আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
744 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (45 points)

১) জন্মদিন পালন  করলে কি সে কাফের হয়ে যাবে কারণ একটা গল্প শুনছিলাম যে কোন একটা দেশের শীতকালে কিছু মানুষ মারা যায় তে যারা শীতকালে মারা যায়নি তারা শীতকাল শেষে মোমবাতি জ্বালিয়ে তালি দিয়ে এটা বলে যে শীতকাল আমরা  আমরা বেঁচে গেছি  সেখানে তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে তাহুদি নিভিয়ে সেটা সেলিব্রেট করে সেখান থেকেই জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালানো হয় সে ক্ষেত্রে যদি মোমবাতি না জ্বালিয়ে জন্মদিন পালন করা হয় তাহলে কি সেই জন্মদিন পালন করা জায়েয হবে ?

 

২) হাদিস আসলে কি কারণ আমরা জানি যে হাদিস হচ্ছে কোরআনের  ব্যাখ্যা এবং নবীজী যা বলেছেন কিন্তু এখানে দেখি সাহাবীদের কিছু বক্তব্য থাকে এবং কিছু ইতিহাস বিষয়ক লেখা থাকে তাহলে আসলে হাদীসকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় ? যেমন নবী মুসা ফেরেশতা আজরাইলকে চড় মেরেছিলেন এটা হাদিসে আছে কিন্তু কোরআনে সরাসরি নেই কিন্তু পরোক্ষভাবে  কোথায়  আছে

 

৩) আমার এরকম বলে থাকি যে যেকোনো কথা কোরআনে সরাসরি নেই কিন্তু হাদিসে তা পাওয়া যায় এখানে সরাসরি নেই বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে এবং কোরআন হাদিস থেকে কিভাবে ইজমা কিয়াস করা হয়?

1 Answer

0 votes
by (566,280 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
জন্মদিন পালন একটি বিজাতীয় সংস্কৃতি। আর ইসলামি শরিয়তে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

হাদিস শরিফে এসেছে,

عن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من تشبه بقوم فهو منهم

‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।’ [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১]

জন্মদিন পালন করা,মোমবাতী জালানো, ও তাতে শরীক হওয়া এবং সাহায্য সহযোগিতা করা বা এ উপলক্ষ্যে কিছু গ্রহণ করা, কোনোটাই জায়েয হবে না।

বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/287 

তবে জন্মদিন পালন,তাতে মোমবাতি জালানোর কারনে কেউ কাফের হয়ে যাবেনা।

কাউকে কাফের বলা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 
,
(০২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রমাণিত তাঁর কথা, কাজ ও সমর্থনকে ‘হাদিস’ বা ‘সুন্নত’ বলা হয়। তা কোরআনে কারিমের পর ইসলামের দ্বিতীয় প্রামাণ্য উৎস। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ২৩ বছরব্যাপী নবুয়তি জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজের মাধ্যমে কোরআনের ব্যাখ্যা করেছেন। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আপনার প্রতি নাজিল করেছি কোরআন, যাতে আপনি মানুষকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পারেন, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা : নহল, আয়াত: ৪৪)
,

হাদীসের প্রসিদ্ধতম সংজ্ঞা হল,
اقوال النبى صلى الله عليه وسلم وأفعاله وأحواله (فتح الملهم-1/6

রাসূল সাঃ এর কথা,কর্ম এবং অবস্থাকে বলা হয় হাদীস। {ফাতহুল মুলহিম-১/৬}

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ লিখেন-

وَقَالَ الطِّيبِيُّ: الْحَدِيثُ أَعَمُّ مِنْ أَنْ يَكُونَ قَوْلَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالصَّحَابِيِّ وَالتَّابِعِيِّ وَفِعْلَهُمْ وَتَقْرِيرَهُمْ.

আল্লামা তীবী রহঃ বলেন- হাদীস এটি আম শব্দ। এর মাঝে রাসূল সাঃ এর কথা এবং সাহাবী এবং তাবেয়ীদের কথা এবং তাদের কর্ম ও তাকরীর তথা কোন কিছু দেখে চুপ থাকা বিষয়ও শামিল। {তাদরীবুর রাবী-৬}

তাহলে আল্লামা তীবী রহঃ এর মতে হাদীস হল ৯টি বস্তুর সমন্বয়। তথা-

১- রাসূল সাঃ এর কথা।
২- রাসূল সাঃ এর কর্ম।
৩- রাসূল সাঃ এর তাকরীর।
৪- সাহাবী রাঃ এর কথা।
৫- সাহাবী রাঃ এর কর্ম।
৬- সাহাবী রাঃ এর তাকরীর।
৭- তাবেয়ীগণ রহঃ এর কথা।
৮- তাবেয়ীগণ রহঃ এর কর্ম।
৯- তাবেয়ীগণ রহঃ এর তাকরীর।

আল্লামা তীবী রহঃ এর মত ৯ প্রকারকেই হাদীস বলেছেন হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ। দেখুন-

وَقَالَ شَيْخُ الْإِسْلَامِ فِي شَرْحِ النُّخْبَةِ: الْخَبَرُ عِنْدَ عُلَمَاءِ الْفَنِّ مُرَادِفٌ لِلْحَدِيثِ، فَيُطْلَقَانِ عَلَى الْمَرْفُوعِ وَعَلَى الْمَوْقُوفِ وَالْمَقْطُوعِ.

{তাদরীবুর রাবী-৬}

★প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটি হলোঃ

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُوْسَى حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ ابْنِ طَاوُسٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ أُرْسِلَ مَلَكُ الْمَوْتِ إِلَى مُوْسَى عَلَيْهِمَا السَّلَام فَلَمَّا جَاءَهُ صَكَّهُ فَرَجَعَ إِلَى رَبِّهِ فَقَالَ أَرْسَلْتَنِيْ إِلَى عَبْدٍ لَا يُرِيْدُ الْمَوْتَ قَالَ ارْجِعْ إِلَيْهِ فَقُلْ لَهُ يَضَعُ يَدَهُ عَلَى مَتْنِ ثَوْرٍ فَلَهُ بِمَا غَطَّتْ يَدُهُ بِكُلِّ شَعَرَةٍ سَنَةٌ قَالَ أَيْ رَبِّ ثُمَّ مَاذَا قَالَ ثُمَّ الْمَوْتُ قَالَ فَالْآنَ قَالَ فَسَأَلَ اللهَ أَنْ يُدْنِيَهُ مِنْ الأَرْضِ الْمُقَدَّسَةِ رَمْيَةً بِحَجَرٍ قَالَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ لَوْ كُنْتُ ثَمَّ لَارَيْتُكُمْ قَبْرَهُ إِلَى جَانِبِ الطَّرِيْقِ تَحْتَ الْكَثِيْبِ الأَحْمَرِ قَالَ وَأَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ هَمَّامٍ حَدَّثَنَا أَبُوْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মালাকুলকে মূসা (আঃ)-এর নিকট তাঁর জন্য পাঠান হয়েছিল। ফেরেশতা যখন তাঁর নিকট আসলেন, তিনি তাঁর চোখে চপেটাঘাত করলেন। তখন ফেরেশতা তাঁর রবের নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, আপনি আমাকে এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। আল্লাহ্ বললেন, তুমি তার নিকট ফিরে যাও এবং তাকে বল সে যেন তার একটি হাত একটি গরুর পিঠে রাখে, তার হাত যতগুলো পশম ঢাকবে তার প্রতিটি পশমের বদলে তাকে এক বছর করে জীবন দেয়া হবে। মূসা (আঃ) বললেন, হে রব! অতঃপর কী হবে? আল্লাহ্ বললেন, অতঃপর মৃত্যু। মূসা (আঃ) বললেন, তাহলে এখনই হোক। (রাবী) বলেন, তখন তিনি আল্লাহর নিকট আরয করলেন, তাঁকে যেন ‘আরদে মুকাদ্দাস’ হতে একটি পাথর নিক্ষেপের দূরত্বের সমান স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি যদি সেখানে থাকতাম তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পথের ধারে লাল টিলার নীচে তাঁর কবরটি দেখিয়ে দিতাম। রাবী আব্দুর রায্যাক বলেন, মা‘মার (রহ.)......আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একইভাবে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী ৩৪০৭.১৩৩৯. ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১৬৫
সহীহ মুসলিম হাদীস : ২৩৭২
)
.
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
উক্ত যেহেতু কুরআনে হযরত মুসা আঃ এর জীবনি অনেক কিছুই উল্লেখ রয়েছে,তারই ধারাবাহিকতায় এই হাদীস রাসুল সাঃ বলেছেন।       

বিখ্যাত হাদীস-বিশারদগণ বলেন, মালাকুল মাওত মূসা আ.-এর অনুমতি না নিয়েই মানুষের বেশে তাঁর ঘরে প্রবেশ করেছিলেন। তখন তিনি তাকে না চিনতে পেরে বিনা অনুমতিতে ঘরে প্রবেশ করার কারণে চপেটাঘাত করেন।-ফাতহুল বারী ৬/৫০৮; শরহে নববী ১৫/১২৯] 
,
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُیُوْتًا غَیْرَ بُیُوْتِكُمْ حَتّٰی تَسْتَاْنِسُوْا وَ تُسَلِّمُوْا عَلٰۤی اَهْلِهَا ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ .
হে মুমিনগণ! নিজ ঘর ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না অনুমতি নাও এবং তার অধিবাসীদের সালাম দাও। এ পন্থাই তোমাদের জন্য উত্তম। হয়তো তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে। -সূরা নূর (২৪) : ২৭
,
★সুতরাং উক্ত আয়াতেও এই হাদীসের পরোক্ষ  ভাবে আছে বলা যায়।
অর্থাৎ এটা বলা যাবে যে এটি তারই ব্যখ্যা স্বরুপ।
,
(০৩)

সুরা নাহলের ৮৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 
 ؕ وَ نَزَّلۡنَا عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ تِبۡیَانًا لِّکُلِّ شَیۡءٍ وَّ ہُدًی وَّ رَحۡمَۃً وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿۸۹﴾
আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। 
,
এই আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরুপ মুহাদ্দিসিনে কেরামগন অনেক মত পেশ করেছেনঃ
  
বস্তুত কুরআনুল কারীমে সব বিষয়েরই মূলনীতি বিদ্যমান রয়েছে। যেসব মূলনীতির আলোকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস মাসআলা বর্ণনা করেছেন। 

ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কুরআন আমাদেরকে সবকিছুর জ্ঞান বর্ণনা করেছে এবং সবকিছু জানিয়েছে। 

মুজাহিদ বলেন, হালাল ও হারাম জানিয়েছে। তবে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কথাটি বেশী ব্যাপক। কেননা কুরআন প্রতিটি উপকারী জ্ঞানসমৃদ্ধ, যা গত হয়েছে সেটার সংবাদ এবং যা আসবে সেটার জ্ঞান আর প্রতিটি হালাল ও হারাম। তেমনিভাবে মানুষ তাদের দুনিয়া ও দ্বীনের ব্যাপারে তাদের জীবিকা ও পুনরুত্থান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য এতে পাবে। অন্তরসমূহের জন্য এতে রয়েছে হেদায়াত এবং মুসলিমদের জন্য এতে রয়েছে রহমত ও সুসংবাদ।

[ইবন কাসীর] ইমাম আওযায়ী বলেন, আয়াতের অর্থ, আমরা কুরআনকে সুন্নাহ দ্বারা সবকিছুর স্পষ্টব্যাখ্যারূপে নাযিল করেছি।

কেহ কেহ বলেন যে কুরআন এমন প্রত্যেকটি জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে, যার ওপর হিদায়াত ও গোমরাহী এবং লাভ ও ক্ষতি নির্ভর করে, যা জানা সঠিক পথে চলার জন্য একান্ত প্রয়োজন এবং যার মাধ্যমে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আমরা বলবো যে কুরআনে সবকিছুর মূলনীতি রয়েছে।     
অনেক সময় সেটি প্রত্যেকটি বিষয়ের ক্ষেত্রে স্পষ্ট না  হওয়ায় কুরআনে সরাসরি নেই,হাদীসে আছে বলা হয়।  

★ইজমা ( إِجمَاع ) ইসলামী শরীয়তের (আইনের) তৃতীয় উৎস ও মানদন্ড। إِجمَاع  শব্দটি جَمع  শব্দমূল থেকে উৎপন্ন, যার আভিধানিক অর্থ মিশ্রন, কিছুর মিশ্রিত বা একত্রিত বা সংগৃহিত রূপ, সমাবেশ, ঐক্যমত, দৃঢ সিদ্ধান্ত বা সংকল্প ইত্যাদি। আর ইসলামী পরিভাষায় ইজমা ( إِجمَاع ) বলা হয়- রাসুলুল্লাহ সা.-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে করোমের জামানা থেকে শুরু করে যেকোনো জামানায় কুরআন-সুন্নাহ’র ভিত্তিতে আহলে হক্ব মুস্তাহিদ আলেমগণের সকলে যে কোনো শরয়ী বিষয়ে ঐক্যমতে উপনীত হওয়াকে। কয়েকটি পয়েন্ট মাথায় রাখলে ইজমা কী -তা বোঝা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

(১) অবশ্যই ইজমা’র ভিত্তি হতে হবে কুরআন ও সুন্নাহ। কুরআন ও সুন্নাহ’র সাথে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয়ে ইজমা/ঐক্যমত বলে শরীয়তে কিছু নেই। 

(২) শুধুমাত্র মুসলমি উম্মাহ’র মধ্যেই ইজমা সংঘটিত হতে হবে। কোনো অমুসলীম কাফের মুরতাদরা সকলে মিলে শরীয়তের কোনো বিষয়ে ঐক্যমতে উপনীত হলেও তার সামান্য কোনো মূল্য ইসলামী শরীয়তে নেই।

(৩) রাসুলুল্লাহ সা.-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সংঘটিত ইজমা থেকেই ইজমা ধর্তব্য। খোদ্ রাসুলুল্লাহ সা.-এর জামানায় ইজমা’র প্রশ্ন এজন্য আসে না যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বশেষ রাসুল মুহাম্মাদ সা.-এর উপর শরীয়ত (আইন) হিসেবে যা কিছু নাজিল করেছেন তা-তো কোনো প্রশ্ন ছাড়াই স্বীকার করা সকল মুমিন-মুসলমানদের উপর ফরয, যার অস্বীকার বা প্রত্যাক্ষান যে কাউকে কাফের বানিয়ে দেয়। যেখানে খোদ্ কুরআনই নাজিল হচ্ছে এবং রাসুলুল্লাহ সা. স্বশরীরে উপস্থিত থেকে কুরআন ও হিকমাহ শিক্ষা দিচ্ছেন সেখানে পৃথক ইজমার জরুরতই বাকি থাকে না। সুতরাং বোঝা গেল, ইজমা হল রাসুলুল্লাহ সা.-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরামের জামানা থেকে ধর্তব্য।

(৪) কোনো বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহ’য় পারদর্শি আহলে হক্ব মুসতাহীদ আলেমগণের শরয়ী ঐক্যমতই হল ইজমা। সুতরাং, কোনো বিষয়ে ইজমা কায়েম হওয়ার ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে মুর্খ-জাহেল সর্বসাধারণ মুসলমান কিংবা অপর্যাপ্ত ও অদক্ষ ইলমধারী আলেমদের মতের কোনোই মূল্য নেই, তাদের দ্বিমত পোষনে শরীয়তের কিছুই যায় আসে না। সুতরাং, কোনো বিষয়ে আহলে হক্ব মুসতাহীদ আলেমগণের ইজমাে/ঐক্যমত কায়েম হলে যদি গোটা বিশ্বের সকল মুর্খ-জাহেল মুসলমানরা কিংবা অদক্ষ ইলমধারীরাও ইজমার বিরোধীতা করে, তবুও আহলে হক্ব আলেমদের ইজমা স্বস্থানে স্বশক্তিতে দন্ডায়মান থাকবে, জাহেলদের দ্বিমত বা প্রতিবাদের তুফনে ইমজার কোনোই ক্ষতি হবে না। আহলে হক্ব মুসতাহীদ আলেমগণের শরয়ী ঐক্যমতকেই গোটা মুসলীম উম্মাহ’র ইজমা বলে ধরে নেয়া হয়।

(৪) আহলে হক্ব মুসতাহীদ আলেমগণের শরয়ী ইজমা ততদিন পর্যন্ত শরীয়তের অন্যতম উৎস ও মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হবে যতদিন কুরআন ও সুন্নাহর অনুগত্য অনুসরণ করা মুসলীম উম্মাহ’র উপর  অপরিহার্য হিসেবে বিবেচিত থাকবে। আর বলা বাহুল্য, মুহাম্মাদ সা. সর্বশেষ নবী ও রাসুল এবং মুসলীম উম্মাহ সর্বশেষ উম্মাহ।

★কিয়াস (القياس)-এর আভিধানিক অর্থ হল কোনো নমুনা সামনে রেখে অপর কোনো জিনিস ওই নমুনার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে কিনা তা নির্ণয় করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় কিয়াস বলা হয় নতুন উদ্ভুত কোনো বিষয়/মাসআলাহকে ইসলামী শরীয়তের মূল ভিত্তি/উৎস কুরআন ও সুন্নাহ’য় বর্ণিত বিধানবিধিন বা উসূলের আলোকে নিরিক্ষন করে দেখা যে তা কুরআন বা সুন্নাহ’র কোনো বিধান বা উসূলের সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে এবং সে অনুযায়ী ওই উদ্ভুত বিষয়ের শরয়ী হুকুম কী হবে তা স্থির করা। 

শরয়ী কিয়াস’কে অনেকে খোদ্ ইসতিহাদ (اجتهاد) বলেও অবিহিত করে থাকেন। অবশ্য কথাটি একটি উল্লেখযোগ্য পর্যায় পর্যন্ত  সম্পূর্ণ সঠিক। কারণ, ইসতিহাদ কথাটির  আভিধানিক অর্থ হল: কোনো কিছু হাসিল করার উদ্দেশ্যে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালানো। শরীয়তের পরিভাষায় ইজতিহাদ বলা হয় ইসলামী শরীয়তের মূল ভিত্তি/উৎস কুরআন ও সুন্নাহ’য় বর্ণিত বিধানবিধিন বা উসূলের আলোকে যে কোনো বিষয়ে শরীয়তের হুকুম কী – তা নির্ণয়ে   সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো।

বলা বাহুল্য, যে ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ’য় সুস্পস্ট বিধান বিদ্যমান রয়েছে, সেখানে কিয়াস বা ইসতিহাদ -কোনটারই প্রয়োজন নেই; জায়েযও নেই। কিয়াস এবং ইসতিহাদ-তো করা হয় ওই ক্ষেত্রে, যখন কোনো নির্দিষ্ট ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ’য় সুস্পস্ট বিধান বিদ্যমান পাওয়া যায় না, কিংবা পাওয়া গেলেও তার একাধিক শরয়ী অর্থ ও মর্ম বের করার অবকাশ থাকে, তখন কুরআন ও সুন্নাহ’য় বর্ণিত অনুষঙ্গিক বা অপরাপর বিধানবিধিন ও উসূলের আলোকে ইসতিহাদ/কিয়াস করে সেই বিষয়ে শরয়ী হুকুম কী -তা স্থির করা হয়।

কিয়াস ও ইসতিহাদ করার দলিল খোদ কুরআন কারিম, রাসুলুল্লাহ সা.-এর সুন্নাহ এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে প্রমাণিত।

সহীহ হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন– إني إنما أقضي بينكما برأي فيما لم ينزل علي فيه – ‘যে ব্যাপারে (সরাসরি কোনো ফয়সালা সহকারে) আমার উপর (কোনো ওহী) নাজিল হয় না, শুধু সেক্ষেত্রে আমি (আমার উপর বিগত নাজিল হওয়া ওহীর আলোকে ইসতেহাদ করি এবং একটি সিদ্ধান্তে উপণীত হই এবং) তোমাদের দুজনের মাঝে আমার সিদ্ধান্ত অনুসারে ফয়সালা করে দেই। [সহীহ বুখারী-৫/২১২; সহীহ মুসলীম-৩/১৩৩৭; সুনানে আবু দাউদ-৩৫৮৫; সুনানে নাসায়ী-৮/২৩৩; তাফসিরে ইবনে কাসির-৪/২৬০]


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (566,280 points)
কিছু তথ্য সংগৃহীত

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...