জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
খেজুর বৃক্ষ সংক্রান্ত এরকম হাদীস আছে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الرُّومِيِّ الْيَمَامِيُّ، وَعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْعَظِيمِ الْعَنْبَرِيُّ، وَأَحْمَدُ بْنُ، جَعْفَرٍ الْمَعْقِرِيُّ قَالُوا حَدَّثَنَا النَّضْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ، - وَهُوَ ابْنُ عَمَّارٍ - حَدَّثَنَا أَبُو النَّجَاشِيِّ، حَدَّثَنِي رَافِعُ بْنُ خَدِيجٍ، قَالَ قَدِمَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ وَهُمْ يَأْبُرُونَ النَّخْلَ يَقُولُونَ يُلَقِّحُونَ النَّخْلَ فَقَالَ " مَا تَصْنَعُونَ " . قَالُوا كُنَّا نَصْنَعُهُ قَالَ " لَعَلَّكُمْ لَوْ لَمْ تَفْعَلُوا كَانَ خَيْرًا " . فَتَرَكُوهُ فَنَفَضَتْ أَوْ فَنَقَصَتْ - قَالَ - فَذَكَرُوا ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ " إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ مِنْ دِينِكُمْ فَخُذُوا بِهِ وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ مِنْ رَأْىٍ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ "
আবদুল্লাহ ইবনু রূমী ইয়ামামী, ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল আযম আম্বারী ও আহমাদ ইবনু জাফার মাকিরী (রহঃ) ..... রাফি ইবনু খাদীজ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনায় আসলেন। সে সময় লোকেরা খেজুর বৃক্ষ তাবীর করত। বর্ণনাকারী বলেন, অর্থাৎ- খেজুর বৃক্ষকে পরাগায়ন করাত। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি করছ? তারা বলল, আমরা তো এমন করে আসছি। তিনি বললেন, (আমার মনে হয়) তোমরা এমন না করলেই ভাল হয়। তাই তারা তা ছেড়ে দিল। আর এতে করে খেজুর ঝরে পড়ল কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেন, তার উৎপাদন হ্রাস পেল।
বর্ণনাকারী বলেন, মানুষেরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ ঘটনা ব্যক্ত করল। তখন তিনি বললেন, আমি তো একজন মানুষ মাত্র এতে কোন সন্দেহ নেই। দীনের ব্যাপারে যখন তোমাদের আমি কোন নির্দেশ দেই তোমরা তখন তা পালন করবে, আর যখন কোন কথা আমি আমার ধ্যান-ধারণা থেকে বলি, তখন (বুঝতে হবে) আমি একজন মানুষ মাত্র।
(মুসলিম ৬০২১.ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৯১৫, ইসলামিক সেন্টার ৫৯৫৩,সহীহ আল জামি‘ ২৩৩৮,মিশকাত ১৪৭।)
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে লোকেরা খেজুর গাছে তা‘বীর করতো। অর্থাৎ- মাদী গাছের কেশরের সঙ্গে নর গাছের কেশরকে লাগিয়ে দিতো। এতে করে গাছের ফলন অনেক বেশি হতো। আর এ কাজটি তারা জাহিলী যুগের অভ্যাস অনুযায়ী করতো। বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জানা না থাকার কারণে বলেছিলেনঃ এ রকম না করলেই ভালো হতো। ত্বলহাহ্ (রাঃ) কর্তৃক মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার ধারণা এই যে, এতে কোন উপকার দেবে না। এ কথা শুনে লোকেরা তা‘বীর করা বন্ধ করে দিলো, কিন্তু এতে যখন ফলন কমে গেল তখন বাগানের মালিকেরা এসে ফলন কমের কথা উল্লেখ করলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমিও একজন মানুষ। গায়িবী ব্যাপারে আমার কোন কিছু জানা নেই। আমি যা বলেছি তা শুধু আমার ধারণা থেকে।
সুতরাং আমি যখন কোন বিষয়ে তোমাদেরকে নির্দেশ করবো যা দীনের ব্যাপারে তোমাদের উপকারী হবে তা তোমরা গ্রহণ করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘রসূল তোমাদের যা প্রদান করেন তাই তোমরা গ্রহণ করো’’- (সূরাহ্ আল হাশর ৫৯ঃ ৭)। আর দুনিয়াবী বিষয়ে যা নির্দেশ করবো তা সঠিক হতেও পারে, নাও হতে পারে। কারণ এ ব্যাপারে আমি ওয়াহী হতে বলি না। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এবং আনাস (রাঃ) কর্তৃক মুসলিমের বর্ণনায় আছে যে, দুনিয়াবী বিষয়ে তোমরাই আমার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখো।
(০২)
গায়েবের খবর একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালাই জানেন,অন্য কেউ তাহা জানেননা।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন! আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আসমান-যমীনে অন্য কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেনা। এবং তারা জানে না কখন তারা উত্থিত হবে। (সূরা নামল, আয়াত-৬৫)
قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ
অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন! আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধন-ভান্ডার রয়েছে। এবং আমি গায়েব জানি না, এবং আমি তোমাদের এটাও বলিনা যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমার নিকট যা প্রত্যাদেশ হয় আমি কেবল তারই অনুসরন করি। (সুরা আন‘আম, আয়াত- ৫০)
إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
অর্থ: কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই রয়েছে। তিনি বারি বর্ষণ করেন, এবং তিনি জানেন জরায়ুতে কী রয়েছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে। এবং কেউ জানে না কোন স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবগত । (সুরা আন‘আম, আয়াত- ৩৪)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ الغَيْبَ، فَقَدْ كَذَبَ، وَهُوَ يَقُولُ: لاَ يَعْلَمُ الغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ»
অর্থ: হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তোমাকে বলে নবীজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েব জানেন, সে মিথ্যাবাদী। কারণ নবীজি (স.) নিজেই বলতেন, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে না। (সহীহ বুখারী-৭৩৮০)
(০৩)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ النَّمَرِيُّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلاَقَةَ، عَنْ أُسَامَةَ بْنِ شَرِيكٍ، قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِهِمُ الطَّيْرُ فَسَلَّمْتُ ثُمَّ قَعَدْتُ فَجَاءَ الأَعْرَابُ مِنْ هَا هُنَا وَهَا هُنَا فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَتَدَاوَى فَقَالَ " تَدَاوَوْا فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلاَّ وَضَعَ لَهُ دَوَاءً غَيْرَ دَاءٍ وَاحِدٍ الْهَرَمُ " .
উসামা ইবন শারীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এমন সময় আসি, যখন তাঁর সাহাবীগণ তাঁর চারপাশে এমন ভাবে বসে ছিল, যেন তাঁদের মাথার উপর পাখী বসে আছে (অর্থাৎ শান্তভাবে)। এরপর আমি সালাম করি এবং বসে পড়ি। এ সময় আরবের লোকেরা এদিক-সেদিক থেকে সেখানে সমবেত হয় এবং তারা বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি চিকিৎসা করাব? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, তোমরা রোগের চিকিৎসা করাবে। কেননা, আল্লাহ তা’আলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেন নি, যার চিকিৎসার জন্য ঔষধের ব্যবস্থা রাখেন নি; তবে বার্ধক্য এমন একটি রোগ যার কোন চিকিৎসা নেই।
(আবু দাউদ ৩৮১৫)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
রাসুলুল্লাহ সাঃ চিকিৎসার জন্য সাহাবায়ে কেরামদেরকে চিকিৎসকের কাছে যেতে বলেছেন,এবং তিনি নিজেও চিকিৎসকের কাছে গিয়ে হিজামা (এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি) গ্রহন করেছেন।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
حَجَمَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَبْدٌ لِبَنِي بَيَاضَةَ فَأَعْطَاهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجْرَهُ وَكَلَّمَ سَيِّدَهُ فَخَفَّفَ عَنْهُ مِنْ ضَرِيبَتِهِ وَلَوْ كَانَ سُحْتًا لَمْ يُعْطِهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
“বানূ বায়াদা এর একটি গোলাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শিঙ্গা লাগালে তিনি তাকে মজুরী প্রদান করেন এবং তার মালিকের সাথে আলোচনা করেন। এতে সে তার উপর থেকে ধার্যকৃত দৈনিক মজুরি কর হ্রাস করে দেয়। যদি তা হারাম হতো তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শিঙ্গা লাগানোর পারিশ্রমিক দিতেন না।” [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: বর্গা চাষ হা/ ৩৮৯৭ ]
হাদিস শরিফে এসেছে, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) হৃদরোগে আক্রান্ত হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে তখনকার প্রসিদ্ধ ডাক্তার হারেস ইবনে কালদাহর কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৭৫)।
মুসনাদে আহমাদের অপর একটি বর্ণনায়ও এসেছে যে জনৈক রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে রাসুল (সা.) গোত্রের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। (হাদিস : ২৩১৫৬)।