কেউ ব্যাংক থেকে লোন নিলে সেটার জিম্মাদার হিসেবে সাইন দেওয়া যাবে কিনা?

Question

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ্।

আমার হাসবেন্ড এর এক ঘনিষ্ঠ আত্মিয় তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজি, হালাল ব্যবসায়ী এবং তাহাজ্জুত, কুরআন পরে।
করোনার পরিস্থিতির কারনে উনি ৩০ লাখ টাকার ঋণ হয়ে গেছে। উনার ব্যবসার মাল গুলো ঢাকার বাহিরে যেতে পারেনি তাই বিক্রিও হয় নি আর জিনিসগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এখন উনার এমন কিছুই নেই যে কিছু বিক্রি করে সেই ঋণ পরিশোধ করবে। ব্যবসায়ীরা উনাকে এমন চাপ দিচ্ছে টাকার জন্য যে উনার এখন মরে যাওয়ার মত অবস্থা, টেনশনে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে আর খেতেও পারে না। উনার ছোট দুই সন্তান আছে মাদ্রাসায় পড়ে।
অনেক চেষ্টা করেও এখন উনি কোনো উপায় না পেয়ে ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাচ্ছে। ব্যাংক থেকে লোন নিলে তো একজন জিম্মাদারের প্রয়োজন হয়। আমার হাসবেন্ডকে বলেছে জিম্মাদার হতে আর এখানে শুধু একটি সাইন লাগবে। এখন ব্যাংকে তো সুদের ব্যপার সেপার আছে।
এইক্ষেত্রে “আমার হাসবেন্ড জিম্মাদারি নিলে কি সুদের যে গুনা সেটা কি উনার বহন করতে হবে?”
আমার হাসবেন্ড একমাত্র উনার করুন অবস্থার দিকটা দেখেই এমনটা করতে চাচ্ছেন আর এখানে উনি কোনো টাকাও গ্রহন করবেন না। এখন “আমার হাসবেন্ড এর কি সাইন দেওয়াটা উচিত হবে??”

---

Answer 1

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

আলহামদুলিল্লাহ!

আল্লাহ তা'আলা বলেন-

ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺄْﻛُﻠُﻮﻥَ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻻَ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﺇِﻻَّ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺘَﺨَﺒَّﻄُﻪُ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺲِّ ﺫَﻟِﻚَ ﺑِﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﺒَﻴْﻊُ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻭَﺃَﺣَﻞَّ ﺍﻟﻠّﻪُ ﺍﻟْﺒَﻴْﻊَ ﻭَﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻓَﻤَﻦ ﺟَﺎﺀﻩُ ﻣَﻮْﻋِﻈَﺔٌ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻪِ ﻓَﺎﻧﺘَﻬَﻰَ ﻓَﻠَﻪُ ﻣَﺎ ﺳَﻠَﻒَ ﻭَﺃَﻣْﺮُﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَ ﻓَﺄُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻫُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত!

অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।(সূরা বাকারা-২৭৫)

রিবা বা সূদ কাকে বলে?

বর্ণিত রয়েছে  এ ব্যপারে উলামায়ে কেরামগণ একমত যে, প্রত্যেক ঐ ঋণ যা মুনাফাকে টেনে নিয়ে আসবে তাই রিবা বা সুদ হিসেবে পরিগণিত হবে।যেমন,

ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣَﻔْﺺٌ، ﻋَﻦْ ﺃَﺷْﻌَﺚَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﻜَﻢِ، ﻋَﻦْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ، ﻗَﺎﻝَ : « ﻛُﻞُّ ﻗَﺮْﺽٍ ﺟَﺮَّ ﻣَﻨْﻔَﻌَﺔً، ﻓَﻬُﻮَ ﺭِﺑًﺎ » ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ 

প্রত্যেক ঐ ঋণ যা মুনাফাকে টেনে নিয়ে আসবে তাই রিবা বা সুদ।(মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ-২০৬৯০)

আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَتَعَاوَنُواْ عَلَى الْبرِّ وَالتَّقْوَى وَلاَ تَعَاوَنُواْ عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ -

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা মায়েদা-০২)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

সুদের আদান প্রদাণ হারাম এবং সুদি কাজে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করাও হারাম। কিন্তু যেহেতু প্রশ্নের বিবরণমতে সুদ গ্রহণ করে ঋণ পরিশোধ ব্যতিত আর কোনো রাস্তা নেই, তাই ঋণ পরিশোদের স্বার্থে সুদের বিনিময়ে হলেও কারো কাছ থেকে ধার করা যাবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- 866