃত হন না। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন, ‘তোমার প্রতিপালক বিস্মৃত হন না’ (মারিয়াম ১৯/৬৪)।[ হাকেম, দারাকুৎনী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৫৬।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
“সাগরের পানি পবিত্র এবং এর মৃত প্রাণী (মাছ ইত্যাদি) খাওয়া হালাল।” (আবু দাউদ ৮৩,তিরমিযী ৬৯, , ইবনে মাজাহ ৩৮৬ (৩৮৭-৮৮), নাসাঈ ৫৯, ৩৩২, ৪৩৫০।হাদিসটি আলবানী রহ. ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে সহীহ বলেছেন: ১/২১)
তাছাড়া ইসলামের একটি অন্যতম মূলনীতি হল, দুনিয়াবি সকল বস্তুই বৈধ যতক্ষণ না ইসলামে সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়। আর কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি খাওয়ার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নায় নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় না।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হল যে, উপরোক্ত সামুদ্রিক প্রাণী বৈধতার ব্যাপারে কোন বাধা নেই।এগুলোকে মাকরূহ বলাও প্রমাণ সাপেক্ষ নয়। তবে কারও যদি তা খেতে রুচি না হয় তবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এগুলোকে হারাম বা মাকরূহ বলার কোন যৌক্তিকতা নাই।
** যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা কোন প্রাণীর গোস্ত খাওয়া ক্ষতিকর প্রমাণিত হয় তাহলে তা খাওয়া হারাম। চাই তা সামুদ্রিক হোক অথবা স্থলচর হোক।
▪ কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর নিজেদেরকে হত্যা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।” (সূরা নিসা: ২৯)
▪ আল্লাহ আরও বলেন:
“নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।।” (সূরা বাকারা: ১৯৫)
----- ------ ------- ------ -----
ব্যাঙ খাওয়া হারামঃ
ব্যাঙ খাওয়া সর্বসম্মতভাবে হারাম। কারণ ব্যাঙ হত্যার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে।
যে সকল ব্যাঙ পানি ছাড়া বাঁচে না সেগুলোও খাওয়া হারাম কেননা হাদিসে ব্যাঙ হত্যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ ব্যাপারে হাদিস হল: আব্দুর রহমান ইবনে উসমান রা. থেকে বর্ণিত:
“কোন চিকিৎসক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি’ ওয়া সাল্লাম কে ব্যাঙ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন এটা ঔষধে প্রয়োগ করবেন কি না? তিনি ওটা হত্যা করতে নিষেধ করলেন।” (বুলুগুল মারাম ১৩৩১,আহমাদ ১৫৩৩০, নাসাঈ ৪৩৫৫, আবূ দাউদ ৩৮৭১, দারেমী ১৯৯৮, হাকিম ৪র্খ খণ্ড ৪১১ পৃষ্ঠা। সহীহুল জামে, হা/৬৯৭০)
আর শরীয়তের একটি মূলনীতি হল, যে প্রাণী হত্যা করা হারাম তা খাওয়াও হারাম। সেটা খাওয়া হালাল হলে তা হত্যা করা বৈধ হত।
কুমির খাওয়া হারাম:
কুমিরের ব্যাপারটি দ্বিমত পূর্ণ। জুমহুর বা অধিকাংশ আলেমদের মতে তা হারাম।
কুমিরের ব্যাপারে আলেমদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। তবে ইমাম মালেক ছাড়া অন্যান্য ইমামগণ যেমন ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ, আহমদ বিন হাম্বল তথা অধিকাংশ ইমামদের মতে কুমির খাওয়া হারাম। কারণ এটি উভচর প্রাণী। অর্থাৎ কুমির যেমন পানিতে বসবাস করে স্থল ও বন-জঙ্গলেও বসবাস করে। সেই সাথে এটি বড় বড় দাঁত বিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী।আর হাদিসে বড় বড় দাত বিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
আবূ সা‘লাবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁতওয়ালা যাবতীয় হিংস্র জন্তু খেতে নিষেধ করেছেন।(সহীহ বুখারী:৫৫৩০)
আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:“সকল প্রকার হিংস্র জন্তুই খাওয়া হারাম ।” (সহীহ মুসলিম ৪৮৮৬)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শিকারী দাঁতযুক্ত যে কোন হিংস্র জন্তু খাওয়া হারাম।(ইবনে মাজাহ ৩২৩৩, নাসাঈ ৪৩২৩,তিরমিযি ১৪৭৯, মিশকাত ৪১০৪)
ইবনু শিহাব (রহ.) আবূ ইদরীস খাওলানী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাবতীয় নখরওয়ালা হিংস্র প্রাণী খেতে নিষেধ করেছেন।(সহীহ বুখারী:৫৭৮১)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্নের উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।