আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
134 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম, আমার নানু নারিন্দা নামক জায়গায় এক হুজুরকে খুব বিশ্বাস করে। সেই হুজুর নানা জিনগত সমস্যার ব্যবস্থা দিয়ে থাকে মানে তাবিজ। আমি তাবিজ বিশ্বাস করিনা। আমার আম্মুও এসবে বিশ্বাস করে। এখন সেই হুজুর আমাদের বাড়ি বন্ধের জন্যে অনেকগুলা তাবিজ দিসে। এবং সেগুলো আমাদের বাসায়। এখন আমার মনে হয় ওই হুজুর এই তাবিজে জাদু করার জন্যে কিছু লিখছে। কারণ আমাদের বাসায় কেউই তেমন দ্বীন পালন করে না। আমার আব্বু 5 ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। আমার আম্মু আর নানু 3/4 ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কিন্তু তারা কেউই নামাজের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়না। মানে এককথায় দায়সারা ভাবে নামাজ পড়ে। আমার আব্বু আর আম্মুর প্রায়ই ঝগড়া হয়। এছাড়া আমার আম্মু হিজাব পড়লেও নন মাহরাম মেনে চলে না। তাই আমার মনে হয় ওই হুজুর এ কোনো জাদু করতে পারি। আমি রুকাইয়া করতে চাচ্ছিনা কারণ তার জন্যে তাবিজে নষ্ট করা লাগবে আর এটা করলে আমার নানু আর আম্মু জেনে যাবে। তাই এটা ছাড়া আমি আমার পরিবারকে দ্বীনের পথে ফেরানোর জন্য কি করতে পারি তার পরামর্শ দিন।

1 Answer

0 votes
by (574,470 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم

সুরা তওবার ১১৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ کُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۱۱۹﴾

হে মুমিনগণ,তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। 

 “তোমরা সবাই সত্যবাদীদের সাথে থাক” বাক্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সত্যবাদীদের সাহচর্য এবং তাদের অনুরূপ আমলের মাধ্যমেই তাকওয়া লাভ হয়। আর এভাবেই কেউ ধ্বংস থেকে মুক্তি পেতে পারে। প্রতিটি বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারে। [ইবন কাসীর]
,
হাদীসেও সত্যবাদিতার গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা সত্যবাদিতা অবলম্বন কর; কেননা সত্যবাদিতা সৎকাজের দিকে নিয়ে যায়, আর সৎকাজ জান্নাতের পথনির্দেশ করে। মানুষ সত্য বলতে থাকে এবং সত্য বলতে চেষ্টা করতে থাকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে তাকে সত্যবাদী হিসেবে লিখা হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক; কেননা মিথ্যা পাপের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়, আর একজন মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে এবং মিথ্যা বলার চেষ্টায় থাকে শেষ পর্যন্ত তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিখা হয়।” [বুখারী ৬০৯৪; মুসলিম; ২৬০৭]
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
না,এভাবে জাদু বা রুকইয়াহ করা যাবেনা।

আপনার পরিবারকে দ্বীনের পথে ফেরানোর জন্য তাদেরকে সৎ ও নেককার লোকদের সাথে উঠাবসা করার চেষ্টা করতে হবে।
এজন্য দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন।
তাদেরকে তাবলিগ জামাতে পাঠাতে পারেন।

এলাকার কোথাও দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত নারীদের তা'লিম হলে সেখানে নিয়ে গিয়ে মহিলাদের নিয়মিত তা'লিমে অংশগ্রহণ করাবেন।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
নিম্নোক্ত দোয়া বেশি বেশি পড়ার কথা বলবেনঃ-

আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, 

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ 

হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

★আল্লাহর কাছে বেশি বেশি এই দোয়া করতে বলবেন।

রাসূলুল্লাহ্ ﷺ দোয়া করতেন,

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَن زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। (মুসলিম ২৭২২)

দোয়াটি পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

নেককারদের সোহবত গ্রহণ করতে হবে। তাদের সাথে বেশি উঠাবসা করতে হবে।

এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে। 

 আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

অধিকহারে ইস্তেগফার করতে হবে। প্রয়োজনে এর জন্য প্রত্যেক নামাজের পর একটা নিয়ম করে নিন। যেমন, প্রত্যেক নামাজের পর ৫০/১০০/২০০ বার أسْتَغْفِرُ اللهَ   অথবা أسْتَغْفِرُ اللهَ وَأتُوبُ إلَيهِ অথবা  اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي পড়ার নিয়ম করে নেয়া যেতে পারে।

তাদেরকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)

অনুরূপভাবে আমরা বুঝে বুঝে নবীদের কাহিনী, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। 

★অধিকহারে আল্লাহর যিকির করতে হবে। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
না, এভাবে জাদু বা রুকাইয়হ করা যাবেনা বলতে কি বুঝিয়েছেন? মানে কেউ আমাদের উপর জাদু করতে পারবেনা নাকি আমরা কারোর উপর জাদু করতে পারবোনা? 
by (574,470 points)
আপনারর পরিবারকে দ্বীনের পথে ফেরানোর জন্য এভাবে জাদু ইত্যাদি করা যাবেনা,বুঝানো হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 151 views
...