আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
191 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (23 points)
edited by
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

এক বোনের প্রশ্ন একটু দ্রুত উত্তর দিলে মুনাসিব হয়।

এতো দোয়া, এতো কান্না, এতো সপ্ন সবশেষে যখন দেখি একজন লেবাসধারী আলেম আমার জীবন সঙ্গী।কি করবো বুঝতেছি না আমার পুরো পরিবার চাচ্ছে আমাকে নিয়ে নিতে সংসার বিচ্ছেদ করতে।আবার এই ভয় ও হয় যদি তার সংসারের যাওয়ার পর আমি পুরোপুরি আল্লাহ কে হারিয়ে ফেলি।আমাদের বিয়ে হইছে যে আজকে ২মাস, এই ২ মাস তার সাথে থেকে আমার অন্তরে যে একফোঁটা নুর ছিলো তাও হারিয়ে গিয়েছে।সে এই দুই মাস আমাকে জয়েন ফ্যামিলিতে রেখেছে, জয়েন ফ্যামিলিতে থেকে পর্দা করার কথা তো বাদই দিলাম সারাক্ষণ দুনিয়াবি কাজের ব্যাস্ততার কারণে ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়েতেই কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে।
এখন যখন সংসার বিচ্ছেদ এর কথা চলতেছে এখন আমার হাজবেন্ড বলতেছে আমাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আলাদা রাখবে জয়েন ফ্যামিলিতে আর রাখবে না। আমার পরিবার আমার হাজবেন্ড এর কথা বিশ্বাস করে না। আমার পরিবার বলে সে তোকে ৬ মাস একবছর আলাদা রেখে আবার সে জয়েন ফ্যামিলিতে এনেই রাখবে।
আমার ফ্যামিলি তাকে বিশ্বাস না করার ও কারণ আছে। সে তার মাকে অসম্ভব ভালোবাসে, মানে তার মায়ে অন্ধভক্ত, সে একজন আলেম কিন্তু তার মা ই পর্দা করে না, তার মা বাড়িতে বউরা কাজে একটু ভুল করলে গালিগালাজ, এইটা নিয়ে বকা ঝকা ঐ টা নিয়ে বকা ঝকা, মাঝে মাঝে এমন এমন খোঁচা মেরে কথা বলে একদম কলিজা ফুটো হয়ে যায়। বিয়ের পর থেকে আজকে দুই মাসে আমি প্রায় ৩০০ মানুষ কে পায়ে ধরে সালাম করছি তার মায়ের কথা মতে। সকালে সর্য উঠার আগে ঘর, উঠান ঝাড়ু দিতে হবে নইলে নাকি অমঙ্গল হবে। তার মায়ের কাছে কথা শুনার ভয়ে ঝাড়ু দিয়ে পেলতাম। হিন্দু ধর্মের মতো বিয়ের পর তার বাড়িতে যাওয়া মাএই তার মা আমাকে আর আমার হাজবেন্ড কে আগুনের তাপ মাথায় দিছে, ধান ধুপা ছিটায় দিছে। বিয়ের একসপ্তাহ পযন্ত আমাকে কাপড় পড়ে থাকতে বলেছে বিভিন্ন মানুষ আমাকে দেখতে আসবে এই কারণে। কাপড় না পড়লে নাকি আমাকে বউ এর মতো লাগবে না এই কারণে। কিন্তু কাপড় পড়াতে আমার গাড় গলা মাথার চুল সব দেখা যাচ্ছি লো । তখন আমি আমার হাজবেন্ড কে বললাম তোমার মায়ের কাজ কর্ম গুলা খারাপ লাগতেছে। তুমি একজন আলেম কিন্তু তোমার মা বিভিন্ন কুসংস্কার বিশ্বাস করো তুমি কিছু বলো না কেন? বিয়ে বাড়িতে এত মানুষ তোমার মা আমাকে শাড়ি পড়ে থাকতে বলে তুমি কিছু বলো না কেন? তখন সে বলে মাকে কিছু বললে মা মনে কষ্ট পাবে থাক তুমি মানিয়ে নাও একটু প্লিজ।

আমার সবচেয়ে বেশি এই জায়গায় কষ্ট লাগে তার মা বিভিন্ন কুসংস্কার বিশ্বাস করে কিন্তু তার মা মনে কষ্ট পাবে ভেবে সে কিছু বলে না। তার পর আমার বাপের বাড়ি থেকে ফার্নিচার কেন নাওয়া হয় নাই এ কারণে ও তার মা আমাকে কথা শুনাইছে । আর সারাক্ষণ তো এটা সেটা নিয়ে তো কথা শুনাতেই থাকে।আর আমার হাজবেন্ড ও দ্বীনের পথে পুরোপুরি নেই। সে নামাজ এক ওয়াক্ত পড়লে আরেক ওয়াক্ত পড়ে না। তার রাত জাগার অভ্যাস রাতের ২/৩ টা পর্যন্ত জেগে থাকে আমাকও জাগাই রাখে এর পর সকালে ফজেরর নামাজই পড়ে না। মানে ৫ ওয়াক্ত নামাজই সে কন্টনিউ পড়ে না অন্য সব নফল ইবাদতের কথা তো বাদই দিলাম। বাড়িতে জয়েন ফ্যামিলিতে সে পর্দা করায় না আমাকে কিন্তু বাইরে যাওয়ার সময় ঠিকই হাত মজা পা মুজা পরার কথা বলে।
এই সব কারণে আমার ফ্যামিলি চাচ্ছে আমাকে নিয়ে নিতে। ফ্যামিলি বলে তুই ওর সংসার এ গেলে দ্বীন এবং দুনিয়া দুটো হারাবি। না পারবি দ্বীনের উপর টিকে থাকতে না পারবি বিভিন্ন ঝামেলার কারনে দুনিয়াবি সুখি হতে।

আমি কি আরেক টা বার আমার হাজবেন্ড কে সুযোগ দিবো সংসার বিচ্ছেদ না করে?

আরেকটা বিষয় আমার দেনমহর ৬ লক্ষ টাকা করা হয়।
বিয়ের দিন তারা আমাকে হাতের বালা, গলার হার, আর কানের দুল দেওয়া তে তারা দুই লক্ষ টাকা অসুল দিয়ে দেয়। তারা বলে বলে এই খানেই মেয়ে কে দুই লক্ষ টাকার স্বর্ণ দেওয়া হয়ে গেছে।তাই কাবিন ২লাখ উসুল দিয়ে ৪ লাখ রাখে।এটা আমার পরিবারও মেনে নেয়।
কিন্তু বিয়ের পরেই আমার কাছ থেকে আমার হাজবেন্ড গলার হারটা নিয়ে তার মাকে দিয়ে দেয়। আমি তাকে এটা জিজ্ঞেস করাতে সে বলে গলার হার টা অন্য করাো থেকে আনছে। তুমি মনে কষ্ট পাইয়ো না হাতের বালা আর কানের ধুলে ২ বরির মতো আছে। পরে এটা নিয়ে আর আমি কথা বাড়াই নাই।
আজকে ২মাস পরে যখন আমি আমার বাপের বাড়িতে আসি আমার বোনের বলে তোর হাতের চুড়ি, আর কানের ধুল গুলা তো সাদা হয়ে গেছে এই গুলা কি আসেই সর্ণের দিছে নাকি তোকে ঠকিয়েছে। আমি পরে স্বর্ণ এর দোকানে পরিক্ষা করাতে দেয়ার পর দোকানদার বলে এই গুলা তো স্বর্ণ না সিটি গোল্ডের জিনিস স্বর্ণের পানিতে চুবাইয়া আনছে ।
আমার হাজবেন্ড একজন আলেম হয়ে বিয়ের ১ম দিনই সে আমার হক নষ্ট করছে। কোন স্বর্ণই না দিয়ে ২লক্ষ টাকা স্বর্ণ দিছে বলে ২ লক্ষ টাকা উসুল দিছে ।  ঐ হাজবেন্ড এর কাছে ফিরে যেতেও খুব ভয় হচ্ছে। কি করবো শায়েখ?

*আমার হাজবেন্ড এর সাথে সকাল বেলা আমার কথা হইছে সে আমাকে বুঝাচ্ছে তার একটা গাড়ি আছে ১৩ লক্ষ টাকা দামের সেটা ও আমার নামে দিয়ে দিবে যেহেতু সে আমার হক নষ্ট করছে। সে আমার জন্য তার পরিবার পযন্ত ছেড়ে দিচ্ছে, আমাকে তার মা বাবার সাথে আর রাখবে না যেদিন আলাদা বাড়ি করবে সে সেই দিন আমাকে গ্রামে নিবে এর আগে গ্রামে নিবে না। আমি যেন তাকে ছেড়ে না যাই। তাকে যেন আরেক টা বার সুযোগ দেই..এইগুলা আমাকে ফোন দিয়ে বুঝাচ্ছে। কি করবো কিছু বুঝতেছি না!একবার মনে হচ্ছে তাকে ছেড়ে দেই, আবার মনে হচ্ছে আর একটা বার সুযোগ দিই তাকে।

একটু তাড়াতাড়ি বলুন শায়েখ কি করবো আমি??

1 Answer

0 votes
by (574,470 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া কোন মহিলা তার স্বামী থেকে তালাক চাওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلَاقًا فِيْ غَيْرِ مَا بَأْسٍ ؛ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْـجَنَّةِ.

‘‘যে কোন মহিলা কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া নিজ স্বামীর নিকট তালাক চাইলো তার উপর জান্নাতের সুগন্ধি হারাম হয়ে যাবে’’। (আবূ দাউদ ২২২৬; তিরমিযী ১১৮৭; ইব্নু মাজাহ্ ২০৫৫)

সাওবান (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْـمُخْتَلِعَاتُ ؛ هُنَّ الـمُنَافِقَاتُ.

‘‘(কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া) কোন কিছুর বিনিময়ে তালাক গ্রহণকারিণী মহিলারা মুনাফিক’’। (তিরমিযী ১১৮৬)

তবে কোন মারাত্মক সমস্যা দেখা দিলে কোন কিছুর বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক গ্রহণ করা যেতে পারে।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা হাবীবা বিন্তে সাহ্লকে তার স্বামী সাবিত বিন্ ক্বাইস বিন্ শাম্মাস মেরে তার একটি হাড় ভেঙ্গে ফেলে। ভোর বেলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ ব্যাপারে জানানো হলে তিনি সাবিতকে ডেকে পাঠালেন। অতঃপর বললেন: তুমি তার (তার স্ত্রী) কাছ থেকে কিছু সম্পদ নিয়ে তাকে ছেড়ে দাও। সাবিত বললেন: এমনকি চলে হে আল্লাহ্’র রাসূল! তিনি বললেন: হ্যাঁ, চলে। তখন সাবিত বললেন: আমি তাকে দু’টি খেজুরের বাগান দিয়েছি। এখনো তা তারই দখলে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: বাগান দু’টি নিয়ে তাকে ছেড়ে দাও। অতঃপর সাবিত তাই করলেন। (আবূ দাউদ ২২২৮)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনি সেই পরিবারে গিয়ে পর্দা করতে পারেননি,বেপর্দা হতে হয়েছে,হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি পালন করতে হয়েছে, সুতরাং সেখানে দ্বীন পালনে সমস্যা হওয়ায় আপনি তালাক চাইতে পারেন।
এতে আপনার গুনাহ হবেনা।

তবে আপনার স্বামী যেহেতু আরেকটি সুযোগ চাচ্ছে,সুতরাং এমতাবস্থায় পরামর্শ থাকবে, আপনার বাবা মা ও তার বাবা মা সহ উভয় পরিবারের মুরব্বিদের মাঝে মিটিং করাবেন। এক্ষেত্রে তার মা সহ সকলে মিলে যদি সম্মত হয় যে আপনাকে আলাদা বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে, পূর্ণ শরীয়ত মানার পরিবেশ করে দেয়া হবে, এক মুহুর্তের জন্যেও বেপর্দায় থাকতে হবেনা,এক মুহুর্তের জন্যেও হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি ও কুসংস্কার মানতে হবেনা,এবং আপনার মোহরানা বাবদ ৬ লক্ষ টাকা বা সমপরিমাণ কোনো কিছু নগদ আপনাদের দিয়ে দেয়,সেক্ষেত্রে স্বামীকে পুনরায় সুযোগ দেয়ার পরামর্শ থাকবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...