ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব,
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ
الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡهُمۡ بِالَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ رَبَّکَ هُوَ
اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِهٖ وَ هُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُهۡتَدِیۡنَ ﴿۱۲۵﴾
তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায়
তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে
এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন। (সুরা নাহল ১২৫)
মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন বলেন যে,
(وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي
هِيَ أَحْسَنُ)
[আল-আনকুবৃতঃ ৪৬]
অন্য আয়াতে মূসা ও হারূন আলাইহিমাস সালাম-কে (فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا) [ত্বা-হাঃ ৪৪]
নওমুসলিমের করণীয় ও বর্জনীয়
প্রাজ্ঞ আলেমরা নওমুসলিমদের জন্য নিম্নোক্ত নির্দেশনাগুলো প্রদান করে থাকেন :
১. অন্তর থেকে এটা বিশ্বাস করা যে ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ দ্বিন বা জীবন
বিধান। জীবনের কোনো কিছুই ইসলামের গণ্ডির বাইরে নয়। ইসলামী শরিয়তই চূড়ান্ত শরিয়ত।
২. ঈমান পূর্বের সব পাপ মোচন করে। সুতরাং পূর্বের জীবনের কোনো ভ্রান্ত
বিশ্বাস ও পাপাচার যেন জীবনে ছায়া ফেলতে না পারে।
৩. মনে রাখতে হবে, ইসলামের উৎস কোরআন ও সুন্নাহ, কোনো
মুসলমানের কথা ও কাজ নয়। কোরআন ও সুন্নাহই সত্য ও মিথ্যার নির্ধারণের মাপকাঠি।
৪. গুরুত্বের সঙ্গে কোরআন, সুন্নাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর
জীবনী পাঠ করা।
৫. পবিত্রতার বিষয়গুলোতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া।
৬. নিজের জন্য সময়মতো এবং জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়কে আবশ্যক করে নেওয়া।
৭. যথাসম্ভব ইসলামী পরিবেশে মুসলমানদের সঙ্গে সময় কাটানো।
৮. নিজ মহল্লার মসজিদগুলো, মসজিদের ইমাম এবং মুসলিম প্রতিবেশীদের
সঙ্গে পরিচিত হওয়া।
৯. দিন-রাতের একটি সময় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য নির্ধারণ করা। চাই তা সম্মিলিতভাবে
হোক বা একাকী।
১০. পূর্ববর্তী জীবনে যারা পাপ কাজের সঙ্গী ছিল তাদের থেকে দূরে থাকা।
১১. আহলুল ইলম তথা মুসলিম সমাজের জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা। বিশেষত
যারা ইসলাম ও ইসলামের ব্যাপারে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয়
দ্বিনি পরামর্শ দিতে পারবে।
১২. মুসলমানদের মধ্যে যারা সামর্থ্যবান ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত তাদের সঙ্গে পরিচিত
হওয়া এবং যোগাযোগ রাখা। যেন অনভিপ্রেত কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে তাদের সাহায্য
পাওয়া যায়।
১৩. ইসলাম গ্রহণ করার পর কখনো কখনো সংকট তৈরি হতে পারে। এটাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে
পরীক্ষা মনে করবে এবং ধৈর্যের সঙ্গে দ্বিনের ওপর অটল থাকবে।
১৪. ইসলাম গ্রহণের পর পূর্ববর্তী ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ
ও চর্চার কারণে মনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হতে পারে। এসব প্রশ্নকে প্রশ্রয় না দেওয়া। যদি
নিজ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া না যায়, তবে আলেমদের সঙ্গে কথা বলা এবং
কোরআন ও হাদিসে তার উত্তর খোঁজা।
১৫. সব কিছুর ওপর আল্লাহর একত্ববাদ ও ইসলামী বিশ্বাসগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া। অর্থাৎ
সবার আগে ইসলামী বিশ্বাসগুলোকে আয়ত্ত করার চেষ্টা করা।
১৬. ইসলাম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন না করে কারো সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হবে
না। এতে মনোবল নষ্ট হতে পারে।
১৭. মা-বাবা যদি ইসলাম পরিপালনে বাধা না হন, তবে
তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করা। যথাসম্ভব ভালো আচরণ করা।
১৮. পরিবার-পরিজনের সঙ্গেও ঝগড়া-বিবাদ না করা। সম্ভব হলে তাদের দ্বিনের দাওয়াত
দেওয়া। পরিবার-পরিজনের সামনে ঈমান ও ইসলামের গুরুত্ব তুলে ধরা।
১৯. বর্তমানে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাই কোনো নওমুসলিমের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা না হলে তা দ্রুত সম্পন্ন করা।
২০. সর্বোপরি মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। যেন তিনি ঈমান ও ইসলামের
ওপর অটল থাকার তাওফিক দেন।
সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সর্বপ্রথম রবের শুকরিয়া আদায় করছি,
যিনি সেই ভাইকে ইসলামের সুশীতল
ছায়াতলে নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে দ্বীনের উপর
অটল ও কায়েম রাখুন এবং পূর্ণ ভাবে দ্বীন মানার তওফিক দান করুন,আমিন।
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে পরামর্শ থাকবে,
আপনি উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো
সম্পর্কে উক্ত ভাইকে ধীরে ধীরে বুঝাবেন এবং অফলাইনে কোন মাদ্রাসায় গিয়ে তার দ্বীন শেখার বিষয়ে সর্বাত্নক
গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে যেখানে নবমুসলিম কাউনসিলিং হয় এমন পরিবেশে
তাকে রাখার ফিকির করবেন ইনশাআল্লাহ।