আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
134 views
in কুরবানী (Slaughtering) by (25 points)
আমার স্ত্রীর কাছে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকার স্বর্ণ আছে ওর মালিকানায়। যেহেতু শুধু স্বর্ণ আছে, অন্য কোন টাকা, রুপা বা ব্যবসায়ী সম্পদ কিছুই নেই এ কারণে তার উপর যাকাত আসেনি যাকাত দেয়নি। কিন্তু এখন কথা হল কোরবানি কি দিতে হবে কিনা? আমি যতটুক জানি ঘরের আসবাবপত্র, পোশাকের উপরও কোরবানি নেসাবের হিসাব আসে। এখন ঘরের কোন আসবাবপত্র তার মালিকানায় নেই। কিন্তু তার ১৩ টা শাড়ি আছে। আর জামা আছে অল্প কিছু সেগুলো তো দৈনন্দিন পড়ে। এখন এই ১৩ টা শাড়ি কি ওই ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার সাথে যোগ হবে?? যোগ হলে তো কুরবানীর নেসাব পরিমাণ হয়ে যাবে এবং কোরবানি দিতে হবে তাই না। এখন ঐ ১৩টা শাড়ি যে সারা বছরে পড়া হয়না এরকম না। বরঞ্চ কিছুদিন পর পর কন্টিনিউয়াসলি পড়া হয়। কিন্তু যেহেতু শাড়ির সংখ্যাটা বেশি তো এক্ষেত্রে তার হুকুম কি আসবে?? এছাড়া তার অন্য কোন সম্পত্তি নেই। এই এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকার স্বর্ণ এবং ১৩ টা শাড়ি আছে।
আর কিছু বিষয়ে বলা জরুরি মনে করছি। আসলে আমাদের দুজনেরই নিজস্ব কোন সম্পত্তি বা টাকা পয়সা নেই। আমি ছোট্ট একটা মুদির দোকান চালায় এর থেকে মাসে দশ হাজার টাকার মতো আসে। এ কারণে সংসার বাবা-মা স্ত্রী সন্তান নিয়ে চলতে খুব কষ্ট হয়। খুব পেরেশানির মধ্যে দিনাপাত করতে হয়। আমার দোকানের মালামাল নেসার পরিমাণ হওয়া বিধায় আমি কিছুদিন আগে যাকাত আদায় করেছি। এটাই আমার জন্য অনেক বেশি কষ্টকর হয়েছে কারণ আমার দোকান থেকে যেই প্রোফিট আসে, সেটা দিয়ে আমি ভালোভাবে চলতেই পারিনা পরিবার নিয়ে। কিন্তু দোকানের মালামাল নেসাব পরিমাণ হওয়ায় কষ্ট হলেও ঋণ করে যাকাত দিতে হয়েছে। যাকাত তো আমার নিজের পুঁজি থেকে দিতে হয়েছে এখন সামনে কোরবানিও দোকানের পুঁজি থেকে দিতে হবে। কারণ যে প্রফিট আসে দোকান থেকে, এই প্রফিট দিয়ে তো সংসারই চলে না ঠিকভাবে। এমন না যে অতিরিক্ত খরচ করি বরঞ্চ এমন অবস্থা হয় যে অনেক সময় প্রয়োজন গুলোও ঠিক ভাবে পুরা করতে পারি না। এখন আমার স্ত্রী যে স্বর্ণগুলো পেয়েছে সেগুলো সে উপহার পেয়েছে এবং শাড়িগুলো ও উপহার পেয়েছে। আমি তাকে কিছুই দেইনি, আর দিবই বা কিভাবে আমি তো আমাদের মৌলিক প্রয়োজনগুলোই মিটাতে হিমশিম খাই। আমি আমার স্ত্রী দুজনেই আইওএম তে পড়ি ২৩০৯ ব্যাচে। আমারা পুর ফান্ডে আছে তারপরও কষ্ট হয় সবকিছু ম্যানেজ করতে। এমনকি এক মাস হয়েছে আমার মেয়ে বাবু হয়েছে। আল্লাহর উপর ভরসা না থাকলে হতাশা ছাড়া কিছুই ছিল না। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তাআলা অনেক সুখে রেখেছেন। এখন কথা হচ্ছে আমার স্ত্রী যদি কোরবানি দিতে হয়, তাহলে তো তার ইনকাম নেই তার স্বর্ণ বিক্রি করে কোরবানি দিতে হবে। আমিও যে দিয়ে দিব সেটার এবিলিটি নেই এমনকি আমার নিজের কুরবানীও ঋণ করে দিতে হবে। এখন আমরা দুজনে মিলে একটা পরামর্শ করেছিলাম, আমার কোরবানি যেহেতু দিতেই হবে। তো এখন যদি আমার স্ত্রীর উপরও কুরবানী ওয়াজিব হয় তাহলে তার স্বর্ণ বিক্রি করে দিতে হবে বা আমার ঋণ করে হলেও তাকে টাকাটা দিতে হবে। তখন দেখা যাবে যে প্রায় ২ টা কোরবানির জন্য ৪০-৫০ হাজার টাকা ঋণ হয়ে যাবে। আর এর ঋণ পরিশোধ করা ও সাধ্যের বাহিরে বলতে গেলে যেখানে পরিবার চালাতেই খুব কষ্ট হয়। আর নয়তো ঋণ না করলে স্বর্ণ বিক্রি করেই দুজনের কোরবানি দিতে হবে। এখন আমরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেহেতু আমার কোরবানি দিতেই হবে যদি আমার আমার স্ত্রীর উপরও কুরবানী ওয়াজিব হয় তাহলে স্বর্ণের মালিকানা পরিবর্তন করে আমি নিয়ে নেব। তখন আমার স্ত্রীর কুরবানী দিতে হবে না শুধু একটা কোরবানি অর্থাৎ আমি আমার নিজেরটা দিলেই হবে। তাহলে ঋণওকম হবে বা স্বর্ণ বিক্রি করলেও কম বিক্রি করতে হবে।
এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে:
১. শাড়ির কারণে আমার স্ত্রীর উপর কি কোরবানির হুকুম আসবে??

২. আমাদের পুরো পরিস্থিতিটা তো বিস্তারিত বললাম তো এখন আমি যাকাত দিয়েছি এবং কোরবানি দিব এগুলা তো ঠিক আছে তাই না এগুলো হুকুম তো আমার উপর আসে??

৩. লাস্ট যেটা বললাম আমরা পরামর্শ করেছি যে সম্পদের মালিকানা পরিবর্তন করবো। তো এটা কি ঠিক আছে?? নাকি এটা আসলে আল্লাহর সাথে চালাকি করার মত হয়? এভাবে মালিকানা পরিবর্তন করে একটা কোরবানি দিলে কি কোন গুনাহ হবে??

1 Answer

0 votes
by (566,280 points)
জবাবঃ- 
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানী করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (মুসনাদ আহমাদ ৮২৭৩, ইবনে মাজাহ ৩১২৩, হাকেম ৭৫৬৫-৭৫৬৬)

শরীয়তের বিধান হলো,প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। 

সুতরাং কাহারো কাছে যদি স্বর্ণের পাশাপাশি টাকা থাকে,তাহলে তার জন্য করনীয় হলো এই টাকা আর উক্ত স্বর্ণের মূল্য হিসেব করে সারে বাহান্ন ভরি রুপার সমমূল্য হয়েছে কিনা?
হলে তার উপর যাকাত,কুরবানী আবশ্যক হবে।

যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ হতে যিলহজ্ব মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্ত, এ সময়ের মাঝে কোনো সময়ে কেহ যদি সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি সমপরিমাণ মূল্যের (প্রায় ৯০০০০+ টাকার) মালিক হয়,আর তাহা যদি দৈনন্দিন প্রয়োজন অতিরিক্ত হয়,সেক্ষেত্রে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে, নতুবা কুরবানী ওয়াজিব হবেনা।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,   
(০১)
প্রশ্নের বিবরন মতে উক্ত শাড়ি গুলো যেহেতু আপনার স্ত্রী পরিধান করেন,সুতরাং শাড়ির কারনে আপনার স্ত্রীর উপর কুরবানী ওয়াজিব হবেনা।

(০২)
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনার ব্যাবসায়ীক পন্যের মূল্য যেহেতু নেসাব পরিমানে পৌঁছে, সুতরাং আপনার উপর যাকাত ফরজ,কুরবানী ওয়াজিব।

(০৩)
যেহেতু আপনার স্ত্রীর উপর কুরবানী ওয়াজিব হচ্ছেনা,সুতরাং হিলা করে এভাবে মালিকানা পরিবর্তন এর প্রয়োজন নেই।

(আপনার স্ত্রীর উপর যদি কুরবানী ওয়াজিব হতো,সেক্ষেত্রে এভাবে কৌশল অবলম্বন করে মালিকানা পরিবর্তন করে নিলে আপনার স্ত্রীর উপর কুরবানী ওয়াজিব হতোনা। তবে এটি শরীয়তের সাথে চালাকির শামিল। )


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 224 views
...