আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
306 views
in পবিত্রতা (Purity) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আমি আগে বেশ অনিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করতাম। কিছুদিন পূর্বে নিয়মিত নামাজ আদায়ের নিয়ত করে নামাজ আদায় শুরু করি। এর কিছুদিন পর আমি লক্ষ্য করি যে প্রসাবের পর পবিত্রতা আদায় করতে আমার অনেক সময় লাগছে। আট-দশবার টিস্যু ব্যবহার করার পর তারপর পানি ব্যবহার করতে পারছি। আবার প্রসাবের অনেক সময় পর দিনে কয়েকবার শিশ্ন দিয়ে কিছু আসছে বলে মনে হলে পর্যবেক্ষণে বেশিরভাগ সময় ক্ষুদ্র তরলের ফোঁটা দেখতে পাওয়া যায় । আবার অনেকসময় নিজের অজান্তেই তরলের ফোঁটা আসে যেটা অনেক পরে সন্দেহবশত পর্যবেক্ষণ করলে ধরা পরে। এ ধরণের ফোঁটা বেশিরভাগ সময়ই এক দিরহাম পরিমাণের কম হয়। কিন্তু সবসময়তো এভাবে চাইলেই পর্যবেক্ষণ করা যায় না। ব্যস্ততায় থাকলে অনেকসময় ফোঁটা আসার মত মনে হলেও চেক করা যায় না আবার কখনো ফোঁটা আসার পরও টের পাওয়া যায় না, পরে ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। নাপাকির ভয়ে পরে আবার নামাজই ছেড়ে দিতে হয়েছে আমাকে। এতে আমি মানসিকভাবেও খুব ভেঙ্গে পড়েছি। রাতেও বারবার ঘুম থেকে উঠে চেক করি যে কিছু বের হয়েছে কিনা। ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্তু সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি। এই অবস্থার ভিত্তিতে করা পরবর্তী প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন দয়া করে।
১। প্রসাবের ক্ষেত্রে কিভাবে বুঝব যে আমার প্রসাব শেষ হয়েছে? টিস্যু কতক্ষণ ধরে থাকতে হয়? কখনো কখনো টিস্যু কম সময় রাখলে টিস্যুতে ভেজাভাব না দেখা গেলেও কিছুক্ষণ ধরে রাখলে ভেজাভাব আসে। এক্ষেত্রে ভেজাভাব এক দিরহামের কম হলে করণীয় কি?
২। আমি সবসময় পবিত্র কিভাবে থাকতে পারি?
৩। যদি কখনো চেক করতে গিয়ে দেখি ফোঁটা আগেই বের হয়েছে (শিশ্নের ডগায় পানি পাওয়া গেলে) কিন্তু কাপড়ে বা শরীরে কোনো দাগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেক্ষেত্রে কাপড়, শরীর পাক নাকি নাপাক সেটা বুঝব কিভাবে (কারণ অল্প সময় পরেই তো এগুলো শুকিয়ে যায় আর দাগও থাকেনা) ?
৪। ফোঁটা আসার মত মনে হলেও ব্যস্ততার কারণে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে কি তরলের পরিমাণ এক দিরহাম এর কম হওয়ায় সেটার পর্যবেক্ষণ এড়িয়ে যেতে পারি? কারণ এটা করতে গিয়ে কোনো কাজেই মন বসাতে পারি না, বারবার মনে হয় চেক করে দেখি। খুবই ওয়াসওয়াসায় ভুগছি।
৫। সবসময় যেহেতু চেক করা সম্ভব হয়না এক্ষেত্রে কোনো তরল বের হয়ে শুকিয়ে গিয়েছে নাকি কিছু বের হয়নি সেটা কিভাবে নিশ্চিত হব?
৬। ঘুম থেকে উঠে যদি কোনো ফোঁটা দেখতে পাই বা কাপড়ে ভেজাভাব থাকে তাহলে আমার সমস্যার জন্য সেটাকে প্রসাবের ফোঁটা হিসেবে ধরব নাকি মজি হিসেবে ধরব?

1 Answer

+1 vote
by (597,330 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আপনার প্রশ্নের জবাবের পূর্বে লিম্নোক্ত ফাতাওয়াটি লক্ষণীয়--

যখন সারা ওয়াক্ত ব্যাপী উযর দেখা দিবে,তখন আপনি মা'যুর হিসেবে গণ্য হবেন।

কোনো অসুস্থ ব্যক্তি শরয়ীভাবে মা'যুর প্রমাণিত হওয়াজ জন্য শর্ত হলো,
شرط ثبوت العذر ابتداء أن يستوعب استمراره وقت الصلاة كاملا وهو الأظهر كالانقطاع لا يثبت ما لم يستوعب الوقت كله-
শরয়ীভাবে মা'যুর প্রমাণিত হওয়ার জন্য কোনো নামাযের শুরু থেকে শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত উযর স্থায়ী থাকা শর্ত।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৪০)

সুতরাং যদি কোনো একদিন কোনো একটি নামাযের সম্পূর্ণ ওয়াক্ত আপনার এমনভাবে অতিবাহিত হয় যে,বায়ু উযরের কারণে ফরয নামায পড়া আপনার জন্য সম্ভবপর না হয়,তাহলে আপনি মা'যুর। অন্যথায় শরয়ী ভাবে মা'যুর প্রমাণিত হবেন না।

কেউ শরয়ীভাবে মা'যুর প্রমাণিত হলে,তার জন্য প্রতি ওয়াক্তে একটি ওজুই যথেষ্ট।আর শরয়ীভাবে মা'যুর প্রমাণিত না হলে,তখন প্রতি নামাযের জন্য পৃথক পৃথক ওজু করতে হবে।নামাযে যখনই ওজু চলে যাবে,তখন আবার ওজু করে নামাযকে পড়তে হবে।

মা'যুরের বিধান সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন-

কিন্তু যদি উযর কখনো কমে আসে,সারা ওয়াক্ত ব্যাপী না থাকে,বরং কমপক্ষে এতটুকু সময় পাওয়া যায় যে,উক্ত ওয়াক্তের ফরয সুন্নত নামায পড়া যায়,তাহলে তখন ঐ ব্যক্তি মা'যুর হিসেবে গণ্য হবে না।সুতরাং তখন হুকম হলো,প্রয়োজন হলেও বারবার ওজু করে নামাযকে সম্পন্ন করবে।

সুতরাং,
যখন আপনার এ রোগ কমে আসবে,তখন আপনি প্রয়োজনে বারংবার অজু করে ঐ নামাযকে সম্পন্ন করবেন।অজুকে ধরে রাখার কৌশল হিসেবে প্রয়োজনে চেয়ারে বসে নামায পড়তে পারেন।


যদি আপনি মা'যুর প্রমাণিত না হন,
তাহলে আপনার জন্য পরামর্শ হল,
মসজিদে জুম্মার নামায পড়ার পর মসজিদের বাথরুম ইত্যাদিতে যেয়ে দেখবেন,বা প্রয়োজনে চেয়ারে বসে নামায পড়তে পারেন।যদি এই গুলোর কোনো একটিও সম্ভব না হয়,তাহলে আপনি তাহারাত সম্পর্কে ঈয়াকিন বিশ্বাস অটুট রাখার জন্য উক্ত অসুস্থতা কমার পূর্ব পর্যন্ত ঘরে যোহর পড়তে পারবেন।


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১)
প্রস্তাবের পর ইস্তেঞ্জার বিধান হল,প্রস্রাব পায়খানার স্থানকে নাজাসত মুক্ত রাখা,পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা।সুতরাং প্রস্রাবের পর যত সময় ধরে টিস্যু ধরে রাখলে, লজ্জাস্থান পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে,তত সময় পর্যন্ত উক্ত স্থানকে টিস্যু ইত্যাদি রেখে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।তবে যদি কারো বাস্তবে কিছু না আসে,বরং অন্তরে সর্বদা সন্দেহ জাগ্রত হয়,তাহলে এমতাবস্থায় প্রস্রাবের পর হাতে যৎসামান্য পানি নিয়ে কাপড়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।যাতেকরে ওয়াসওয়াসা দূর হয়ে যায়।

ইস্তেঞ্জার পদ্ধতি নিয়ে ফুকাহায়ে কেরাম পরামর্শ দেন,যে প্রস্রাবের পর লিঙ্গকে পিছন থেকে সামনের দিকে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্টাঙ্গুলি দ্বারা নিংড়ানো।এদ্ধারা প্রস্রাবের নালিতে আটকে যাওয়া সমস্ত প্রস্রাব বের হয়ে যায়।


(২)
সর্বদা অজু করে পবিত্র থাকবেন।প্রস্রাব-পায়খানা সযত্নে করবেন।পরিমিত পানি পান করবেন।

(৩)
যেহেতু কাপড় পূর্ব থেকেই পবিত্র,সুতরাং এরকমভাবে কাপড় নাপাক হওয়ার সন্দেহ কাপড়কে নাপাক করবে না।কেননা, ফিকহের মূলনীতি হলো, "সন্দেহ পূর্ব ইয়াকিন-বিশ্বাসকে দূরবিত করে না।"

(৪)
জ্বী,এড়িয়ে যেতে পারেন।এজন্যই ফুকাহায়ে কেরাম,পানি দ্বারা লজ্জাস্থানের উপর ছিটকানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

(৫)
কিছু বের হলে বা কিছু বের হওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি হলে,যদি কাপড়ে এর প্রমাণ পাওয়া যায়,তাহলে অজু চলে যাবে,এবং এক দিরহামের বেশী হলে,উক্ত কাপড় পরিহিত অবস্থায় নামায বিশুদ্ধ হবে না।তবে যদি কাপড়ে কোনো প্রমাণ না পাওয়া যায়,তাহলে অজুও ভঙ্গ হবে না।এবং নামাযেও কোনো প্রকার সমস্যা হবে না।

(৬)
প্রস্রাব হিসেবেই ধরে নেয়া হবে।প্রস্রাব বলেন আর মযি বলেন,উভয়ের বিধান একই।অর্থাৎ এক দিরহামের কম হলে উক্ত কাপড় দ্বারা নামায হবে।নতুবা নামাযই হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (597,330 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 197 views
...