আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
"মুসলিম পুরুষের একাধিক বিয়ে" - এই বিষয়টা খুব সেনসিটিভ হয়ে আছে আমাদের সমাজে। সাধারণ মুসলমান তো অনেক দূরের কথা, এক বিশাল সংখ্যক আলেমদের-কেই দেখা যায় এই বিষয়টা এড়িয়ে যেতে, ভাবটা এমন, যে, এই ব্যাপারে কথা বলাই নিষেধ !
একজন প্রখ্যাত আলেম এক মজলিশে বাংলাদেশের মুসলমানদের দ্বিতীয় বিয়ে করার ব্যাপারে তীব্রভাবে ভীত, আতংকিত, নিরুৎসাহিত করেছেন রীতিমতো !
উনার মেজাজে যা বলেছেন, তা এমন, বলতে গেলে -
এমন কেউ নেই এখন, যিনি একাধিক স্ত্রী-র ভিতর সমতা, ইনসাফ বজায় রাখতে পারবেন। উল্টো সংসারে নাকি আরো বেশি ভেজাল হবে, পেরেশানী হবে।
উনি খুব একটা রাগত স্বরে বলেছেন –
“আসমানের নিচে, জমিনের উপর কোন কিতাবে লিখা আছে যে একাধিক বিবাহ সুন্নত ?”
উনি মুরুব্বী আলেম, বেয়াদবি নয়, সম্মানের সাথেই জানতে চাচ্ছি, উনার এই প্রশ্নের জবাব-টা কি হবে ? আপনাদের ইলম অনুযায়ী।
একাধিক বিয়ের বিধান আল্লাহ-র পক্ষ থেকে। তাহলে এই বিষয়টা নিয়ে এমন গোপন গোপন ভাব কেন ? এইটা কি লজ্জাকর কোনো বিধান ? আল্লাহ কি এমনি এমনি এই বিধান দিয়েছেন ?
সব পুরুষ-ই একেবারে ফেরেশতার মতো, এই কথা তো কেউ বলছে না। শর্ত-স্বাপেক্ষে যদি কেউ একাধিক বিয়ে করে করতে চান, তাহলে কি তাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত নয় ? যদি ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে সাধারণভাবে জানা থাকে যে তিনি দ্বীনদারী মেনে চলার যথেষ্ঠ চেষ্টা করেন এবং সাথে সাথে শারীরিক ও আর্থিকভাবে যথেষ্ঠ শক্তিশালী ? উল্টো ভয় লাগিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে ?
কে জানে, ঠিক কিসের ভয়ে এই ব্যাপারে কোনো আলোচনা/মুযাকারা হয় না ! জীবনেও মসজিদে জুমার খুৎবার আগে বা অন্য কোনো মাহফিলে এই টপিক নিয়ে খুব একটা সুন্দর আলোচনা দেখলাম না, শুনলাম না, যদিও বা বাংলাদেশের সব জায়গায়, সব আলোচনা শোনা আমার দ্বারা তো সম্ভব নয়। এইটার আলোচনা কি হওয়া উচিত না সময়ে সময়ে ? অন্তত আলেম-শ্রেণী থেকে শুরু করে অবশ্যই সাধারণ মুসলমানদের বেশিরভাগের ভিতরেই এইটা-কে নেগেটিভলি দেখা হয়, যে পুরুষ একাধিক বিয়ে করে তাকে কেমন চোখে যেন দেখা হয়, বেশিরভাগ মানুষের দ্বারা ! এইটা কি এমন না, যে, আল্লাহ-র একটা বিধান-এর ব্যাপারে আমি নেগেটিভ মেজাজ রাখছি ? এইটা কি ঈমানের জন্য ক্ষতিকর নয় ?
বিশেষ করে, অনেক স্ত্রী তার স্বামী-র কাছ থেকে মৌখিক বা লিখিত আকারে, দস্তখত সহ লিখিয়ে নেয়, যেন স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে না করে। এই মহিলার ঈমানের ক্ষেত্রে কি এমন আচরণ মারাত্মক হবে না ? ঈমান আদৌ থাকবে এইভাবে মনে মনে এবং/বা প্রকাশ্যে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে-কে নিচু করে দেখলে ? এইটা প্রকারান্তে এমন নয়, যে, ঐ মহিলা আল্লাহ-র একটি বিধানকে ঘৃণা করছেন ? খারাপ মনে করছেন ?
অনেক পুরুষ একাধিক বিয়ে করে ইনসাফ করেন না, সমতা বজায় রাখেন না, এইটা অবশ্যই ঠিক, এমন আছে। এখন, এদেরকে দেখিয়ে, এদের কথা সামনে এনে এই বিধান এর উপর আমল করা-কে নিরুৎসাহিত করা, ভীত ও আতংকিত করা কি ঠিক ?
এমন অনেকেই আছেন, যারা একাধিক বিয়ে করেছেন, ভালো আছেন, অনেকে অনেক বিধবা-কে এমনকি বিধবার বাচ্চা-সহ বিয়ে করেছেন, এইটা কি খুব চমৎকার ও উত্তম একটি কাজ হয় নি ? এইসব ভালো ভালো উদাহরণ কি চোখে পড়ে না তাঁদের যারা এইটাকে নিচু করে দেখেন ?
আর একটি প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই মজবুত দলিল-সহ দিবেন প্লিজ:
- পুরুষের জন্য একাধিক বিবাহ করা কি শর্ত-স্বাপেক্ষে শুধুই জায়েজ নাকি সুন্নতও বটে ?
আবার অনেক ক্ষেত্রে অনেক পুরুষের জন্য একাধিক বিবাহ কি ফরজ/ওয়াজীব টাইপ হয়ে যায় না ? যদি শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা স্বত্তেও একাধিক বিয়ে না করেন ? যেইখানে ঐ পুরুষের নিজের উপর কন্ট্রোল কম, একটাতে সন্তুষ্ট নন, এক বিবি-র উপর জুলুম হয়ে যাবে যদি পুরুষের চাহিদা-মোতাবেক বার বার শারীরিক মিলনে স্ত্রী রাজি না হন (স্বাভাবিক, স্ত্রীর শারীরিক অক্ষমতা থাকতে পারে, পুরুষের তুলনায়)
সামর্থ্যবান পুরুষরা যদি ইনসাফ ও সমতা বজায় রাখার নিয়তে কোনো বিধবা (সন্তান-সহ হলে তো অনেক ভালো) বা তালাকপ্রাপ্তা-কে ১ম বা ২য় বা ৩য় স্ত্রী হিসেবেও গ্রহণ করতো, তাহলে সমাজে অনেক মজলুম, অসহায় মহিলার উপর কি অনেক বড় এহসান হতো না ?
নিজের বোন, নিজের মেয়েকে ঐসব অসহায়-দের কাতারে রেখে একটু চিন্তা করা কি উচিত নয় ?
যেই মহিলা স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে বাঁধা দিচ্ছেন, নারাজি দেখাচ্ছেন, উনি কি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন, যদি আল্লাহর হুকুমে উনি কখনো স্বামীহারা (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা) হন, তাহলে তিনি কোথায় যাবেন ? তার কি অবস্থা হবে ? বাবা-মা, ভাই কতদিন তাকে করুনা করবে ?
নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রশ্ন নয়, বরং অনেক লম্বা লেখা হয়ে গেলো, অনেক প্রশ্নও তৈরী হয়ে গেলো। ক্ষমা করবেন, এতো কিছু লিখে ফেললাম বলে। লিখার আসলে আরো অনেক কিছু ছিল। আজ আর না।
একটু সুন্দর হিকমতময় আলোচনা/উত্তর চাচ্ছি। আমার চিন্তা-ভাবনায় যদি কোনো ভুল থাকে, সেইটা অনুগ্রহ করে তুলে ধরবেন, ইনশাল্লাহ, নিজেকে শুধরে নিবো। দিনশেষে - আমিও একজন গুনাহগার মানুষ। আমার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন।
ওয়াস্সালামু-আলাইকুম,