আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
114 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)
আসসালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ্
ওস্তাদ, আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য মাস্টার্স শেষ করেছি। ৩ বছর আগে আলহামদুলিল্লাহ দ্বীনের সঠিক বুঝ পাই। তখন থেকেই সহশিক্ষায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনাগ্রহ থাকলেও পারিবারিক চাপে বাধ্য হয়ে পড়তে হয়েছে। কিন্তু এখন কোনভাবেই ফ্রিমিক্সিং এ গিয়ে চাকরি করতে চাচ্ছি না, আল্লাহ আমার রিজিকে প্রশস্ততা দান করুন, আমিন। বুঝার সুবিধার জন্য এতটুকু বর্ণনা করলাম।

১.প্রায় ৪/৫ মাস আমি স্বপ্নে দেখি, আমি চাকরীর পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি। সকালে একটা চাকরি পরীক্ষা, বিকালে আবার বি.সি.এস. পরীক্ষা। আমার দুই ফুফাতো বোনেরও (উনারা আমার অনেক বড়) আমার সাথে পরীক্ষা দেওয়ার কথা। কিন্তু একবোন বলতেছে পরীক্ষা দিবে না এবং আমাকেও বুঝাচ্ছে যেন পরীক্ষা না দেই। এক পর্যায়ে আমার বোন আমাকে সূরা তাকাসূর এর প্রথম দুই আয়াত তিলওয়াত করে শোনায়। (তবে সূরা প্রথম দুই আয়াত না শেষ দুই আয়াত ছিল এটা নিয়ে একটু দ্বিধা লাগছিলো। তবে মন বলছে প্রথম দুই আয়াতই)। আরো দেখি এরপর আমি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি, খুশি খুশি লাগছিলো, আমার সাথে আমার আব্বু আম্মুও যাচ্ছিলো।

ঘুম থেকে উঠে আমি সূরা তাকাসূরের প্রথম দুই আয়াতের অর্থ ও তাফসীর পড়ে খুবই ভয় পাই। আমি কি লোভী হয়ে যাচ্ছি, আল্লাহ তা'লা আমার উপর অসন্তুষ্ট কি না। দয়া করে এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে জানতে চাই উস্তাদ।
২. গতবছর হজ্জের মওসুম জিলহজ্জ মাসে স্বপ্নে দেখি আমার বাবা সাদা পাঞ্জাবী পড়া, আমার বড় উল্লেখ করে আমাকে বলছেন আমি যেন বাবার অনুপস্থিতিতে আমার বড় বোনের পরামর্শ চলি বা কথা শুনি। এই কথা শুনার পর স্বপ্নেই আমি ভাবছিলাম যে বাবা কোন না থাকার কথা বলছেন! উনি তো হজ্জ থেকেও চলে আসছেন, তাহলে কি উনার মৃত্যু পরবর্তী সময়ের দিকে ইঙ্গিত করেছন? (উল্লেখ্য স্বপ্ন যেদিন দেখি সেদিন আমার বাবা মক্কায় অবস্থান করছিলেন)। স্বপ্নে আমি সেসময় আমার বাবার কাছে দো'আ চাই। আমার মনে হলো তিনি ঠিকমতো আমার কথা বুঝেননি। না বুঝেই বলছেন, "হ্যা দিছিতো, সবার সাথে ভাগ করে দেওয়ার পর তোর নামে আলাদা করে কিছু দিয়ে কাগজপত্রও রেডি করে গেছি" এবং আমার ফুফাতো ভাইয়ের নাম উল্লেখ করে বলে যায় কাগজপত্র উনার কাছে থাকবে। ( উল্লেখ্য আমার ভাই নাই, আমরা ৩ বোন। এই ফুফাতো ভাইয়ের সাথে একসাথে জমি কিনে বাড়ি করা করছেন বাবা। ফুফাতো ভাইটিও মাশাআল্লাহ ভালো ও দ্বীনদার)। তো আমার বাবার এই সম্পদের কথাগুলো আমার ভালো লাগছিলো না, তাই আমি আবার আমার জন্য দুআ চাই। তখন উনি উত্তর দেন যো দো'আ করেন।
আমার এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাই ইনশাআল্লাহ্। আমি কখনোই এই সম্পদ চাই না উস্তাদ, আমার কোন ইচ্ছে নাই আমার বাবার সম্পদ নেওয়ার। এই স্বপ্নের আগে কখনো আমার এধরণের চিন্তাও মাথায় আসে নি। অনেক আগে থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল আমার বাবার সম্পদ আমি বাবার মাগফিরাতের জন্য সাদাকাহ করে দিবো ইনশাআল্লাহ্, উনার সদকায়ে জারিয়ার জন্য, ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ্।
৩. আমার চাচাতো বোন অসুস্থতায় মারা গেছে, আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন,আমিন। আমার এই বোনের সাথে সম্পর্ক মোটামুটি ভালোই ছিলো।
একদিন স্বপ্নে দেখি ওর মনটা খুব ভার ও গম্ভীর। আমি বললাম " বিয়ে হচ্জিছে না, কবে যে হয়"। ও তখন বলে ''আল্লাহর কাছে না চাইলে কেমনে হবে? " আমি আবার জিজ্ঞেস করছি, "আমার কি বিয়ে হবে? নাকি হবে না?" ও তখন ধমক দিয়ে বলে "আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি না করলে কেমনে হবে?আল্লাহর কাছে চাইয়্যা না নিলে কি হইবো নাকি?"

উস্তাদ আমি যথাসম্ভব দো'আ করছি উত্তম জীবনসঙ্গীর জন্য,,,কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি আল্লাহ তা'লার কাছে সঠিকভাবে চাইতে পারছি না, নিজের জন্য দো'আ কবুল করিয়ে নিতে পারছি না।  আমার করণীয় কি?

1 Answer

0 votes
by (561,180 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলামী দৃষ্টিতে স্বপ্ন তিন প্রকার। 
,
১. যা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাহকে দেখানো হয় যা কল্যানকর হয়।

২. শয়তানের পক্ষ হতে দেখানো হয় যাতে মানুষ খারাপ, মন্দ ভয়ংকর কিছু দেখে থাকে।
তবে শয়তান স্বপ্ন দেখানোর দ্বারা মানুষের কোন ক্ষতি করতে পারেনা।
,
ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলে দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই। শয়তান মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলার জন্যই এমন সব আজব আজব জিনিস দেখায়। এমনটা দেখলে ঘুম থেকে জেগে বাম দিকে থুথু ফেলে আস্তাগফিরুল্লাহ বলতে হয়। 

৩. মানুষের কল্পনা। অর্থাৎ মানুষ যা কল্পনা করে স্বপ্নে তা দেখতে পায়। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ إِسْحَاقَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الرُّؤْيَا الْحَسَنَةُ مِنَ الرَّجُلِ الصَّالِحِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ ".

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নেককার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
(বুখারী শরীফ ৬৫১২)

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى ـ هُوَ ابْنُ سَعِيدٍ ـ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَلَمَةَ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا قَتَادَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الرُّؤْيَا مِنَ اللَّهِ، وَالْحُلْمُ مِنَ الشَّيْطَانِ ".

আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে আর অশুভ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
(৬৫১৩)

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، حَدَّثَنِي ابْنُ الْهَادِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خَبَّابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ رُؤْيَا يُحِبُّهَا فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ اللَّهِ، فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ عَلَيْهَا، وَلْيُحَدِّثْ بِهَا، وَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذَلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ، فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَسْتَعِذْ مِنْ شَرِّهَا، وَلاَ يَذْكُرْهَا لأَحَدٍ، فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ ".

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাই সে যেন এর উপর আল্লাহর প্রশংসা করে এবং অন্যের কাছে তা বর্ণনা করে। আর যদি এর বিপরীত অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। তাই সে যেন এর অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়। আর কারো কাছে যেন তা বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি সাধন করবে না।
(বুখারী শরীফ ৬৫১৪)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন!
(০১)
অতিরিক্ত টাকা পয়সা,অতিরিক্ত জ্ঞানার্জন, অতিরিক্ত সম্মান লাভ ইত্যাদির আকাঙ্খা সম্ভবত আপনার মাঝে রয়েছে,স্বপ্নটির সেদিকে ইশারা রয়েছে।

(০২)
আপনার বাবা কি জীবিত আছেন? নাকি মারা গিয়েছেন?

যদি তিনি মারা গিয়ে থাকেন,সেক্ষেত্রে 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার আমল বাড়িয়ে দিতে হবে,দ্বীনদার লোকদের সাথে উঠাবসা করতে হবে,পবিত্র হালতে থাকতে হবে,অহংকার থেকে বেঁচে থাকতে হবে। 
বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত, যিকির আযকার,ফরজ সহ নফল নামাজ পড়তে হবে। 
দান ছদকাহ করতে হবে।
,
স্বপ্নের কথা কাউকে বলা যাবেনা।

আর যদি তিনি জীবিত থাকেন,সেক্ষেত্রে বড়দের সম্মান করা ও তাদের আদেশ মানার পরামর্শ থাকবে। 

(০৩)
এক্ষেত্রে আমল জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...