পা ছূয়ে বা হাত নেড়ে সালাম করা বা সম্মান প্রদর্শন করা নবীজী সাঃ এর রীতিনীতি ছিল না। বরং এটা সরাসরি সুন্নাত বহির্ভূত কাজ।এবং বিদ'আত।যা অবশ্যই বর্জনীয়।
রাসুল সাঃ বলেন-
وَإِيّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنّ كُلّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
আর সকল নব উদ্ভাবিত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কারণ, সকল নব উদ্ভাবিত বিষয় বিদআত। আর সকল বিদআত গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা।’ (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭১৪২, ১৭১৪৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ
‘(দ্বীনের নামে) নবউদ্ভাবিত সকল বিষয় থেকে দূরে থাক।’
আরেক হাদীসে আছে-
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدّ .
‘যে আমাদের এই বিষয়ে (অর্থাৎ দ্বীন ও শরীয়তে) এমন কিছু উদ্ভাবন করবে, যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখাত।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭১৮; সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
সুতরাং পায়ে ধরে সালাম দেয়া জায়েজ নেই।
কদমবুচির মাসয়ালাঃ-
★মা-বাবা বা কোন নেককার বুজুর্গের হাত-পা ও কপালে বরকতের নিয়তে চুমা দেওয়াকে অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম জায়েয মনে করেন।তবে মাথা নূয়ে পায়ে চুমা দেওয়া সম্পর্কে ফুকাহাদের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।অধিকাংশের মতে বৈধ রয়েছে।কিন্তু পায়ে ধরে শশুড়-শাশুড়ি কে সালাম বা সম্মান প্রদর্শনকে কেউ -ই বৈধ মনে করেন না।(জাওয়াহিরুল ফিকহ,১/২০০)
.
আর পায়ে চুম্বনের বিষয়ে
দারুল উলুম দেওবন্দ এর 52492 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে
ইলম এবং বুযুর্গীর কারনে হাত পায়ে চুমো দেওয়া জায়েজ আছে,তবে সেজদার ছুরত হয়ে গেলে তাহা নাজায়েজ।
তবে সতর্কতা মূলক তাদেরও কদমবুচি না করা উচিত।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
دَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عِيسَى بْنُ الطَّبَّاعِ، حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْأَعْنَقُ، حَدَّثَتْنِي أُمُّ أَبَانَ بِنْتُ الْوَازِعِ بْنِ زَارِعٍ، عَنْ جِدِّهَا، زَارِعٍ وَكَانَ فِي وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ: لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا، فَنُقَبِّلُ يَدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَهُ
উম্মু আবান বিনতু ওয়াযি ইবনু যারি (রহঃ) থেকে তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) আব্দুল কাইসের প্রতিনিধি দলের একজন ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা মদীনায় এসে আমাদের আরোহী থেকে দ্রুত নেমে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ও পায়ে চুমু দিলাম।
(আবু দাউদ ৫২২৫)
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ أَبِي زِيَادٍ، أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى، حَدَّثَهُ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، حَدَّثَهُ وَذَكَرَ، قِصَّةً قَالَ: فَدَنَوْنَا يَعْنِي مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَبَّلْنَا يَدَهُ
আব্দুর রাহমান ইবনু আবূ লাইলাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। অতঃপর পুরো ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটবর্তী হয়ে তাঁর হাতে চুমু দিলাম।
(আবু দাউদ ৫২২৩,ইবনু মাজাহ)
আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে এসেছেঃ
975 – حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ قَالَ: حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْأَعْنَقُ قَالَ: حَدَّثَتْنِي امْرَأَةٌ مِنْ صَبَاحِ عَبْدِ الْقَيْسِ يُقَالُ لَهَا: أُمُّ أَبَانَ ابْنَةُ الْوَازِعِ، عَنْ جَدِّهَا، أَنَّ جَدَّهَا الْزَّارِعَ بْنَ عَامِرٍ قَالَ: قَدِمْنَا فَقِيلَ: ذَاكَ رَسُولُ اللَّهِ، فَأَخَذْنَا بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ نُقَبِّلُهَا
[قال الشيخ الألباني] : ضعيف الإسناد
ইমাম বুখারী রহঃ এর কাছে মুসা বিন ইসমাঈল বলেন, তার কাছে মাতার বিন আব্দুর রহমান আলআনাক বলেছেন, তার কাছে উম্মে আবান বলেছেন, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, তার দাদা ওয়াযি বিন আমির বলেন, আমি একদা রাসূল সাঃ এর খেদমতে গিয়া হাজির হলাম। আমাকে বলা হল ইনিই হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল। আমরা তখন তাঁর হস্তদয় ও পদদ্বয় ধরিয়া চুমু খেলাম। {আলআদাবুল মুফরাদ, ইসলামী ফাউন্ডেশন অনুবাদের হাদীস নং-৯৮৭, আরবী কিতাবের হাদীস নং-৯৭৫}
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি মাথা নিচু না করে কদমবুচি তথা পায়ে চুম্বন (হাত দিয়ে পা স্পর্শ করে হাত চুম্বন) করা হয়,তাহলে তাহা নাজায়েজ নয়।
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কদমবুচি সংক্রান্ত মাসআলাটি নিয়ে বিজ্ঞ ফুক্বাহায়ে কেরাম এবং মুহাদ্দিসীনে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
একদল বলেছেন সম্মানার্থে জায়েজ আছে পদচুম্বন করা। কিন্তু তারা সাথে সাথে এ শর্তারোপ করেছেন যে, যেন চুমু খেতে গিয়ে রুকুর সূরত বা সেজদার সূরত না হয়ে যায়। যদি রুকু বা সেজদার সূরত হয়ে যায়, তাহলে তা জায়েজ হবে না। {আলমুজতাবা-৪/২০৫, আলমুহীতুল বুরহানী-৮/১১৮, ফাতাওয়া আলমগীরী-৫/৩৬৯}
আরেক দল ফক্বীহ ও মুহাক্কিকীনদের মতে তা জায়েজ নয়। কারণ বর্তমান প্রচলিত কদমবুচিতে রুকুর হালাত এবং সেজদার হালাত হওয়া স্পষ্ট। সেই সাথে এটি বিধর্মীদের প্রতীক। তাই তা হারাম।
আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছি। কারণ কদমবুচি করা এ উপমহাদেশে মৌলিকভাবে হিন্দুদের রুসুম। আর কদমবুচি করতে গিয়ে রুকু বা সেজদার হালাত তৈরী হয়েই যায়। আর যারাও কদমবুচিকে জায়েজ বলেছেন তাদের মতেও রুকু সেজদার হালাত হয়ে গেলে কদমবুচি করা জায়েজ নয়।
উপরোক্ত কারনে বর্তমান প্রচলিত কদমবুচিকে নাজায়েজ বলা হয়।
★সুতরাং সতর্কতামূলক আমরা বলবো যে কদমবুচি করা যাবেনা।
বিস্তারিত জানুনঃ