আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
43 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (11 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমাকে একটু পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন মিন ফাদ্বলিক।
আমার নিকটাত্মীয়ের মধ্যে একজন ছেলে আছেন, যিনি যথেষ্ট প্র‍্যাক্টিসিং আলহামদুলিল্লাহ। যেহেতু পরিচিত, সেহেতু আমার সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না থাকলেও অন্যদের মাধ্যমে মোটামুটি নিশ্চিত ভাবেই জানি তিনি দাড়ি-পাঞ্জাবী ওয়ালা, নামাজী, চোখের হিফাজতকারী, নন মাহরাম দের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলা একজন মানুষ। এর বাইরে কিছু থাকলে গায়েব তো শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। আরও প্লাস পয়েন্ট উনার মা-বাবা-বোন সবাই ই দ্বীন মেনে চলেন আলহামদুলিল্লাহ। তাই আমি দুয়া করেছিলাম আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও উনারা আমার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর হলে যেন উনাদের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে। এবং সত্যি সত্যিই কিছুদিন আগে উনারা বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমার পরিবারের কেউই এই প্রস্তাবে রাজি না। কারণ হিসেবে উনারা বলছেন সার্টিফিকেট হিসেবে ছেলের পড়ালেখা আমার চেয়ে কম। ছেলে দেখতে আহামরি না, ছেলের পরিবারের সবাই একঘরে টাইপ (হাত মোজা পা মোজা পরে ঘুরে)। অথচ আমি নিজেও হাত মোজা পা মোজা পরেই ঘুরি আলহামদুলিল্লাহ, এবং এরকম পরিবারই চাই যারা আমাকে কঠোর পর্দা মেনে চলতে সাহায্য করবেন।

আমার পরিবারের পছন্দ এমন একজন যিনি দেশের বাইরে থাকেন, প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক, উচ্চ বংশীয়, অথচ না আছে দাড়ি, না পোশাকে দ্বীনের ছাপ, এমনকি নামাজে নিয়মিত কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। বিয়ের পর কুফর রাষ্ট্রে স্থায়ী হতে হবে এরকমও বলছে।
আমি প্রথমজনকে নিয়ে ইস্তিখারা করেছি কয়েকবার। শেষ যেবার করলাম, সেবার স্বপ্নে দেখেছি উনার বোন আর আত্মীয় আমাদের বাসায় বিয়ের পোশাক নিয়ে এসেছেন। কিন্তু যেহেতু আগে থেকেই আমার মন কিছুটা উনাদের দিকে ঝুঁকে আছে, সেহেতু বুঝতে পারছি না এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো ইশারা নাকি আমার নাফসের দুর্বলতা।
এরকম পরিস্থিতিতে আমার কি করা উচিৎ? আমার পরিবার থেকে প্রথমজনকে ২-১ দিনের মধ্যেই মানা করে দেয়া হবে। আমি কি চুপ থেকে পরিবারের কথা মেনে নেয়া উত্তম হবে? নাকি পরিবারের অপছন্দ হলেও প্রথম জনের ব্যাপারে নিজের মত জানানো উচিৎ হবে? বিয়ে পূর্বনির্ধারিত আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু নিজেদের চেষ্টার যে ব্যাপারটা, সেটা নিয়ে কনফিউশানে আছি। আমাকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করুন, জাযাকাল্লাহু খাইরান

1 Answer

0 votes
by (547,020 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তা'আলা মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা এবং তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।তাদের অবাধ্য হওয়াকে হারাম ঘোষনা দিয়েছেন।এ বিষয়ে সমস্ত উলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করে থাকেন।

মা বাবার সর্বদায় আনুগত্য করতে হবে,তাদের কথার নাফরমানী করা যাবেনা।
তাদের সাথে সর্বদায় ভালো ব্যবহার করতে হবে।
তারা কষ্ট পায়,এমন কাজ কখনোও করা যাবেনা।

তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا

“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস।” (সূরা আহকাফ-১৫)

আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।(সূরা বনী ইসরাঈল-২৩)

পিতা মাতার বৈধ বিধান তরক করলে গোনাহ হবে।

তবে শরীয়ত বহির্ভূত কোনো আদেশ করলে পিতা মাতা সহ কারো আদেশকে মান্য করা যাবে না।কেননা হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন-

لا طاعة في معصية إنما الطاعة في المعروف

গোনাহের কাজে কারো বশ্যতা স্বীকার করা যাবে না।(শরীয়ত যাদের বিধিনিষেধ মেনে চলার আদেশ দিয়েছে তাদের) আদেশ শুধুমাত্র বৈধ ও নেকীর কাজে মানা যাবে।(সহীহ বুখারী-৭২৫৭,সহীহ মুসলিম-১৮৪০)

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,

لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ

আল্লাহর অবাধ্যতায় কারো বিধিনিষেধ কে মান্য করা যাবে না।(মুসনাদে আহমাদ-১০৯৮)

চার মাযহাবের গ্রহণযোগ্য ফেকহী গ্রন্থ 'আল-মা'সুআতুল ফেকহীয়্যায়(২৮/৩২৭)' বর্ণিত রয়েছে,

"طاعة المخلوقين - ممّن تجب طاعتهم – كالوالدين ، والزّوج ، وولاة الأمر : فإنّ وجوب طاعتهم مقيّد بأن لا يكون في معصية ، إذ لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق" انتهى

শরীয়ত কর্তৃক যাদের বিধিনিষেধের অনুসরণ করা ওয়াজিব।যেমনঃ মাতাপিতা,স্বামী,এবং রাষ্ট্রীয় প্রধান বা তাদের আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ।তাদের বিধিনিষেধ আমলে নেয়া তখনই ওয়াজিব যখন তা শরীয়ত বিরোধী হবে না।কেননা 'সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীতে কোনো সৃষ্টজীবের অনুসরণ করা যায় না'(মর্মে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে)

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহঃ লিখেন,

ويلزم الإنسان طاعة والديه في غير المعصية وإن كانا فاسقين ، وهو ظاهر إطلاق أحمد ، وهذا فيما فيه منفعة لهما ولا ضرر ، فإن شق عليه ولم يضره : وجب ، وإلا فلا

গোনাহের কাজ ব্যতীত মুবাহ তথা বৈধ কাজে
মাতা পিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।যদি তার ফাসিকও হয়।এটা তখন যখন তাতে মাতাপিতার ফায়দা থাকবে,এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক হবে না।যদি সন্তানের উপর কষ্টদায়ক হয় তবে ক্ষতিকারক না হয়, তাহলে তখন মাতাপিতার আদেশ মান্য করা ওয়াজিব নয়।(আল-ফাতাওয়াল কুবরা-৫/৩৮১)

★মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা মূলত তিনটি মূলনীতির আলোকে হয়ে থাকে।
(১) তাদের আদেশ কোনো মুবাহ বিষয়ে হতে হবে।কোনো ওয়াজিব তরকের ব্যাপারে হতে পারবে না।এবং কোন হারাম কাজের জড়িত হওয়ার জন্যও হতে পারবে না।
(২)যে কাজের আদেশ তারা দিবেন,এতে তাদের ফায়দা থাকতে হবে,বা শরীয়তের পছন্দসই কাজ হতে হবে।
(৩)যে কাজের আদেশ দিচ্ছেন,তা তাদের সন্তানদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারবে না।

সুতরাং যদি সন্তানের কষ্ট লাগবের জন্য তারা আদেশ দিয়ে থাকেন,তাহলে এক্ষেত্রে মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/1707

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
এরকম পরিস্থিতিতে মাতা পিতার আদেশ মানারই পরামর্শ থাকবে।
মাতা পিতার অবাধ্য হওয়া ঠিক হবেনা।

তবে আপনার পক্ষ থেকে শরীয়তের গন্ডির মধ্যে থেকে আপনি চেষ্টা করতে পারেন।
সেই সুবাদে পরিবারের অপছন্দ হলেও প্রথম জনের ব্যাপারে নিজের মত আপনি জানাতে পারেন,পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে চেষ্টা করতে পারেন,এতে কোনো সমস্যা নেই 

পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে এরকম দ্বীনদার পাত্রের সহিত বিবাহের দোয়া চালিয়ে যাবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...