ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://www.ifatwa.info/1715
নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,
যে সমস্ত কারণে গিবত করা বৈধ হয়।
أمور
تباح فيها الغيبة: الأصل في الغيبة التحريم للأدلة الثابتة في ذلك، ومع هذا فقد
ذكر النووي وغيره من العلماء أمورا ستة تباح فيها الغيبة لما فيها من المصلحة؛
ولأن المجوز في ذلك غرض شرعي لا يمكن الوصول إليه إلا بها وتلك الأمور هي:
কুরআন-হাদীসের অসংখ্য দলীল প্রমাণ
থাকায় গীবত মূলত হারাম। তবে ইমাম নববী রাহ সহ অনেক উলামায়ে কেরাম ছয়টি বিষয়ে গীবতের
অনুমোদন দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন মুসলিহত ও হেকমত থাকর ধরুণই উলামায়ে কেরাম মূলত এ অনুমতি
দিয়ে থাকেন। শরীয়য়ত অনুমোদিত কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই রুখসত প্রদান করা হচ্ছে, কেননা গীবত ব্যতীত এই উদ্দেশ্য হাসিল হওয়া প্রায়-ই অসম্ভব।
(এক) জালিমের জুলুম থেকে বাঁচতে বিচারকের নিকট
জালিমের বিরুদ্ধে নালিশ/গিবত করা বৈধ। যেমন মজলুম ব্যক্তি বিচারকের নিকট গিয়ে বলল,
অমুক ব্যক্তি আমার উপর জুলুম-নির্যাতন করেছে এবং আমার সাথে সে এমন এমন
ব্যবহার করেছে। আমার অমুক অমুক জিনিষ সে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
(দুই) মন্দকে পরিবর্তন করতে এবং গোনাহগারকে নেকির
দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে কারো গীবত করা। যেমন এমন কারো কাছে গিয়ে গিবত করা, যে ব্যক্তি ঐ মন্দকাজ সম্পাদনকারীকে ধমক দিতে পারে, ইত্যাদি
ইত্যাদি। শর্ত এই যে, মন্দকে বিদূরিত করার উদ্দেশ্যই থাকতে হবে।উদ্দেশ্য
যদি অন্য কিছু হয় তখন কিন্তু গীবত করা জায়েয হবে না বরং হারাম হবে।
(তিন) ফাতাওয়া চাওয়ার সময় কারো গিবত করা। এভাবে
যে,কেউ কোনো মুফতী সাহেবের নিকট গিয়ে বলল, আমার উপর আমার বাবা,ভাই জুলুম-নির্যাতন করতেছে।আমার উপর
তাদের এমন জুলুম করার কি কোনো অধিকার আছে? এখন কিভাবে আমি তাদের
জুলুম-নির্যাতন থেকে নাজাত পেতে পারি এবং নিজের অধিকারকে আদায় করে নিতে পারি?
ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রয়োজনের খাতিরে এমনটা জায়েয। তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ
হলো, নাম ঠিকানা নির্দিষ্ট না করে এভাবে বলা যে,এক ব্যক্তি অন্যজনের সাথে এমন আচরণ করছে কিংবা একজন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে
এমন এমন আচরণ করছে। তখন কাউকে নির্দিষ্ট করে পরিচয় প্রদান ব্যতীত উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে
যাবে। তাছাড়া নির্দিষ্ট করে কারো পরিচয় প্রদান করাও জায়েয আছে। যেমন হাদীসে বর্ণিত
রয়েছে,হযরত হিনদাহ রাযি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে গিয়ে নিজ স্বামী
আবু সুফিয়ান রাযি এর নামে নালিশ করে বললেন,যে ইয়া রাসূলুল্লাহ
সাঃ! আমার স্বামী আবু সুফিয়ান একজন কৃপন লোক। রাসূলুল্লাহ সাঃ তখন তার এমন নাম উল্লেখ-কে
বাধা প্রদান করেননি।
(চার) মুসলমানকে কারো মন্দ থেকে বাঁচাতে গিবত
করা। এটা পাঁচ ভাবে হতে পারে।যথাঃ- (১) হাদীসের রাবীদের দোষত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা।এটা
সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয। এমনকি শরীয়তকে বাঁচানোর জন্য এটা ওয়াজিব পর্যায়ের। (২) বিয়ে-শাদীতে
কোনো এক পক্ষের খোঁজ নিতে গিয়ে মাশওয়ারার সময় কারো সম্পর্কে সঠিক সংবাদ দেয়া। (৩) ক্রেতাকে
অজ্ঞাতবশত কোনো দোষণীয় জিনিষ ক্রয় করতে দেখলে, তখন তাকে সে সম্পর্কে
সতর্ক করে দেয়া।বিক্রেতাকে কষ্ট দেয়া বা ফাসাদ সৃষ্টি করার মনোভাব থাকলে তখন জায়েয
হবে না। (৪) যদি কেউ দেখে যে একজন ফকিহ কোনো এক ফাসিক বা বিদাতি লোকের নিকট থেকে দ্বীন
গ্রহণ করছে,তাহলে নসিহতের উদ্দেশ্যে ঐ ফকিহকে বাস্তব হাল সম্পর্কে
জ্ঞাত করা উচিত। (৫) যদি কোনো ব্যক্তির উপর কারো অভিভাবকত্ব থাকে,কিন্তু সে কোনো কারণে ঐ ব্যক্তির উপর কর্তৃত্ব বাস্তবায়ন করে ওকে শাসন করতে
পারে না, এমতাবস্থায় সে তার অভিভাবক (অর্থাৎ ঐ অভিভাবকের অভিভাবক)
এর নিকট প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করতে পারবে।
(পাঁচ) প্রকাশ্যে গোনাহ কারী বা বিদআতে অংশগ্রহণ
কারীর গীবত করা। সুতরাং সে যা প্রকাশ্যে করবে সেটার গীবত করা জায়েয। তবে এছাড়া তার
অন্যান্য দোষ নিয়ে আলোচনা করা জায়েয হবে না।
(ছয়) পরিচয় দিতে গিয়ে গিবত হয়ে যাওয়া।যেমন যদি
কেউ কোনো লক্বব দ্বারা প্রসিদ্ধ থাকে, যেমন আ'মশ, আ'রাজ, আযরাক্ব, ক্বাসির, আ'মা আক্বতা' ইত্যাদি। এগুলো দ্বারা কারো পরিচয় প্রদান
জায়েয রয়েছে। কিন্তু কাউকে ছোট করার জন্য তার এ সমস্ত লক্বব ব্যবহার করা জায়েয হবে
না। হ্যাঁ যদি এগুলো ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা ঐ ব্যক্তির পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ
থাকে, তাহলে সেটা দ্বারাই পরিচয় করিয়ে দেয়া উত্তম হবে। (আল-মাওসু'আতুল ফেকহিয়্যাহ-৩১/৩৩৫)
আরো বিস্তারিত জানুন - https://www.ifatwa.info/1715
গীবতের কাফফারা- https://ifatwa.info/84030/
কয় জায়গায় গীবত করা জায়েজ তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/54907/
আত্মহত্যা সম্পর্কে জানুন - https://ifatwa.info/72349/
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
দ্বীনের পরিধি অনেক ব্যাপক, সকল বিষয়ে আলোচনা করা বা দিকনির্দেশনা দেওয়া স্বল্প পরিসরের এই
ভার্চুয়ালি মাধ্যম দ্বারা আমাদের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। চেষ্টা করলেও প্রশ্নকারীর
পিপাসা মিটানো সম্ভব হবে না। প্রত্যেক বিষয়ে আমরা শুধুমাত্র সামান্য আলোকপাত করে থাকি।
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তরের জন্য
আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট উলামায় কেরামের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা আপনার জন্য কল্যাণকর
হবে বলেই আমাদের ধারণা।
সুতরাং আপনাকে বলবো, আপনি বিস্তারিত জানতে স্ব-শরীরে কোনো দারুল ইফতায় যোগাযোগ করবেন।
প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
আল্লাহ তা'আলা আপনার ইলম অর্জনের স্পৃহাকে আরো বাড়িয়ে দিক,
আমীন।