আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
96 views
in সালাত(Prayer) by (11 points)
edited by
আসসালামুয়ালাইকুম।

কোনো একটা ভালো কাজ করার আগে আমার চিন্তা থাকে আল্লাহ সন্তুষ্টি অথবা তেমন কোন কিছু চিন্তা ভাবনা ই করি না কিন্তু ভালো কাজটা করার পর হঠাৎ আমার মধ্যে এই চিন্তা আসে যে "মানুষ আমাকে ভালো বলবে এই কাজের জন্য/বাহবা দিবে" আস্ততাগফিরুল্লাহ আমি তখন সাথে সাথে আল্লাহ কাছে ক্ষমা চাই যেন আমাকে "রিয়া" থেকে হেফাজত করে রাখে। যেমন - ফজরের নামাজের সময় আমি আমার বাবাকে জাগাই নামাজ পড়ার জন্য তখন তেমন কোন চিন্তা ভাবনা করি নি কিন্তু নামাজ পড়ার মাঝখানে হঠাৎ আমার মনে উদয় হয় এই কথাটি যে " আমার বাবা সবাইকে বলবে আমার মেয়ে আমাকে নামাজের জন্য জাগায়, আমাদের আগে উঠে, মানুষ তখন আমাকে ভালো বলবে" আবার ফেসবুকে কোন ইসলামিক পোস্ট করার আগে মনে হয় যে "আমার ফ্রেন্ড অনেকেই এই ব্যপারে জানে না তাদের জানাই তারাও আল্লাহ ইবাদত করতে পারবে আমার সওয়াব হবে" কিন্তু পোস্ট করার পর মনে হয় "সবাই ভাববে আমি অনেক ইসলামিক সবাই আমাকে ভালো বলবে" আর এমন চিন্তা মাথায় আসার পর আমার অস্থির লাগে তখন আমি পোস্ট ডিলিট করে দেই পরে শান্তি লাগে।

১. আমার এমন কাজের জন্য কি গুনাহ হয়েছে?আমি কি বাবাকে নামাজ থেকে জাগানো বন্ধ করে দিবো রিয়া থেকে বাঁচতে?

২. আমি জানতে চাই আমার এমন চিন্তা আসার পর আমার করনীয় কি?

৩. এমন চিন্তা যেনো না আসে তার জন্য কি করতে পারি?

৪. আমি আগে জানতাম না যে ফরজ নামাজ ১ম ২রাকাত সুরা ফাতিহা সাথে অন্য সুরা পাঠ করে পরের ২ রাকাত শুধু ফাতিহা পাঠ করতে হয় আমি পরের ২ রাকাতেও ফাতিহার সাথে মিলিয়ে অন্য সুরা পড়েছি আমার কি এতে গুনাহ হয়েছে? গুনাহ হয়ে থাকলে করনীয় কি মাফের জন্য?

৫. এখনো মাঝে মধ্যে ভুলে শেষের ২ রাকাতে সুরা ফাতিহা সাথে অন্য সুরা পড়ে ফেলি পরে মনে পড়ে এক্ষেত্রে কি আমাকে সাহু সিজদা দিতে হবে?

৬. নামাজে দাঁড়িয়ে ২রাকাত পড়ার পর কেউ চলে আসলে তখন দরজা খোলার জন্য যদি উঠে যায় মাঝ নামাজে এতে কি গুনাহ হবে?

৭. মাঝ নামাজ থেকে উঠে গেলে এসে কি আবার সেই খান থেকে পড়া যাবে নাকি প্রথম থেকে পড়তে হবে নামাজ আবার?

৮. কেউ বে পর্দা চলে এবং নামাজ পড়ে না সে এবং তার সাথে অরো কয়েক জন আছে উপস্থিত এই অবস্থায় তাকে তার বে পর্দা চলার কথা এবং নামাজ না পড়া ব্যপারে কিছু বললে কি গুনাহ হবে? নাকি তাকে একাকী বলা উচিত? একাকী বললে সে হয়তো কথাগুলো গায়ে লাগাবে না তাই সবার সামনে বললে লজ্জা পাবে এবং পরবর্তীতে কথাগুলো মাথায় রাখবে এই ভেবে বলা? কোনভাবে বলা সঠিক হবে ?

৯.ওস্তাদ নোমান আলি খান কে নিয়ে বেশ controversy আছে তিনি নাকি সহীহ আকিদার না তাই তার লেকচার শুনা থেকে বিরত থাকতে বলেন অনেকেই কিন্তু আমার কাছে তার লেকচার গুলো বেশ কার্যকরী লাগে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি অনেক বিষয়ে এখন আমি যদি তার থেকে শুধু ভালো নেই এবং খারাপ কিছু থাকলে সেটা বর্জন করি এটা কি যায়েজ হবে?নাকি গুনাহ হবে যদিও আমি সঠিকভাবে জানি না তার এই বিভ্রান্তি বেপারে।

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

যদি শুধুমাত্র লোক দেখানো ইবাদত হয়,তাহলে এমন রিয়া ছোট শিরক।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، أَنَّهُ خَرَجَ يَوْمًا إِلَى مَسْجِدِ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَوَجَدَ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ قَاعِدًا عِنْدَ قَبْرِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَبْكِي فَقَالَ مَا يُبْكِيكَ قَالَ يُبْكِينِي شَىْءٌ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ " إِنَّ يَسِيرَ الرِّيَاءِ شِرْكٌ وَإِنَّ مَنْ عَادَى لِلَّهِ وَلِيًّا فَقَدْ بَارَزَ اللَّهَ بِالْمُحَارَبَةِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الأَبْرَارَ الأَتْقِيَاءَ الأَخْفِيَاءَ الَّذِينَ إِذَا غَابُوا لَمْ يُفْتَقَدُوا وَإِنْ حَضَرُوا لَمْ يُدْعَوْا وَلَمْ يُعْرَفُوا قُلُوبُهُمْ مَصَابِيحُ الْهُدَى يَخْرُجُونَ مِنْ كُلِّ غَبْرَاءَ مُظْلِمَةٍ " .

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক দিন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মসজিদে গিয়ে মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবরের পাশে উপবিষ্ট অবস্থায় কান্নারত দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তুমি কাঁদছো কেন? তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রুত কিছু বিষয় আমাকে কাঁদাচ্ছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ সামান্যতম কপটতাও শিরক। যে ব্যক্তি আল্লাহর কোন বন্ধুর (ওলী) সাথে শত্রুতা করলো, সে যেন আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। নিশ্চয় আল্লাহ ভালোবাসেন সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহভীরু আত্মগোপনকারী বান্দাদের, যারা দৃষ্টির অন্তরাল হলে কেউ তাদের খোঁজ করে না, সামনে উপস্থিত থাকলে কেউ তাদের আপ্যায়ন করে না এবং তাদের পরিচয়ও নেয় না। তাদের অন্তরসমূহ হেদায়াতের আলোকবর্তিকা। তারা সব ধরনের অন্ধকারাচ্ছন্ন কদর্যতা থেকে নিরাপদে বের হয়ে যাবে।
(ইবনে মাজাহ ৩৯৮৯)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনার নিয়ত শুদ্ধ নয়।
এক্ষেত্রে ইবাদত করার সময় খালেস দিলে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইবাদত করতে হবে।

আমি রিয়া থেকে বাঁচতে আপনার বাবাকে নামাজ এর জন্য জাগানো বন্ধ করে দিবেননা,
বরং নিয়ত পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করবেন।

(২.৩)
রিয়া আমলকে নষ্ট করে দেয়, রিয়াকারীর ওপর আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন। পরকাল তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে যায়। আর এটি একটি মারাত্মক অন্তরের ব্যাধি। সুতরাং রিয়া থেকে প্রত্যেক মুসলমানকে বাঁচতে হবে। তার পরিবার ও সন্তানদের বাঁচাতে হবে। রিয়া থেকে বাঁচার জন্য কিছু করণীয় উপায় বর্ণনা করা হলো।

প্রথমত, রিয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে যেহেতু অন্যের কাছ থেকে মান-মর্যাদা ও প্রশংসা ইত্যাদি পাওয়ার আকাক্সক্ষা থাকে প্রথমে রিয়াকারীর অন্তর থেকে ওই সব ধ্বংসশীল আশা-আকাক্সক্ষা ধুয়ে মুছে ফেলে দিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, রিয়া হলো ইখলাসের বিপরীত, অর্থাৎ যার অন্তরে রিয়া আছে তার অন্তরে ইখলাস নেই। ইখলাস অর্জন করলে রিয়া দূরীভূত হবে। সুতরাং ইখলাসের মাধ্যমে রিয়া থেকে বাঁচা সম্ভব।

তৃতীয়ত, যেহেতু এসব গুনাহের মূল উৎস প্রদানকারী হলো নফস শয়তান। সেহেতু সর্বদা শয়তানি কর্মকাণ্ডের বিপরীত কাজ করতে হবে।

চতুর্থত, এই ব্যাধি থেকে বাঁচার আরেক উপায় হলো হক্কানি-রব্বানি আলেমে দ্বীন ও পীর-মুর্শিদের সান্নিধ্যে গিয়ে তাজকিয়ায়ে নফস বা আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করা। নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা এমন আলেমের মজলিসে বসো যিনি পাঁচটি (ধ্বংসাত্মক) বস্তু থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে পাঁচটি (কল্যাণকর) বস্তুর প্রতি উৎসাহিত করেন। যথা- এক. দুনিয়ার প্রেম থেকে বের করে তাকে তাকওয়া বা পরহেজগারির প্রতি উৎসাহিত করে। দুই. রিয়া থেকে মুক্ত করে ইখলাসের শিক্ষা দেয়। তিন. অহঙ্কার থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে নম্রতার শিক্ষা দেয়। চার. অলসতা থেকে মুক্ত করে উপদেশ দেয়ার প্রতি উৎসাহিত করে। পাঁচ. অজ্ঞতা থেকে মুক্ত করে জ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত করে।

পঞ্চমত, এই মারাত্মক ব্যাধি থেকে বাঁচার সর্বশেষ পন্থা হলো মহান আল্লাহর দরবারে রিয়ামুক্ত জীবনের জন্য দোয়া করা। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া ভালো-মন্দ করা না করার কোনো ক্ষমতা কারো নেই।

রিয়া থেকে বাঁচার উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো অব্যাহত রাখার সাথে দোয়াও চালু রাখতে হবে। নবী সা: নিজেও এভাবে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে নেফাক থেকে, আমার আমলকে রিয়া থেকে, আমার জিহ্বাকে মিথ্যা থেকে এবং আমার চোখকে খিয়ানত থেকে পবিত্র রাখো। চোখের খিয়ানত ও অন্তরে গোপন অবস্থা সম্পর্কে তুমি অবিহিত’( গুনিয়াতুত তালেবিন,, পৃষ্ঠা-৪৫৫)।

(০৪)
না,এতে আপনার গুনাহ হয়নি।
এতে নামাজের কোনো সমস্যা হয়নি।

(০৫)
না,এক্ষেত্রে সেজদায়ে সাহু দিতে হবেনা।

(৬,৭)
এ সংক্রান্ত বিধান জানুনঃ- 

(০৮)
বেপর্দার চলা অবস্থায় বেপর্দার নসিহত করা যাবে।
তবে নামাজের বিষয়টি আলাদা ভাবে বুঝিয়ে বলা উচিত।

উল্লেখ্য, তার হেদায়াতের জন্য নসিহত করতে হবে,তাকে অপমান করার জন্য নয়।

(০৯)
জায়েজ হবে।
তবে ফিকহি মাসয়ালা গ্রহন না করার পরামর্শ থাকবে। শরিয়াহ বিরোধী কিছু বললে তাহা মানা যাবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...