আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
82 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (34 points)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।.. 


মাসয়ালাটা জানার জন্য পুরো ঘটনা একটু বলছি বিস্তারিত..
❝ আমার আব্বুর মাসনা আছে। কিন্তু আব্বুর মাঝে সমতা নেই। দেখা যায়, আমাদের ক্ষেত্রে আমাদের সব খরচ বহন করলেও আম্মুর খরচ কখনোই বহন করেনা। আম্মুর সামান্য সামান্যতম প্রয়োজনটুকুও না! আর বেদ্বীন পরিবেশে মাসনার অবস্থা কেমন তা তো বলার অপেক্ষা রাখেনা উখতি! মানে ছোট থেকে ছোট বিষয়গুলো নিয়েও সবসময় পরিবারে অশান্তি, ঝগড়া-ঝামেলা লেগেই থাকে। তার উপর আম্মু আগে কর্মজীবী ছিলেন। আমার পরীক্ষার আগে তখন ট্রান্সফার দেওয়ায় সেই চাকরি ছেড়েছিলেন আট বছর খানেক আগে। আব্বু আম্মুর চাহিদা পূরণ না করায় আম্মুর চাকরি ছাড়া নিয়ে খুব আফসোস হয়, সবসময় তিনি আফসোস করেন এই নিয়ে। 
আমি ছোট থেকে ভালো রেজাল্ট করায় আম্মুর সবসময় আমাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন ছিল৷ আমার এডমিশন টাইমে নূরের আলো আমার হৃদয়ে একটুখানি হলেও ছোঁয়া পেয়েছিল। প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাক্রম থাকার পরেও সেটা আমি সেদিকে আগাতে চাইনি। পরের বছর মহিলা কোন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির প্ল্যান ছিল৷ কিন্তু পরের বছরে গিয়ে দেখা গেল আমি সেই সুযোগ পাইনি। ফলস্বরূপ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তিরত আছি। 
আমি প্রতি মূহুর্তে সহশিক্ষার কুফল অনুভব করি উখতি। বিশ্বাস করুন। 
আমি পারছি না ছাড়তে, পারছিনা ধরতে। আমার কিছু খরচ, সাথে আম্মুর খরচটা টিউশনের টাকা থেকে যোগান দেওয়ার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল। 
উখতি, আমার আব্বু এখন মদ্যপ অবস্থায় ঘরে আসে। আম্মুর সাথে চিৎকার, চেচামেচি করে। আমি আমার দিক থেকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করছি এসব নিয়ে, কিন্তু হিতের বিপরীত হয়েছে। বেয়াদব, দিনদিন অধঃপতন হচ্ছে এমন অনেক তকমা পেতে হলো! আমার আম্মু এসব নিয়ে টেনশন করতে করতে অসুস্থ থাকে বেশিরভাগ সময়। আমরা দু'বোন। আম্মু আব্বুকে আমার বিয়ের ব্যাপারে বলেছিল( আম্মু জানে আমার সহশিক্ষার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ নেই, সাথে চাকরিও করব না। সেজন্য আম্মু বিয়ের দিকটা ভাবছে)।কিন্তু আব্বুর একটাই কথা আব্বু অনার্সের আগে কোনভাবেই বিয়ে দিবেন না। আব্বুর কাজ গুলো অনেক কষ্ট দেয় উখতি। আল্লাহ আমার ডাক কি শুনছেন না? আমার আব্বুর কি হেদায়েত হবে না? 
ছোট থেকে আব্বু আম্মুর মধ্যে ঝামেলা দেখতে দেখতে আমার নিজের মেজাজও কেমন যেন খিটখিটে থাকে উখতি। আল্লাহর কাছে এহেন কর্মকাণ্ড থেকে পানাহ চাই৷ 
আব্বুর মাশাআল্লাহ ইনকাম ভালোই। দেখা যায় বদকাজে খরচ করছে। এখন তো আমরা বড় হইছি, সেটাও ভাবছেনা। একদিকে আব্বুর মাসনা আছে সেটা সমাজের চোখে অনেক খারাপ ( আমরা মেনে নিছি, কিন্তু আব্বু সমতা বজায় রাখছেন না এটা কষ্ট দেয় আমাদের), তার উপর আব্বু মদ্যপান করে। এটাতো তো আরো নিকৃষ্ট পর্যায়ে। 
আমি আজ নানুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। উনারা আমাকে বারবার বুঝাচ্ছেন আব্বুর কারণে আমার ভালো কোথাও বিয়ে হবেনা। দ্বীনদার কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবোনা। আমার কাছে দুইটা অপশন। ১)হারাম রিলেশনশিপ করে বিয়ে করা,
২) জব করে বিয়ে করা। তাদের মতে এর দ্বারা আব্বুর কাজ গুলো একটু হলেও মোচন হবে। নয়তো নাকি আমার জীবন আমার মায়ের মতো হবে।  
সেইম কথা আমার ফুফিরাও বলছে। তুমি পর্দা করে কি হবে, মানুষতো বলবে তোমার বাবা মদ খায়। হেদায়েত কেউ কাউকে তো দিতে পারেনা। পেরেছি কি! 
আমার কান্না পাচ্ছে । 
আমি জানি উনারা সিরিয়াস বিষয়গুলো নিয়ে। আমাকে আল্টিমেটাম দিয়েছে। হয় এসপার না হয় ওসপার। 
আমিতো সেই পথে ফিরে যেতে চাইনা৷ আমার ভয় হচ্ছে আমি কিসের মধ্যে আছি। 
আমার জন্য কি সহশিক্ষা জায়েজ? আগামী ২বছর পরে তারা আমাকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র যেকোন চাকরি করিয়েই ছাড়বে আমি বেশ ভালো বুঝতে পারছি। 
 

1 Answer

0 votes
by (566,280 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

দ্বীনি শিক্ষা হোক,বা দুনিয়াবি শিক্ষা হোক,ইসলামের বিধান হলো ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। 

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী…। (সূরা আলি ইমরান ১৪)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

 فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া।  (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

★ একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات     জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)

তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
,
যতদিন পর্যন্ত এই দেশে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে উলামায়ে কেরামগন  কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।

২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের  সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১;
,
সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
উপরোক্ত শর্তাবলী মেনে পড়াশোনা করতে পারলে আপনার জন্য সহ শিক্ষা জায়েজ।

অনুথায় জায়েজ নয়।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
বিবাহের জন্য প্রশ্নে উল্লেখিত দুটি অপশন ছাড়া আর যেকোনো অপশন নাই,এ কথা সহীহ নয়।

দ্বীনদার পাত্র খোজার জন্য নিজের মাহরামের চেষ্টার পাশাপাশি আহলিয়া ডটকম ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে বায়োডাটা দেয়ার আহবান রইলো। 
পাশাপাশি আল্লাহর কাছে খালেস দিলে নিয়মিত দোয়া চালিয়ে যাবেন।
এবং এটা নিয়ে পেরেশান না হওয়ার পরামর্শ রইলো। 

দ্রুত বিবাহের আমল গুলি করারও পরামর্শ থাকবে। 

এ সংক্রান্ত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...