আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
545 views
in হজ ও উমরা (Hajj and Umrah) by (17 points)
আসসালামু আলাইকুম,
আমি একটা ছোটখাট চাকরি করি, হালাল উপার্জনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করি। আমার পারিবারিকভাবে কোনো ধন-সম্পত্তি নেই। এমনকি যে ভিটের উপর ঘর তুলে থাকি সেটাও সরকারের কাছ থেকে আমার বাবা ৯৯ বছরের জন্য লীজ নিয়েছিলেন (এটাকে এনিমি প্রোপার্টি বলা হয় , মুক্তিযুদ্ধের সময় যে জমিগুলো ছেড়ে অনেকে ভারতে চলে গিয়েছিল সেগুলো বসবাসের জন্য সরকার অনেককে দিয়েছে)। এই লীজ বাবদ সরকার সম্প্রতি আমাদের কাছ থেকে বাৎসরিক ১৬ হাজার টাকা খাজনা ধার্য করেছে, যা আগে মাত্র তিনশো টাকা ছিল, পরে বেড়ে গিয়ে দুই-তিন হাজার টাকা হয়েছিল। এরপর হঠাৎ অনেকগুণ বেড়ে এত হয়েছে। আমার বাবা অনেক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছেন, আমার কোনো ভাই নেই। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে, কিন্তু তাদের সাথেও বিভিন্ন দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক বজায় রাখি আলহামদুলিল্লাহ, মাকেও টাকা পাঠাই, আবার কর্মক্ষেত্রেও ফ্যামিলি নিয়ে ভাড়া থাকি। সব মিলে যৎসামান্য বেতনের মধ্যে কোনোরকম চলে যায়, ঋণ করতে হয় না। সামান্য কিছু সেভিংসও হয় মাঝে মধ্যে । দীর্ঘদিন ধরে এই সেভিংসগুলো একত্র করে গতবছর দেখলাম আমার হজ্ব করার সমান টাকা হয়ে গেছে। কিন্তু যেহেতু নিজেদের জমি-জমা বা পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত কিছুই নেই, পুরো পরিবারের সমস্ত ব্যয়ভার আমাকে বহন করতে হয়, কাজেই ওই লীজ নেওয়া বাড়ীর খাজনাটা আমার কাছে খুব বোঝা হিসেবে অনুভূত হতে থাকে। সেটা ৯৯ বছরের আগে সরকারের কাছে হস্তান্তর করাও যাবে না, আর হস্তান্তর যদি করে দিলে আমাদের গ্রামের বাড়ি বলে আর মাথা গোঁজার মতও কিছু থাকে না, অথচ মা এখনও সেই বাড়িতেই থাকে। সেই কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে দুই কাঠা মাটি কিনব, কারণ ভবিষ্যতে জমির দাম যখন আরো আকাশচুম্বী হয়ে যাবে তখন মাটিই কিনতে পারব না, বাড়ি বানানো তো পরের কথা। সিদ্ধান্ত নিলাম যে দুই কাঠা মাটি কিনে যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি করব, তারপর লীজ নেওয়া ভিটার উপর যে বাড়িটা আছে সেটা ভেঙে ফেলব, যেহেতু লীজের মেয়াদ আরো ৫৫ বছরের মতো আছে, মানে ওটার খাজনা সরকারকে দেওয়াই লাগবে, ওখানে ফলের বাগান করব। ফল বিক্রি করে খাজনার টাকা পরিশোধ হবে। এই সিদ্ধান্ত থেকে আমার গ্রামে আমাদের ভিটার পাশেই জমি কেনার প্ল্যান করছিলাম। এরইমধ্যে যেহেতু হজ্ব করার সমান টাকা জমা হয়ে গেল তখন খুব দ্বিধায় পড়ে গেলাম যে আমার জন্য কি জমি কেনা জায়েজ হবে নাকি হজ্ব ফরজ হয়ে গেছে! বিভিন্নজনকে জিজ্ঞেস করে বিভিন্নরকম উত্তর পেলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত জোশের সাথে গতবছর হজ্বের রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। কিন্তু করোনার কারণে হজ্বে যেতে পারলাম না। পরে  পারিবারিক চাপাচাপিতে পড়ে সেই টাকা দিয়ে আমাদের বাড়ির ঠিক পাশেই দুই কাঠা মাটি বিক্রি হচ্ছিল, কিনে ফেললাম। এখন আমার আশঙ্কা হলো, আমার কি আসলেই হজ্ব ফরজ হয়ে গিয়েছিল? সম্প্রতি আমার হাতে কিছু টাকা এসেছে, আরো কিছু আসবে ইনশাআল্লাহ। সেগুলো দিয়ে কি আমার আগে নিজস্ব বাড়ি বানানোর চেষ্টা করা উচিত নাকি আগে হজ্ব করা উচিত? উল্লেখ্য যে, আমার এইসব সিদ্ধান্তের কারণে পরিবারে মনোমালিন্য হচ্ছে, তারা চায় আগে বাড়িঘর করে একটূ স্ট্যাবল হই, তারপর হজ্ব করি। আমিও এটাই চাই, কিন্তু হজ্ব ফরজ হয়ে গিয়ে থাকলে বিলম্ব করতে গিয়ে যদি অনাদায়ী রেখে মৃত্যবরণ করি তাহলে নবীজী (সঃ) এর যে একটা শক্ত হাদিস আছে সেই চিন্তা থেকে হজ্বের চিন্তাও ছাড়তে পারি না।  সবমিলিয়ে পারিবারিকভাবে খুব কথাকাটাকাটি ও ঝগড়া-ঝাটি হয়, মানসিকভাবে দোদুল্যমানতার মধ্যে থাকি। উল্লেখ্য যে, বাড়ি করা ছাড়াও আমার ইমার্জেন্সি ভিত্তিতে খরচ করার মত আরেকটি প্রয়োজন আছে। সেটা হলো, আমি নিঃসন্তান। এজন্য ভারত বা বাংলাদেশ থেকে উন্নত চিকিৎসা নিতে চাই, তাতেও একটা মোটা খরচ হবে। সব মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে, যদি আমার হজ্ব এই মুহুর্তে ফরজ না হয় তাহলে আমি আগে বাড়ি করব, তারপর সন্তান নেওয়ার চিকিৎসা করাব (অথবা উলটো অর্থাৎ আগে চিকিৎসা, তারপর বাড়ি), তারপর হজ্ব করব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু হজ্ব ফরজ হয়ে গেলে তো হজ্বই সবার আগে করতে হবে, যদিও এতে পারিবারিক চাপের কারণে মানসিকভাবে খুব অশান্তিতে আছি। এখন আমি জানতে চাই, আমার সার্বিক হালত বিবেচনা করে কি পাওয়া যায়? আমার কি হজ্ব এই মুহুর্তে ফরজ হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন। জাঝাকাল্লাহ খাইর।

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا، ومن كفر فان الله غنى عن العلمين.

 (তরজমা) মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্ব করা ফরয। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।-সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯৭

এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন-

يا أيها الناس! إن الله كتب عليكم الحج، فحجوا، فقال رجل : أكل عام يا رسول الله؟ فكست حتى قالها ثلاثا، ثم قال : لو قلت نعم لوجبت ولما استطعتم.

 হে মানবসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরয করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ্ব করা) ফরয হয়ে যেতো, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৩৭ (৪১২); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৮; সুনানে নাসায়ী ৫/১১০; শরহে মুশকিলুল আছার, হাদীস : ১৪৭২; সুনানে দারাকুতনী ২/২৮১)

হজ্বের নির্দেশ পালনের প্রতিদান কী তা সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ
مَنْ حَجَّ لله فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ
যে আল্লাহর জন্য হজ্ব করল অতপর তাতে অশ্লীল কর্ম ও গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো (নিষ্পাপ) হয়ে যায় যেদিন সে ভ‚মিষ্ট হয়েছিল। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৫০)
,
অন্য হাদীসে বলেছেন
الْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّة
মাবরূর হজ্বের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। 
(সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৯)

হজ্ব ফরজ হয় দৈনন্দিন খরচ বাদে হজ্বে আবশ্যকীয় প্রয়োজনে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন তথা যাওয়া আসা, সেখানে থাকা খাওয়া ইত্যাদি পরিমাণ টাকা থাকলে ব্যক্তির উপর হজ্ব করা ফরজ হয়ে থাকে।
সে হিসেবে দেখতে হবে বর্তমানে হজ্ব করতে গেলে কত টাকা লাগবে। সে টাকা উক্ত ব্যক্তির কাছে থাকলে তার উপর হজ্ব করা আবশ্যক।
,
বিস্তারিতঃ  
হজ্বের সামর্থ্য হলো- ব্যক্তি শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়া এবং বায়তুল্লাহতে পৌঁছার মত যানবাহন যেমন- বিমান, গাড়ী, সওয়ারী ইত্যাদির মালিক হওয়া অথবা এগুলোতে চড়ার মত ভাড়ারঅধিকারী হওয়া এবং যাদের ভরণপোষণ দেয়া ফরজ তাদের খরচ পুষিয়ে হজ্বে আসা-যাওয়া করার মত সম্পত্তির মালিক হওয়া। নারীর ক্ষেত্রে হজ্ব বা উমরার সফর সঙ্গি হিসেবে স্বামী বা মাহরাম কেউ থাকা। এর সাথে আরো যে শর্তটি যোগ করা যায় সেটা হচ্ছে- বায়তুল্লাহ শরিফে পৌঁছার ব্যয় তার আবশ্যকীয় খরচ, শরয়ি আইনানুগ খরচ, ঋণ ইত্যাদির অতিরিক্ত হওয়া। 

খরচের ক্ষেত্রে ধর্তব্য হলো- হজ্ব থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত তার নিজের ও পরিবার-পরিজনের খরচ পোষানোর মত সামর্থ্য থাকা এবং ফিরে আসার পর তার নিজের ও নিজ পরিবারের খরচ চালানোর মত সামর্থ্য থাকা যেমন- বাসা ভাড়া, বেতন বা ব্যবসা ইত্যাদি ঠিক থাকা। 
,

শরয়ি আইনানুগ খরচ হচ্ছে- ইসলামি শরিয়া কর্তৃক অনুমোদিত খরচাদি। যেমন ইসরাফ (সাধারণ অপচয়) ও তাবযির (হারাম কাজে ব্যয়)ব্যতীতনিজের খরচাদি, নিজ পরিবারের খরচাদি।
.
হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে। সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে কেউ যদি হজ আদায় করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম : ২/১৫২; আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৫১৬)

একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, তার কিছু অংশ বিক্রি করলে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম : ২/১৫৩)
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আপনার কাছে যদি হজ্বে যাওয়া,আসার বিস্তারিত  খরচাদি পরিমান টাকা থাকে,হজ্ব থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত নিজের ও পরিবার-পরিজনের খরচ পোষানোর মত সামর্থ্য থাকে এবং ফিরে আসার পর নিজের ও নিজ পরিবারের খরচ চালানোর মত সামর্থ্য থাকে,কোনো যদি ঋন না থাকে,তাহলে আপনার উপর হজ ফরজ হবে।
,
লীজ নেওয়া জমিতে যেহেতু বাড়ি বানানোই আছে,আর সেই লীজের মেয়াদ এখনো ৫৫ বছর রয়েছে,তাই নতুন করে বাড়ি বানানো,হজ্ব ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে শরয়ী ওযরের আওতায় পড়বেনা।
,
সাথে সাথে স্ত্রীর নিঃসন্তান হওয়ার কারনে এ বাবদ চিকিৎসার খরচও হজ্ব ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে শরয়ী ওযর এর আওতায় পড়বেনা। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 214 views
...