আমার ক্লাস ৭ এ থাকতে আমার কোচিং এর শিক্ষকের প্রতি দুর্বলতা কাজ করে।একটা পর্যায়ে গিয়ে এটা সম্পর্কে রুপ নেয়।আমি তখন দ্বীনের কিছুটা বুঝি কিন্তু নফস এর সাথেও পেরে উঠিনা।পরে অনেক ঘাটাঘাটি করে সিদ্ধান্ত নিই আমরা বিয়ে করব।আমি ওনাকে জানিয়ে দেই যদি বিয়ে করেন তাহলেই এই সম্পর্ক আগাবে নাহলে আমি হারামে থাকতে পারব না।এরপর উনি রাজী হয়ে যায়।আমরা তখন কাজী ডেকে একটা পার্ক এ বিয়ে করে নেই।কারন আমার বাবা মার স্বপ্ন ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে।পড়াশোনায় ও ভাল ছিলাম বলে অত দ্রুত আমার বিয়ের কথা কখনই ভাবে নাই কেউ।এরপর দীর্ঘ ৯ বছর এভাবেই কাটে।পারিবারিক ভাবে বিয়ের কথা না জানলেও সবাই সম্পর্কের কথা জানত। কেউ কখনো ওনাকে মেনে নিতে পারেনি।কারন আমাদের কুফু মেলেনা।আমার আব্বু একজন ফাস্টক্লাস সরকারী অফিসার সেই খানে উনি ছিলেন একদম ই নিঃশ্ব।আমিও জানতাম এই সম্পর্ক কখনই কেউ মানবেন।ওনার বাবা মা ওনার ৬ মাস বয়সেই আলাদা হয়ে যায়।এরপর যে যার মত বিয়ে করে সংসার করে ওনার দায়িত্ব কেউ এই নেয়নি।উনি খুব কষ্ট করে মানুষ হয়েছে ওনার বড় ফুফুর কাছে।ওনার বড় ফুফুও বিয়ে করেনি। ওনার দাদা মারা যাওয়ার পরে সংসারের হাল বড়ফুফুই ধরে সব ভাইবোনকে মানুষ করে অনেক কষ্ট করে। সব শেষ এ আমার স্বামীকে আগলেই উনি বেচে আছে।উনি আমার থেকে ৭/৮ বছরের বড়।পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করে উনি ওনার আর ওনার বড়ফুফুর ভরন পোষন চালায়।নিম্নমধ্যবিত্ত ফ্যামিলি হিসেবে চলাফেরা করে।
এক পর্যায়ে ওনার ফুফু খুব অসুস্থ হয়ে যায়।৬ মাসের মত বিছানায় পরে থাকে।এদিকে ওনার ফুফুকে রেখে না উনি কাজে যেতে পারে।না ওনার ফুফুর যত্ন করতে পারে। খুব কঠিন একটা পর্যায়ে আমরা আমাদের বাসায় জানায় দেই যে আমরা বিয়ে করছি আর এটার একটা সমাধাম যেন করে।কিন্ত্য আমাদের বাসা থেকে আম্মু আপু কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা। আর আমাকে নিয়েও ওদের অনেক স্বপ্ন ছিল যা আমি মাটি করে দিছি। এর মাঝেই আমি মোটামুটি দ্বীন আকড়ে বাচা শুরু করেছি।মাহরাম ননমাহরাম মেনে পর্দা করা,তালিম করা,আই ও এম এ ভর্তি হওয়াসহ সহশিক্ষা থেকে বের হওয়ার জন্য আপ্রান প্রচেষ্টা করেছি।একবার বাসা থেকে পালিয়ে এক আপুর মাদ্রাসায় চলে গেছিলাম আম্মু খুব কান্নাকাটি করার পর অই আপু বাসায় রেখে গেছিল আমাকে।এর মাঝেই ওনার ফুফুর এই অসুস্থতার কারনে বাসায় বিয়ের ব্যাপার এ বললে এটার কোন সমাধান পাইনা।আর আমার আম্মু আমাকে সেদিন খুব বকাবকি করে।আমার ছোট থেকে জেদ বেশি হওয়ায় আমি বাসা থেকে আবারো বের হয়ে যাই।আর দ্বীন পালন নিয়ে আমার সাথে ফ্যামিলির তখন দুরত্ব হয়েছিল অনেক।আমাকে আম্মু বারবার বলে যে কিসের পর্দা করো আবার হারাম সম্পর্ক করো।এসব নিতে পারিনা।আমি জেদ করে আমার স্বামীকে ফোন দিয়ে বলি আজকেই আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন কই নিয়ে যাবেন জানিনা।উনি আমাকে বলে দেখা করো।দেখি কি করা যায়।এরপর উনি আমাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেন যে এইভাবে বের হয়ে আসা যাবেনা। ওনার ফুফুও অনেক রাগী।আমাদেরো মান সম্মান নষ্ট হবে।কিন্ত্য সন্ধ্যা অব্দি আমি ওনার মটর সাইকেল এই বসে থাকি কিছুতেই নামিনা।বাসায় আসতেও রাজী হইনা।এক পর্যায়ে উনি আমাকে ওনার ভাবির বাসায় রেখে উনি ওনার ফুফুর বাসা চলে আসে।আমার আম্মু অনেক বার আমাকে ফোন দেয় আমি কথা বলিনা রাগ করে।পরে আমার স্বামী আম্মুর সাথে যোগাযোগ করে বলে আন্টি ওর তো খুব জেদ এই এই ব্যাপার। পরে আম্মু আব্বুকে রাজী করায় আর ৩ দিনের মাথায় পারিবারিক ভাবে আমাকে ওনার হাতে উঠায় দেয়।এরপর থেকে আমার জীবনের অশান্তির সর্বোচ্চ শাস্তি আমি ভোগ করা শুরু করি।আমার বিয়ের দিন রাতে আমি বাসায় ঢুকে দেখি আকটা জরাজীর্ণ বাসা।আমার স্বামীর ঘরে মশারি টাংগানো ৬ মাস এই বাসায় চুলা জলেনি।কেউ ঝাড়ু দেয়নি আমার স্বামী টিউশন করায় সারাদিন।আর রাতে বাহির থেকে খাবার এনে দুজন খাইত।বাসায় ঢুকে দেখি ফুফুকে ধরে ধরে বাথরুম নিতে হচ্ছে।আমি রাতেই গিয়ে ওনাকে ফ্রেস করে দেই।ওনার পায়খানা প্রসাব লেগে থাকা শাড়ি,কাপড় ধুয়ে দেই।আমার স্বামী আমাকে বলে রাতে তুমি ফুফুর কাছেই থাকো।ওনাকে বারবার বাথরুম নিতে হয়।আমি রাজী হই।আমার ফুফু শাশুড়ী খুবিই সুচীবায়ূ মানুষ উনি আমার সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করে।বিছানায় পরে থেকেও উনি আমাকে সব সময় ডেকে ডেকে কাজের ভুল ধরে।আর জিজ্ঞেস করে আমার বাবা মা আমাকে কিচ্ছু কেন দেয়নাই।গহনা গাটি নাই কেন আমার।আমার রান্না কাজ কিছুই উনি পছন্দ করেনা।সব কাজে ভুল ধরে।আমি ওনার পায়খানা পেসাবের কাপড় ধুইতাম,সব করতাম, ভোরে ৬ টায় উঠে রুটি কর‍তাম।তাও সবাইকে ফোন দিয়ে দিয়ে বলত আমি ওনাকে খাইতে দেইনা।রাতেও ওনার সাথেই থাকতাম।এরপর উনি খুব বেশি অসুস্থ হয়।ওনাকে মেডিকেল ভর্তি করি। খুব বমি করে,আমি গামলা গামলা বমি পরিষ্কার করছি ওনার।ওনার প্রতি এত কিছুর পরেও আমার অভিযোগ ছিল না।আমি শুধু ভাবতাম উনি অনেক কষ্ট করছে জীবনে।ওনার সেবা করাই আমার কাজ।মেডিকেল থেকে ফিরে উনি একদম সুস্থ হয়ে গেল।হাটাহাটি খাওয়া দাওয়া সব ঠিক হয়ে গেল।এরপর থেকে আমার প্রতি ওনার অমানসিক আচরণ আরও বেরে গেল।আমার প্রতিটা কাজে খোচা দেয়। বাবার বাসা থেকে কিছু দেয়নি,আমার বাবা কিপটা।এমন কথা সব সময় বলে।আমার আম্মু অনেক কিছু দিয়েছিল আমাকে বিয়ের পরেই উনি সব নিয়ে রেখে দিছে ওনার কাছে।আমাকে কিচ্ছু ব্যাবহার করতে দেয়না।আমি কতটুকু ভাত খাই সেইটা নিয়েও উনি কথা শুনায় আমাকে খুব সামান্য একটু খাইতে দেয়। কখনো ডিম খাইতে দেয়না।বলে আমি ডিম খাইছি,দুধে খেয়ে পানি মিশায় রাখছি এসব বলে।আমি এর মাঝেই কনসিভ করি।উনি আমার স্বামীর সাথে আমার থাকাও নিতে পারেন না।আমরা একসাথে থাকলে খুব জঘন্য কথা বলে যেগুলা নেয়া যায়না।আমাকে সব সময় মুখ খারাপ করে গালি দেয়।বাচ্চাটাকেও নষ্ট করতে বলে।আমার স্বামী বলে দেয় যে বাচ্চা নষ্ট করবে না।উনি আমার উপর আরো বেশি অত্যাচার শুরু করে। কাজের চাপ বাড়ায় দেয়।উঠান ঝাড়ু দেয়া,কল পার ঘষা সব করেও উনি খুবিই বাজে আচরণ করে।আমি নিতে পারিনা ওনার এইসব আচরণ। আমার জন্য কিছু কিনলেও চিল্লাচিল্লি করে।সংসার এর কিছু কিনলেও সেটা ব্যাবহার করতে দেয়না নিয়ে রেখে দেয়।এদিকে বাবার বাসায় ও আমার বাবা আমার উপর নারাজ।
আমার স্বামী শুধু বলে সবর করো,আল্লাহ সব দেখতেছেন।সব ঠিক হবে।আমি একবার আলাদাও থাকতে চেয়েছিলাম বলেছিলাম আপনি আমাকে আলাদা বাসা নিয়ে দেন।আপনি আপনার ফুফুর কাছেই থাকেন আমি এভাবে আর পারতিছিনা।উনি রাজী হয়না।উনি না আমাকে একা রাখতে পারতেছে।না ওনার ফুফুকে।আর ফুফুর আর কেউ নাইও যে জিম্মাদারি নেবে।এমন পরিস্থিতি তে আমি কি করব।আমার সবর হারায় যায়।আমি আগের মত দ্বীন ও পালন করতে পারিনা।আইও এম ড্রপ দিছি।বাচ্চাটাও ৮ মাসের পেটে।সব মিলায় আমি বারবার হতাশায় ডুবে যাচ্ছি।আমার এই পরিস্থিতির কি কোন সমাধাম আছে?