জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(১.২)
নবী কারীম (সা:) তৎকালীন আরবদেরকে কোরআনের ভাষা, ছন্দ ও বিষয়বস্তুর অলংকারের সমতুল্য সাহিত্য রচনার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন অথচ তারাই কাব্যসাহিত্যে ব্যাপক পারদর্শী ছিল। কিন্তু কাব্য রচনায় নিজেদের এতো সাফল্য আর উৎকর্ষতা থাকার পরেও তারা উক্ত চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ চ্যালেঞ্জ আরবসহ পুরো মানবজাতির উপর তিনটি পর্যায়ে দেয়া হয়েছেঃ
১. সম্পূর্ণ কোরআন:
কোরআন আল-কারীমে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন প্রিয় নবী (সা) কে প্রথমে এই বলে সকল মানুষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে বলেছেন যে, পারলে তারা যেন কোরআনের সমমর্যাদার কোন গ্রন্থ বানিয়ে দেখায়ঃ
قُلۡ لَّئِنِ اجۡتَمَعَتِ الۡاِنۡسُ وَ الۡجِنُّ عَلٰۤی اَنۡ یَّاۡتُوۡا بِمِثۡلِ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لَا یَاۡتُوۡنَ بِمِثۡلِہٖ وَ لَوۡ کَانَ بَعۡضُہُمۡ لِبَعۡضٍ ظَہِیۡرًا ﴿۸۸﴾
“বলঃ যদি সকল মানুষ ও জিন মিলে কোরআনের অবিকল কিছু বানিয়ে আনার চেষ্টা করে, তবুও তারা পারবেনা, এমনকি যদি তারা একে অপরকে সাহায্যও করে।” [সূরা আল-ইস্রা: ১৭:৮৮]
২. দশটি সূরা:
যারা এর সত্যতাকে এরপরও অস্বীকার করে যাচ্ছিল তাদেরকে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন নিদেনপক্ষে কোরআনের মত করে দশটি সূরা রচনা করতে বললেনঃ
اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىہُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِعَشۡرِ سُوَرٍ مِّثۡلِہٖ مُفۡتَرَیٰتٍ وَّ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۱۳﴾
“অথবা তারা কি এটা বলে নাকি যে সে (মুহাম্মাদ) নিজেই এটা রচনা করেছে? (তাদের) বল, ‘যদি তাই হয়, তাহলে তোমরাও এর অনুরূপ (মাত্র) দশটি সূরাহ নিয়ে আসো এবং আল্লাহ্ ছাড়া তোমারা আর যাদের উপাসনা কর তাদেরকেও সাহায্য করতে বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” [সূরা হূদ: ১১:১৩]
সর্বশেষ চ্যালেঞ্জ ছিল, অন্তত পক্ষে কোরআন-এর একটি সূরার অনুরূপ তারা যেন বানিয়ে আনে, আর কোরানের সবচাইতে ছোট সূরা হচ্ছে সূরা আল-কাউসার, যার আয়াত সংখ্যা মাত্র তিনটি।
وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلٰی عَبۡدِنَا فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّنۡ مِّثۡلِہٖ ۪ وَ ادۡعُوۡا شُہَدَآءَکُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۲۳﴾
“এবং আমার বান্দার (মুহাম্মাদ) উপর আমি যা নাযিল করেছি, তার ব্যাপারে তোমাদের মনে যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে, তাহলে এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আসো, এবং আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের আর যেসব সাহায্যকারী আছে তাদের সাহায্যের জন্য ডাকো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” [সূরা আল বাক্বারাহ্: ২:২৩]
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা:) মানুষদের আল্লাহ্র একত্ববাদ, সকল ধরণের মূর্তিপূজা বাতিল এবং দাস-দাসী ও মনিবের মধ্যে যে সাম্যবাদের ডাক দিচ্ছিলেন তা সাধারণভাবে মাক্কার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং বিশেষ করে শাসকগোষ্ঠী কুরাইশ গোত্রের জন্য তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। আরবের প্রধান বাণিজ্য ও ধর্মীয় কেন্দ্র মাক্কার অধিবাসীরা রাসূল (সা:) এর সেই সাম্যবাদের বিস্তার রোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল। এর জন্য তাদের শুধু এটুকু করলেই চলত, যদি তারা কোরআনের অনুরূপ মাত্র একটি সূরা বানিয়ে আনতে পারত! বহু কুরাইশ কবি ও বাকপটু লোক উক্ত চ্যালেঞ্জের উত্তর দিয়ে গিয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। চ্যালেঞ্জে ব্যর্থ হয়ে তারা বরঞ্চ তাঁকে অনেক সম্পদ, সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসন এমনকি গোত্রের সবচাইতে অভিজাত এবং সুন্দরী মেয়েদেরকে উপঢৌকন হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। আর তা করেছিল শুধুমাত্র এই জন্যে যে, যাতে তিনি ইসলামের এই দা’ওয়াত বন্ধ করে দেন।
উল্টো তিনি তাদের সূরা ফুসসিলাত এর প্রথম তেরটি আয়াতের আবৃত্তির মাধ্যমে তাদের জবাব দেন। এতে তারা যারপরনাই বিরক্ত হয়ে তাঁকে থামতে বলেন [ আল হাকীম, আল-বাইহাক্বী, আবূ ইয়’লা ও ইবন্ হিশাম কর্তৃক সংগৃহীত, ইব্রহীম আল-‘আলী তাঁর সহীহ্ আস-সীরাহ্ আন-নাবাওয়ীয়্যাহ-তে এই বর্ণনাকে ‘হাসান’ বলেছেন, পৃঃ৬৪]। প্রিয় নবী (সা:) কে প্ররোচিত করতে ব্যর্থ হয়ে কুরাইশরা তাদের দাস-দাসী ও আত্মীয়দের মধ্যে যারা ধীরে ধীরে ইসলাম গ্রহণ করছিল, তাদেরকে পৌত্তলিক ধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য নির্যাতন করে যাচ্ছিল। যদিও তারা ইসলাম থেকে ফিরে আসেননি। এতো কিছুতে না পেরে পরবর্তীতে তারা প্রিয় নবী (সা:) এবং তাঁর অনুসারী ও তাঁর বংশ বানূ হাশীম গোত্রের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যাতে করে তারা অনাহারের কষ্টে তাদের কাছে মাথা নত করে। বলাবাহুল্য, তাদের এই চেষ্টাও বিফলে গিয়েছে। শেষমেশ তারা তাঁকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। এই উদ্দেশ্যে তারা কুরাইশদের সকল বংশ থেকে একজন করে সশস্ত্র লোককে পাঠায়, যাতে করে পরবর্তীতে নবী কারীম (সা:) এর নিজস্ব বংশের লোকেরা আর তাদের উপর প্রতিশোধ নিতে না পারে।
যাইহোক, এই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন রাসূল (সা:) সহ তাঁর সকল অনুসারীগণকে মক্কা থেকে উত্তরে ইয়াসরিব নামক শহরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন যেখানে আগে থেকেই বেশ কিছু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছিল। ইয়াসরিব এর লোকজনদের মধ্যে ইসলাম খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল এবং বছর না ঘুরতেই মুসলিমরা সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ফেলে। প্রিয় নবী (সা:) কে সেখানকার শাসক বানানো হয় এবং ইয়াসরিব শহরটিকে মাদীনাহ্ আন-নবী [নবী (সা:)-এর শহর] এই নামে নতুন করে নামকরণ করা হয়। পরবর্তী আট বছরের বিভিন্ন সময়ে মক্কা এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন গোত্র ও বংশের অধিবাসীরা ক্রমবর্ধমান মদীনাহ্-এর মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ব্যর্থ যুদ্ধাভিযান চালায়। যার পরিসমাপ্তি ঘটে মুসলিমদের মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে। কুরাইশ এবং তাদের মিত্র বাহিনী কেউ যদি শুধুমাত্র কোরআনের সূরা এর অনুরূপ মাত্র তিনটি কবিতার লাইন কিংবা পুঁথি রচনা করতে পারত তাহলেই কিন্তু এতো রক্তারক্তির আর দরকার পড়ত না। সুতরাং, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, কোরআনের ভাষাশৈলীর অনুপম মর্যাদা, শব্দের মাধুর্য এবং ছন্দের গতিশীলতার এই অলৌকিক বিস্ময় কোন মানুষের পক্ষে অনুকরণ করা সম্ভব নয়।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আমরা বলবো যে তারা কুরআনের চ্যালেঞ্জ বুঝেইনি।
কেননা এমনটি একটি লিখলেই তো কুরআনের চ্যালেঞ্জ মুকাবেলা হবেনা।
এতোই যদি সহজ হতো,তাহলে এতো বছর ধরে দুনিয়াবাসী অক্ষম কেনো?
এখানে কুরআনের বালাগাত,ফাসাহাত,ভাষাগত সৌন্দর্যতা,ছন্দ,অমীয় বানী ,সহ আরো অনেক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই কোনো আয়াত লেখার চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)
(০৩)
প্রশ্নের বিবরন মতে শুধু এতটুকু সন্দেহের দরুন তার ইমান নষ্ট হয়ে যাবেনা।