আসসালামু আলাইকুম। হানাফি মাজহাব অনুসারে দিবেন দয়া করে।আমরা দুইজন নিজেদের পরিবারকে না জানিয়ে দেনমোহরে উল্লেখ করা ছাড়া নিজেরা দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করি।
ঘটনা১:এই যে,আমার স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী হাত কেটে আমাকে ছবি পাঠিয়ে জোরাজোরি করে আমার থেকে তালাক দাবি করে। আমি তালাক দিতে না চাইলে আমার স্ত্রী 'আমাকে হুমকি দেয় যে,তাকে আমি তালাক না দিলে সে তার হাতের রগ কেটেফেলবে।আমি আমার স্ত্রীকে শান্ত করার জন্যে বলি যে,আমি আমার বন্ধুদের সামনে বলে দিবো।তালাক হয়ে যাবে এ ভয়ে আমি তালাক শব্দটি মুখ দিয়ে উচ্চারণ করিনি ।আমি উত্তেজিত ছিলাম দেখে আমার বন্ধু আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি যে, ডিভোর্স দিয়ে ফেলছি। কিন্তু আমার মনের মধ্যে তালাকের কোনো নিয়ত ছিল না এবং কাকে ডিভোর্স দিয়েছি তা উল্লেখ করিনি, আমার জানা ছিল না যে,ডিভোর্স দিয়ে ফেলছি বললে তালাক হতে পারে। আমার বন্ধু যখন জিজ্ঞাসা করে তালাক দিয়ে ফেলছি কিনা, উত্তরে আমি তালাকের নিয়ত ছাড়া ও তাদের থেকে লুকানোর জন্যে বলি, হ্যা। আমাকে আমার স্ত্রী যেহেতু অতিরিক্ত মানসিক চাপ দিয়েছিল পরবর্তীতে আমার মনে পড়ে না যে,আমি আমার বন্ধুকে কী বলেছিলাম।
প্রশ্ন-যেহেতু নিজের ইচ্ছা ছাড়া ও তালাকের নিয়ত ছাড়া মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়ে ডিভোর্স দিয়ে ফেলছি বলেছি এবং জানতাম না যে, ডিভোর্স দিয়ে ফেলছি বললে তালাক হয়ে যায় ও পরবর্তীতে আমার নিজের-ই মনে পড়ে না যে, আমি আমার বন্ধুকে কী বলেছি, এ অবস্থায় কী আমাদের তালাক হয়েছিল?
ঘটনা ২: আমার স্ত্রী আবার আমার সাথে নানা বিষয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে তালাক চাই, আর আমি আমার স্ত্রীকে রাগ নিয়ে তালাক দিয়ে ফেলি।
ঘটনা ৩ঃ তারপর আমরা মনে করেছিলাম যে আমাদের দুই তালাক হয়ে গিয়েছে।তাই আমরা দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ৫০,০০০ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করি।স্ত্রী পুনরায় স্বামীকে তালাকের জন্যে আমাকে অনেক জোরাজোরি করে। জোরাজোরির এক পর্যায়ে প্রচন্ড ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রাণনাশের হুমকিস্বরূপ স্ত্রী স্বামীকে একথা বলতে বাধ্য হয় যে-আমাকে তালাক না দিলে আমি অনেকগুলো ঔষধ খেয়ে মরে যাবো। আর আমার মৃত্যুর জন্যে দায়ী হবে তুমি, আমি তোমাকে আমার মৃত্যুর জন্যে তোমাকে দায়ী করে যাবো।আমার স্ত্রী টানা ১৫দিন আমাকে এত মানসিক চাপ দেই আর মানসিক টর্চার করে । তার এত চাপের পরেও আমি তাঁকে তালাক দিতে চাই নাই। তার এত টর্চার এর পর স্ত্রীর কান্নাকাটি করে সুইসাইড এর হুমকি দেই। তারপর আমি স্বাভাবিকভাবে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে দুশ্চিন্তাই পড়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পর্যায় চলে যাই। স্ত্রীর জীবন,নিজের জীবন আর পরিবারের মানুষের জীবনের ভয় করে নিজের জীবন হারানোর ভয় করে তালাক দিয়ে ফেলি। কিন্তু আমার কোনো ইচ্ছা ছিলো না তালাক দেওয়ার। আমি আমার স্ত্রীর সাথে সংসার করতে চেয়েছিলাম।আমার 'স্ত্রী 'আমাকে এতো জোরাজোরি করে, এতো মানসিক চাপ দেয়, এতো মানসিক টর্চার করে, এতো মানসিক যন্ত্রণা দেয় যে, এবং এতগুলো হুমকি দেই যে,আমি ক্ষণিকের জন্যে আমার ভালো-মন্দ নির্বাচন করার শক্তি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে কোনো উপায় না পেয়ে নিজের জীবন বাঁচানোর ভয়ে তাকে তালাক দিতে বাধ্য হই, কিন্তু তাকে তালাক দেওয়ার কোনো নিয়ত বা ইচ্ছা ছিল না।
প্রশ্ন-যেহেতু আমার তালাক দেওয়ার কোনো নিয়ত ছিল না ও আমি আমার স্ত্রীর মানসিক চাপে ভালো-মন্দ নির্বাচনের শক্তি ক্ষণিকের জন্যে হারিয়ে জীবনের ভয় করে তালাক দিই, এই তালাক কী হয়েছে?
ঘটনা ৪:-পরবর্তীতে স্ত্রী আমাকে সেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা ভেঙে ফেলে এবং আমি রাগারাগি করলে সে আমার সাথে থাকতে চাই না, তখন আমি রাগ নিয়ে তালাক দিয়ে ফেলি।
প্রশ্ন-এখন আমার স্ত্রী নিজের ভুল নিজে বুঝতে পেরেছে এবং সে ভুলগুলো শুধরিয়ে সে আমার সাথে থাকতে চাই এবং আমিও আমার স্ত্রীর সাথে থাকতে চাই ।যেহেতু আমি অনিচ্ছাকৃত ,ভালো-মন্দ নির্বাচনের শক্তি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে মানসিক চাপে, মৃত্যুর হুমকি এড়াতে, নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যে,আমার নিজের-ই মনে পরে না যে আমি আমার বন্ধুকে কী বলেছি। এরপর আমাদের কী একসাথে থাকার কোনো সুযোগ আছে?আর আমাদের কী তিন তালাক সম্পন্ন হয়েছে?