আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
251 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (42 points)
আসসালামু আলাইকুম।আমি মাজহাব বিষয়ে বোঝার চেষ্টা করি,কিন্তু বারবার হয়তোবা শয়তানের ওয়াসওয়াসাতেই মাথায় নানান প্রশ্নের উদ্রেক হয়।আমার কৃত প্রশ্নে  ভুল থাকলে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
প্রত্যেক মাজহাবের ইমামই তো তাঁর নিজস্ব অবস্থানে সঠিক,তাই নয় কি?কিন্তু এক মাজহাবের একটি মাসয়ালা অন্য মাযহাবের ক্ষেত্রে তো ভুল হিসেবে বিবেচনা করা হবে?
যেমন অনেক বছরের কাযা সালাত আদায় করার বিধান বিষয়ে অন্য মাযহাবে বলা হয় যে ইচ্ছাকৃত ভাবে সালাত ত্যাগ করার কাযা নেই কিন্তু হানাফী মতানুযায়ী সালাত কাযা করতে হবে।এখন আল্লাহ তা'আলার নিকট কি দুটি মতই গ্রহণযোগ্য ?নাকি দুটি মতের মাঝে যেকোন একটি আল্টিমেটলি সঠিক?
সবাইকে তো একই দিনে বিচারে দাঁড়াতে হবে।যার মতে সালাত কাযা করতে হবে না সে সারাজীবন কাযা আদায় করল না, সে তো তার মাযহাব অনুসারেই বিধানটি মেনেছে।কিন্তু আরেক মাযহাব অনুযায়ী তো সে তাহলে গুনাহগার??
এই ব্যাপার গুলো বুঝে আসে না।অনুগ্রহ করে বুঝিয়ে দেবেন।
আরেকটি বিষয়,আমি যদি মনে করি আমি এক রাকাত বিতর আদায়ের সুন্নাহটি মাঝেমধ্যে পালন করব,হানাফী ফিকহ অনুযায়ী তো বিতর ৩ রাকাতই,এক্ষেত্রে কি ওই সুন্নাহ পালনের সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হব?
বা এরকম অন্যান্য যেসব ক্ষেত্রে একই বিষয়ের একাধিক পদ্ধতি হাদীসে রয়েছে,সেসব ক্ষেত্রে তো মাযহাবে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়?অন্য হাদীসগুলো হোক বা জঈফ তা আমল করলে কি সুন্নাহ র সাওয়াব হতোনা?
(ধৃষ্টতা পূর্ণ প্রশ্নের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী)

1 Answer

0 votes
by (710,840 points)
ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আল্লাহর নিকট মূলত একটি বিষয়-ই সঠিক।তবে কেউ কুরআন হাদীসকে সঠিকভাবে অনুসরণের নিয়তে যেকোনো এক ইমামকে ফলো করার দরুণ আল্লাহ তাকে শেষ বিচারের দিন ক্ষমা করে দেবেন, যদি তার আ'মল অঠিক থাকে।কেননা সে তো আল্লাহকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা প্রচেষ্টা করেছে।আল্লাহ মূলত এটা দেখবেন,কে উনাকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা প্রচেষ্টা করেছে,আর কে করে নাই।

মুজতাহিদ সঠিক ইজতেহাদ বা মাস'আলা নির্ণয় করলে উনি দু'টি সওয়াব পাবেন।আর ভূল মাস'আলা নির্ণয় করলে একটি সওয়াব পাবেন।ভূল মাস'আলা নির্ণয় করার কারণে উনার অনুসারীদের কোনো প্রকার সমস্যা হবে না।বরং তারা সওয়াব প্রাপ্ত হবেন।

একেক মাস'আলায় একেকজন ইমামকে অনুসরণ করা যাবে না।এবং একই মাস'আলা কিছু দিন একটা এবং অন্য কিছু দিন আরেকটা মানা যাবে না।বরং যে ইমামকে মানতে হবে,উনার সবকিছুকেই মানতে হবে।তবে উনার মতের উল্টা সহীহ কোনো হাদীস পাওয়া গেলে,সেটাকে অবশ্যই ফলো করতে হবে।

1936 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,
মোটকথাঃ দুই প্রকার তাকলীদই সাহাবা তাবেঈনদের জমানায় প্রচলিত ছিলো।কিন্তু যখন হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীতে অনেক মাযহাব ও মুজতাহিদের অাবির্ভাব হওয়া শুরু হল।অনেক কম মাস'আলা ই হালাল-হারামের ইখতেলাফ থেকে অবশিষ্ট থাকল।অন্যদিকে মানুষের সামনে প্রবৃত্তি তার ডানা মেলে দাড়াল।যেজন্য লোকজন রুখসতকে তালাশ করতে শুরু করল।যে ইমামের মাস'আলা নিজের প্রবৃত্তি অনুযায়ী হল, লোকজন সেটাকে অনুসরণ করতে শুরু করল।সাথে সাথে অন্য ইমামের মাযহাব কে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল,এই শ্বাসত দ্বীন একটা প্রবৃত্তির সমষ্টি হয়ে যাচ্ছে।দ্বীন-ইসলামকে অনুসরণ করার স্থলে লোকজন নিজ প্রবৃত্তির পূজা করতে শুরু করে দিল। 

এহেন পরিস্থিতে সে সময়ের বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম চিন্তা করলেন,যে তাকলীদে গায়রে সাখসী তথা স্বাধীন তাকলীদের ধরুণই যেহেতু এই সমস্যা হচ্ছে এবং ভবিষ্যততে আরো হবে।তাই তারা ভাবলেন, এখনই লোকজনকে স্বাধীন তাকলীদ থেকে বাধা প্রদাণ করতে হবে।এবং সবাইকে তাকলীদে শাখসীর উপর একাট্টা করতে হবে।নতুবা দ্বীন- ইসলাম ধংশ হয়ে যাবে।
সুতরাং এই সমস্ত কারণেই তাকলীদে শাখসীর  উপরই ইজমা সংঘটিত হয়ে গেলো।

নাওয়াব সিদ্দিক হাসান খান আল-ইনসাফ(৯৫) গ্রন্থে লিখেন,
হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর পর থেকে মানুষের মধ্যে তাকলীদে শাখসীর সূচনা হয়।এবং এ সময় এটা ওয়াজিব ছিলো।

যেহেতু তাকলীদের দু'টি শাখার মধ্যে তাকলীদে গায়রে শাখসী ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে।এজন্য এখন কুরআন হাদীসে ঘোষিত ফরয তাকলীদ শুধুমাত্র তাকলীদে শাখসীতেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।এবং সবার জন্য এটা ওয়াজিব হয়ে গেছে।(জাওয়াহিরুল ফিকহ-২/২৪)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
মুজতাহিদ ফিল মাযহাব তথা বিজ্ঞ আলেম ব্যতীত সবার জন্য তাকলীদে শাখসী করা ওয়াজিব।দৈনন্দিন জীবনের সকল মাস'আলায় কোনো একজন মুজতাহিদ বা মাযহাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব।
সেহেতু আপনি যদি হানাফি মাযহাবকে ফলো করে থাকেন,তাহলে সর্বক্ষেত্রে হানাফি মাযহাবকেই ফলো করবেন।কোনো একটি মাস'আলায় অন্য কোনো মাযহাবকে অনুসরণ করতে পারবেন না।হ্যা আপনার জন্য এ সুযোগ রয়েছে যে,আপনি মাযহাবকে চেঞ্জ করে নিবেন।অর্থাৎ প্রথমে যদি কোনো এক মাযহাবকে ফলো করে থাকেন,তাহলে পরবর্তীতে সকল মাস'আলা ভিন্ন কোনো মাযহাবকে ফলো করতে পারবেন।এই চেঞ্জ করার একমাত্র উদ্দেশ্য থাকতে হবে কুরআন হাদীসকে সঠিক ভাবে অনুসরণ করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...