আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
141 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (38 points)
আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ।
আমি আআলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর দয়ায় হিদায়াতপ্রাপ্তা এবং দ্বীনের আহকাম মেনে চলার চেষ্টা করি। আমি বিবাহিতা। আমার জাওয সাহেব এবং আমাকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মহিলা শিক্ষিকা নেই, যেকারণে অত্যাবশ্যকভাবে একজন নারী শিক্ষিকা নিয়োগের প্রয়োজন। হতে পারে নারী শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে। আমার জাওয সাহেব এবং আমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলে অর্থাৎ পাশাপাশি কাজ করলে এরুপ অবস্থায় আমি কি এই চাকরিতে ঢুকতে পারবো কি না? এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম,যদিও ক্লাসে ছেলে-মেয়ে উভয় শিক্ষার্থী থাকবে। আমি নিকাব,হাত এবং পা মোজা পরি আর খুব বেশি জরুরত ব্যতীত গাইরে মাহরামের সাথে কথা বলিনা। যদি এই কর্মস্থলে শুধু ক্লাস নেয়া,খাতা দেখা আর পরীক্ষায় গার্ড দেয়ার মতো কাজ থাকে, আর এর বাইরে গাইরে মাহরামের সাথে এটাচ না হতে হয়, তাহলে কি আমি শিক্ষিকা হিসেবে সেখানে যেতে পারবো? আসলে পরিবেশ যদি অনুকূল হয়, তাহলেই সেখানে শিক্ষিকা হিসেবে পড়ানো চালিয়ে যাব। নাহলে ছেড়ে আসবো। সেটা আর্মিদের বিশ্ববিদ্যালয়। আমার স্বামীও চাচ্ছেন আমরা দুজন একসাথে পড়াই। দেশের আর্মি সেক্টর তো বড় একটা সেক্টর, সেখানে দ্বীন মেনে চলা মুসলিমরা ইনভলভ হলে হয়তো ইসলামের জন্যও তা বড় একটা কিছুর আঞ্জাম হবে।

আমার স্বামী যেহেতু সেখানে আমার সহকর্মী, পাশে পাশে থাকবেন-আমি কি সেখানে শিক্ষিকা হিসেবে জয়েন করতে পারি, যদি অনুকূল হয় পড়াবো,নাহয় এক দুমাস পর ছেড়ে দিবো-এই নিয়তে?

1 Answer

0 votes
by (575,070 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে,আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻳَﺎ ﻧِﺴَﺎﺀ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﻟَﺴْﺘُﻦَّ ﻛَﺄَﺣَﺪٍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﺇِﻥِ ﺍﺗَّﻘَﻴْﺘُﻦَّ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺨْﻀَﻌْﻦَ ﺑِﺎﻟْﻘَﻮْﻝِ ﻓَﻴَﻄْﻤَﻊَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻓِﻲ ﻗَﻠْﺒِﻪِ ﻣَﺮَﺽٌ ﻭَﻗُﻠْﻦَ ﻗَﻮْﻟًﺎ ﻣَّﻌْﺮُﻭﻓًﺎ

(তরজমা) তোমরা (পর পুরুষের সাথে) বাক্যালাপে কোমলতা অবলম্বন কর না। যাতে এরূপ লোকের অন্তরে আকাঙ্ক্ষা (সঞ্চার) হয়, যার অন্তরে কুপ্রবৃত্তি রয়েছে। (সূরা আহযাব : ৩২)

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﺪْﺧُﻠُﻮﺍ ﺑُﻴُﻮﺕَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥ ﻳُﺆْﺫَﻥَ ﻟَﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﻃَﻌَﺎﻡٍ ﻏَﻴْﺮَ ﻧَﺎﻇِﺮِﻳﻦَ ﺇِﻧَﺎﻩُ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺇِﺫَﺍ ﺩُﻋِﻴﺘُﻢْ ﻓَﺎﺩْﺧُﻠُﻮﺍ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻃَﻌِﻤْﺘُﻢْ ﻓَﺎﻧﺘَﺸِﺮُﻭﺍ ﻭَﻟَﺎ ﻣُﺴْﺘَﺄْﻧِﺴِﻴﻦَ ﻟِﺤَﺪِﻳﺚٍ ﺇِﻥَّ ﺫَﻟِﻜُﻢْ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺆْﺫِﻱ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﻓَﻴَﺴْﺘَﺤْﻴِﻲ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﺴْﺘَﺤْﻴِﻲ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﻣَﺘَﺎﻋًﺎ ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦ ﻭَﺭَﺍﺀ ﺣِﺠَﺎﺏٍ ﺫَﻟِﻜُﻢْ ﺃَﻃْﻬَﺮُ ﻟِﻘُﻠُﻮﺑِﻜُﻢْ ﻭَﻗُﻠُﻮﺑِﻬِﻦَّ ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﻥ ﺗُﺆْﺫُﻭﺍ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻥ ﺗَﻨﻜِﺤُﻮﺍ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟَﻪُ ﻣِﻦ ﺑَﻌْﺪِﻩِ ﺃَﺑَﺪًﺍ ﺇِﻥَّ ﺫَﻟِﻜُﻢْ ﻛَﺎﻥَ ﻋِﻨﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ

হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।(সূরা আহযাব-৫৩)

উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে বলা যায় যে,
পুরুষের জন্য বিনা প্রয়োজনে কোনো বেগানা নারীর সাথে কথা বলা নিষেধ।তবে গায়রে মাহরাম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পর্দার আড়ালে থেকে বলার অনুমোদন দেয়া যেতে পারে।
সূরা আহযাব : ৩২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৭৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৩৮; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৬; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ২৬৯

প্রশ্ন হল নারীদের আওয়াজ কি সতরের অন্তর্ভুক্ত?
এ সম্পর্কে উলামাদের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।এমনকি হানাফি মাযহাবের উলামাদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে-
হানাফি উলামাদের কিছুসংখ্যকের গবেষকদের বর্ণনামতে নারীদের আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত।তবে এ রেওয়াত মারজুহ(অগ্রগণ্য নয়)।
অন্যদিকে কিছুসংখ্যক গবেষকদের বর্ণনামতে নারী আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়।এ রেওয়াত-ই রাজেহ(অগ্রগণ্য) ।অর্থাৎ ফিৎনার অাশঙ্কা না থাকলে কোমলতা পরিহার করে প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে নারী কথা বলতে পারবে।
.
বিস্তারিত জানুনঃ   
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
নারীদের কন্ঠ যেহেতু পর্দার অন্তর্ভুক্ত, তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলে যেহেতু ছেলেদেরকেও পড়াতে হবে,তাই এক্ষেত্রে আপনার কন্ঠের পর্দা নষ্ট হয়ে যাবে।

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে শিক্ষিকা হওয়া কোনোক্রমেই জায়েজ হবেনা।

এ ব্যাপারে আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,

اختلاط الطلاب بالطالبات والمدرسين بالمدرسات في دور التعليم محرم لما يفضي إليه من الفتنة وإثارة الشهوة والوقوع في الفاحشة ، ويتضاعف الإثم وتعظم الجريمة إذا كشفت المدرسات أو التلميذات شيئاً من عوراتهن ، أو لبسن ملابس شفافة تشف عما وراءها ، أو لبسن ملابس ضيقة تحدد أعضاءهن ، أو داعبن الطلاب أو الأساتذة ومزحن معهم أو نحو ذلك مما يفضي إلى انتهاك الحرمات والفوضى في الأعراض

বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানকালীন ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকার সহাবস্থান হারাম। কেননা, এটি ফেতনা, অবাধ যৌনতা ও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে যখন শিক্ষিকারা কিংবা ছাত্রীরা নিজেদের সতরের কোনো অংশ খোলা রাখে কিংবা অন্যের সামনে পিনপিনে পোশাক, অঙ্গভঙ্গী প্রকাশক আঁটসাঁট জামা পরিধান করে কিংবা তারা যখন ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্রা ইত্যাদি করে তখন পাপাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধ আরো বিশাল হয়ে ওঠে; যা সম্ভ্রমহানি ও ইজ্জত লুণ্ঠন পর্যন্ত গড়ায়। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১৭/৫৩)

ফাতাওয়াতুল লাজনাতিতদ্দায়িমা (১২/১৫৬)-তে এসেছে,

الاختلاط بين الرجال والنساء في المدارس أو غيرها من المنكرات العظيمة ، والمفاسد الكبيرة في الدين والدنيا ، فلا يجوز للمرأة أن تدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ও অন্যান্য স্থানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান ঘটলে দীন ও দুনিয়ার ক্ষেত্রে বড় বড় ফেতনা-ফ্যাসাদ ও পাপাচার সংঘটিত হবে। সুতরাং নারীর জন্য জায়েয নয় নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে শিক্ষকতা কিংবা চাকুরি করা। আর অভিবাবকের জন্য জায়েয নয় তাকে এর অনুমতি দেয়া।

★ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে এবং পড়াবে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। 

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী…। (সূরা আলি ইমরান ১৪)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

 فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিভাবকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...