আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

Wall for Nayem Al Hasan

Please log in or register to post on this wall.
জিজ্ঞাসাঃ আমাদের দেশে দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামা‘আতের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলে মিলে যে মুনাজাত করা হয়, শরী‘আতে এর কোন প্রমাণ আছে কি? অনেকে বলেছেন-‘নামাযের পর মুনাজাত বলতে কিছু নেই। অতএব, তা বিদ‘আত- এ ব্যাপারে শরী‘আতের সঠিক ফয়সালা কি?



জবাবঃ

নামাযের পর বা ফরজ নামাযের জামা‘আতের পর আমাদের দেশে যে ‍মুনাজাত প্রচলিত আছে তা মুস্তাহাব আমল; বিদ‘আত নয়। কারণ- বিদ‘আত বলা হয় ঐ আমলকে, শরী‘আতে যার কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ উক্ত ‘মুনাজাত’ নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণিত। তাই যারা মুনাজাতকে একেবারেই অস্বীকার করেন, তারা ভুলের মধ্যে রয়েছেন; আর যারা ইমাম মুক্তাদীর সম্মিলিত মুনাজাতকে সর্ব অবস্থায় বিদ‘আত বলেন, তাদের দাবীও ভিত্তিহীন এবং মুনাজাতকে যারা জরুরী মনে করে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন এবং কেউ না করলে তাকে কটাক্ষ করেন, গালি দেন, তারাও ভুলের মধ্যে আছেন।

বিশ্লেষণঃ নামাযের পরের মুনাজাতকে সর্বপ্রথম যিনি ভিত্তিহীন ও বিদ‘আত বলে দাবী তুলেছিলেন, তিনি হলেন-হাম্বলী মতাবলম্বী আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা রহ.। পরে তদীয় ছাত্র আল্লামা হাফিজ ইবনুল কাইয়্যিম তাঁর অনুসরণ করেন। আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা ও হাফিজ ইবনুল কায়্যিম রহ. দাবী করেন যে, নামাযের পর মুনাজাত করার কোন প্রমাণ কুরআন ও হাদীসে নেই। যে সব রেওয়ায়েতে নামাযের পর দু‘আ করার কথা আছে, এর অর্থ হচ্ছে-সালামের পূর্বের দু‘আয়ে মা’সূরা।

তাদের এ ভিত্তিহীন দাবীর খন্ডনে আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী শারেহে বুখারী রহ. বলেন, ‘ইবনুল কাইয়্যিম প্রমুখগণের দাবী সঠিক নয়’। কারণ- বহু সহীহ হাদীসে সালামের পর দু‘আ করার স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। আর হাদীসে যে নামাযের শেষে দু‘আ করার কথা আছে, তার অর্থ সালামের পূর্বের দু‘আয়ে মাসূরা নয়। বরং নিঃসন্দেহে তা সালামের পরের দু‘আ। (দেখুন ফাতহুল বারী, ২:৩৩৫ পৃ:, ফতহুল মুলহিম, ২:১৭৬ পৃ:)

এমনিভাবে ইবনুল কাইয়্যিম ও তাঁর উস্তাদের উক্ত দাবীর প্রতিবাদ করে আল্লামা যাফর আহমদ উসমানী রহ. ‘ইলাউস সুনান’ গ্রন্থে লিখেছেন- “ইবনুল কাইয়্যিম প্রমুখগণ নামাযের পরের দু‘আকে অস্বীকার করে তত্সম্পর্কিত হাদীস সমূহকে সালামের পূর্বের দু‘আয়ে মা‘সূরা বলে বুঝাতে চেয়েছেন বটে কিন্তু তাঁদের এ ব্যাখ্যা ঠিক নয়। কারণ- অনেক সুস্পষ্ট হাদীস তাদের এ ব্যাখ্যা বিরুদ্ধে বিদ্যমান। সুতরাং তাঁদের এ হাদীস বিরোধী ব্যাখ্যা গ্রহণীয় নয়।” (ইলাউস সুনান ৩:১৫৯ পৃ:)

যারা নামাযের পরের মুনাজাতকে একেবারেই অস্বীকার করেন, তাদের জবাবে উল্লেখিত উদ্ধৃতিদ্বয়ই যথেষ্ট।

আর যারা বলেন যে, ‘নামাযের পর একাকী মুনাজাত করা যায়; কিন্তু ইমাম ও মুক্তাদীগণের জন্য সম্মিলিত মুনাজাত করা বিদ‘আত; তাদের এ দাবীর স্বপক্ষে যেহেতু কোন মজবুত দলীল বিদ্যমান নেই, তাই তাদের এ দাবীও গ্রহণীয় নয়।

‘নামাযের পর মুনাজাত প্রসঙ্গে হাদীসসমূহ ব্যাপকতা সম্পন্ন। এ হাদীস সমূহে মুনাজাতের কোন ক্ষেত্র বিশেষের উল্লেখ নেই। অতএব হাদীস সমূহের ব্যাপকতার ভিত্তিতে নামাযের পর সর্বক্ষেত্রের মুনাজাতই মুস্তাহাব বলে বিবেচিত হবে। মূলভিত্তি সহীহ হাদীসে বিদ্যমান থাকার পর বিদ‘আতের প্রশ্নই উঠে না। (ফাইযুল বারী ২:৪৩১)

হাদীসে সম্মিলিত মুনাজাতের গুরুত্বের বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। ফিকহের কিতাবসমূহেও ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিত প্রচলিত মুনাজাতকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে। অসংখ্য হাদীস বিশারদগণের রায়ও ইজতিমায়ী মুনাজাতের স্বপক্ষে স্পষ্ট বিদ্যমান। এমতাবস্থায় প্রচলিত মুনাজাতকে এ বিদ‘আত বলা ঠিক নয়। নিম্নে মুনাজাতের স্বপক্ষের হাদীস সমূহ ফিকহের কিতাব সমূহের বর্ণনা এবং হাদীস বিশারদগণের রায় সম্বলিত দলীল সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করা হলোঃ

মুনাজাতের স্বপক্ষে হাদীসের দলীল:

হাদীস-১: (ফরয নামাযের পর মুনাজাত)

হযরত আবূ উমামা রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হল-কোন সময়ে দু‘আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা? রাসূলে আকবার সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘শেষ রাত্রে এবং ফরজ নামাযের পরে।’(জামি’য়ে তিরমিযী ২:১৮৭)

হাদীস-২: হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন তুমি ফরয নামায হতে অবসর হও, তখন দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে।’ (তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাযি., ৫১৪ পৃ:)

হাদীস-৩: হযরত কাতাদাহ্, যাহ্ হাক ও কালবী রহ. হতে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন- ‘ফরজ নামায সম্পাদন করার পর দু‘আয় লিপ্ত হবে।’  (তাফসীরে মাযহারী ১০:২৯ পৃ:)

হাদীস-৪: (নামাযের পর মুনাজাতে হাত উঠানো)

হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নামায দুই দুই রাকা‘আত; প্রত্যেক দুই রাকা‘আতে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে হয়। ভয়-ভক্তি সহকারে কাতরতার সহিত বিনীতভাবে নামায আদায় করতে হয়। আর (নামায শেষে) দু’হাত তুলবে এভাবে যে, উভয় হাত প্রভু পানে উঠিয়ে চেহারা কিবলামুখী করবে। অতঃপর বলবে হে প্রভু ! হে প্রভু ! (এভাবে দু‘আ করবে। যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, সে অসম্পূর্ণ নামাযী তাঁর নামায অঙ্গহীন সাব্যস্ত হবে)।(জামি’য়ে তিরমিযী ১৮৭)

হাদীস-৫: (নামাযের পর মুনাজাতে হাত উঠানো)

হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে কোন বান্দা প্রত্যেক নামাযের পর দু’হাত তুলে এ দু‘আ পড়বে- আল্লাহুম্মা ওয়া ইলাহা ……………, আল্লাহ তা‘আলা নিজের উপর নির্ধারিত করে নিবেন যে, তার হস্তদ্বয়কে বঞ্চিত রূপে ফেরত দিবেন না। (হাদীসে বর্ণিত পূর্ণ দু‘আটি এবং মুনাজাত সম্পর্কিত তত্ত্ববহুল বিস্তারিত তথ্য শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক সাহেব রহ. সংকলিত মুসলিম শরীফ ও অন্যান্য হাদীসের ছয় কিতাব- ৫ম খন্ডে দ্রষ্টব্য।) এছাড়া মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড ১৯৫/১৯৬ পৃষ্ঠায় অনেকগুলো হাদীস বিদ্যমান আছে- সেগুলোর সার সংক্ষেপ হচ্ছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাজাত ও দু‘আ করার সময় হাত উঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং এটাই দু‘আর আদব।

হাদীস-৬: (মুনাজাত সালাম ফিরানোর পর)

হযরত ইবনে ইয়াহইয়া রহ. বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযি.-কে দেখেছি, তিনি এক ব্যক্তিকে সালাম ফিরানোর পূর্বেই হাত তুলে মুনাজাত করতে দেখে তার নামায শেষ হওয়ার পর তাকে ডেকে বললেন, ‘রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল নামায শেষ করার পরই হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন, আগে নয়।’  (ইলাউস সুনান ৩:১৬১)

হাদীস-৭: (সম্মিলিত মুনাজাত)

হযরত হাবীব ইবনে সালাম রাযি. বর্ণনা করেন- রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘যদি কিছু সংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে এভাবে দু‘আ করে যে, তাদের একজন দু‘আ করতে থাকে, আর অন্য লোকেরা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ অবশ্যই কবুল করে থাকেন। (কানযুল উম্মাল ১:১৭৭ পৃঃ # তালখীসুয যাহাবী ৩:৩৪৭ পৃ:)

হাদীস-৮: (ইমাম-মুক্তাদীর সম্মিলিত মুনাজাত)

হযরত সাওবান রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ‘কোন ব্যক্তি লোকদের ইমাম হয়ে এমন হবে না যে, ‍সে তাদেরকে বাদ দিয়ে দু‘আতে কেবল নিজেকেই নির্দিষ্ট করে। যদি এরূপ করে, তবে সে তাদের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করল।’ (তিরমিযী শরীফ ১:৮২)

উল্লেখিত হাদীস সমূহ দ্বারা বুঝা যায়:

(ক) ফরয নামাযের পর দু‘আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা। তাই ফরজ নামাযের পর দু‘আয় মশগুল হওয়া বাঞ্ছনীয়।

(খ) নামাযের পর হাত তুলে দু‘আ করা বিশেষ গুরুত্বসম্পন্ন আমল। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নামাযের পর দু‘আয় হাত উঠাতেন এবং অন্যদেরকে এর প্রতি উত্সাহিত করতেন। সুতরাং এটাই দু‘আর আদব।

(গ) একজন দু‘আ করবে; আর বাকীরা সবাই আমীন বলবে; এভাবে সকলের দু‘আ বা সম্মিলিত মুনাজাত কবুল হওয়া অবশ্যম্ভাবী। আর ইমাম সাহেব শুধু নিজের জন্য দু‘আ করবেন না। দু‘আতে মুসল্লীদেরকেও শামিল করবেন।

উল্লেখিত হাদীস সমূহের সমষ্টিদ্বারা নামাযের পর একাকী মুনাজাতের পাশাপাশি ফরজ নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলের সম্মিলিত মুনাজাতের প্রমাণ দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। অতএব, তা মুস্তাহাব হওয়াই হাদীস সমূহের মর্ম ও সমষ্টিগত সারকথা। (বিস্তারিত দেখুনঃ কিফায়াতুল মুফতী ৩:৩০০ পৃঃ, ইলাউস সুনান, ৩:১৬১ পৃ:)

উল্লেখ্য যে, বর্ণিত হাদীসসমূহ সম্পর্কে কেউ কেউ আপত্তি তুলেন যে, ‘এ হাদীসসমূহের কোনটিতে ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার কথা একসঙ্গে উল্লেখ নেই। কেননা, এগুলোর কোনটিতে শুধু দু‘আর কথা আছে, কিন্তু হাত তোলার কথা নেই। আবার কোনটিতে শুধু হাত তুলে মুনাজাতের কথা আছে। কিন্তু তা একাকীভাবে, সম্মিলিত ভাবে নয়। আবার কোনটিতে সম্মিলিত মুনাজাতের কথা আছে সত্য, কিন্তু ফরজ নামাযের পরে হওয়ার কথা উল্লেখ নেই। অতএব, এ হাদীস সমূহের দ্বারা প্রচলিত মুনাজাত প্রমাণিত হয় না।’ তাঁদের এ আপত্তির জবাবে হযরত মাওলানা মুফতী কিফায়াতুল্লাহ্ রহ. কিফায়াতুল মুফতী গ্রন্থে বলেন- “বিষয়গুলো যেমন কোন এক হাদীসে একত্রিতভাবে উল্লেখ হয়নি, তেমনি কোন হাদীসে তা নিষিদ্ধও হয়নি। কোন জিনিসের উল্লেখ না থাকার দ্বারা তা নিষিদ্ধ হওয়া কখনোও বুঝায় না। উপরন্তু উল্লেখিত হাদীসসমূহের বর্ণনা ভাব এমন ব্যপকতা সম্পন্ন, যা সম্ভাব্য সকল অবস্থাকেই শামিল করে। তাছাড়া বিভিন্ন রেওয়ায়েতে এ অবস্থাগুলোর পৃথক পৃথক উল্লেখ রয়েছে। যার সমষ্টিগত সামগ্রিক দৃষ্টিকোণে ফরজ নামাযের পর হস্ত উত্তোলন পূর্বক সম্মিলিত মুনাজাত অনায়াসে প্রমাণিত হয়। এটা তেমনি, যেমন নামাযের বিস্তারিত নিয়ম, আযানের সুন্নাত নিয়ম ইত্যাদি একত্রে কোন হাদীসে বর্ণিত নেই। বিভিন্ন হাদীসের সমষ্টিতে তা প্রমাণিত হয়।” (দেখুন: কিফায়াতুল মুফতী ৩:৩০০০ পৃ:)

মুনাজাত অস্বীকারকারীগণের আরো কতিপয় অভিযোগ ও তার জওয়াব:

অভিযোগ- ১

নামাযের পর মুনাজাতের স্বপক্ষের হাদীসসমূহ কেবল নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অতএব, এর দ্বারা ফরজ নামাযের পর মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়া প্রমাণিত হয় না।

জবাবঃ হযরত আল্লামা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মীরী রহ. বলেন, ‘নামাযের পর মুনাজাত করার পক্ষের হাদীসগুলোর ব্যাপারে ফিকহবিদগণ নফল এবং ফরয উভয় নামাযকেই শামিল করেছেন।” (ফায়যুল বারীঃ ৪:৪৭ পৃঃ)

মাওলানা যাফর আহমদ উসমানী রহ. বলেন, “ফরয নামাযের পর মুনাজাত নফল নামাযের পর মুনাজাত অপেক্ষা উত্তম।” (ইলাউস সুনান, ৩:১৬৭ পৃঃ)

অভিযোগ- ২

মুনাজাত মুস্তাহাব হয়ে থাকলে প্রচুর হাদীসে এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমল প্রমাণিত থাকতো। অথচ এ ব্যাপারে একটি রেওয়ায়েতও প্রমাণিত নেই।

জবাবঃ প্রথমতঃ মুনাজাতের ব্যাপারে ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর আমল সম্পর্কিত একটি রেওয়ায়েতও প্রমাণিত নেই’- একথাটি ঠিক নয়। কারণ- এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট রিওয়ায়াত আমরা হাদীস অধ্যায়ে বর্ণনা করেছি। দ্বিতীয়তঃ মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল প্রমাণিত হওয়া মোটেও জরুরী নয়। কারণ বহু মুস্তাহাব আমল রয়েছে, যা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ মাসলিহাতের কারণে নিজে করতেন না, কিন্তু সে সবের প্রতি মৌখিকভাবে উম্মতদেরকে উত্সাহিত করতেন। যাতে উম্মত তার উপর আমল করে নিতে পারে। যেমন- চাশতের নামায, আযান (যাকে আফযালুল আ’মাল বলা হয়ে থাকে) ইত্যাদি। এগুলো রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মা’মূল হিসেবে প্রমাণিত নেই। অথচ তিনি এ নেক কাজ সমূহের প্রতি উম্মতদেরকে মৌখিকভাবে যথেষ্ট উত্সাহিত করে গিয়েছেন। তদ্রুপ মুনাজাতের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমলী রেওয়ায়াত স্বল্প বর্ণিত হলেও মৌখিক রিওয়ায়াত প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। আর মুস্তাহাব প্রমাণ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট। পরন্তু নিয়ম হল, মৌখিক রেওয়ায়েতের সাথে যদি আমলী রেওয়ায়েতের বিরোধ পাওয়া যায়, তবে যারা বলেন, মুস্তাহাব প্রমাণ হওয়ার জন্য রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৌখিক বর্ণনার পাশাপাশি আমলও থাকতে হবে, তারা সঠিক সরল পথ থেকে দূরে সরে পড়েছেন এবং একটি ফাসিদ জিনিসের উপর ভিত্তি করে কথা বলছেন। (দ্রষ্টব্য: ফায়যুল বারী ২:৪১৩ পৃ:)

অভিযোগ- ৩

মুনাজাতের স্বপক্ষে যেসকল হাদীসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়, সেগুলো অনেকটা যঈফ। অতএব, তা নির্ভরযোগ্য নয়।

জবাবঃ এ অধ্যায়ের কিছু হাদীস যঈফ থাকলেও যেহেতু তার সমর্থনে অন্য সহীহ রিওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে। অতএব, তা নির্ভরযোগ্যই বিবেচিত হবে। দ্বিতীয়ত: সেই হাদীসসমূহ ফযীলত সম্পর্কিত। আর ফযীলতের ব্যাপারে যঈফ হাদীসও গ্রহণযোগ্য।(নূখবাতুল ফিকার দ্রষ্টব্য)

অভিযোগ- ৪

হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন ফরজ নামাযের সালাম ফিরাতেন, তখন এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়তেন যে, মনে হত- তিনি যেন উত্তপ্ত পাথরের উপর উপবিষ্ট আছেন। (উমদাতুল কারী ৬:১৩৯ পৃ:)

এতে বুঝা যায়, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. সালাম ফিরিয়ে মুনাজাত না করেই দাঁড়িয়ে যেতেন।

জবাবঃ হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি.-এর উল্লেখিত আমলের এ অর্থ নয় যে, তিনি সালাম ফিরানোর পর মাসনূন দু‘আ যিকর না করেই দাঁড়িয়ে যেতেন। কেননা- তিনি রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর বিরুদ্ধাচরণ কখনও করতে পারেন না। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সালাম ফিরানোর পর বিভিন্ন দু‘আ ও যিকর হাদীসে বর্ণিত আছে। সুতরাং রেওয়ায়াতটির মর্ম হল- হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. সালাম ফিরানোর পর সংক্ষিপ্ত দু‘আ ও যিকির পাঠের অধিক সময় বসে থাকতেন না।

অতএব, উল্লেখিত রেওয়ায়াত দ্বারা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি.-এর মুনাজাত করা ব্যতীত উঠে পড়া প্রমাণিত হয় না।(আল-আবওয়াব ওয়াত-তারাজিম: ৯৭ পৃ:)

স্মর্তব্য যারা ইজতিমায়ী মুনাজাতের বিরোধী, তারা হযরত আবু বকর রাযি.-এর আমলের অজুহাত দেখিয়ে সালাম ফিরানোর পর দেরী না করেই সুন্নাত ইত্যাদির জন্য উঠে পড়েন। অথচ এর দ্বারা নামাযের পর যে মাসনূন দু‘আ ইত্যাদি রয়েছে, তা তরক করা হয়। দ্বিতীয়ত: ফরজ ও সুন্নাতের মাঝখানে কিছু সময়ের ব্যবধান করার যে হুকুম হাদীস শরীফে পাওয়া যায়, তা লঙ্ঘন করা হয়।

মুনাজাতের স্বপক্ষে ফিকহের কিতাবসমূহের দলীল:

ফিকহের কিতাব সমূহে মুনাজাতের স্বপক্ষে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। নিম্নে তার কিয়দাংশ উদ্ধৃত হল:

১. ফিকহে হানাফীর অন্যতম মূল কিতাব ‘মাবসূত’- এর বর্ণনা: “যখন তুমি নামায থেকে ফারিগ হবে, তখন আল্লাহর নিকট দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে। কেননা, এ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা।”

২. প্রসিদ্ধ ফিকহের কিতাব ‘মিনহাজুল উম্মাহ্ ও আকায়িদুসসুন্নিয়্যাহ্’- এর বর্ণনা: “ফরজ নামাযের পর দু‘আ করা সুন্নাত। এরূপভাবে দু‘আর সময় হাত উঠানো এবং পরে হাত চেহারায় মুছে নেয়া সুন্নাত।”

৩. তাহযীবুল আযকার’- এর বর্ণনা: “এ কথার উপর উলামায়ে কিরামের ইজমা হয়েছে যে, নামাযের পর যিকর ও দু‘আ করা মুস্তাহাব।”

৪. শির’আতুল ইসলাম’- এর বর্ণানা: “ফরয নামাযের পর মুসল্লীরা দু‘আ করাকে গণীমত মনে করবে।”

৫. ‘তুহফাতুল মারগুবা’ ও ‘সি’আয়া- এর বর্ণ
Apr 5, 2022 by Nayem Al Hasan
পরীক্ষার কারণে মসজিদের জামাতের আগে জামাতের হুকুম?

যদি পরীক্ষার সময়কাল এক থেকে তিনটা পর্যন্ত হয় এবং জামাতের নামায দু'টার মধ্যে হয় এবং আশেপাশের অন্য কোনো মসজিদে বেলা একটার আগে জামাত না পাওয়া যায়, তাহলে এ কারণে মসজিদ ছাড়া অন্য জায়গায় নামাজের জামাত পড়ার সুযোগ রয়েছে। এতে জামাতে নামাজ পড়ার সওয়াব পাওয়া যাবে, কিন্তু মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার সওয়াব পাওয়া যাবে না।

আর ওজরের কারণে পরীক্ষার সময় এ পদ্ধতি গ্রহণ করা জায়েয, তবে পরীক্ষার পর এ পদ্ধতি গ্রহণ করা ঠিক হবে না, বরং মসজিদের জামাতে শরীক হতে হবে।

হাদীসে এসেছেঃ

"عن أبي الأحوص. قال: قال عبد الله:لقد رأيتنا وما يتخلف عن الصلاة إلا منافق قد علم نفاقه. أو مريض. إن كان المريض ليمشي بين رجلين حتى يأتي الصلاة. وقال: إن رسول الله صلى الله عليه وسلم علمنا سنن الهدى. وإن من سنن الهدى الصلاة في المسجد الذي يؤذن فيه."

(صحیح مسلم ،باب صلاۃ الجماعۃ من  سنن الہدی،ج:۱،ص:۴۵۳،داراحیاءالتراث العربی)

ফতোয়া শামীতে রয়েছেঃ

"(فتسن أو تجب) ثمرته تظهر في الإثم بتركها مرة (على الرجال العقلاء البالغين الأحرار القادرين على الصلاة بالجماعة من غير حرج)

(قوله من غير حرج) قيد لكونها سنة مؤكدة أو واجبة، فبالحرج يرتفع الإثم ويرخص في تركها ولكنه يفوته الأفضل بدليل «أنه - عليه الصلاة والسلام - قال لابن أم مكتوم الأعمى لما استأذنه في الصلاة في بيته: ما أجد لك رخصة» قال في الفتح: أي تحصل لك فضيلة الجماعة من غير حضورها لا الإيجاب على الأعمى، «لأنه - عليه الصلاة والسلام - رخص لعتبان بن مالك في تركها» اهـ لكن في نور الإيضاح: وإذا انقطع عن الجماعة لعذر من أعذارها وكانت نيته حضورها لولا العذر يحصل له ثوابها اهـ والظاهر أن المراد به العذر المانع كالمرض والشيخوخة والفلج، بخلاف نحو المطر والطين والبرد والعمى تأمل (قوله ولو فاتته ندب طلبها) فلا يجب عليه الطلب في المساجد بلا خلاف بين أصحابنا، بل إن أتى مسجدا للجماعة آخر فحسن، وإن صلى في مسجد حيه منفردا فحسن. وذكر القدوري: يجمع بأهله ويصلي بهم، يعني وينال ثواب الجماعة كذا في الفتح."

(کتاب الصلاۃ،باب الامامۃ،ج:۱،ص:۵۵۵،سعید)

মাজমাউল আনহুরে এসেছেঃ

"وفي المفيد: أنها واجبة وتسميتها سنة لوجوبها بالسنة؛ لكن إن فاتته جماعة لا يجب عليه الطلب في مسجد آخر كما في أكثر الكتب.وفي الجوهرة: ‌لو ‌صلى ‌في ‌بيته بزوجته أو ولده فقد أتى بفضيلة الجماعة."

(کتاب الصلاۃ،فصل الجماعۃ سنۃ موکدۃ،ج:۱،ص:۱۰۷،داراحیاءالتراث العربی)

ফাতহুল কদিরে আল্লামা ইবনে হুমাম বলেনঃ

"وسئل الحلواني عمن يجمع بأهله أحيانا هل ينال ثواب الجماعة؟ فقال: لا، ‌ويكون ‌بدعة ومكروها بلا عذر."

(کتاب الصلاۃ،باب الامامۃ،ج:۱،ص:۳۴۵،دارالفکر)
Apr 5, 2022 by Nayem Al Hasan

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

...