আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
611 views
in পবিত্রতা (Purity) by (36 points)
আমি যদি আমার মাথার সব চুল নিয়ে পেছনে বড় একটি বেনী করে রাখি তারপর ওযু করার সময় সেই বেনীর উপর দিয়ে মাথা মাসেহ করি তবে কী ওযু হবে?যদি সব চুল নিয়ে একটি ঝুটি করি তবে ওযু হবে? যদি মাথায় খোপা করে তার উপর মাথা মাসেহ করি তবে কী ওযু হবে?নাকি সব চুল খোলা রেখে তার উপর  মাথা মাসেহ করতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


সুরা মায়েদার ০৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡہَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ جُنُبًا فَاطَّہَّرُوۡا ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡہِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡہُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَہِّرَکُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَہٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۶﴾

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নিআমত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন:
﴿وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ
অর্থাৎ: তোমরা তোমাদের মাথা মাসাহ কর (সূরা মায়েদা - ৬) ।

সকল ইসলামী স্কলারগন  এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, মাথা মাসাহ করা ফরয। তবে কতটুকু পরিমাণ মাসাহ করলে যথেষ্ট হবে, সে পরিমাণ নিয়ে মতভেদ করেছেন। 
,
ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মত অভিমত হলো 
মাথার চার ভাগের একভাগ মাসাহ করতে হবে।
আর পুরো মাথা মাসাহ করা সুন্নাত।

রাসূল (ﷺ) এর পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ناصيه (নাসিয়া) তথা মাথার অগ্রভাগ মাসাহ করেছেন।

শাফেঈ (রাহি.) বলেন
মাথার কিছু অংশ মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে:

কেউ কেউ বলেন, তিন চুল পরিমাণ মাসাহ করলেই চলবে। কেউ বলেন, আবার কারও মতে, মাথার অর্ধেক মাসাহ করতে হবে। 

আল্লাহ্র বাণী - وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ- আয়াতে ‘ب’ (বা) অব্যয়টি تبعيض তথা আংশিক অর্থ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। إلصاق বা মিলানোর অর্থে ব্যবহৃত হয় নি।
,
সম্পুর্ন মাথা মাসাহ করতে হবে। 
এটা ইমাম মালিক (রাহি.) এর মাযহাব। ইমাম আহমাদ ও তার অধিকাংশ অনুসারীদের প্রসিদ্ধ মতামত এটিই। আবূ উবাইদ ও ইবনে মুনযিরও এ মত ব্যক্ত করেছেন। ইবনে তাইমিয়াহ এ মতটিকে পছন্দ করেছেন।

 আল্লাহ্ বাণী: وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ - অত্র আয়াতে ‘ب’ (বা) অব্যয়টি إلصاق বা মিলানোর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং আয়াতের মূল উদ্ধৃতি হবে - وَامْسَحُوا رُءُوسكُمْ - যেমনটি তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে সমস্ত মুখমন্ডল মাসাহ করা হয়। কেননা উভয় বিধানটি কুরআনে একই শব্দে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ্ মুখমন্ডল মাসাহ করার ব্যাপারে বলেন: ﴾ فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ ﴿ অর্থাৎ: সমস্ত মুখমন্ডল মাসাহ কর (সূরা মায়েদা -৬)।


এই নির্দেশটিকে মহানাবী (ﷺ) এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে । মহানাবী (ﷺ) যখন ওযূ করতেন তখন সমগ্র মাথা মাসাহ করতেন। তন্মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ বিন যায়েদ বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখযোগ্য, তিনি বলেন:

أَتَى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ، فَأَخْرَجْنَا لَهُ مَاءً فِي تَوْرٍ مِنْ صُفْرٍ[] فَتَوَضَّأَ، فَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا، وَيَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ، وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ، فَأَقْبَلَ بِهِ وَأَدْبَرَ، وَغَسَلَ رِجْلَيْهِ

অর্থাৎ: একবার রাসূল (ﷺ) আমাদের বাড়িতে এলেন। আমরা তাঁকে পিতলের একটি পাত্রে পানি দিলাম। তিনি তা দিয়ে ওযূ করলেন। তার মুখমন্ডল তিনবার ও উভয় হাত দু’বার করে ধৌত করলেন এবং তাঁর হাত সামনে ও পেছনে এনে মাথা মাসাহ করলেন। আর উভয় পা ধৌত করলেন।

অপর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি তার সমস্ত মাথা মাসাহ করলেন।
(সহীহ; বুখারী (১৮৫), মুসলিম (২৩৫)।)

রাসুল সাঃ মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে পিছনে চুলের শেষ পর্যন্ত দুই হাত নিয়ে যেতেন এবং সেখান থেকে সামনে নিয়ে এসে শেষ করতেন। এভাবে তিনি পুরো মাথা মাসাহ করতেন। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
  
ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ حَتَّى ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِىْ بَدَأَ مِنْهُ.
‘অতঃপর তিনি তাঁর দুই হাত দ্বারা মাথা মাসাহ করেন। এতে দুই হাত তিনি সামনে করেন এবং পিছনে নেন। তিনি মাথার অগ্রভাগ থেকে শুরু করে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতেন অতঃপর যে স্থান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন’।
(ছহীহ বুখারী হা/১৮৫, ১/৩১ পৃঃ; বুখারী (ইফাবা হা/১৮৫); মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৪, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২/৭৮ পৃঃ; ছহীহ তিরমিযী হা/৩৪।)
,

হিজাবের উপর মাথা মাসাহ করা ছহীহ নয়
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
এখানে চুলের কত অংশ মাসাহ করলেন,বিষয়টি লক্ষ্যনীয় নয়।
বরং মাথার কত অংশ মাসাহ করলেন,সেটাই লক্ষ্যনীয়।
,
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত সকল ছুরতে যদি মাথার চার ভাগের এক ভাগের উপর মাসাহ করে থাকেন,তাহলে যথেষ্ট হবে,অন্যথায় অযু হবেনা।
,
এক্ষেত্রে পুরো মাথা মাসাহ করাই যেহেতু হানাফী মাযহাব মোতাবেক সুন্নাত,তাই আপনি সম্পুর্ন মাথাই মাসাহ করবেন। 
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মাথার সব চুল নিয়ে পেছনে বড় একটি বেনী করে রাখার পর, ওযু করার সময় সেই বেনীর উপর দিয়ে মাসেহ করলে তো বেনীর চুলেরই মাসাহ হলো,মাথার সম্পুর্ন মাসাহ হলোনা।
যেটি সুন্নাত।
,
তাই আপনি বেনি বেধে হোক,বা খোপা বেধে হোক,  মাথার বরাবর উপরে যতগুলো চুল আছে,সেটার উপর দিয়ে ভেজা হাত ফিরাবেন,তাহলেই সুন্নাত আদায় হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...