আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻭَﻷُﺿِﻠَّﻨَّﻬُﻢْ ﻭَﻷُﻣَﻨِّﻴَﻨَّﻬُﻢْ ﻭَﻵﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢْ ﻓَﻠَﻴُﺒَﺘِّﻜُﻦَّ ﺁﺫَﺍﻥَ ﺍﻷَﻧْﻌَﺎﻡِ ﻭَﻵﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢْ ﻓَﻠَﻴُﻐَﻴِّﺮُﻥَّ ﺧَﻠْﻖَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَّﺨِﺬِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻭَﻟِﻴًّﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺧَﺴِﺮَ ﺧُﺴْﺮَﺍﻧًﺎ ﻣُّﺒِﻴﻨًﺎ
তাদপশুদেরেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব।
(আল্লাহ তা'আলা বললেন)যে কেউ আল্লাহ-কে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে,সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হবে।(সূরা নিসাঃ১৭-১৯)
জায়েয শারীরিক পরিবর্তনঃ যদি কোনো মানুষ কষ্ট দূরীকরণার্তে বা কোনো দোষ দূরীকরণার্তে চায় উক্ত দোষ নিজের মাধ্যমে আসুক বা কোনো অসুস্থতা বা দুর্ঘটনাজনিত হোক তাহলে এমতাবস্থায় শারীরিক পরিবর্তন জায়েয।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
উরফুজা ইবনে আস'আদ রাযি থেকে বর্ণিত
عن ﻋﺮﻓﺠﺔ ﺑﻦ ﺃﺳﻌﺪ ﺃﻧﻪ ﻗﻄﻊ ﺃﻧﻔﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻜُﻼﺏ، ﻓﺎﺗﺨﺬ ﺃﻧﻔﺎً ﻣﻦ ﻓﻀﺔ ﻓﺄﻧﺘﻦ ﻋﻠﻴﻪ، ﻓﺄﻣﺮﻩ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺎﺗﺨﺬ ﺃﻧﻔﺎً ﻣﻦ ﺫﻫﺐ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ في سننه -ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﺒﺎﺱ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ-ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺷﺪ ﺍﻷﺳﻨﺎﻥ ﺑﺎﻟﺬﻫﺐﻭﺣﺴﻨﻪ، ﻭرواه ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭﺃﺣﻤﺪ،
কিলাবের যুদ্ধে উনার নাক কর্তিত হয়ে যায়,তখন তিনি রূপার নাক তৈরী করে লাগিয়ে নেন।কিন্তু উক্ত নাকে দুর্গন্ধ হয়ে যায়,যে জন্য নবীজী সাঃ উনাকে সর্ণের নাক বাধার অনুমিত প্রদান করেন।অতঃপর তিনি সর্ণের নাক বেধে নেন। (সুনানে তিরমিযি-১৭৭০)
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: কসমেটিক সার্জারি করা সম্পর্কে এবং এই জ্ঞান শিক্ষা করা সম্পর্কে? জবাবে তিনি বলেন: কসমেটিক সার্জারি দুই প্রকার:
প্রথম প্রকার: যে সার্জারি কোন দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে ঘটিত ত্রুটি দূর করে। এতে কোন অসুবিধা নেই, গুনাহ নেই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে একটি স্বর্ণের নাক গ্রহণ করার অনুমিত দিয়েছিলেন; যার নাকটি যুদ্ধকালে কাটা পড়েছিল।
দ্বিতীয় প্রকার: যে সার্জারি অতিরিক্ত, যেটি কোন ত্রুটি দূর করার জন্য নয়; বরঞ্চ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য। এটি হারাম, নাজায়েয। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ নারীদেরকে লানত করেছেন যে ভ্রু প্লাক করে, যার ভ্রু প্লাক করা হয়, যে পরচুলা লাগানোর কাজ করে, যাকে পরচুলা লাগানো হয়, যে উল্কি অঙ্কনের কাজ করে এবং যাকে উল্কি করানো হয়। যেহেতু এগুলো কোন ত্রুটি দূর করার জন্য করা হয় না; বিলাসী সৌন্দর্যবর্ধনে করা হয়।
পক্ষান্তরে যে ছাত্রের পাঠ্য সিলেবাসে কসমেটিক সার্জারি সাবজেক্ট রয়েছে; সেই সাবজেক্টটি পড়ায় তার গুনাহ হবে না। কিন্তু হারাম অবস্থাগুলোর ক্ষেত্রে সে এই জ্ঞানকে প্রয়োগ করবে না। বরং কেউ তাকে করতে বললে সে তাকে এটি বর্জন করার উপদেশ দিবে। যেহেতু এটি হারাম। হতে পারে উপদেশটি যদি কোন ডাক্তারের মুখ থেকে আসে তাহলে সেটি মানুষের মনে বেশি দাগ কাটবে।[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (৪/৪১২)]
কসমেটিক সার্জারি দুইভাগে বিভক্ত:
১। জরুরী কসমেটিক সার্জারি: সেটি এমন সার্জারি যা কোন ত্রুটি দূর করার জন্য করা হয়। যে ত্রুটি কোন রোগের কারণে কিংবা যানবাহন, আগুন ঘটিত বা অন্য কোন দুর্ঘটনার কারণে। কিংবা সৃষ্টিগত কোন ত্রুটি দূর করার জন্য করা হয়; যে ত্রুটি নিয়ে ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছে। যেমন অতিরিক্ত আঙ্গুলটি কেটে ফেলা কিংবা জোড়ালাগা দুটো আঙ্গুলকে জোড়ামুক্ত করা, ইত্যাদি।
এ ধরণের সার্জারি জায়েয।
এ সংক্রান্ত হাদীস উপরে উল্লেখ রয়েছে।
আরো একটি হাদীস হলোঃ-
আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনেছি যে, তিনি সৌন্দর্য্যের জন্য চোখের ভ্রু-সরুকারিনী ও দাঁতকে সরুকারিনী নারীদেরকে লানত করেছেন; তথা যারা আল্লাহ্র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]
ইমাম নববী বলেন:
হাদিসে উদ্ধৃত: “সৌন্দর্য্যের জন্য দাঁতকে সরুকারিনী” এ কথার মর্ম হচ্ছে- সৌন্দর্য লাভে তারা এটি করে। এ কথার মধ্যে এই ইঙ্গিত রয়েছে যে, হারাম হলো: সৌন্দর্য্যের নিমিত্তে কৃত কর্মটি। আর যদি চিকিৎসার জন্য কিংবা দাঁতের কোন ত্রুটির কারণে এর প্রয়োজন হয় তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই। আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
২। শোভাবর্ধক কসমেটিক সার্জারি: এটি হলো সার্জারি কারীর চোখে নিজের অবয়বের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। যেমন নাককে ছোট করার মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন কিংবা স্তনদ্বয়কে ছোটকরণ কিংবা বড়করণের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন। অনুরূপভাবে ফেসলিফ্ট সার্জারি করা, ইত্যাদি।
এ ধরণের সার্জারির আবশ্যকীয় বা প্রয়োজনীয় কোন কারণ নেই। বরঞ্চ এতে সর্বোচ্চ যা রয়েছে তা হলো আল্লাহ্র সৃষ্টিকে বিকৃত করা এবং মানুষের কুপ্রবৃত্তি ও খেয়ালখুশি মতো এতে অনর্থক পরিবর্তন করা। এ কারণে এটি হারাম; যা করা নাজায়েয। যেহেতু এটি আল্লাহ্র সৃষ্টিতে বিকৃতি। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তাঁর পরিবর্তে তারা দেবীরই পূজা করে এবং বিদ্রোহী শয়তানেরই পূজা করে; আল্লাহ যাকে লা’নত করেছেন এবং যে বলে: ‘আমি অবশ্যই আপনার বান্দাদের একটি নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব, আমি অবশ্যই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, অবশ্যই তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করব, আর অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব; ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে। আর অবশ্যই তাদেরকে নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১১৭-১১৯]