বিনা প্রয়োজনে পর পুরুষকে সালাম দেওয়া ঠিক নয়। তাই কোনো মহিলা এভাবে পরপুরুষকে সালাম দিলে তার সালামের জবাব দিবে না। তবে মনে মনে জবাব দিতে পারবে। প্রকাশ থাকে যে, পরপুরুষের সাথে কোনো বেগানা মহিলার কথা বলার প্রয়োজন হলে তখন কথার শুরুতে সালাম আদান-প্রদান করতে পারবে। এক্ষেত্রে পর্দার বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া পরপুরুষের সাথে কথা বলার যে আদব কুরআন মজীদে আছে তার প্রতি লক্ষ্য রাখবে। অর্থাৎ কোমলতা পরিহার করে স্বাভাবিকভাবে শুধু প্রয়োজনীয় কথা বলবে।
ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৭২,
গায়রে মাহরাম নারীদের সাথে বিনা প্রয়োজনে সালাম আদান প্রদান করা যাবে না। যেমন, পথে চলাচল করা অবস্থায় তাদেরকে সালাম দেওয়া যাবে না। তেমনি তারা সালাম দিলে তার উত্তর শুনিয়ে দেওয়া যাবে না।
হাঁ, কোনো প্রয়োজনে তাদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দা রক্ষা করে কথা বলবে এবং এক্ষেত্রে সালামের মাধ্যমে কথা শুরু করাটাই উত্তম। এমনিভাবে মোবাইলে কথা বলার সময়ও সালাম আদান প্রদান করা যাবে। আর মাহরাম নারীদের সাথে সর্বাবস্থায় সালাম আদান প্রদান করা যাবে।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৬৩০০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৪৪৯; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৪৬৮; আননাহরুল ফায়েক ১/২৭১; রদ্দুল মুহতার ১/৬১৬,
এবিষয়ে ‘আল মাউসুআ’তুল ফিকহিয়্যা’-তে এসেছে,
سَلاَمُ الْمَرْأَةِ عَلَى الْمَرْأَةِ يُسَنُّ كَسَلاَمِ الرَّجُلِ عَلَى الرَّجُلِ وَرَدِّ السَّلاَمِ مِنَ الْمَرْأَةِ عَلَى مِثْلِهَا كَالرَّدِّ مِنَ الرَّجُلِ عَلَى سَلاَمِ الرَّجُلِ وَأَمَّا سَلاَمُ الرَّجُلِ عَلَى الْمَرْأَةِ فَإِنْ كَانَتْ تِلْكَ الْمَرْأَةُ زَوْجَةً أَوْ أَمَةً أَوْ مِنَ الْمَحَارِمِ فَسَلاَمُهُ عَلَيْهَا سُنَّةٌ وَرَدُّ السَّلاَمِ مِنْهَا عَلَيْهِ وَاجِبٌ بَلْ يُسَنُّ أَنْ يُسَلِّمَ الرَّجُلُ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَمَحَارِمِهِ وَإِنْ كَانَتْ تِلْكَ الْمَرْأَةُ أَجْنَبِيَّةً فَإِنْ كَانَتْ عَجُوزًا أَوِ امْرَأَةً لاَ تُشْتَهَى فَالسَّلاَمُ عَلَيْهَا سُنَّةٌ وَرَدُّ السَّلاَمِ مِنْهَا عَلَى مَنْ سَلَّمَ عَلَيْهَا لَفْظًا وَاجِبٌ وَأَمَّا إِنْ كَانَتْ تِلْكَ الْمَرْأَةُ شَابَّةً يُخْشَى اْلافْتِتَانُ بِهَا أَوْ يُخْشَى افْتِتَانُهَا هِيَ أَيْضًا بِمَنْ سَلَّمَ عَلَيْهَا فَالسَّلاَمُ عَلَيْهَا وَجَوَابُ السَّلاَمِ مِنْهَا حُكْمُهُ الْكَرَاهَةُ عِنْدَ الْمَالِكِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ وَالْحَنَابِلَةِ وَذَكَرَ الْحَنَفِيَّةُ أَنَّ الرَّجُلَ يَرُدُّ عَلَى سَلاَمِ الْمَرْأَةِ فِيْ نَفْسِهِ إِنْ سَلَّمَتْ هِيَ عَلَيْهِ وَتَرُدُّ هِيَ أَيْضًا فِيْ نَفْسِهَا إنْ سَلَّمَ هُوَ عَلَيْهَا
যেমনিভাবে পুরুষ পুরুষকে সালাম দেয়া সুন্নাত, অনুরূপভাবে নারী নারীকে সালাম দেয়া সুন্নাত। পুরুষ পুরুষের সালামের উত্তর দেয়া এবং নারী নারীর সালামের উত্তর দেয়ার বিধানও অভিন্ন। তবে পুরুষ নারীকে সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে কথা হল, যদি ওই নারী নিজ স্ত্রী, বাঁদি অথবা মাহরাম হয় তাহলে তাকে সালাম দেয়া সুন্নাত এবং তার সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। বরং সুন্নাত হল, পুরুষ তার পরিবারকে ও মাহরামকে সালাম দিবে। আর যদি ওই নারী বেগানা হয় তাহলে যদি সে বৃদ্ধা হয় কিংবা এমন হয় যে, তার প্রতি আকর্ষণ অনুভূত হয় না তাহলে তাকেও সালাম দেয়া সুন্নাত এবং তার সালামের উত্তর সশব্দে দেয়া ওয়াজিব। পক্ষান্তরে সে যদি যুবতী/তরুণী হয় যে, তার মাধ্যমে পুরুষ কিংবা পুরুষের মাধ্যমে সে ফেতনায় পড়ার আশঙ্কা আছে তাহলে তাকে সালাম দেয়া এবং তার সালামের উত্তর দেয়া শাফিঈ মালেকি ও হাম্বলি মাযহাব মতে মাকরুহ। আর হানাফি মাযহাব মতে বেগানা নারী যদি সালাম দেয় তাহলে পুরুষ মনে মনে উত্তর দিবে। আর বেগানা পুরুষ যদি সালাম দেয় তাহলে নারী মনে মনে উত্তর দিবে। (আল মাউসুআ’তুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়া ৬/১৬৬)
ইমাম নববী রহ. বলেন,
وإن كانت أجنبية يخاف الافتتان بها لم يسلم الرجل عليها ، ولو سلم لم يجز لها رد الجواب ، ولم تسلم هي عليه ابتداء ، فإن سلمت لم تستحق جواباً
যদি পরনারী এমন হয় যে ,ফিতনার আশঙ্কা আছে তাহলে পুরুষ তাকে সালাম দিবে না। যদি সে সালাম দিয়ে দেয় তাহলে মহিলা উত্তর দিবে না। আর নারী পরপুরুষকে আগে সালাম দিবে না। যদি সে সালাম দিয়ে দেয় তাহলে সে উত্তর পাওয়ার উপযুক্ত হবে না। (আলাযকার ৪০৭)
,
আরো জানুনঃ
যেমনঃ পরপুরুষের সাথে কোনো বেগানা মহিলার কথা বলার প্রয়োজন হলে তখন কথার শুরুতে সালাম আদান-প্রদান করতে পারবে।