আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
90 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (9 points)
اَلسَّلاَمْ عَلَيْــــــــــــــــــــكُمْ وَ رَحْمَةُ اللہِ وَبَرَكَاتُهُ

আমি যখন খুব ছোট। রাতে কারেন্ট চলে গেলেই আমরা সবাই মিলে ছাদে বিছানা পেতে বসতাম। একদিন আমি বালিশ নিয়ে ছাদে বিছানায় শুতেই হালকা ঘুম চলে আসে আর তখন থেকে একটা কিছু আমি উপলব্ধি করি যেটার ফলে আমি নড়তে পারি না কথা বলতে পারিনা অবশ হয়ে থাকি প্রায় কিছুক্ষণ যাবৎ। যতক্ষণ না কোন মানুষ আমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। তবে কিছুক্ষণ পর সেটা আবার চলে যায়। এতদিন এটাকে  বোবা জিন বলেই ধরেছিলাম। তারপর শায়েখ আহমাদুল্লাহ সাহেবের আলোচনায় জানতে পারি বোবা জিন বলতে হাদিসে কিছুই পাওয়া যায় না। বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে স্লিপিং প্যারালাইসিস বলা হয়। আমি এই কথাটা কেন যেন পুরোপুরি মানতে পারছি না কারণ যখনই আমার এই জিনিসটা হয় তখনই আমি দেখি জানালা খোলা। আজ পর্যন্ত জানালা বন্ধ থাকা অবস্থায় কখনো এটা হয়নি। হেদায়াত আসার পর হালকা একটু কম আছর করে তবে এখনো করে। আরো একদিন আমি উপলব্ধি করলাম ওই জিনিসটা থাকা অবস্থায় আমার শরীরে একটা প্রতিক্রিয়া তৈরি হল মনে হচ্ছিল কেউ আমার শরীরে খারাপ ভাবে স্পর্শ করছে। যদিও এটা শুধু একবারই ফিল করেছিলাম আর কখনো করিনি।

এই জিনিসটা কেন হয়? এটা কি? হাদিসে এর ব্যাখ্যা আছে কি? এটা নিয়ে কেন আলিমগণ গবেষণা করেন না?

বি:দ্র: আমি অজু করে তিন কুল সহ রাতের সকল সুন্নত আমল করেই ঘুমাই আলহামদুলিল্লাহ। আমার তিলাওয়াতও শুদ্ধ আলহামদুলিল্লাহ

1 Answer

0 votes
by (559,140 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
জাছুম হচ্ছে কাবুস (বোবা ধরা); যা ঘুমের মধ্যে মানুষের ওপর ভর করে।

ইবনে মানযুর বলেন:

الجُثامُ (জুছাম) ও الجاثُومُ (জাছুম): الكابُوس (কাবুস), যা মানুষের উপর চেপে বসে।... ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের ওপর যা পতিত হয় সেটাকে বলা হয় “الجاثُومُ”।[লিসানুল আরব (১২/৮৩)]

তিনি আরও বলেন:

الكابُوس (কাবুস): রাতের বেলায় ঘুমন্ত ব্যক্তির ওপর যা পড়ে। বলা হয়: এটি খিঁচুনি হওয়ার সূচনা। কোন কোন ভাষাবিদ বলেন: আমার ধারণায় এটি আরবী নয়; বরং সেটাকে বলা হয়: النِّيدلان। আর তা হচ্ছে- الباروك (বারুক) ও الجاثوم (জাছুম)।[লিসানুল আরব (৬/১৯০)]

দুই:

জাছুম কখনও শরীরের কোন অঙ্গগত বৈষয়িক কারণেও হতে পারে; যেমন কোন খাবার বা ঔষধের প্রভাবে। আবার কখনও জ্বিনের প্রভাবেও হতে পারে। প্রথমটির চিকিৎসা শিঙ্গা লাগানো, খারাপ রক্ত বের করা, খাবার কম খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে। আর দ্বিতীয়টির চিকিৎসা কুরআনে কারীম ও যিকির-আযকারের মাধ্যমে।

ইবনে সিনা তাঁর চিকিৎসা গ্রন্থ “আল-ক্বানুন” এ বলেন:

“কাবুস পরিচ্ছেদ:

এটাকে “খানেক্ব” ও বলা হয়। আরবীতে কখনও কখনও “জাছুম” ও “নিদলান”ও বলা হয়।

এটি এমন এক রোগ যার কারণে মানুষ ঘুমে প্রবেশকালে অনুভব করে যে, ভারী কাল্পনিক কিছু তার উপরে পড়ছে। তাকে চাপ দিচ্ছে, তার নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলছে। যার ফলে তার শব্দ আটকে যাচ্ছে, সে নড়াচড়া করতে পারছে না। যেন সে শ্বাস আটকে মারা যাবে। যখন এই অবস্থা কেটে যায় তখন আচমকা জেগে ওঠে। এটি তিনটি রোগের সূচনা: খিঁচুনি, স্ট্রোক করা কিংবা ম্যানিয়া; যদি এটি বিভিন্ন পদার্থের জট পাকানোগত কারণে হয় এবং কোন অবৈষয়িক কারণে না হয়।”

একই ধরণের কথা আধুনিক ডাক্তারেরাও বলেন। ড. হাস্সান শামছি পাশা কাবুসকে দুইভাগে ভাগ করেছেন: অস্থায়ী কাবুস ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাবুস। প্রথম প্রকারটি বৈষয়িক কারণে ঘটে। আর দ্বিতীয়টি জ্বিনের প্রভাবে ঘটে।

তিনি তাঁর “আন-নাওম ওয়াল আরাক্ব ওয়াল আহলাম” গ্রন্থে বলেন:

১। অস্থায়ী কাবুস:

দুটো কারণে ঘটে থাকে:

ক. ঘুমে প্রবেশকালে শ্বাসনালীতে কিছু বাষ্প জমে সেটা মস্তিস্কের দিকে উঠতে থাকা কিংবা মস্তিস্ক থেকে বাষ্প এক ধাপে নীচে নামা। তখন আক্রান্ত ব্যক্তির নড়াচড়া ও কথা বলায় ভারী অনুভুত হয় কিংবা ভয় অনুভুত হয়। এটি স্নায়ুবিক খিঁচুনির সূচনা। আবার কখনও মানসিক প্রেসারের কারণেও ঘটতে পারে।

খ. কিছু কিছু ঔষধ সেবনের কারণেও কাবুস ঘটতে পারে। সেগুলো হচ্ছে:

(i) Arazrabine

(ii) Beta blockers

(iii) Lifod B

(iv) Antidepressants

(v) valium এর মত অস্থিরতা দূরকারী ঔষধ খাওয়া হঠাৎ বন্ধ করার পর।

২। পুনরাবৃত্তিমূলক কাবুস: এ ধরণের কাবুস প্রমাণ করে যে, মানুষের ওপর দুষ্ট আত্মাগুলো আছর করেছে এবং মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে।”

জাছুম-ই হলো কাবুস। এটি কুসংস্কার বা রূপকথা নয়। বরং এটি বাস্তব সত্য। এটি বৈষয়িক কারণে ঘটতে পারে। আবার জ্বিনের প্রভাবেও ঘটতে পারে।
(সংগৃহীত)

ইসলামী স্কলারগন বলেছেন,
‘বোবা ধরা’ কখনও শরীরের কোনো অঙ্গগত বৈষয়িক কারণেও হতে পারে; যেমন কোনো খাবার বা ঔষধের প্রভাবে। আবার কখনও জ্বিনের প্রভাবেও হতে পারে।

প্রথমটি থেকে পরিত্রাণের উপায়

বোবায় ধরা বা স্লিপিং প্যারালাইসিস থেকে বাঁচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজ উপায়টি হলো ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সমস্যা সাময়িক। কিন্তু যদি এটি ঘন ঘন হতে থাকে এবং কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার জন্ম দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না। এছাড়াও শিঙ্গা লাগিয়ে দূষিত রক্ত বের করা ও খাবার কম খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমেও চিকিৎসরা করা যায়।

দ্বিতীয়টি থেকে যেভাবে বাঁচবেন

আর দ্বিতীয়টির চিকিৎসা কোরআনে কারিম তিলাওয়াত ও জিকির-আজকারের মাধ্যমে। দোয়া দরুদ, চার কুল পাঠ ও আয়াতুল কুরসি পাঠসহ সুন্নাহভিত্তিক অন্যান্য আমলের মাধ্যমে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا الْمُفَضَّلُ بْنُ فَضَالَةَ عَنْ عُقَيْلٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ ثُمَّ نَفَثَ فِيْهِمَا فَقَرَأَ فِيْهِمَا(قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ)وَ (قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ) وَ (قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ) ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ وَوَجْهِهِ وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ

‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, প্রতি রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সূরাহ ইখ্লাস, সূরাহ ফালাক ও সূরাহ নাস পাঠ করে দু’হাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন। [বুখারী শরীফ ৫০১৭.৫৭৪৮, ৬৩১৯] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৮)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি পাক বিছানায় ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
আপনি যেই অবস্থায় থাকুন না কেনো,প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর আগে অযু করবেন,আয়াতুল কুরসী পড়বেন,তিন কুল তিনবার পড়ে পুরো শরীর তিনবার ফুক দিবেন।
,
ইনশাআল্লাহ আর কোনো সমস্যা হবেনা। 

আর যদি এটা আপনার শরীরের কোনো অঙ্গগত বৈষয়িক কারণে হয়ে থাকে; যেমন কোনো খাবার বা ঔষধের প্রভাবে হয়ে থাকে,এক কথায় জীন ছাড়া অন্য কোনো কারনে হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে চিকিৎসা কাম্য।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...