আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
79 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
edited by
আসসালামু আলাইকুম। আমি দীর্ঘ বছর যাবত একজন ছেলেকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়ে দুয়া করে যাচ্ছি। সে অতন্ত দ্বীনদার, উত্তম আখলাকের অধীকারী মা শা আল্লাহ। (বিঃদ্রঃ আমাদের মধ্যে কোন ধরণের হারাম রিলেশন বা কোনরুপ যোগাযোগ নেই। হারাম রিলেশন সম্পর্কে জ্ঞান আছে বিধায় এমন সম্পর্কে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই ইন শা আল্লাহ।)

আমার পরিবারও তাকে পছন্দ করে আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু কোন একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার পরিবারের একজন সদস্যের সাথে আমার পরিবারের সদস্যদের মনোমালিন্য হয়। ফলস্বরূপ তার সাথে বিয়ে হওয়াটা প্রায় কঠিন এবং অসম্ভব বিষয় হিসেবে দাড়ায়। ছেলেটির সাথে আমার মানসিকতা, জীবনের লক্ষ উদ্দেশ্য অনেককিছুই অদ্ভুত রকমভাবে মিলে যায়। মা শা আল্লাহ। দূর সম্পর্কের আত্নীয় হওয়ায় তার ব্যাপারে জানাশোনা আছে। আমি যতদূর জেনেছি সেও আমাকে পছন্দ করে এবং জীবনসঙ্গী হিসেবে চায়, ইন শা আল্লাহ। এমতাবস্থায় আমি তাকে চেয়ে দুয়া করতে থাকি। ইস্তিখারাও করি এবং এটা দীর্ঘ বছর ধরে করছি। তার সাথে বিয়ে অসম্ভব ঠেকলেও আল্লাহ তায়ালার কাছে তো অসম্ভব বলে কিছু নেই। আর এই বিশ্বাসই আমাকে দুয়া করতে প্রেরণা যোগাচ্ছে।

উল্লেখ্য- এমন কিছু নাই যে তার সাথে বিয়ে না হলে আমার দুনিয়া ওলটপালট হয়ে যাবে। এমনকি আমার জন্য বিয়ের বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টাও করা হচ্ছে। কিন্তু কোথাও আমি দ্বীনদার পাত্র পাচ্ছিনা। পেলে আমি অবশ্যই রাজি হতাম। অনলাইনেও বায়ো দিয়েছি। কিন্তু কোথাও কথা এগোচ্ছে না, প্রোপোজাল আসে না তেমন, আসলেও ছেলে দ্বীনদার হয় না। দ্বীনদার আমার সাথে মানাসই কাউকে পেলে আমি বিয়ে করতে রাজিও হয়ে যাব। কিন্তু হচ্ছেনা। তারও এখনো কোথাও বিয়ে হয়নি।
এমতাবস্থায় সেই ছেলেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়ে যদি আমি আমার দুয়া কন্টিনিউ করি, এই দুয়া করতে কি কোন সমস্যা আছে? আমি কি দুয়া এবং ইস্তিখারা করা অব্যাহত রাখতে পারি?  মাঝে-মধ্যে দ্বিধায় পড়ে যাই আমার তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়ে দুয়া করা ঠিক হচ্ছে কিনা, যেহেতু সে গায়রে-মাহরাম। কিন্তু আমি তো হারাম কিছু চাইছি না, হালাল হিসেবে পাওয়ার জন্যই রবের কাছে মিনতি করছি। এখন এই দ্বিধা কনফিউশান কি আমার ওয়াসওয়াসার সমস্যার জন্য তৈরি হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছিনা। বিস্তারিত আমাকে নসীহত দিলে ভীষণরকম ভাবে উপকৃত হতাম, উস্তায ইন শা আল্লাহ।

জাযাকুমুল্লাহু খয়রন!

1 Answer

0 votes
by (59,970 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://www.ifatwa.info/4541/  নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি, যে,

বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তার মধ্যে ‘কুফু’ অন্যতম।

আরবি ‘কুফু’ শব্দের অর্থ সমতা, সমান, সাদৃশ্য, সমকক্ষ, সমতুল্য ইত্যাদি।


বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের দ্বীনদারি, সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের রুচি, চাহিদা, অর্থনৈতিক অবস্থান খুব বেশি ভিন্ন হলে সেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন প্রতিষ্ঠা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একজন উচ্চ শ্রেণীর ছেলেমেয়ের চাহিদা-রুচির সাথে একজন দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের রুচিবোধের মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক।


আবার একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।


আল্লাহ বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযুক্ত।’ (সূরা নূর : ২৬)


অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী পুরুষ যেন ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। আবার ব্যভিচারিণী নারী যেন ব্যভিচারী পুরুষ বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। মুমিনদের জন্য এ ধরনের চরিত্রের নারী-পুরুষকে হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা নূর : ৩)


কুরআনের পাশাপাশি রাসূল সা:-এর পবিত্র হাদিস শরিফেও ‘কুফু’ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।

রাসূল সা: ‘কুফু’র বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَابُورَ الرَّقِّيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ سُلَيْمَانَ الْأَنْصَارِيُّ أَخُو فُلَيْحٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ عَنْ ابْنِ وَثِيمَةَ النَّصْرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَتَاكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ خُلُقَهُ وَدِينَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৭,তিরমিযী ১০৮৪, ইরওয়াহ ১৮৬৮, সহীহাহ ১০২২।)


حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا الْحَارِثُ بْنُ عِمْرَانَ الْجَعْفَرِيُّ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ

 ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবচেনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৮)


وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدَّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ»

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত) চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করে সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু মহিলাকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত)! সহীহ : বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাঊদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২১, ইরওয়া ১৭৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৩।)


কুফু সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ  https://www.ifatwa.info/4541/

ইস্তেখারার নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/14451/


ছেলে ও ছেলের পরিবার যদি আপনার ও আপনার পরিবারের মত দ্বীনদার না হয় এবং আপনার ও আপনার পরিবারের কুফু এবং তার ও তার পরিবারের কুফুর সাথে মিল না থাকে তাহলে বিয়ের জন্য সামনে অগ্রসর না হওয়াই আমরা পরামর্শ দিবো। কারণ, একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দ্বীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!


কোথায় বিয়ে হলে ও কার সাথে বিয়ে হলে ভালো ও কল্যাণকর হবে এটা আল্লাহ তা'আলা ভালো জানেন। তাই আপনি এভাবে দোয়া করতে পারেন যে, হে আল্লাহ! যদি ঐ ছেলের সাথে বিয়ে হলে কল্যাণকর হয় তাহলে তার সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও। আর যদি অন্য কোথাও বিয়ে হলে কল্যাণকর হয় তাহলে সেটা ব্যবস্থা করে দাও।

আর আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে থাকুন। বিশেষ করে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে দোয়া করতে থাকুন। যেন আল্লাহ তাআলা উত্তম জীবনসঙ্গীর ব্যবস্থা করে দেন। যার সাথে বিয়ে হলে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তায়ালা সফলতা দান করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...