আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
163 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)
আসসালামু আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্লহ

খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি দয়া করে সাহায্য করবেন। আমি করোনার মধ্যে হেদায়েত পায় আল্লাহর রহমতে, আমার পরিবারে কেউ দ্বীনদার না। এরপর আমি ভার্সিটিতে এডমিশন দেই এবং একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে চান্স পায়। আমার জীবনে কখনো ইচ্ছা ছিল না আমি নার্সিং এ পড়বো। ভার্সিটিতে সাব্জেক্ট চয়েস দিতে গিয়ে আমি সেখানে একটা সাব্জেক্ট দেখতে পাই নার্সিং এন্ড হেলথ সাইন্স। তখন আমার মাথায় চিন্তা আসে যেহেতু আমি চাকরি করতে চাই না ভবিষ্যতে তাই এমন একটা সাব্জেক্ট নেয় যেটাতে আমি এমন কিছু শিখতে পারবো যা আমার জীবনে কাজে লাগবে।মানুষের উপকার ও হয়তো করতে পারবো। ওয়াল্লাহি আমার নিয়ত এইটাই ছিল আর আমার ধারণা ছিল না যে পাবলিক ভার্সিটিতে নার্সিং পড়ানো হয় আর সেটাতে ড্রেস কোড মানতে হয়।এখানে ভর্তি হওয়ার ৬মাস পর আমি জানতে পারি যে নার্সিং এ যে ড্রেস কোড থাকে সেটা মানতে হবে আর হসপিটালে প্র‍্যাক্টিস করতে হবে। আমাদের দেশে নার্সিং এর ড্রেস যেমন তেমন। আর পুরুষ পেশেন্ট এর সাথেও ডিল করতে হবে। ওয়াল্লাহি আমি এসব জানতাম না। এখন আমি কালো বোরকা হিজাব নিকাব হাত মোজা পা মোজা পড়ি। আমার ভ্রু ও ঢেকে রাখি। এখন এই অবস্থায় বোরকা ছেড়ে ড্রেস পড়তে হবে এইটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমার পরিবার নিম্নমধ্যবিত্ত। বর্তমানে অনেক বেশি ঋণগ্রস্ত। আমার বাড়িতে এমন পরিবেশ নাই যে আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সেখানে গিয়ে থাকবো। আমাদের ঘরে দুইটা রুম, আমরা চার ভাইবোন আমার বাবা মা এই দুই রুমের মধ্যে থাকতে হয়। আমার ৩ টা ভাই বালেগ। বড়জন ক্লাস টেনে পড়ে। আমি থাকতেও অস্বস্তিবোধ করি। বলছি কারণ আপনারা যেন এটা বোঝেন আমার কাছে বাড়ি ফেরত যাওয়ার উপায় নেই। আমাকে তাদের এতো কষ্টের মধ্যে ও এতো টাকা দিচ্ছেন তারা।
ওয়াল্লাহি আমার বাড়ি ফেরত যাওয়ার উপায় নাই কিন্তু আমি এই বোরখা ছেড়ে ড্রেস ও পড়তে পারবো না। বিশ্বাস করুন আমি পারবো না।

দয়া করে আমাকে সঠিক পরামর্শ দিন আমার কি করা উচিত?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

প্রয়োজনঅপরাগতা কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নিযার কারণে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। 

 

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)

 

রাসূলুল্লাহ  বলেন,

الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا

নারী গোপন জিনিসযখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)

 

নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ  বলেন,وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম।’ (আবু দাউদ ৫৬৭)


পর্দা রক্ষা করা ফরজ। 

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্ল াহ সাল্ল াল্ল াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল াম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

অসুস্থ্য মানুষদের সেবা করাও সওয়াবের কাজ। যেহেতু মহিলাদের  জন্য মহিলা ডাক্তারের প্রয়োজন। 
তাই মহিলাদের জন্য পর্দার বিধান পুরোপুরি ভাবে পালনের শর্তে ডাক্তারী শিক্ষা অর্জন করা জায়েজ আছে।  
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৪/২৫৬)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা (আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটি)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে,
قد تجد الطبيبة حرجا وصعوبات في تغطية وجهها عن غير المحارم أثناء عملها، فهل هذا يعتبر من الضرورة لكشفه؟
মহিলা ডাক্তার তার কর্মস্থলে ডিউটি করার সময় পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখতে সমস্যা ও কষ্ট হয়। সুতরাং চেহারা খোলা রাখার জন্য এটাকে জরুরত হিসেবে গণ্য করা যাবে কিনা?

তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,
يحرم على المرأة كشف وجهها لغير محارمها، وليس هناك ضرورة لكشف الوجه في العمل
নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা হারাম। আর ডিউটি করার সময় প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চেহারা খুলে রাখার জরুরত বিদ্যমান নেই। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১৭/২৭৭)

বিস্তারিত জানুনঃ  

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
নারীদের নার্স হওয়া জায়েজ আছে।
তবে পরিপূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করতে হবে।
ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে।    
শুধুমাত্র নারীদের সেবা করতে হবে।  
সহকর্মীদের সাথে পর্দা মেইনটেইন করে কথা বলবে,অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে হেফাজতে থাকবে।

★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত ড্রেস কোড মেনে ড্রেস পড়ে গায়রে মাহরাম পুরুষদের সামনে যাওয়া স্পষ্ট নাজায়েজ।
এটা কোনোভাবেই জায়েজ নেই।

★সুতরাং আপনি অন্য বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার চেষ্টা করবেন।
 
যদি পরিবার থেকে বিষয়টি মেনে না নেয়,আপনাকে নার্সিং এ পড়াশোনা করতে বাধ্য করে,সেক্ষেত্রে ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করবেন।

হাত মোজা পা মোজা পরিধান করবেন।
চেহারা ঢেকে থাকবেন।

যদি চেহারা/হাত/পা ঢাকতে নিষেধাজ্ঞা থাকে,সেক্ষেত্রে  পূর্ণ পর্দা রক্ষা না করার দরুন আপনার জন্য বেপর্দার গুনাহ হবে।

এভাবে হাত মোজা পা মোজা পরিধান না করে,পূর্ণ ভাবে চেহারা না ঢেকে কোনো পুরুষ এর সামনে যাওয়া শরীয়তে কোনো ভাবেই জায়েজ নেই।
হারাম।

হ্যাঁ যদি সেখানে শুধুমাত্র নারীরা থাকে,তাহলে এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...