وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
হানাফি মাযহাব মোতাবেক পুরুষ এবং মহিলাদের নামাজের নিয়ম অনেকটা একই রকম।
তবে পুরুষ আর মহিলাদের নামাজের মাঝে অল্প কিছু পার্থক্য রয়েছে।
ক, তাকবিরে তাহরিমা।
মহিলারা তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় সীনা পর্যন্ত হাত উঠাবে।
পক্ষান্তরে পুরুষেরা কান পর্যন্ত হাত উঠাবে।
খ, হাত বাধার জায়গা।
মহিলারা সীনার উপর হাত বাধবে।
পুরুষেরা নাভির নিচে হাত বাধবে।
গ,
রুকু করার পদ্ধতি।
মহিলারা পুরুষদের মত রুকু করবে না।বরং হাটুকে সামনে রেখে পুরোপুরি না টানিয়ে রুকু করবে।
মহিলাগণ রুকুর সময় পুরুষদের মত পূর্ণাঙ্গ ঝুঁকবে না। বরং উভয় হাত হাটুতে রাখবে। কিন্তু জড়োসড়ো হয়ে পুরুষদের চেয়ে কম ঝুঁকবে।
ঘ, সিজদাহ্ করার পদ্ধতি
মহিলারা সেজদায় গিয়ে পেট রানের সাথে এবং বাহু কে বগলের সাথে মিলিয়ে রাখবে,কনুই জমিনের উপর বিছিয়ে দিবে।
পক্ষান্তরে পুরুষেরা পেটকে রান থেকে,বাহুকে বগল থেকে এবং কনুইকে জমিন পৃথক রাখবে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا حَفْصٌ عَنِ الْجَعْدِ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ عَنِ ابْنَةٍ لِسَعْدٍ أَنَّهَا كَانَتْ تُفْرِطُ فِي الرُّكُوع تَطَأْطُؤًا مُنكَرَاً ، فَقَالَ لَهَا سَعْدٌ : إنَّمَا يَكْفِيك إذَا وَضَعْت يَدَيْك عَلَى رُكْبَتَيْك.
আয়েশা বিনতে সা’দ থেকে বর্ণিত, তিনি রুকুতে খুব বেশী ঝুঁকতেন যা দৃষ্টিকটু। অতঃপর হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. তাকে বললেন: তোমার দুই হাত হাঁটুতে রাখলে তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (ইবনে আবী শাইবা-২/৪৫২, হাদীস নং- ২৫৯২)
ঙ, বৈঠকের পদ্ধতি।
মহিলারা দুই পা ডান দিকে বের করে দিয়ে নিতম্বের উপরে বসবে।
,
পক্ষান্তরে পুরুষেরা ডান পা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
5068 – عبد الرزاق عن معمر عن الحسن وقتادة قالا إذا سجدت المرأة فإنها تنضم ما استطاعت ولا تتجافى لكي لا ترفع عجيزتها
হযরত হাসান বসরী ও কাতাদা রহ. বলেন-“মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে”। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩)
حَدِيثُ أَبِى مُطِيعٍ : الْحَكَمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَلْخِىِّ عَنْ عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا (السنن الكبرى، كتاب الصلاة، باب مَا يُسْتَحَبُّ لِلْمَرْأَةِ مِنْ تَرْكِ التَّجَافِى فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ، رقم الحديث-3324)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছন-“মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে বলেন-ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। (সুনানে বায়হাকী-২/২২৩, হাদিস নং-৩৩২৪)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلَاةِ الْمَرْأَةِ، فَقَالَ: «تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِرُ»
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে, মহিলা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন, খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৫০৫, হাদীস নং-২৭৯৪]
বিস্তারিত জানুনঃ
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
এটা মূলত মতবিরোধ পূর্ণ একটি মাসয়ালা।
সুতরাং এক্ষেত্রে যে যে মাযহাবের,সে সেই মাযহাবের মত অনুসরণ করতে পারে,সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবে।
মাযহাব সম্পর্কে স্পষ্ট জানার জন্য নিম্নের লিংকে দেয়া লেখাটি পড়ার পরামর্শ রইলোঃ-
https://ifatwa.info/97922
(০২)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ، قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ عَمْرٍو، عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ أُمِرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْضَاءٍ وَلاَ يَكُفَّ شَعْرَهُ وَلاَ ثِيَابَهُ
কুতায়বা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদিষ্ট হয়েছেন সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে। আর তাঁর কাপড় ও চুল একত্র না করতে।
সহিহ, ইবনু মাজাহ হাঃ ৮৮৩-৮৮৪, বুখারি হাঃ ৮০৯,৮১৫। মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ৯৮৮,নাসায়ী ১০৯৬)
এই হাদীসের ব্যাখ্যা হিসেবে অন্য হাদীসে এসেছেঃ
أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ، قَالَ حَدَّثَنَا بَكْرٌ، عَنِ ابْنِ الْهَادِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِذَا سَجَدَ الْعَبْدُ سَجَدَ مِنْهُ سَبْعَةُ آرَابٍ وَجْهُهُ وَكَفَّاهُ وَرُكْبَتَاهُ وَقَدَمَاهُ " .
কুতায়বা (রহঃ) ... আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যখন কোন বান্দা সিজদা করে তখন তার সপ্ত অঙ্গ সিজদা করে। তার মুখমন্ডল, উভয় হাতের তালু, উভয় হাটু এবং তার উভয় পা।
সহিহ, ইবনু মাজাহ হাঃ ৮৮৫, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ৯৯২/ক নাসায়ী ১০৯৭)
أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ السَّرْحِ، وَيُونُسُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى، وَالْحَارِثُ بْنُ مِسْكِينٍ، قِرَاءَةً عَلَيْهِ وَأَنَا أَسْمَعُ، - وَاللَّفْظُ لَهُ - عَنِ ابْنِ وَهْبٍ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةٍ - لاَ أَكُفَّ الشَّعْرَ وَلاَ الثِّيَابَ - الْجَبْهَةِ وَالأَنْفِ وَالْيَدَيْنِ وَالرُّكْبَتَيْنِ وَالْقَدَمَيْنِ " .
আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ, ইবনু আবদুল আলা ও হারিস ইবনু মিসকীন (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে। আর যেন আমি চুল ও কাপড় একত্র করে না রাখি (সে সাত অঙ্গ হচ্ছে ) ললাট, নাক, উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং উভয় পা।
সহিহ, বুখারি হাঃ ৮১২, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ৯৯২,নাসায়ী ১০৯৯)
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
সিজদার পুরো সময় দুই পায়ের কোনো অংশ কিছু সময়ের জন্যও যদি যমিনে লেগে না থাকে তাহলে সিজদা হবে না। কিন্তু যদি সিজদার সময় কোনো এক পা অল্প সময়ের জন্য মাটিতে লাগানো থাকে তাহলে সিজদা সহীহ হয়ে যাবে এবং নামাযও হয়ে যাবে। তবে সিজদা অবস্থায় উভয় পা যমিনে লাগিয়ে রাখা সুন্নতে মুআক্কাদা। তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন সিজদার সময় উভয় পা যমিনে লেগে থাকে এবং আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী থাকে।
হানাফি মাযহাব অনুসারে নামাজে মহিলারা যেভাবে সেজদাহ আদায় করে,সেক্ষেত্রে উভয় পা তো জমিনে থাকেই।
তদুপরি কেহ যদি পা ডান দিকে বের করে দেয়া পরেও পা কিছুটা বাঁকিয়ে সমস্ত আঙ্গুল জমিনের উপর রেখে সেজদাহ করে,সেক্ষেত্রে এটি তো হানাফি মাযহাবে নিষেধ নয়।