আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
59 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (7 points)

শিশুদের প্রহার করা, বিশেষ করে নাবালেগ অবস্থায় - এই অবস্থায় ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে জানতে চাই:

১) ইসলামে শাসন দ্বারা আসলে কি বুঝানো হয়েছে ? বেত, লাঠি, হাত, পা বা অন্য কিছু দিয়ে শরীরে আঘাত করা নাকি অন্য কোনো উপায় আছে ? এই শাসন কি শুধুই শারীরিক নাকি মানসিক-ও ? যেমন - এমন এমন কথা বলা শিশুদের, যেইটাতে তারা অপমানিত বোধ করতে পারে, মানসিকভাবে কষ্ট পেতে পারে ইত্যাদি। এইগুলোও কি এক ধরণের শাসন ?

২) আজকাল বলতে গেলে স্কুল, মক্তব, মাদ্রাসা, হিফজখানা ইত্যাদি জায়গায় ছাত্রদের বেত বা অন্যভাবে পিটানো এক ধরণের একটি ফেশন হয়ে গিয়েছে, যদিও বা প্রশাসনের ভয়ে অনেক জায়গায় এইগুলো বন্ধ আছে। কিন্তু, ভাবটা এমন, যদি প্রশাসন এর নিষেধাজ্ঞা না থাকতো, তাহলে পিটিয়ে একেবারে সোজা করে ফেলা হতো ! এইটা কি একটি অসুস্থ মানসিকতার লক্ষণ ?

৩) শিক্ষক, উস্তাদদের একটা বড় অংশই মনে করেন, প্রহার না করলে বাচ্চা/ছাত্ররা লাইনে আসবে না। মানুষ হবে না। বেয়াদব হয়ে যাবে, কথা শুনবে না। তাদেরকে যখন ইসলামিক নির্দেশনার কথা শোনানো হয় এই ব্যাপারে, যে, ইসলামে বাচ্চাদের, বিশেষ করে নাবালেগদের প্রহার করতে নিষেধ করা হয়েছে, তখন অনেকেই মুখ বাঁকা করে প্রতিউত্তর দেন যে -

"বর্তমান জমানায় না পিটালে হয় না, সময়ের ডিমান্ড হলো পিটুনি দিতেই হবে, না হলে সোজা হবে না। ঐসব আদর-মার্কা কথা বার্তা এই জমানায় চলে না"

এই ধরণের কথা বলার দ্বারা কি উস্তাদ, শিক্ষকদের ঈমান চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয় ? এই যে, উনারা ইসলামিক শিক্ষা-কে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলেন ? বর্তমান সময়ে এইগুলো দ্বারা কাজ হবে না বলে এক ধরণের নীচু-ভাব দেখালেন ইসলামের নির্দেশনাকে ?

৪) অনেক উস্তাদ আছেন হিফজ-বিভাগের, উনাদের এক একজনের হাতে অসংখ্য ছাত্র হাফেজ হয়েছে। উনারা আবার পিটুনি দিতেও খুব পারঙ্গম। একেবারে ছোট ছোট বাচ্চাদের, যাদের বয়স ৫/৬/৭, তাদেরকে ধুমসে পিটুনি দেন প্রতিদিন।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, অসংখ্য হাফেজ বানিয়েছেন, অপরদিকে ছাত্রদের, বিশেষ করে ছোট ছোট বাচ্চাদের মনের খায়েশ মিটিয়ে পিটুনি দিয়েছেন প্রতিদিন, এর দ্বারা উনার হাফেজ বানানোর সওয়াব কি নষ্ট হয়ে যাবে নাকি যেহেতু উনি হাফেজ বানিয়েছেন, এই কারণে আল্লাহ উনাকে পিটুনি দেওয়ার অপরাধ থেকে ক্ষমা করে দিবেন ?

1 Answer

0 votes
by (59,730 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/87060/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

হাদীস শরীফে এসেছেঃ-

وَعَنْهَا قَالَتْ: مَا ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لنَفسِهِ شَيْئًا قَطُّ بِيَدِهِ وَلَا امْرَأَةً وَلَا خَادِمًا إِلَّا أَنْ يُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا نِيلَ مِنْهُ شَيْءٌ قَطُّ فَيَنْتَقِمُ مِنْ صَاحِبِهِ إِلَّا أَنْ يُنْتَهَكَ شَيْءٌ مِنْ مَحَارِمِ اللَّهِ فينتقم لله. رَوَاهُ مُسلم

'আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থা ছাড়া কখনো কাউকেও স্বীয় হাতে প্রহার করেননি। নিজের স্ত্রীগণকেও না, সেবককে না। আর যদি তার দেহে বা অন্তরে কারো পক্ষ হতে কোন প্রকারের কষ্ট বা ব্যথা লাগত, তখন নিজের ব্যাপারে সেই লোক হতে কোন প্রকারের প্রতিশোধ নিতেন না। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করে বসত, তখন আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে শাস্তি দিতেন।

সহীহঃ মুসলিম ৭৯-(২৩২৮), মুসনাদে আহমাদ ২৪০৮০, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫০৭, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১৭৯৪২, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ১৪৮১, আবূ ইয়া'লা ৪৩৭৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৮৮, শু’আবূল ঈমান ১৪২৪, আস সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৯১৬৩, দারিমী ২২১৮, আল মুজামুল আওসাত ৫৪২৮, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৩৬৮৩।


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!


শিশুদের ১০ বছরের আগে প্রহার করা যাবেনা। আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

নাবী বলেছেন, “তোমাদের সন্তানদের বয়স সাতবছর হলে তাদেরকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স দশবছর হয়ে যাবে, তখন (নামাজ আদায় না করলে) তাদেরকে মারবে এবং তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করে দিবে।” [আবু দাউদ, হা/৪৯৫; আলবানী হাদীসটিকে ‘ইরওয়াউল গালীল’ গ্রন্থে (১/২৬৬; হা: ২৪৭) সহীহ বলেছেন।]


তাদেরকে গালি গালাজও করা যাবেনা।

عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلاَ اللَّعَّانِ وَلاَ الفَاحِشِ وَلاَ البَذِيءِ.

আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  মু’মিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৯৭৭]


হাদীস শরীফে এসেছে-

قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سِبَابُ المُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ»

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন মুসলিমকে গাল দেয়া ফাসিকী কাজ (জঘন্য পাপ) আর কোন মুসলিমকে হত্যা করা কুফরী। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭০৭৬]


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!


১-২. প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে শিক্ষার্থীদের ভয় ভীতির মধ্যে রেখে সঠিকভাবে নিয়ম কানুন মেনে চলার জন্য কঠোরতা অবলম্বন করা যাবে। সেক্ষেত্রে ১০ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের প্রহার করা যাবেনা,গালি দেয়াও যাবেনা।

ধমক দেয়া যেতে পারে। বেশি সমস্যাকর মনে হলে কান ধরে উঠা বসা করানো যেতে পারে বা তাদের অভিভাবকদের ডেকে এনে তাদেরকে দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ও তার চেয়েও বড় শিক্ষার্থীদের মাঝে মাঝে প্রহার করা যাবে।

তবে সেক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে, যেমনঃ চেহারায় প্রহার করা যাবেনা,লজ্জাস্থান তথা স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করা যাবেনা।

বিস্তারিত জানুনঃ

https://ifatwa.info/5263/


৩. এমন চিন্তা ধারা ও এমন কথা বলা ঠিক নয়। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যে, তারা শিশুদেরকে প্রহার করে না। তবুও সেখানে লেখাপড়া অনেক ভালো হয়। এর দ্বারা বুঝে আসে যে, শিশুদেরকে প্রহার করা ছাড়াও ভালো লেখাপড়া করানো সম্ভব। তাই শিশুদেরকে প্রহার করা ছাড়া ভালো লেখাপড়া করানো সম্ভব নয় এমন চিন্তাধারা থেকে বের হওয়া আবশ্যক।


৪. এটা আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...