হযরত উমর ফারুক রাঃ উহুদ প্রান্তর থেকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রেখে পলায়ন করেননি।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হযরত উমর ফারুক রাঃ এর থাকার পরিস্কার প্রমাণ বুখারীর এক হাদীসে বিদ্যমান:
عَنِ الْبَرَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَقِيْنَا الْمُشْرِكِيْنَ يَوْمَئِذٍ وَأَجْلَسَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم جَيْشًا مِنْ الرُّمَاةِ وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ عَبْدَ اللهِ وَقَالَ لَا تَبْرَحُوْا إِنْ رَأَيْتُمُوْنَا ظَهَرْنَا عَلَيْهِمْ فَلَا تَبْرَحُوْا وَإِنْ رَأَيْتُمُوْهُمْ ظَهَرُوْا عَلَيْنَا فَلَا تُعِيْنُوْنَا فَلَمَّا لَقِيْنَا هَرَبُوْا حَتَّى رَأَيْتُ النِّسَاءَ يَشْتَدِدْنَ فِي الْجَبَلِ رَفَعْنَ عَنْ سُوْقِهِنَّ قَدْ بَدَتْ خَلَاخِلُهُنَّ فَأَخَذُوْا يَقُوْلُوْنَ الْغَنِيْمَةَ الْغَنِيْمَةَ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ عَهِدَ إِلَيَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ لَا تَبْرَحُوْا فَأَبَوْا فَلَمَّا أَبَوْا صُرِفَ وُجُوْهُهُمْ فَأُصِيْبَ سَبْعُوْنَ قَتِيْلًا وَأَشْرَفَ أَبُوْ سُفْيَانَ فَقَالَ أَفِي الْقَوْمِ مُحَمَّدٌ فَقَالَ لَا تُجِيْبُوْهُ فَقَالَ أَفِي الْقَوْمِ ابْنُ أَبِيْ قُحَافَةَ قَالَ لَا تُجِيْبُوْهُ فَقَالَ أَفِي الْقَوْمِ ابْنُ الْخَطَّابِ فَقَالَ إِنَّ هَؤُلَاءِ قُتِلُوْا فَلَوْ كَانُوْا أَحْيَاءً لَأَجَابُوْا فَلَمْ يَمْلِكْ عُمَرُ نَفْسَهُ فَقَالَ كَذَبْتَ يَا عَدُوَّ اللهِ أَبْقَى اللهُ عَلَيْكَ مَا يُخْزِيْكَ قَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ اعْلُ هُبَلُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجِيْبُوْهُ قَالُوْا مَا نَقُوْلُ قَالَ قُوْلُوا اللهُ أَعْلَى وَأَجَلُّ قَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ لَنَا الْعُزَّى وَلَا عُزَّى لَكُمْ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجِيْبُوْهُ قَالُوْا مَا نَقُوْلُ قَالَ قُوْلُوا اللهُ مَوْلَانَا وَلَا مَوْلَى لَكُمْ قَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ يَوْمٌ بِيَوْمِ بَدْرٍ وَالْحَرْبُ سِجَالٌ وَتَجِدُوْنَ مُثْلَةً لَمْ آمُرْ بِهَا وَلَمْ تَسُؤْنِي
বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহূদ যুদ্ধের দিন আমরা মুখোমুখী অবতীর্ণ হলে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুল্লাহ [ইবনু যুবায়র (রাঃ)]-কে তীরন্দাজ বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করে তাদেরকে (নির্দিষ্ট এক স্থানে) মোতায়েন করলেন এবং বললেন, যদি তোমরা আমাদেরকে দেখ যে, আমরা তাদের উপর বিজয় লাভ করেছি, তাহলেও তোমরা এখান থেকে নড়বে না। আর যদি তোমরা তাদেরকে দেখ যে, তারা আমাদের উপর বিজয় লাভ করেছে, তবুও তোমরা এই স্থান ত্যাগ করে আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে না। এরপর আমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলে তারা পালাতে আরম্ভ করল। এমনকি আমরা দেখতে পেলাম যে, মহিলারা দ্রুত দৌড়ে পর্বতে আশ্রয় নিচ্ছে। তারা পায়ের গোছা থেকে কাপড় টেনে তুলেছে, ফলে পায়ের অলঙ্কারগুলো পর্যন্ত বেরিয়ে পড়ছে। এ সময় তারা (তীরন্দাজরা) বলতে লাগলেন, গানীমাত-গানীমাত! তখন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তোমরা যাতে এ স্থান ত্যাগ না কর এ ব্যাপার নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা অগ্রাহ্য করল। যখন তারা অগ্রাহ্য করল, তখন তাদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হলো এবং তাদের সত্তর জন শাহীদ হলেন। আবূ সুফ্ইয়ান একটি উঁচু স্থানে উঠে বলল, কাওমের মধ্যে মুহাম্মাদ জীবিত আছে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার কোন উত্তর দিও না। সে আবার বলল, কাওমের মধ্যে ইবনু আবূ কুহাফা জীবিত আছে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার কোন জবাব দিও না। সে আবার বলল, কাওমের মধ্যে ইবনুল খাত্তাব বেঁচে আছে কি? তারপর সে বলল, এরা সকলেই নিহত হয়েছে। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই জবাব দিত। এ সময় ‘উমার (রাঃ) নিজেকে সামলাতে না পেরে বললেন, হে আল্লাহর দুশমন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। যে জিনিসে তোমাকে অপমানিত করবে আল্লাহ তা বাকী রেখেছেন। আবূ সুফ্ইয়ান বলল, হুবালের জয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহাবীগণকে বললেন, তোমরা তার উত্তর দাও। তারা বললেন, আমরা কী বলব? তিনি বললেন, তোমরা বল, আল্লাহ সমুন্নত ও মহান। আবূ সুফ্ইয়ান বলল, আমাদের উয্যা আছে, তোমাদের উয্যা নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার জবাব দাও। তারা বললেন, আমরা কী জবাব দেব? তিনি বললেন, বল- আল্লাহ আমাদের অভিভাবক, তোমাদের তো কোন অভিভাবক নেই। শেষে আবূ সুফ্ইয়ান বলল, আজ বাদর যুদ্ধের বিনিময়ের দিন। যুদ্ধ কূপ থেকে পানি উঠানোর পাত্রের মতো (অর্থাৎ একবার এ হাতে আরেকবার ও হাতে) তোমরা নাক-কান কাটা কিছু লাশ দেখতে পাবে। আমি এরূপ করতে নির্দেশ দেইনি। অবশ্য তাতে আমি নাখোশও নই। [বুখারী, হাদীস নং-৪০৪৩]
★যদি হযরত উমর ফারুক রাঃ পালিয়ে যেতেন, তাহলে কাফেরদের বিজয়ের পরও কিভাবে নবীজীর সাথে হযরত উমর রাঃ রইলেন? এর মানে এ মহান সাহাবীর উপর পলায়ন করার কথা বলা জঘন্য অপবাদ ছাড়া কিছু নয়।
ولم يبق مع النبى صلى الله عليه وسلم الا ثلاثه أو اربعة عشر رجلا من المهاجرين ومن الأنصار سبعة، فمن المهاجرين ابو بكر وعمر وعلى وطلحة بن عبيد الله وعبد الرحمن بن عوف والزبير وسعد بن ابى وقاص رضى الله عنهم (تفسير خازن-1\437)
বিশৃংখল পরিস্থিতিতে উহুদ প্রান্তরে ১৪জন সাহাবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সর্বক্ষণ ছিলেন। এর মাঝে ৭জন মুহাজির এবং ৭জন আনসারী সাহাবী ছিলেন।
মুহাজির সেই সাতজনের মাঝে আবু বকর রাঃ এবং উমর রাঃ ও ছিলেন। সেই সাতজন সাহাবী হলেন, হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত তালহা বি উবায়দুল্লাহ রাঃ, হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রাঃ, হযরত যুবায়ের রাঃ, হযরত সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাঃ। [তাফসীরে খাজেন-১/৪৩৭, সীরাতে মুস্তাফা-২/১৯৯, তাকবাতে ইবনে সা’দ-১/২৭৯]