ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/50084? নং ফাতওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,
হযরত হাফসা রাঃ থেকে বর্ণিত, নবীজী সা. বলেন,
إِذَا
طَلَعَ الْفَجْرُ لاَ يُصَلِّى إِلاَّ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ وفى رواية إلا
ركعتي الفجر
‘‘রাসূল সাঃ ফজর উদিত হবার পর ফজরের
দুই রাকআত সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন সালাত পড়তেন না।’’ সহীহ মুসলিম ১৭১১, সহিহ বুখারি
১১৭৩
ইমাম তিরমিযী রাহি. বলেন,
وهو
ما أجمع عليه أهل العلم، كرهوا أن يصلي الرجل بعد طلوع الفجر إلا ركعتي الفجر.
‘‘আহলুল ইলম একমত যে, কোনো ফজরের সময়
হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সময়ে ফজরের দুই রাকাআত সুন্নাত ছাড়া অতিরিক্ত
নফল পড়াকে মাকরুহ মনে করেন।’’ তিরমিজি ৭৫
বি.দ্র. তবে ফজরের সুন্নতের অত্যধিক
গুরুত্বের কারণে ইকামাতের পরও মসজিদের কোনো কোণে তা আদায় করতে বলা হয়েছে, যদি দ্বিতীয়
রাকাআত পাওয়া যাওয়ার পুরোপুরি সম্ভাবনা থাকে।
বহু সংখ্যক সাহাবী-তাবেয়ী এমন ছিলেন, যারা কখনো যদি
মসজিদে এসে দেখতেন যে, ফজরের ইকামাত বা জামাত শুরু হয়ে গেছে, তাহলে মসজিদের
ভেতরে জামাতের কাতার থেকে দূরে বারান্দায় বা মসজিদের এক প্রান্তে কিংবা খুঁটির আড়ালে
ফজরের দু’রাকাআত সুন্নাত পড়ে নিতেন। তারপর জামাতে শরীক হতেন। আর কিছুসংখ্যক সাহাবী-তাবেয়ী
মসজিদের ভেতরে তা পড়তেন না। তবে মসজিদের বাইরে ঘরে বা পথে অথবা মসজিদের দরজায় পড়তেন।
তারপর ইমামের সাথে শরীক হতেন।
ক. আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত,(কূফার গভর্নর)
সায়ীদ ইবনে আস তাঁকে এবং হুযায়ফা ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে ফজরের সালাতের আগে
ডাকলেন। তাঁরা (কাজ শেষে) তার কাছ থেকে বিদায় নিলেন।
ثم
خرجوا من عنده وقد أقيمت الصلاة، فجلس عبد الله إلى أسطوانة من المسجد، فصلى
الركعتين، ثم دخل في الصلاة
‘‘ইতিমধ্যে মসজিদে ফজরের সালাতের
ইকামাত শুরু হয়ে গেছে। ইবনে মাসউদ রা. মসজিদের একটি খুঁটির আড়ালে ফজরের দুই রাকাআত
(সুন্নাত) পড়লেন। তারপর জামাতে শরীক হলেন।” শরহু মাআনিল আসার ১/৬১৯
খ. আবু মিজলায থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি ফজরের জামাত
চলা অবস্থায় ইবনে আব্বাস ও ইবনে উমর রা.-এর সঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করলাম। ইবনে উমর রা.
জামাতের কাতারে প্রবেশ করলেন। আর ইবনে আব্বাস রা. ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়লেন।
তারপর জামাতে শরীক হলেন। -প্রাগুক্ত
উল্লেখ্য- কতিপয় সাহাবী-তাবেয়ী إذا
أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة (সালাতের ইকামাত শুরু হয়ে গেলে ফরয ছাড়া অন্য সালাত
পড়া জায়েয নয়)-এই হাদীসের ওপর ভিত্তি করে ইকামাত বা জামাত চলা অবস্থায় ফজরের সুন্নাত
পড়তেন না। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবু হুরায়রা রা., আবু মূসা আশয়ারী রা., মুহাম্মদ ইবনে
সীরীন, ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাসীর রাহি. তাঁরা إذا أقيمت الصلاة فلا
صلاة إلا المكتوبة-এই হাদীসের বিধানকে
সকল সালাত এমনকি ফজরের সুন্নতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য মনে করতেন। কিন্তু অন্যান্য সাহাবী-তাবেয়ী
ফজরের সুন্নাত অধিক গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় এই বিধান থেকে একে ভিন্ন মনে করতেন।
হাদীসটিকে তাঁরা ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্যান্য সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করতেন।
ফজরের সুন্নতের ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাগিদ এবং আলোচ্য
বিষয় সংক্রান্ত বিভিন্ন বর্ণনার পর্যালোচনা থেকেও এটাই প্রতীয়মান হয়। কোনো কোনো সাহাবী
নবীজীর সামনে ফজরের ইকামাত চলাকালে মসজিদে সুন্নাত পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে নবীজী তাঁদেরকে
সরাসরি নিষেধ করেননি বা এ কথা বলেননি যে, إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة (ফরযের ইকামাত শুরু হলে অন্য সালাত পড়া নিষেধ) বরং তিনি বিভিন্ন
কারণ উল্লেখ করেছেন। যদি ইকামাত চলা অবস্থায় ফজরের সুন্নাত পড়া সর্বাবস্থায় নাজায়েয
হত, তাহলে তিনি স্পষ্ট নিষেধ করতেন বা বলতেন যে, ফরযের ইকামাত
শুরু হলে অন্য সালাত পড়া নিষেধ।
বি.দ্র- সময় যদি এত কম হয় যে সুন্নাত
পড়তে গেলে ফরয সালাত শেষ হয়ে যাবে, তাহলে সুন্নাত পড়া মাকরুহ।
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
পরবর্তীতে এমন করা থেকে
বিরত থাকবেন। অলসতা না করে ঐ দিনেই সকালে সুন্নাতসহ ফজরের নামাজ কাযা করে নিবেন। তবে
কোনো কারণে জহরের সময় বা পরে পড়লে তখন আর সুন্নাত পড়া লাগবে না। শুধু ফরজ কাযা করে
নিলেই হবে।