ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
শরীয়তে মূলনীতি হল,প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ফিস যদি না থাকে,তাহলে ছেলেদের জন্য জায়েয যদি শরীয়ত বিরোধী কোনো কর্মকান্ড তাতে না থাকে।যদি ফিস থাকে তবে জায়েয হবে না।কেননা তখন এটা জুয়া হয়ে যাবে,যা পরিস্কার হারাম।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।(সূরা মায়েদা-৯০)
তবে মেয়েদের জন্য ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে অংশগ্রহণ করা জায়েয হবে না,কেননা এতে বেপর্দাসহ নানা প্রকার ফিতনার আশংকার রয়েছে।বিস্তারিত জানুন-
https://www.ifatwa.info/434
সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
রেজিস্ট্রেশন এর জন্য ৫০/১০০ টাকা করে নিয়ে এই টাকা দিয়ে শুধুমাত্র টপ কয়েকজনকে সামান্য পুরস্কার দিয়ে কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন কখনো জায়েয হবে না।।এটা জুয়ার অন্তর্ভূক্ত হয়ে হারাম হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য যে,(সংগৃহিত)
জুয়ার যে পদ্ধতি জাহেলি যুগে প্রসিদ্ধ ছিল
জাহেলি যুগে দশ জনে সমান অংক দিয়ে একটা উট ক্রয় করতো, সেই উটের গোশত ভাগ-বাটোয়ারার জন্য জুয়ার তীর ব্যবহার করা হতো। ১০টি তীরের ৭টিতে কম-বেশি করে বিভিন্ন অংশ লেখা থাকতো এবং তিনটিতে কোনো অংশই লেখা থাকত না (এক প্রকার লটারী)।
ফলে তিনজন কোনো অংশ পেত না এবং অন্য সাত জন তাদের প্রচলিত নিয়মে কম-বেশি অংশ পেত। এভাবে তারা দশ জনের টাকায় কেনা উট সাত জনে ভাগ করে নিত। বাকি তিনজন শূন্য হাতে ফিরে যেতো। (মুহাররামাতুন ইস্তাহানা বিহান্নাস, পৃষ্ঠা: ৫২)
জুয়ার বিভিন্ন ধরন ও রকম
বর্তমানে জুয়া-বাজির জন্য বিভিন্ন রকমের আসর বসে বিভিন্ন দেশে। কোথাও হাউজি আবার কোথাও সবুজ টেবিল নামে পরিচিত। ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার প্রতিযোগিতায়ও বাজি ধরা হয়। প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার আরও বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। যেমন- ফ্লাস, পাশা, বাজি রেখে ঘোড় দৌড়, তাস খেলা, চাক্কি ঘোরানো ও রিং নিক্ষেপ ইত্যাদি।
এগুলোর সবই হারাম। জুয়া হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, শুধু নাম পরিবর্তনের কারণে বস্তু ও মূল প্রকৃতি এবং হুকুম পরিবর্তন হয় না। কাজেই প্রাচীনকালে প্রচলিত জুয়া সম্পর্কে যে হুকুম প্রযোজ্য ছিল, আধুনিককালের সব ধরনের জুয়ার ক্ষেত্রেও সেসব হুকুম সাব্যস্ত হবে।
জুয়া সম্পর্কে হাদিসে যা বলা হয়েছে
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন। ’ (বায়হাকি, হাদিস: ৪৫০৩; মিশকাত, হাদিস: ৪৩০৪)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না। ’ (দারেমি, হাদিস: ৩৬৫৩; মিশকাত, হাদিস: ৩৪৮৬)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ লাত-উজ্জার শপথ ইত্যাদি বললে, তবে সে যেন সঙ্গে সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। আর কেউ যদি অন্যকে প্রস্তাব দেয়, এসো আমরা জুয়া খেলি; সে যেন (জরিমানাস্বরুপ) দান-সদকা করে। (বুখারি, হাদিস: ৪৮৬০; মুসলিম, হাদিস: ১৬৪৭; তিরমিজি, হাদিস: ১৫৪৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২০৯৬)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (সা.) যখন (মক্কা) এলেন, তখন কাবাঘরে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানান। কেননা কাবা ঘরের ভেতরে মূর্তি ছিল। তিনি নির্দেশ দিলে মূর্তিগুলো বের করে ফেলা হয়। (এক পর্যায়ে) ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.)-এর প্রতিকৃতি বের করে আনা হয়। উভয় প্রতিকৃতির হাতে জুয়া খেলার তীর ছিল। তখন নবী (সা.) বললেন, আল্লাহ! ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম! অবশ্যই তারা জানে যে, [ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.)] তীর দিয়ে অংশ নির্ধারণের ভাগ্য পরীক্ষা কখনো করেননি। এরপর নবী (সা.) কাবাঘরে প্রবেশ করেন এবং ঘরের চারদিকে তাকবির বলেন। তবে ঘরের ভেতরে সালাত আদায় করেননি। (বুখারি, হাদিস: ১৫০৩)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘বলা হতো, উটের জুয়াড়িরা কোথায়? তখন দশজন প্রতিযোগী একত্রিত হতো এবং জুয়ার উটটির ক্রয়মূল্য হিসেবে দশটি উটশাবক নিৰ্দ্ধারণ করতো। তারা জুয়ার পাত্রে তীর স্থাপন করে সেটিকে চক্কর দেয়াতো, তাতে একজন বাদ পড়ে নয়জন অবশিষ্ট থাকতো। এভাবে প্রতি চক্করে একজন করে বাদ পড়ে শেষে মাত্র একজন অবশিষ্ট থাকতো এবং সে বিজয়ী হিসেবে তার শাবকসহ অন্যদের নয়টি শাবকও লাভ করতো। এতে নয়জনের প্রত্যেকে একটি করে শাবক লোকসান দিতো। এটাও এক প্রকার জুয়া। ’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নম্বর: ১২৭১)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘তীর নিক্ষেপে বাজিধরা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। ’ (ফাতহুল কাদির, হাদিস: ১২৭২)
ফুদাইল ইবনে মুসলিম (রহ.) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘আলী (রা.) বাবুল কাসর থেকে বের হলে তিনি দাবা-পাশা খেলোয়াড়দের দেখতে পান। তিনি তাদের কাছে গিয়ে তাদের ভোর থেকে রাত পর্যন্ত আটক রাখেন। তাদের মধ্যে কতককে তিনি দুপুর পর্যন্ত আটক রাখেন। (বর্ণনাকারী বলেন, যারা অর্থের আদান-প্রদানের ভিত্তিতে খেলেছিল, তিনি তাদের রাত পর্যন্ত আটক রাখেন, আর যারা এমনি খেলেছিল তাদেরকে দুপুর পর্যন্ত আটক রাখেন। ) তিনি নির্দেশ দিতেন, লোকজন যেন তাদের সালাম না দেয়। ’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ১২৮০)
জুয়া-বাজি থেকে প্রাপ্ত সবকিছু হারাম
সব ধরনের জুয়া-বাজি ইসলামে অবৈধ। জুয়া-বাজি থেকে প্রাপ্ত সবকিছু হারাম। হারাম ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগি করলে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন না। তাই মুসলমান হিসেবে সব ধরনের জুয়া-বাজি থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, প্রত্যন্ত গ্রামেও বসছে জুয়ার আসর। কৃষক, তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন মরণনেশা জুয়ায়। এসব আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। মাদকের মতোই জুয়ার গ্রাস এখন দৃশ্যমান। এমতাবস্থায় অনৈতিক এসব কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়াকে সাধুবাদ জানাতে হয়।