ওয়া আলাইকুমুস-সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
সুনানে আবু
দাউদে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত তালহা ইবনে বারা (রা.) অসুস্থ হলে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে দেখতে গেলেন। অতপর বললেন, আমি তালহার মধ্যে মৃত্যুর আলামত দেখতে পাচ্ছি। অতএব (সে মারা
গেলে) এ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করবে। আর তোমরা দ্রুত কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করবে। কেননা
কোনো মুসলমানের মৃতদেহকে পরিবারস্থ লোকদের মাঝে আটকে রাখা উচিত নয়।’ -(হাদিস: ৩১৫৯)
মৃতকে কাফন
দেওয়া মুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮১৯) মৃতকে তার নিজস্ব সম্পদ থেকে কাফন
দেওয়া, যাতে অন্যের হক সংশ্লিষ্ট না থাকে। (বুখারি : ৫/১৪) যদি নিজের কোনো সম্পদ না থাকে,
তবে তাকে কাফন দেওয়ার দায়িত্ব তাদের
ওপর বর্তাবে জীবিত অবস্থায়, যাদের আহার-বিহারের দায়িত্ব তার ওপর ছিল।
যদি তাদের
কাছেও কোনো সম্পদ না থাকে, তবে কাফনের ব্যবস্থা বায়তুল মাল থেকে করতে হবে। যদি বায়তুল মাল থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ
করা সম্ভব না হয়, তবে সক্ষম ও সচ্ছল মুসলমানদের ওপর তার কাফনের ব্যবস্থা করা ওয়াজিব।
পুরুষের কাফন
পুরুষের কাফন
: পুরুষের সুন্নত কাফন হলো কামিস (জামা), ইজার (লুঙ্গি) ও লেফাফা (চাদর)। (মুসলিম,
হাদিস : ১৫৬৫) পুরুষের কেফায়া কাফন
হলো, ইজার ও লেফাফা। এর চেয়ে কম করা মাকরুহ। (বুখারি, হাদিস : ১১৮৬) পুরুষের জন্য প্রয়োজনীয় কাফন হলো,
প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ কাফন
পাওয়া যায়, সেটা শুধু সতর ঢাকা পরিমাণই হোক না কেন। (বুখারি,
হাদিস : ১১৯৭)
নারীর কাফন
নারীদের কাফন
: নারীদের সুন্নত কাফন হলো লেফাফা, ইজার, কামিস, ওড়না ও সিনাবন্ধ (বক্ষবন্ধনী)। (আবু দাউদ,
হাদিস : ২৭৪৫) নারীদের কেফায়া কাফন
হলো, ইজার, লেফাফা ও ওড়না। (হেদায়া : ১/৮৯) নারীদের জরুরি কাফন হলো,
প্রয়োজনের সময় যতটুকু পাওয়া যায়। উত্তম
হলো সিনাবন্ধ সিনা থেকে রান পর্যন্ত হওয়া। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৭)
কাফনের কাপড়
যেমন হওয়া উত্তম
কাফনের কাপড়
সাদা হওয়া উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ৯১৫)
ইজার মাথা
থেকে পা পর্যন্ত হবে। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৯৩৭) লেফাফা ইজার থেকে এক হাত লম্বা হবে।
(সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৯৩৭)
কামিস কাঁধ
থেকে পা পর্যন্ত হবে। কামিসে হাতা হবে না। (ইবনে মাজাহ,
হাদিস : ১৪৬০)
পুরুষকে কাফন
পরানোর নিয়ম
প্রথমে লেফাফা
রাখা, তারপর লেফাফার ওপর ইজার রাখা। অতঃপর কামিস রাখা। এরপর মৃতকে এর ওপর রেখে প্রথমে
কামিস পরানো। অতঃপর ইজারকে বাঁ দিক থেকে চড়ানো। এরপর ডান দিক থেকে চড়ানো। এরপর বাঁ
দিক থেকে লেফাফা মুড়ে দেওয়া, তারপর ডান দিক থেকে লেফাফা মোড়ানো। উভয় দিক থেকে কাফনকে বেঁধে
দেওয়া, যাতে কাফন এলোমেলো না হয়ে যায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৪৫)
নারীদের কাফন
পরানোর নিয়ম
প্রথমে লেফাফা
বিছানো। লেফাফার ওপর ইজার, তার ওপর কামিস বিছানো। প্রথমে কামিস পরানো। চুলগুচ্ছকে দুই ভাগ করে সিনার দুই পাশে
কামিসের ওপর রেখে দেওয়া। এরপর ওড়না মাথার ওপর রাখা। ওড়না পেঁচানোও যাবে না,
বাঁধাও যাবে না। বরং শুধু রেখে দিতে
হবে। এরপর ইজারকে প্রথমে বাঁ দিক থেকে, তারপর ডান দিক থেকে পেঁচিয়ে সিনার দিক থেকে বেঁধে
দেওয়া। অতঃপর লেফাফা পেঁচিয়ে দেওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৫২)
★
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. কামিস কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত হবে। কামিসে হাতা হবে না। (ইবনে মাজাহ,
হাদিস : ১৪৬০) নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে
একই বিধান।
২. উত্তম হলো
সিনাবন্ধ সিনা থেকে রান পর্যন্ত হওয়া। (বুখারি, হাদিস : ১১৯৭)
৩. ইজার মাথা
থেকে পা পর্যন্ত হবে। লেফাফা ইজার থেকে এক হাত লম্বা হবে।
এটাই উত্তম। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৬৯৩৭) যদি অনিভাবেচ্ছাকৃত ভাবে
ইজার ও লিফাফা সমান হয়ে যায় তাহলে এতে কোন গুনাহ হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটি করা
মোটেও উচিত নয়। অনেক আলেক ইহাকে সুন্নাহের পরিপন্থি বলেছেন।