আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
38 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (22 points)
আসসালামু আলাইকুম।
উস্তায,

০১। যাকাতের ক্ষেত্রে একটি শর্ত আছে 'মৌলিক প্রয়োজন / হাজতে আসলি' না হওয়া । হাজতে আসলি হল নিজের ও পৌষ্যপরিজনের খাদ্য, বস্ত্র,বাহন, বাসস্থান। এসব সম্পদে তো এমনিতেই যাকাত আসে না।(যাকাত আসে- ব্যবসায়িক সম্পদ, স্বর্ণ-রৌপ্য, টাকা,পশু,ফসল,খনিজ সম্পদের উপর।)
 তাহলে কি এর উদ্দেশ্য হলো- এসব প্রয়োজন মেটানোর জন্য রাখা টাকা-পয়সা?
যদি তা-ই হয় তবে ধরা যাক - এক লোকের ২ লাখ টাকা আছে। এর ১ লাখ টাকা হল এসব খরচের জন্য। তাহলে কেবল বাকি ১ লাখ টাকার যাকাত হবে???যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান মতে যাকাত ফরজ হওয়ার পর যাকাত প্রদান না করলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ

عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده أن امرأة أتت رسول الله صلى الله عليه و سلم ومعها ابنة لها وفي يد ابنتها مسكتان غليظتان من ذهب فقال لها ” أتعطين زكاة هذا ؟ ” قالت لا قال ” أيسرك أن يسورك الله بهما يوم القيامة سوارين من نار ؟ ” قال فخلعتهما فألقتهما إلى النبي صلى الله عليه و سلم وقالت هما لله عزوجل ولرسوله

অনুবাদ- আমর বিন শুয়াইব থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিন [দাদা] বলেনঃ এক মহিলা তার কন্যাসহ রাসূল সাঃ এর খিদমতে উপস্থিত হন। তার কন্যার হাতে মোটা দুই গাছি স্বর্ণের চুড়ি [কাঁকন] ছিল। তিনি [রাসূল সাঃ] তাকে বললেনঃ তোমরা কি এটার যাকাত আদায় কর? মহিলা বলেনঃ না। রাসূল সাঃ বলেনঃ তুমি পছন্দ কর যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের কাঁকন পরিধান করান? রাবী বলেনঃ একথা শুনে মেয়েটি তার হাত থেকে তা খুলে নবী করীম সাঃ এর সামনে রেখে দিয়ে বললঃ এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৫৬৩, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭৭৯৯, সুনানুল কুবরা লিননাসায়ী, হাদীস নং-২২৫৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২০০৫}

عن عبد الله بن شداد بن الهاد أنه قال دخلنا على عائشة زوج النبي صلى الله عليه و سلم فقالت ” دخل علي رسول الله صلى الله عليه و سلم فرأى في يدي فتخات ( خواتيم كبار ) من ورق فقال ” ما هذا يا عائشة ” ؟ فقلت صنعتهن أتزين لك يارسول الله قال ” أتؤدين زكاتهن ؟ ” قلت لا أو ماشاء الله قال ” هو حسبك من النار “

হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ ইবনুল হাদ থেকে বর্ণিত। তিন বলেন, আমরা রাসূল সাঃ এর স্ত্রী হযরত আয়শা রাঃ এর খেদমতে উপস্থিত হই। তখন তিনি বলেন, একদা রাসূল সাঃ আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার তাতে রূপার বড় বড় আংটি দেখতে পান। তিনি বলেন, হে আয়শা! এটা কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উদ্দেশ্যে রূপচর্চা করার জন্য তা বানিয়েছি। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি এর যাকাত পরিশোধ করে থাক? আমি বললাম, না অথবা আল্লাহ পাকে যা ইচ্ছে ছিল। রাসূল সাঃ বললেনঃ তোমাকে দোযখে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৫৬৫, সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১২৩৩, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৭৩৩৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৯৭৪, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১৪৩৭}

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হল বিশ মিসকাল। -সুনানে আবু দাউদ ১/২২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক  হাদীস ৭০৭৭, ৭০৮২
আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا بَكْرُ بْنُ خَلَفٍ وَمُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى قَالَا حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوسَى أَنْبَأَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ إِسْمَعِيلَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ وَاقِدٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ وَعَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَأْخُذُ مِنْ كُلِّ عِشْرِينَ دِينَارًا فَصَاعِدًا نِصْفَ دِينَارٍ وَمِنْ الْأَرْبَعِينَ دِينَارًا دِينَارًا

ইবনু ‘উমার ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বিশ দিনার বা তার চেয়ে কিছু বেশি হলে অর্ধ দিনার এবং চল্লিশ দিনারে এক দিনার (যাকাত) গ্রহণ করতেন।

ইবনে মাজাহ ১৭৯১ ইরওয়াহ ৮১৩।
দারাকুতনী ১৮৭৯, ১৮৯২।

সাড়ে ৫২ ভরি রুপা হলে তার উপর যাকাত ফরজ। 
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
عن أبي سعيد الْخُدْرِي رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «ليس فيما دون خمس أَوَاقٍ صدقة، ولا فيما دون خمس ذَوْدٍ صدقة، ولا فيما دُونَ خمسة أَوْسُقٍ صدقة».  
[صحيح] - [متفق عليه]

আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “পাঁচ উকিয়ার কম রৌপ্যমুদ্রায় যাকাত নেই এবং পাঁচটি উটের কমের ওপর যাকাত নেই। পাঁচ ওয়াসাক এর কম শষ্যের ওপর যাকাত নেই।”
(বুখারী,মুসলিম)

শরীয়তের বিধান হলো যদি কাহারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে পূর্ণ  নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৬৬,৭০৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩)

আরো জানুনঃ  

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
দৈনন্দিন প্রয়োজন বলতে নিজের ও নিজ পরিবারের খরচ চালানোর মত সামর্থ্য থাকা যেমন- সকলের খাওয়া দাওয়া, বাসা ভাড়া, বেতন বা ব্যবসা ইত্যাদি ঠিক থাকা। 
শরয়ি আইনানুগ খরচ হচ্ছে- ইসলামি শরিয়া কর্তৃক অনুমোদিত খরচাদি। যেমন ইসরাফ (সাধারণ অপচয়) ও তাবযির (হারাম কাজে ব্যয়) ব্যতীত নিজের খরচাদি, নিজ পরিবারের খরচাদি।

لدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (6/ 312):

وشرائطها: الإسلام والإقامة واليسار الذي يتعلق به) وجوب (صدقة الفطر).

(قوله: واليسار إلخ) بأن ملك مائتي درهم أو عرضاً يساويها غير مسكنه وثياب اللبس أو متاع يحتاجه إلى أن يذبح الأضحية، ولو له عقار يستغله فقيل: تلزم لو قيمته نصاباً، وقيل: لو يدخل منه قوت سنة تلزم، وقيل: قوت شهر، فمتى فضل نصاب تلزمه. ولو العقار وقفاً، فإن وجب له في أيامها نصاب تلزم۔

সারমর্মঃ- প্রয়োজন অতিরিক্ত বলতে বুঝায়, কাহারো নিকট বাসস্থান, পোশাক বা জিনিসপত্র ব্যতীত তার সমমূল্যের দুইশত দিরহামের মালিকানা রয়েছে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
দৈনন্দিন আবশ্যকীয়/প্রকৃত প্রয়োজন এমন একটি প্রয়োজনকে বুঝায় যা জীবন এবং মর্যাদার সাথে সম্পর্কিত, অর্থাৎ যদি এটি পূরণ না করা হয় তবে জীবন বা সম্মানের ক্ষতির ভয় থাকে, যেমন: খাবার, পানীয়, পরিধানের পোশাক, থাকার জন্য একটি ঘর, শিল্প এবং জ্ঞান পেশার মানুষ বাস্তব প্রয়োজনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়.

এমন দৈনন্দিন আবশ্যকীয়/প্রকৃত প্রয়োজন থেকে অতিরিক্ত সম্পদ যদি নেসাব পরিমান সম্পদে পৌছে,এবং এক বছর অতিবাহিত হয়,সেক্ষেত্রে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। 

এক্ষেত্রে দৈনন্দিন আবশ্যকীয় প্রয়োজন ধরতে হবে,সারা বছরেরটা নয়।

সুতরাং কাহারো কাছে যদি ২ লক্ষ টাকা থাকে,সেক্ষেত্রে তার ও তার স্ত্রীর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খাবার, পানীয়, পরিধানের পোশাক, থাকার জন্য একটি ঘর বাবদ খরচ ব্যাতিত যাহা থাকবে,তার যাকাত দিতে হবে।

তবে এক্ষেত্রে সারা বছরে খরচ ধরা যাবেনা। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...