জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ : إمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌّ نَشَأ في عِبَادَةِ الله عز وجل وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ وَرَجُلاَنِ تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا عَلَيهِ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذَاتُ مَنصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ : إنِّي أخَافُ الله وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ
আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; (তারা হল,) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ আযযা অজাল্লার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে,এখান থেকে বেরুবার পর থেকে আবার ফেরা পর্যন্ত...।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালোবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (অবৈধ যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান ক’রে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।
(বুখারী ৬৬০, ১৪২৩, ৬৮০৬, মুসলিম ২৪২৭)
★মুহাদ্দিসিনে কেরামগন বলেছেন যে মসজিদের সাথে অন্তর সম্পৃক্ত থাকার অর্থ, সে নামাযের সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। সময়মত মসজিদে গমন করে। নামাযের পর যখন মসজিদ থেকে বের হয় পরবর্তী নামাযের প্রতীক্ষায় থাকে। ফলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই সে স্বচ্ছন্দে মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করতে সক্ষম হয়।
,
মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে,এখান থেকে বেরুবার পর থেকে আবার ফেরা পর্যন্ত...।
,
অন্য হাদীসে এসেছেঃ
عن أم سلمۃ رضي اللّٰہ عنہا عن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: خیر مساجد النساء قعر بیوتہن۔ (مسند أحمد ۶؍۲۹۷، الترغیب والترہیب مکمل ۹۳ رقم: ۵۱۴)
সারমর্মঃ মহিলাদের জন্য উত্তম মসজিদ হলো নিজ রুমের এক কোনা।
وعن عبد اللّٰہ عن النبي صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: صلاۃ المرأۃ في بیتہا أفضل من صلا تہا في حجرتہا، وصلا تہا في مخدعہا أفضل من صلا تہا في بیتہا۔ (سنن أبي داؤد ۱؍۸۴ / باب ما جاء في خروج النساء إلی المسجد)
সারমর্মঃ মহিলাদের জন্য নিজ রুমের এক কোনায় নামাজ পড়া নিজ বাড়িতে নামাজ পড়া উত্তম।
আর নিজ বাড়িতে নামাজ পড়া থেকে উত্তম হলো ঘরের প্রকোষ্ঠে নামাজ পড়া।
,
★সুতরাং মহিলারা যদি নিজ বাসার এক কোনায় নিয়মিত নামাজ যিকির আযকার,তা'লিম ইত্যাদি করে,
নামাযের সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকে, সময়মত সেখানে গমন করে, নামাযের পর যখন সেখান থেকে বের হয় পরবর্তী নামাযের প্রতীক্ষায় থাকে,দিল সদা নামাজের সাথেই আকৃষ্ট থাকে,তাহলে তিনিও উক্ত হাদীস মোতাবেক আরশের নিছে ছায়া পাবে,ইনশাআল্লাহ।
(০২)
শরীয়তের বিধান হলো মহিলাদের জন্য তার মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ৪৮মাইল বা তদাপেক্ষা বেশী দুরুত্বের সফর করা জায়েয নয়। এর কম হলে জায়েয আছে । তবে সর্বাবস্থায় মাহরাম পুরুষের সাথে সফর করাই উত্তম। আর গাইরে মাহরামদের সাথে সফর করা মারাত্তক গোনাহ।হাদীসে মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের সফরের ব্যপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
(বুখারী শরীফ হা: নং১০৮৬,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২।)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن أبي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يحل لإمرأة تؤمن بالله واليوم الآخر أن تسافر سفرا يكون ثلاثة أيام فصاعدا إلا ومعها أبوها أو ابنها أو زوجها أو أخوها أو ذو محرم منها
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তাআলা এবং কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে
এমন কোন মহিলার জন্য জায়েজ নয়, তিন দিন বা এর চেয়ে অধিক দিনের সফর করে অথচ তার সাথে তার পিতা, তার ছেলে, বা তার স্বামী বা তার ভাই কিংবা কোন মাহরাম না থাকে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪২৩}
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত নাজায়েজ।
এতে সে গুনাহগার হবে,তবে এতে সে ঈমান নষ্টের কোনো কাজ না করলে,ঈমান নষ্ট হবেনা।
হাদীসে কঠোরতা আরোপের জন্য এই বাক্য ব্যবহার হয়েছে,যাতে কোনোভাবেই যেনো কোনো মহিলা মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর না করে।
বিস্তারিত জানুনঃ
(০৩)
★মসজিদ আবাদ বলতে মসজিদ নির্মান করে সেখানে নিয়মিত নামাজ,যিকির,তিলাওয়াত করা বুঝায়।
মহান আল্লাহ বলেন,
في بُيُوْتٍ أَذِنَ اللهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالآصَال رِجَالٌ لاَّ تُلْهِيْهُمْ تِجَارَةً وَّلاَ بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْماً تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالأَبْصَار
অর্থাৎ, আল্লাহ যে সব গৃহ্কে (মর্যাদায়) উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম স্মরণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল-সন্ধায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন লোকেরা; যাদেরকে ব্যবসা-বানিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, নামায কায়েম এবং যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ ভীতি-বিহ্বল হয়ে পড়বে। (কুরআন মাজীদ ২৪/৩৬-৩৭)
আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেয়, আল্লাহ তার জন্য বেহেশ্তে একটি ঘর বানিয়ে দেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯৭নং)
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন―
( من بنى مسجدا يبتغي به وجه الله بنى الله له مثله فى الجنة. (رواه الترمذي : ٢٩٢
যে আলাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ তৈরি করবে, আলাহ তাআলা জানড়বাতে তার জন্য অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করে দেবেন।(তিরমিজি : ২৯২)
হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
যেমন রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন :من غدا إلى المسجد أو راح أعدّ الله له في الجنة نزلا كلما غدا أو راح.
যে সকাল বিকাল মসজিদে গমনাগমন করবে, প্রত্যেকবার যাতায়াতের বিনিময়ে আলাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করবেন।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মহিলারা যদি মসজিদ নির্মানে জায়গা ইত্যাদি দিয়ে বা আর্থিক সহযোগিতা করে,যখনই মসজিদের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়,তখনই এগিয়ে আসে ,নিজ পরিবারের সকল পুরুষ সদস্যদের নিয়মিত সকল নামাজেই মসজিদে পাঠায়,এবং নিজ ঘরে তারা নামাজ,যিকর,তিলাওয়াত নিয়মিত আদায় করে, তাহলে আশা করা যায় যে তারাও মসজিদ আবাদের ছওয়াব পাবে,ইনশাআল্লাহ।