আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
84 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আমার বিয়ে হয়েছে ৪ বছর। বিয়েটি হঠাৎ করে হয়েছে। বিয়ের ৬ মাসের মধ্যে আমি জানতে পারি যে আমার শশুর বাড়ির মানুষ আমার থেকে অনেক কিছু লুকিয়েছে। যেমন : আমার স্বামীর বয়স, তার আগের বিয়ে, তিনি আগে নেশা করতেন পরে রিহ্যাবে দেয়া হয়েছিল, এমনকি বিভিন্ন কারণে তিনি বারবার জেলেও ছিলেন। আমি এগুলো জানতে পেরেও আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সংসার চালিয়ে যাওয়ার সিন্ধান্ত নেই। এমনিতে তিনি অনেক ভালো মানুষ, আমাকে কখনো কষ্ট দিয়ে কথা বলেননি। কিন্তু এসব সমস্যা ছাড়াও বড় যে সমস্যা সেগুলো হলো: আমার শশুর বাড়ি জয়েন পরিবার, ৩ জন ননদ, দেবর, জ্বা সহ শশুর শাশুড়ী সবাই আছেন। আমার শাশুড়ী, দেবর, ননদ আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। পান থেকে চুন খশলেই আমার পিতামাতা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, গালাগাল করে, আমার যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করি সবার সেবা যত্ন করে চলার, কিন্তু তাও আমার ছোট ছোট ভুল গুলো নিয়েও আমার সাথে অন্যায় আচরণ করে। আমি পর্দার ভিতর থাকার চেষ্টা করি, সেটিও আমার শাশুরির পছন্দ না। তিনি আমার সাথে দাসীর মত আচরণ করেন। আমার সব কিছুতেই তিনি ভুল ধরেন আর সবার কাছে বলে বেড়ান। পরে সবাই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে সেগুলো নিয়ে। ৪ বছর ধরে এত কিছু সহ্য করে এসেছি, এখন আমার একটি ৫ মাসের মেয়ে আছে। আমি এখন আর এসব সহ্য করতে পারছি না তাই স্বামীকে বলেছি আমাকে নিয়ে আলাদা হতে। কিন্তু তিনিও আলাদা হতে চাননা। তাই আমি বাবার বাড়ি চলে এসেছি।  চলে আসায় আমার শশুর বাড়ি থেকে কেউ আর আমাকে যেতে বলেনি। কিন্তু আমার স্বামী চায় আমি যেন ফিরে যাই। কিন্তু আমি আর এত অপমান সহ্য করে যেতে রাজি না। এখন আমি যদি শশুর বাড়ি না যাই তাহলে কি আমার জন্য কি এটা হালাল হবে??  আমার কি আমার শশুর শাশুড়ির সাথে থাকা বাধ্যতামূলক??

1 Answer

0 votes
by (546,690 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

স্বামীর উপর স্ত্রীরও কিছু অধিকার ও হক্ব রয়েছে যেমন, বিয়ের পর স্ত্রীর ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষা করে স্ত্রীকে একটি বাসস্থান ও খাদ্য এবং বস্র দান করা।এটা স্বামীর উপর  স্ত্রীর অধিকার ওহক্ব এবং শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব। 

এ সম্পর্কে কোরআনের ঘোষনা হলঃ
ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ
নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা-১৯)

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ

বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-

تجب السكني لها عليه في بيت خال

মর্থার্থ: স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৬০৪)

قَوْلُهُ خَالٍ عَنْ أَهْلِهِ إلَخْ) ؛ لِأَنَّهَا تَتَضَرَّرُ بِمُشَارَكَةِ غَيْرِهَا فِيهِ؛؛ لِأَنَّهَا لَا تَأْمَنُ عَلَى مَتَاعِهَا وَيَمْنَعُهَاذَلِكَ مِنْ الْمُعَاشَرَةِ مَعَ زَوْجِهَا وَمِنْ الِاسْتِمْتَاعِ إلَّا أَنْ تَخْتَارَ ذَلِكَ؛ لِأَنَّهَا رَضِيَتْ بِانْتِقَاصِ حَقِّهَا هِدَايَةٌ )

স্ত্রীকে এমন একটি বাসস্থান দান করা স্বামীর জন্য ওয়াজিব,যা স্বামীর পরিবার থেকে খালি থাকবে,কেননা সে অন্যর উপস্থিতির ধরুণ কষ্ট উপভোগ করবে,এবং তার মাল সামানা পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে না।তৃতীয় কারো উপস্থিতি স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক জীবন ও একান্ত সময় অতিবাহিত করতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। এ জন্য একটি পৃথক বাসস্থান স্ত্রীর মৌলিক অধিকার।তবে যদি সে তার নিজ অধিকার বিসর্জন দিতে রাজি হয় যায় তাহলে তার জন্য অনুমিত রয়েছে (যদি এক্ষেত্রে গোনাহের কোনো সম্ভাবনা না থাকে)

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/430

ইসলামের দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।

যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।

আরো জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
শশুর শাশুড়ির সাথে থাকা আপনার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।আপনার জন্য আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর কতর্ব্য। 

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি আপনার স্বামীর  আলাদা বাসা নিয়ে থাকার সামর্থ থাকে,সেক্ষেত্রে আপনার স্বামীর জন্য  আলাদা বাসস্থানে ব্যবস্থা করা ওয়াজিব।
আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা না করলে তার গুনাহ হবে।

এক্ষেত্রে যেহেতু উক্ত বিষয় বলার পরেও কাজ হচ্ছেনা,সুতরাং আপনার জন্য করনীয় হলো উভয় পরিবারের মুরব্বিদের নিয়ে বসে আপনার পূর্ণ পর্দায় থাকার বিষয় নিশ্চিত করা।
আপনার পরিবারের জন্য আলাদা বাসায় একটা দ্বীনী পরিবেশ তৈরী করার বিষয় নিশ্চিত করা।

প্রশ্নের বিবরন মতে এক্ষেত্রে আপনার গুনাহ হচ্ছেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...