আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
94 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

১। কাউকে সালাম দেয়ার সময় উত্তম সালাম হিসেবে- "Assalamu Alaikum  Wa Rahmatullahi Wa Barakatuh Wa Magfiratuh Wa Jannatuh Wa Akhiratuh Wa Hayatud Tayyibah Fidduniya Wal Akhirah "

দেয়া যাবে? এই সালাম কি উত্তম হবে?

আবার এর উত্তরে - "Walaikumus Salam Wa Rahmatullahi Wa Barakatuh Wa Magfiratuh Wa Jannatuh Wa Akhiratuh Wa Hayatud Tayyibah Fidduniya Wal Akhirah" এই প্রতি উত্তর কি উত্তম হবে?

২। প্রাণীর ছবির জামা পরে কি জিকির করলে আদায় হবে? না কবুল হবার চান্স আছে?

৩। রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর নামে নাম রাখতে (মুহাম্মাদ নাম সন্তানের জন্যে রাখলেও) তাঁর উপনাম গুলো রাখতে নিষেধ করেছেন। এটা একটা ফতোয়ায় দেখলাম। এটা কি সহীহ?
তাছাড়া, এখানে উপনাম বলতে কি বোঝানো হয়েছে? আর সেগুলো কী কী, যেগুলো রাখা যাবেনা?
যেমন : আল-আমীন। এটা কি তাঁর উপনাম? এই নাম গুলোও কি রাখা যাবেনা?

৪। শুধু কি রাসূলুল্লাহ (স) এর উপনাম ই রাখতে নিষেধ করেছেন? অন্য নবী রাসূল গণ, সাহাবা গণ দের নাম, উপনাম সন্তানের জন্যে রাখা যাবে?

৫। জানের বদলে জান সাদকাহ এর ব্যাপারে প্রসঙ্গ এমন হলে- অনেক বিপদ থেকে বেঁচে গেলে, সেখানে যার বিপদ হয়েছে তার জানের বদলে জান সাদকাহ (মুরগী, খাসি ইত্যাদি) এসব দেয়া জায়েজ? আল্লাহর শুকরিয়া কি আদায় হয় এতে!!

৬। একটা বিপদ থেকে বেঁচে গেলে, বা আশা পূরণ হলে মসজিদে কুরআন দেয়া এসব মানত করা কি জায়েজ?
যে আমার এটা পূরণ হলে মসজিদে এটা দিবো, বা ১০ জন কে খাওয়াবো।
এসব মানত কি জায়েজ?

কেননা বস্তুত সব কিছুই আল্লাহর হাতে, আল্লাহর ফায়সালা কে মেনে নেয়াই তো তাকওয়া, দ্বীনদারিতার পরিচয়।

1 Answer

0 votes
by (573,660 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)

আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٖ فَحَيُّواْ بِأَحۡسَنَ مِنۡهَآ أَوۡ رُدُّوهَآ

আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হবেতখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে। (সূরা আন নিসা ৮৬)


হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وعنِ عمرَان بن حُصَيْن أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ فَرَدَّ عَلَيْهِ ثُمَّ جَلَسَ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «عشر» . ثمَّ جَاءَ لآخر فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ فَرَدَّ عَلَيْهِ فَقَالَ: «ثَلَاثُونَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
৪৬৪৪-[১৭] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বলল : ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম’’। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিলেন। অতঃপর লোকটি বসল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ লোকটির জন্য দশ নেকি লেখা হলো। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল : ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের জবাব দিলেন। লোকটি বসল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ লোকটির জন্য বিশ নেকি লেখা হলো। অতঃপর আরো এক ব্যক্তি এসে বলল : ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহ’’। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিলেন। লোকটি বসার পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ লোকটির জন্য ত্রিশ নেকি লেখা হলো। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)(মিশকাত-৪৬৪৪)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সালাম বা সালামের জবাবে প্রশ্নে উল্লেখিত এতো কিছু বলতে হবেনা।

এক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত হাদীস মোতাবেক শব্দ বাড়িয়ে সালাম ও তার জবাব দিতে পারেন।

(০২)
যিকির আদায় হবে।

(০৩)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ الثَّقَفِيُّ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ بِالْبَقِيعِ فَنَادَى رَجُلٌ رَجُلاً يَا أَبَا الْقَاسِمِ فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ إِنِّي لَمْ أَعْنِكَ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " تَسَمَّوْا بِاسْمِي وَلاَ تَكْتَنُوا بِكُنْيَتِي " .

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’বকী’ নামক স্থানে ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ডাক দিয়ে বললো, হে আবুল কাসেম! এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে ফিরে তাকালেন। সে বললো, আমি আপনাকে ডাকিনি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখো, কিন্তু আমার উপনামে নাম রেখো না।

(বুখারী ২১২০, ২১২১, ৩৫৩৭, মুসলিম ২১৩১, তিরমিযী ২৮৪১, আহমাদ ১১৭২০, ১১৮০৮, ১২৩২০, ১২৫৪৯। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।)

ত্ববারানীর বর্ণনায় রয়েছে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত (وَلَا تَكْنُوْا بِكُنِيَّتِىْ) অর্থাৎ আমার উপনামে নামকরণ করো না। কেননা উপনাম সম্মানার্থে হয়ে থাকে। শুধু নাম সম্মানের বিপরীত, অতঃপর তিনি তাদেরকে এটা হতে নিষেধ করেন। যাতে করে সন্দেহে পতিত না হয় যখন কতিপয় মানুষকে আহবান করা হয়। অতঃপর ঘোষণা দেয়া হয়, নিশ্চয় ‘আরবদের ‘আলিমগণ বলেন, নাম হয়ত প্রশংসার ঘোষণা দিবে অথবা বদনামের তার নাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপনাম আবুল কাসিম ও তার لقب উপাধি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপনামে বা মূল নামে কখন রাখা যাবে বা যাবে না- এ প্রসঙ্গে নিম্নে ইমামদের মতভেদ উল্লেখ করা হলো।

১. ইমাম শাফি‘ঈ ও আহলে যাহির-এর অভিমত হলো : নিশ্চয় আবুল কাসিম নামে কারও নামকরণ করা কখনও বৈধ হবে না। চাই সেই নাম মুহাম্মাদ বা আহমাদ হোক বা না হোক। আনাস (রাঃ) বর্ণিত মুসলিমের বাহ্যিক হাদীস থেকে উপলব্ধি করা যায়- এ মতটি।

২. এই নিষেধ রহিত হয়ে গেছে। এ আদেশ প্রথম দিকে ছিল। এ অর্থই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর রহিত হয়েছে। জামহূর ‘উলামা বলেছেন, অতঃপর প্রত্যেকের জন্য আবুল কাসিম নামে নামকরণ করা বর্তমানে বৈধ। সেটা তার নাম মুহাম্মাদ এবং আহমাদ বা অন্য কিছু হোক এতে অসুবিধা নেই। এ মতটি ইমাম মালিক-এর। কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ মতটি অধিকাংশ সালাফ ও মিসরের ফকীহগণেরও অধিকাংশ ‘আলিমগণের এবং প্রসিদ্ধ রয়েছে এক জামা‘আত আবুল কাসিম উপনামে নাম রেখেছে। এর পরেও বর্তমান পর্যন্ত।

৩. ইবনু জারীর-এর মত নিশ্চয় এটা রহিত হয়নি। শুধু নিষেধ ছিল পবিত্রকরণে ও আদাবের (শিষ্টাচারিতার) জন্য, হারাম করার জন্য নয়।

৪. নিশ্চয় নিষেধ আবুল কাসিম উপনামে ডাকা থেকে। নির্দিষ্ট ঐ ব্যক্তির জন্য যার নাম মুহাম্মাদ অথবা আহমাদ এবং ক্ষতি নেই অসুবিধা নেই শুধু উপনামে ঐ ব্যক্তির জন্য যে এই দুই নামের মধ্যে থেকে কোন একটি নামে নাম রাখে না। এটা সালাফের এক জামা‘আতের উক্তি। এ প্রসঙ্গে মারফূ‘ হাদীস জাবির  হতে বর্ণিত হয়েছে।

৫. নিশ্চয় সাধারণভাবে আবুল কাসিম উপনামে ডাকা থেকে নিষেধ করা হয় এবং কাসিম নাম রাখা থেকে নিষেধ করা হয়। যাতে উপনামে ডাকা হবে না তার আববাকে আবুল কাসিম নামে অথচ মারওয়ান ইবনু হাকাম তার ছেলের নাম পরিবর্তন করে ‘আবদুল মালিক রাখলেন। যখন তার কাছে পৌঁছল এ হাদীস তখন তার ছেলের নাম রাখলেন ‘আবদুল মালিক। তার ছেলের নাম প্রথমে রেখেছিলেন কাসিম এবং কতিপয় আনসার সাহাবীরা এরূপ করেছেন।

৬. সাধারণত মুহাম্মাদ নাম রাখা নিষেধ করা হয়। চাই তার উপনাম হোক বা আসল নাম হোক- এ প্রসঙ্গে হাদীস এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে تُسَمُّونَ أَوْلَادَكُمْ مُحَمَّدًا ثُمَّ تَلْعَنُونَهُمْ অর্থাৎ তোমরা তোমাদের সন্তানদের নাম রাখ মুহাম্মাদ, অতঃপর তোমরা তাদের প্রতি অভিসম্পাত কর লা‘নাত কর। ‘উমার চিঠি লিখেন কুফাবাসীর প্রতি, তোমরা নবীর নামে কারও নাম রাখিও না। মাদানীহ্-এর এক জামা‘আতকে আদেশ করেন তাদের সন্তানদের মুহাম্মাদ নাম পরিবর্তন করার জন্য। এক জামা‘আত উল্লেখ করেন তার জন্য নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন এ ব্যাপারে এবং এর মাধ্যমে তিনি নাম রাখেন, অতঃপর তিনি তাদেরকে ত্যাগ করেন। কাযী বলেনঃ অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ নিশ্চয় ‘উমার  এ কাজটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামের সম্মান করার জন্য করেন।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপনাম এখন ব্যবহার করাতে সমস্যা নেই।
এই নামে মানুষকে ডাকা যাবে।

যেমন এক হাদীসে আছে, 
‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আপনার মৃত্যুর পর আমার সন্তান হয় আমি কি তার নাম মুহাম্মাদ এবং আপনার উপনামে নাম রাখতে পারব? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হ্যাঁ। এ মত ইমাম মালিক-এর। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ এ মত অধিকাংশ সালাফের ও মিসরের ফকীহগণের।

★উল্লেখ্য, আল-আমীন। এটা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপনাম নয়। এটা উপাধী। এই নাম গুলো রাখা যাবে।
উপনাম হলো আবুল কাসেম,এই নামটিও এখন রাখা যাবে।

(০৪)
রাখা যাবে।

(০৫)
এগুলো কুরআন হাদীসে নেই।

(০৬)
এসব মান্নত জায়েজ।
তবে ইসলামে মান্নত করা হতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...